ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি গতবারের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে আবার ক্ষমতায় বসছে৷ বিজেপির এই জয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন দেশটির অনেক মুসলিম৷ কেউ কেউ সমাধানও খুঁজছেন৷
বিজ্ঞাপন
আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রওনক শাহী বিজেপি আবারও ক্ষমতায় আসায় উদ্বিগ্ন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, গতবারের চেয়ে এবার মুসলমানেরা বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়বে৷ কী হবে তা বোঝা যাচ্ছে না৷ তবে আমি নিশ্চিত খারাপই হবে৷''
পরিস্থিতি সামলাতে মুসলমানদের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি৷ এছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী হতে হবে বলে মনে করছেন রওনক শাহী৷
‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড' আশঙ্কা করছে, মুসলমানদের পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে৷ তাই মুসলমানদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে তারা৷
আলীগড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আদিল আলভি বলেন, মুসলমানদের প্রতি বৈরী আচরণের প্রমাণ ইতিমধ্যে দেখা গেছে৷ সম্প্রতি নতুন দিল্লিতে এক মুসলমান ব্যক্তিকে টুপি খুলে ফেলতে এবং হিন্দুদের মতো ‘জয় শ্রীরাম' বলতে বাধ্য করা হয় বলে জানান তিনি৷
এবারের নির্বাচনে মোট ২৭ জন মুসলমান সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন৷ ৪৩৭টি আসনে প্রার্থী দেয়া বিজেপি সাতজন মুসলমান প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল৷
‘মোদী হিটলারের ঠাকুর্দা’
ভারতে বর্তমানে চলছে লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ৷খবরে উঠে আসছে বিভিন্ন রাজনীতিকদের বিতর্কিত সব মন্তব্য৷ ওপরের মন্তব্যটির মতো আরো এমন উদাহরণ সম্পর্কে জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Adhikary
‘স্পিডব্রেকার দিদি আমার ফোন ধরেন না’
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর অভিযোগ, তিনি ‘মোদী সরকার’-এর উন্নয়নের কাজ থামিয়ে দিতে ‘স্পিডব্রেকার’-এর ভূমিকা পালন করছেন৷ শুধু তাই নয়, ওড়িশায় বর্তমানে ‘ফণী’ ঝড়ের কারণে যে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে, সেই বিষয়ে কথা বলার জন্য মোদী ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও মমতা ফোন ধরেননি৷ এমনটাই দাবি নরেন্দ্র মোদীর৷
ছবি: IANS
‘মোদী হিটলারের ঠাকুর্দা’
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের আমডাঙায় প্রচার করতে গিয়ে এমন কথা বলেছেন সোমবার৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন চা-ওয়ালা, পাঁচ বছর ধরে বিদেশ ঘুরে এখন চৌকিদার হয়েছেন৷’’
ছবি: DW/Prabhakarmani Tewari
‘স্বামীর চেয়ে বেশি আমার নাম জপে’
ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রী প্রাক্তন অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানি৷ আমেঠি কেন্দ্রে স্মৃতির বিরুদ্ধে লড়ছেন রাহুল গান্ধী৷ রাহুলের প্রচারে তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর অংশগ্রহণের বিষয়ে স্মৃতিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তুলে আনেন প্রিয়াঙ্কার স্বামী, বিতর্কিত ব্যবসায়ী রবার্ট ভাদ্রা’র নাম, যাঁর সাথে জড়িয়ে আছে একাধিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ৷
ছবি: Imago
‘মার খেয়েছিলেন মোদীজির গুরু’
বিস্ফোরক মন্তব্যের লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও৷ হরিয়ানায় একটি জনসভায় ভারতীয় জনতা পার্টির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘৫৬ ইঞ্চি ছাতিওয়ালা বক্সারের হাতে মার খেয়েছিলেন মোদীজির গুরু৷’’ হরিয়ানার গ্রাম ভিওয়ানি, যেখানে সভাটি হচ্ছিল, ভারতের একাধিক অলিম্পিক-পদকজয়ীদের বাস সেখানে৷ ফলে, এই অঞ্চলে বক্সিং-এর রূপকের সাহায্যে রাজনৈতিক মন্তব্য আসলেই উত্তেজক৷
ছবি: Ians
‘ভারত মাতা কি জয়’
যে কোনো প্রশ্নের উত্তরে প্রায়ই এই বাক্যের সাহায্য নেন বিজেপির নেতা-নেত্রী ও কর্মীরা৷ সম্প্রতি চণ্ডীগড়ের বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী কিরণ খের-এর কাছে গত পাঁচ বছরে সাংসদ হিসাবে তাঁর কাজের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়৷ তখন তাঁর স্বামী, অভিনেতা অনুপম খেরও সঙ্গে ছিলেন৷ সাংবাদিকের প্রশ্নে কিরণকে জবাব দেবার সুযোগ না দিয়েই অনুপম উত্তর দেন ‘ভারত মাতা কি জয়’৷
ছবি: UNI
‘বাড়ি থেকে বার করে কুকুরের মতো মারব’
পশ্চিমবঙ্গের ঘাটাল কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ৷ দলের প্রচার করতে গিয়ে বিজেপি সমর্থকদের হুমকি দেয়া হচ্ছে– এ অভিযোগ শুনে তৃণমূলের সমর্থকদের এমন হুমকি দেন তিনি৷ শুধু তাই নয়, উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক ঢুকিয়ে মারার হুমকি দিতেও শোনা যায় তাঁকে৷ এমন মন্তব্যের জেরে ভারতীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করার কথা ভাবছে তৃণমূল কংগ্রেস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Pacific Press
‘ভারতের সবচেয়ে বড় গাদ্দার মমতা’
একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ডানহাত’ ছিলেন মুকুল রায়৷ সেই মুকুল এখন বিজেপি নেতা৷ কয়েকদিন আগে এক জনসভায় দলছুট এই নেতাদের ‘গাদ্দার’ বলেন মমতা৷ জবাবে মুকুল বলেন, ‘‘মমতা হলেন দেশের সবচেয়ে বড় গাদ্দার৷ ২৫ বছর কংগ্রেসে ছিলেন মমতা৷ তিনটি মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন কংগ্রেসের হাত ধরে৷ পরে এনডিএ-র সঙ্গে জোট বেঁধেও মন্ত্রী হন তিনি৷’’ মমতাকে মুকুলের পরামর্শ, ‘‘অন্যদের দিকে আঙুল তোলার আগে নিজের দিকে তাকান৷’’
ছবি: Ians
7 ছবি1 | 7
সাংসদ নির্বাচিত হওয়া ২৭ জন মুসলিম প্রার্থীর একজন আসাদউদ্দিন ওয়েসি৷ তিনি হায়দ্রাবাদের এআইএমআইএম দলের প্রধান৷ এই দলকে তিনি সর্বভারতীয় দলে পরিণত করতে চান৷ ‘‘মুসলমানরা আর কতদিন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে ভোট দেবে? তারা বিজেপিকে হারাতে সমর্থ নয়৷ ফলে আমাদের কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে৷''
তবে হায়দ্রাবাদের মাওলানা আজাদ ন্যাশনাল উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আফরোজ আলম মুসলমানদের নিয়ে গঠিত দলের সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মুসলমানদের ২৫টি দল এখনই আছে৷ কিন্তু তারা বড় সাফল্য দেখাতে পারেনি, কারণ, মুসলমানরা মুসলমানদের ভোট দিতে আগ্রহী নয়৷''
আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাজ্জাদ মনে করেন, মুসলমানদের দল থেকে সংসদে প্রতিনিধি গেলেও তাদের কথা শোনা হবে না৷ ‘‘রাজনৈতিকভাবে মুসলমানরা কিছু করতে পারবে না৷ এটা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত যে, তারা মুসলমানদের সঙ্গে নেবে কিনা,'' বলেন তিনি৷
মোদীর বক্তব্য
নির্বাচনে জয়ের পর মোদী দুটি বক্তব্য দিয়েছেন৷ দুটিতেই তিনি মুসলমানদের আশ্বস্ত করা চেষ্টা করেছেন৷ বিজেপির সদরদপ্তরে দেয়া বক্তব্যে তিনি সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জনে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন৷ এছাড়া সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা এড়িয়ে চলতে সাংসদদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
এদিকে, ভারতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন জমিয়াত উলামা-ই-হিন্দ (জেইউএইচ) বিপুল জয়ের জন্য মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ সংখ্যালঘুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে নজর রাখতে মোদীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জেইউএইচ৷
সুফি মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন অল ইন্ডিয়া উলেমা অ্যান্ড মাশায়েখ বোর্ডও মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছে৷