বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশি মানুষের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা৷ বলেছেন, ভারতের নির্বাচন কমিশন চাইলেই এটা হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের মানুষ, ভূখণ্ড এবং ধর্ম নিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি এখনও পর্যন্ত যেসব কথা বলেছেন, তা বাংলাদেশের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে৷ মোদী যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে – তা নিয়ে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে৷ সর্বশেষ ১৬ই মে-র পর ভারত থেকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি' বিতাড়নের যে ঘোষণা তিনি দিয়েছেন, তা স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে৷ বিজেপি অবশ্য দীর্ঘদির ধরেই প্রচার চালিয়ে আসছে যে ভারতে দুই কোটি অবৈধ বাংলাদেশি আছে৷
এর আগে মোদী বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডের মালিকনা দাবি করেছিলেন৷ বলেছিলেন, পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোতে বেকারত্বের মূল কারণ অবৈধ বাংলাদেশিদের অবস্থান৷ এছাড়া বাংলাদেশের হিন্দুদের ভারতে আশ্রয় দেয়ার কথা বলে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টিরও চেষ্টা করেছেন তিনি৷
সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মোদী নির্বাচনে জেতার জন্য স্পষ্টতই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে উসকানিমূলক কথা বলছেন৷ যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক এবং অগ্রহণযোগ্য৷'' তিনি বলেন, ‘‘এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে৷'' তাঁর মতে, মোদীর বক্তব্য একটি অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, যা ভারতের নির্বাচন কমিশনের খেয়াল রাখা উচিত৷''
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘‘ধর্ম, সম্প্রদায়, জাতি, গোষ্ঠি বা কোনো দেশকে আক্রমণ করা নির্বাচনি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন৷ ভারতের মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার এই চিত্র গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে আহত করে৷ তাই ভারতের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে মোদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া৷ তাঁকে নির্বাচনি আচরণ-বিধি মানতে বাধ্য করা৷''
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
তাঁর কথায়, ‘‘শুধু পাল্টা বক্তব্য নয়, ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের উচিত সেখানকার নির্বাচন কমিশনে মোদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানানো৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আমেনা মহসিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘মোদীর এই প্রচারণা কেবল ভোট বাড়ানোর কৌশল নয়, ভারতকে আরও বেশি করে হিন্দুত্ববাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনারই অংশ৷ কেবল ধর্মীয় কারণে নয়, অর্থনৈতিক কারণেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ মোদীর এই প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হবে৷ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া মানুষদের শত্রু বিবচেনা করবে তাঁরা৷''
তিনি বলেন, ‘‘যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা তাদের কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের' দেশ ছাড়া করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকেই এগোবে৷ এটাই হিন্দুত্ববাদের দর্শন৷''
অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যক্ষেক পরিষদ বা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মোদীর প্রচারণায় ভোটের জন্য যত কৌশল আছে, সবই অবলম্বন করা হচ্ছে৷ তাতে ধর্ম, প্রতিবেশী রাষ্ট্র – কিছুই বাদ দেয়া হচ্ছে না৷ তবে আশার কথা, ভারত একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ৷ সেখানকার নির্বাচন কমিশন স্বাধীন৷ ভারতের গণতন্ত্র একটি শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে৷ তাই এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়া বা প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হবে না৷''