করোনা নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে আবার ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তাঁর সেই ভাষণে ডিসলাইক পড়লো প্রচুর। অনলাইনে দর্শকের সংখ্যাও আগের থেকে অনেক কম।
বিজ্ঞাপন
করোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা শুনতে কি নিরুৎসাহ বোধ করছেন দেশের মানুষ? না হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ কেন তেমন সাড়া ফেলল না? লোকে দেখল কম। ডিসলাইক দিল বেশি। বিজেপি-র ইউটিউব চ্যানেলে লাইকের থেকে ডিসলাইক পড়লো বেশি। ফ্রি প্রেস জার্নাল, আনন্দবাজারের রিপোর্ট বলছে, ভাষণ শুরুর পরই প্রচুর ডিসলাইক পড়ছে দেখে বিজেপি চ্যানেলে লাইক, ডিসলাইকের অপশনই না কি সরিয়ে দেয়া হয়।
এই কপি লেখার সময় দেখা যাচ্ছে, বিজেপির ইউটিউব চ্যানেলে মোদীর ভাষণ দেখেছেন এক লাখ মানুষ। লাইক বা পছন্দ করেছেন তিন হাজার ৪০০ জন। ডিসলাইক করেছেন আট হাজার ১০০ জন। সরকারি প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বা পিআইবির ইউটিউব চ্যানেলে মোদীর ভাষণ দেখেছেন ২৬ হাজার মানুষ। এখানেও লাইকের থেকে ডিসলাইক বেশি। লাইক করেছেন এক হাজার ১০০ জন, ডিসলাইক করেছেন এক হাজার ২০০ জন। পিএমও লাইভ চ্যানেলেও ছবিটা একই। এক লাখ মানুষ ভাষণ দেখেছেন। লাইক করেছেন ছয় হাজার ২০০ জন, ডিসলাইক সাত হাজার।
অথচ, আগের ছবিটা তো এরকম ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাতে একবার লাইকের থেকে ডিসলাইক বেশি পড়েছিল, কারণ, করোনাকালে কেন্দ্রীয় সরকার ছাত্রদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রবেশিকা পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে অনড় ছিল। সেই ক্ষোভ তখন কাজ করেছিল।
করোনা সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ভারত
মোট করোনা সংক্রমণে ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে দিলো ভারত৷ এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাই ভারতের চেয়ে খারাপ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/Y. Nazir
দৈনিক সর্বোচ্চ নতুন সংক্রমণ
পরপর তিনদিন মোট সংক্রমণ ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে ভারতে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গত একমাস ধরেই বিশ্বে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড গড়ছে ভারত৷
ছবি: Reuters/A. Dave
গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে সংক্রমণ
এতদিন ভারতে সংক্রমণ বেশি ছিল শহরাঞ্চলে৷ কিন্তু এখন আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে চিত্র৷ দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণস্বাস্থ্য বিষয়ের অধ্যাপক রাজীব দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বর্তমানে সংকটটা দুই ভাগেই৷ শহরাঞ্চলে সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ নেই, গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে সংক্রমণ৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. S. Iyer
মৃত্যু এবং সুস্থ হওয়ার হার
সরকারী পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে এ পর্যন্ত ৭১ হাজার ৬৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়৷ পাশাপাশি, প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ সেরে উঠেছেন৷ সরকার বলছে, দেশের ‘টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট’ নীতির কারণে মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে৷ সারা ভারতে মোট আক্রান্তের ৭৭ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
পরীক্ষা কত?
গত ২৪ ঘন্টায় সাত লাখ ২০ হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত, প্রায় পাঁচ কোটি করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ভারতে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
তবুও ‘আনলক’
জুলাই মাস থেকে ধাপে ধাপে লকডাউনের পর ‘আনলক’ শুরু হয়েছে ভারতে৷ দীর্ঘদিন পর দিল্লিতে চালু হয়েছে মেট্রো পরিষেবা, দেশে চালু হয়েছে রেল, বিমান পরিষেবাও৷ খুলে গেছে বেশ কিছু মুক্তমঞ্চ, পাব, শপিংমলও৷ বলা হচ্ছে, থমকে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতেই এসব পদক্ষেপ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/H. Bhatt
অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব
করোনা সংকটে বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারতের অর্থনীতি৷ দেশের জিডিপি কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ৷ ফিনানশিয়াল টাইমস বলছে, করোনাকালে ভারতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন৷ ফোর্বস মার্শালের চেয়ারম্যান নওশাদ ফোর্বস বর্তমান অবস্থাকে দেশের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বলে মনে করছেন৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Wire/A. Vaishnav
যুক্তরাষ্ট্রেও বাড়ছে...
ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে ভারত৷ যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ ৬২ লাখ, মৃত্যু এক লাখ ৯৩ হাজারের কাছাকাছি৷ ৪১ লাখ জন সংক্রমিত নিয়ে ব্রাজিল ভারতের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও সেখানে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার জনের৷ অন্যদিকে রয়টার্সের জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি রাজ্যে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে৷ ফলে সেখানেও পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Willens
7 ছবি1 | 7
পাঁচ মাস আগের কথা। করোনা নিয়ে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ পিএমও-র চ্যানেলে দেখেছিলেন ৫৯ লাখ মানুষ। লাইক ছিল দেড় লাখ। ডিসলাইক ২৪ হাজার। তারপর ৩০ জুন প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ পিএমও চ্যানেলে দেখেছিলেন পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৫১১ জন। লাইক ছিল ১৪ হাজার, ডিসলাইক সাড়ে তিন হাজার। আর ছয় মাস আগে এই একই চ্যানেলে করোনা নিয়ে মোদীর জাতির উদ্দেশে ভাষণের ভিউ ছিল ৮৮ লাখ। সেখানে এ বার মাত্র ২৬ হাজার ভিউ। অন্য চ্যানেলেও আগে ভিউ-এর সংখ্যা ছিল প্রচুর। তা এখন অনেক কমে গেছে।
তা হলে কি করোনা নিয়ে মানুষ এখন আর নরেন্দ্র মোদীর কথা শুনতে উৎসাহ বোধ করছেন না? প্রধানমন্ত্রীর বিপুল জনপ্রিয়তা ও সামাজিক মাধ্যমে বিজেপি-র ব্যাপক প্রভাব সত্ত্বেও এই সংখ্যাতত্ত্ব কী সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে?
কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরি মনে করছেন, মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। বাংলাদেশও এখন ভারতকে মাথাপিছু জিডিপি ও ক্ষুধা সূচকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে। মানুষের চাকরি নেই। অধীরের প্রশ্ন. ''ভারতের মানুষকে প্রধানমন্ত্রী আর কত ধোঁকা দেবেন? অনেক বড় বড় কথা বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল ১৮ দিন। আমাকে আপনারা ২১ দিন সময় দিন। করোনাকে থামিয়ে দেব। আজ ভারত পৃথিবীতে সংক্রমণে প্রথম সারিতে। মৃত্যু সংখ্যায় প্রথম তিনে আছে ভারত।'' অধীরের দাবি, ''সত্য কথা বলুন। মানুষকে লুকোচ্ছেন কেন?''
করোনাকালে পুজোর ভিড়
কলকাতার রাস্তায় পুজোর ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই, করোনায় কুপোকাত গোটা বিশ্ব। নিয়ম মানার বালাই নেই। দেদার চলছে কেনাকাটি।
ছবি: Durga Puja festival/Reuters
পুজোর ভিড়
করোনা, তাই অনলাইনে পুজোর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাই বলে কলকাতার মানুষ বাড়িতে বসে নেই। রাস্তায় জনসমুদ্র।
ছবি: Sudipta Bhoumick
নিউ মার্কেট
কলকাতার অন্যতম জামা কাপড়ের বাজার নিউ মার্কেট। সেখানে থিক থিক করছে মানুষ। অন্য বছরের সঙ্গে এ বছরের কোনো তফাত নেই। অথচ প্রতিদিন করোনার প্রকোপ বাড়ছে।
ছবি: Sudipta Bhoumick
হাতিবাগান
হাতিবাগান মার্কেটের ছবিও একই রকম। পুলিশের বক্তব্য, করোনার জন্য যা যা নিয়ম স্থির করা হয়েছিল, তার কিছুই মানছেন না ক্রেতারা। গায়ে গায়ে চলছে বাজার।
ছবি: Sudipta Bhoumick
মাস্ক কই
পুজো শুরু হতে আরও কয়েক দিন বাকি। তার আগে হয়ে গিয়েছে খুঁটি পুজো। লাইন দিয়ে খুঁটি পুজোর প্রসাদ নিচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। কিন্তু কারও মুখে মাস্ক নেই।
ছবি: Sudipta Bhoumick
মণ্ডপেও ভিড়
দুর্গা পুজোয় কলকাতা কার্যত ইনস্টলেশন নগরী হয়ে ওঠে। বাহারি প্যান্ডেলে রূপ বদলে যায় শহরের। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দিকে দিকে প্যান্ডেলে মানুষ ভিড় জমাতেও শুরু করে দিয়েছেন। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই।
ছবি: Sudipta Bhoumick
একা ব্যতিক্রমী
কলকাতার অন্যতম পুরনো পুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার। প্রতিদিন এক লাখ দর্শনার্থী ভিড় জমান তাদের প্যান্ডেলে। এ বছর কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, পুজো হবে কিন্তু দর্শক ঢুকতে দেওয়া হবে না। অনলাইনে দেখা যাবে পুজো এবং মণ্ডপ।
ছবি: Sudipta Bhoumick
কী বলছে প্রশাসন
পুজোর আগে বেশ কিছু সতর্কবার্তা জারি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যে ভাবে ঢালাও প্যান্ডেল তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাতে সতর্কবার্তা কেউ মানবেন না। ইতিমধ্যেই তা টের পাওয়া যাচ্ছে।
ছবি: Sudipta Bhoumick
করোনার প্রকোপ
রাস্তায় ভিড় যত বাড়ছে, কলকাতায় করোনার প্রকোপও ততই বাড়ছে। হাজারেরও বেশি মানুষ প্রতিদিন সংক্রমিত হচ্ছেন। তবু মানুষের ফূর্তির শেষ নেই।
ছবি: Durga Puja festival/Reuters
8 ছবি1 | 8
তৃণমূলের সাংসদ ও রাজ্যসভায় দলের চিফ হুইপ সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''দেওয়াল লিখন স্পষ্ট। সেই লিখন মোদীর দেওয়ালেই পড়া যাচ্ছে। এর থেকে শিক্ষা নিলে ভালো। না হলে অবস্থা আরো খারাপ হবে।''
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''কিছুদিন আগে যখন মন কি বাত-এ ডিসলাইক বেশি ছিল, তখন মনে হয়ছিল, এটা কেবলমাত্র ছাত্রদের ক্ষোভ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সাধারণভাবেই মানুষের হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে।''
আর এক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্ত মনে করেন, করোনা নিয়ে ভাষণে মানুষ সম্ভবত ক্লান্তিবোধ করছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''আমার মনে হয়, গত সাত মাস ধরে মানুষ করোনা নিয়ে ঘর করছে। আগে সব বন্ধ ছিল। এখন সবই প্রায় খুলে গেছে। মানুষ বুঝে গেছে, করোনা নিয়েই চলতে হবে। অন্তত যতদিন ভ্যাকসিন বের না হয়। সে জন্যই করোনা ঠেকাতে কী করতে হবে, তা শোনার জন্য তাঁরা উৎসাহ পাচ্ছেন না।''