মোদীর কাছে পাক সন্ত্রাসবাদের কথা তুললেন কমলা হ্যারিস
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে প্রথমবার বৈঠক করলেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে হ্যারিস পাক সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ তুললেন।
বিজ্ঞাপন
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কমলা হ্যারিস একমত যে, ভারত কয়েক দশক ধরে সন্ত্রাসবাদের শিকার। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মনে করেন, পাকিস্তানের উচিত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। হ্যারিসের মতে, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি ভারত ও অ্যামেরিকার নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না করতে পারে, সেটা পাকিস্তানকে দেখতে হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন, কমলা হ্যারিস মনে করেন, ''পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে মদত দিচ্ছে কি না, তার উপর কড়া নজর রাখা দরকার।''
হোয়াইট হাউসে বৃহস্পতিবার মোদী ও হ্যারিস এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। দুই নেতার এটাই প্রথম বৈঠক। সেখানে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ছাড়াও সন্ত্রাসবাদ, আফগানিস্তান, ইন্দো-প্যাসিফিক, গণতন্ত্রের বিপদের মতো বিষয়গুলি নিয়ে কথা হয়।
কমলা হ্যারিস: প্রথম নারী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ নারী কমলা হ্যারিস৷ জেনে নিন এই মার্কিন নারীর সাফল্যের গল্প৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
কমলার ইতিহাস
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণকে নারীর জন্য একটি ঐতিহাসিক মোড় হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন অনেকে৷ নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অনেক বাঁকের রচয়িতা হয়েছেন তিনি৷ প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট - সবই যোগ করা যায় তার নামের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/newscom/K. Dietsch
প্রথম ‘সেকেন্ড জেন্টলম্যান’
কমলা হ্যারিসের জয় মার্কিনিদের এক নতুন ভাবনায় ফেলেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে বলা হয় সেকেন্ড লেডি৷ কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্টের স্বামী ডগলাস এমহফেরকেতো সেকেন্ড লেডি বলার সুযোগ নেই৷ তাই তার জন্য লাগবে হবে নতুন পদবি৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস অবশ্য ইতিমধ্যে তাঁকে ‘সেকেন্ড জেন্টলম্যান’ বলে সম্বোধন করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Avelar
জন্ম ও পরিবার
৫৫ বছর বয়সি কমলার বাবার জন্ম জ্যামাইকায় এবং মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইন্ডিয়ান অ্যামেরিকান৷ অর্থনীতিবিদ বাবা ও জীববিজ্ঞানী মায়ের সন্তান কমলার রয়েছে মায়া নামের এক বোন৷ কমলার জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকল্যান্ড শহরে৷ কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়ায় দীর্ঘদিন থাকার পাশাপাশি তামিল মা ও জ্যামাইকান বাবার মিশ্র ঐতিহ্যকে সাথে নিয়েই বেড়ে ওঠা কমলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
স্কুল জীবন
ক্যালিফোর্নিয়ার শহর বার্কলের কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়ায় বাস করলেও কমলা পড়তেন অভিজাত থাউজেন্ড ওকস স্কুলে৷ সেই স্কুলে এক সময় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিলেন শ্বেতাঙ্গ৷ বর্ণভিত্তিক পৃথকীকরণের নীতি রদ হবার পর এই চিত্র বদলে যায়৷ কমলা যখন সেই স্কুলে ভর্তি হন, তখন সেখানে মোট শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ৷ কিছুদিন মায়ের সাথে ক্যানাডায় ছিলেন কমলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ
হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতক হবার সময়ে নানা ধরনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন কমলা হ্যারিস৷ ছবিতে বান্ধবী গোয়েন ভিটফিল্ডের সাথে তাকে দেখা যাচ্ছে অ্যাপারথাইড বা বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে৷ ছবিটি ১৯৮২ সালের৷ ১৯৮৬ সালে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন তিনি৷
ক্যালিফোর্নিয়ার আইনজীবী ডগলাস এমহফকে ২০১৪ সালে বিয়ে করেন কমলা৷ ডগলাসের আগের পক্ষের দুই সন্তান রয়েছে, কোল ও এলা, যাদের কমলা হ্যারিসের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশেও দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Avelar
রাজনীতিতে প্রবেশ
২০০৩ সালে প্রথম নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিযুক্ত হন তিনি৷ তখন থেকেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে তার সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে৷ পরে ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়ার সেনেটর পদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ও জয়ী হন৷
ছবি: Tasos Katopodis/Getty Images
উত্তরণ
সেনেটর হিসাবে তার ধারালো প্রশ্ন করার ক্ষমতা বারবার আলোচিত হয়েছে সংবাদমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায়৷ টানা দুই টার্ম ধরে সফল অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে তার কাজও আলোচিত হয়েছে এতদিন৷ শুধু তাই নয়, বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে নিজের মিশ্র ঐতিহ্য বিষয়ে সাবলীল আলাপ তাঁকে জনসাধারণের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তোলে৷ এছাড়া, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তাঁর প্রতি সমর্থনও সাহায্য করেছে বলে মনে করেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Risberg
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
সেনেটর পদে নির্বাচিত হবার পর কমলা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন৷ সমকামীদের বিবাহের অধিকারের পক্ষে, মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে থাকার পাশাপাশি কমলা বিভিন্ন সময়ে পুলিশনীতিতে বদলের দাবি তুলেছেন৷ বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ ও পুলিশের অনৈতিকতা যেভাবে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আলোচনায় উঠে আসছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি অংশগ্রহণ যথাযথ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
পররাষ্ট্রসচিব শ্রিংলা জানিয়েছেন, ''সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন কমলা হ্যারিস নিজে থেকেই পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি এই বিষয়ে একমত হন যে, পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি কাজ করছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানকে এই গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।''
গত জুনে কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন মোদী। সেই প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, কমলা হ্যারিস বিশ্বের অনেক মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। মোদী জানিয়েছেন, হ্যারিস প্রকৃত বন্ধুর মতো এবং পরিবারের একজনের মতোই কথা বলেন।
মোদী বাইডেনের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। তিনি কোয়াড শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেবেন এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন।