করোনা এবং লকডাউন নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা করতে আজ মঙ্গলবার এবং বুধবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ফের বৈঠক শুরু করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই বৈঠক নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ, অ-বিজেপি রাজ্যগুলিকে কার্যত কথা বলার সুযোগই দিচ্ছে না কেন্দ্র। সুযোগ পাচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রেল, জলপথ, লকডাউন এবং আমফানের কারণে কেন্দ্রীয় সাহায্য সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিল রাজ্য। কিন্তু বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী সেই সুযোগ না দেওয়ায় দৃশ্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা।
সোমবার থেকে গোটা ভারত জুড়ে আনলক পর্ব শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক হচ্ছে কলকাতাও। বাসে ঝুলছে মানুষ। খুলেছে ধর্মস্থান।
ছবি: DW/S. Bhowmickআনলক পর্ব শুরু হলেও এখনও চালু হয়নি লোকাল ট্রেন এবং মেট্রো। বাস কম। তাই কলকাতার রাস্তায় ফিরে এসেছে পুরনো দিনের দৃশ্য। বাসে বাদুড়ঝোলা ভিড়। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই।
ছবি: DW/S. Bhowmickকলকাতার পূর্ব দিকে আইটি হাব। সেক্টর ফাইভ। প্রায় টানা দুই মাস লকডাউনের জেরে বন্ধ ছিল এখানকার বহু অফিস। সোমবার থেকে কম কর্মী নিয়ে নতুন করে খুলেছে অফিস।
ছবি: DW/S. Bhowmickকলকাতায় বৃষ্টি হলেই ফ্লাইওভারের তলায় দাঁড়িয়ে পড়েন বাইক আরোহীরা। দুই মাস এ দৃশ্য দেখা যায়নি। সোমবার ফের ফিরে এলো পুরনো ছবি। তবে এখানেও সামাজিক দূরত্বের কোনও বালাই নেই।
ছবি: DW/S. Bhowmickপেটের তাগিদে বাইরে যেতেই হচ্ছে মানুষকে। তবে করোনার ভয় আছে। বস্তুত গত এক সপ্তাহে সংক্রমণের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। তাই ঝুঁকি এড়াতে প্রবল গরমে ভিড় বাসে ফেস শিল্ড পরে উঠছেন অনেকেই।
ছবি: DW/S. Bhowmickখুলেছে পাইকারি মার্কেট। ভিন রাজ্যের লরি ঢুকতে শুরু করেছে পোস্তার বাজারে। কুলিরাও কাজ ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মুখে মাস্ক নেই। যদি বা আছে, গরমের থেকে বাঁচতে তা গলায় ঝোলানো।
ছবি: DW/S. Bhowmickশহরের রাস্তায় নেমে পড়েছে অটো। সরকার বলেছিল অটোর পিছনে কেবল দুই জন বসতে পারবেন। কিন্তু সোমবার দেখা গেল প্রচুর সওয়ারি নিয়েই দিকে দিকে চলছে অটো। পিছনে পাঁচজন, সামনে দুই।
ছবি: DW/S. Bhowmickবাস-অটো চললেও সোমবার তুলনামূলক ভাবে রাস্তায় ট্যাক্সির সংখ্যা কম ছিল। ফলে অফিস পাড়ায় ট্যাক্সির হাহাকার পড়ে যায়। দূরে ট্যাক্সি দেখতে পেলেই সামাজিক দূরত্বকে হেলায় উড়িয়ে ছুটে গিয়েছেন সকলে। যে আগে ধরতে পারেন।
ছবি: DW/S. Bhowmickসোমবার থেকে খুলে গিয়েছে সমস্ত ধর্মস্থান। মসজিদে ফের শুরু হয়েছে নামাজ। তবে মসজিদের ভিতরে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম পালন করা হচ্ছে।
ছবি: DW/S. Bhowmickএখনও চলছে না মেট্রো। গরমে কাবু কলকাতাবাসী মেট্রোর সিঁড়িকেই ব্যবহার করছেন বাসের প্রতীক্ষালয় হিসেবে। তবে সেখানেও সামাজিক দূরত্বের বিধি পালিত হচ্ছে না। অনেকের মুখে মাস্কও নেই।
ছবি: DW/S. Bhowmick লকডাউন চলাকালীন রাজ্যগুলির পরিস্থিতি জানতে বেশ কয়েকবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবার সব রাজ্য কথা বলার সুযোগ পায়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল বিভিন্ন রাজ্য। শেষ পর্যন্ত এপ্রিল মাসের শেষ বৈঠকে প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলেছিল বৈঠক।
সেই বৈঠকে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তর কথা বলেছিলেন মমতা। মোদীকে বলেছিলেন, 'আমি কারও কেনা গোলাম নই'। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনানা করে কেন্দ্র যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, সে বিষয়েও কড়া মন্তব্য করেছিলেন মমতা। শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীই নন, অ-বিজেপি রাজ্যের আরও বেশ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীও একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারপরেও যে বিজেপি তার লাইন থেকে সরছে না, এ দিনের বৈঠকই তার প্রমাণ।
বিজেপি অবশ্য পাল্টা যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেছে। তাদের বক্তব্য, যে রাজ্যগুলি এই মুহূর্তে করোনা নিয়ে সব চেয়ে বেশি সমস্যায়, সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরই কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, গোটা দেশেই করোনা বাড়ছে। অথচ অ-বিজেপি রাজ্য হিসেবে শুধুমাত্র পাঞ্জাব আর মহারাষ্ট্র সুযোগ পেল কেন? কেন কংগ্রেস-শাসিত রাজস্থান সুযোগ পেল না? সেখানে কি করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ নয়? কেন কেরালাকে সুযোগ দেওয়া হবে না করোনা মোকাবিলার মডেল তৈরি করে দেওয়ার জন্য?
বিমান, না কি মহাকাশে যাওয়ার প্রস্তুতি? যাত্রী থেকে বিমান সেবিকা-- পোশাক দেখলে মনে হবে নভশ্চর। সামাজিক দূরত্বের নতুন সময়ে ভারতে পাল্টে গিয়েছে বিমানবন্দরের দৃশ্য।
ছবি: DW/Syamantak Ghoshবিমানবন্দরের বসার জায়গায় এ ভাবেই স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব আসনে বসা যাবে না। একটা ছেড়ে ছেড়ে বসতে হবে। মেঝেতেও এ ভাবেই মার্কিং করা। সর্বত্র লেখা আছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা।
ছবি: DW/Syamantak Ghoshসারা দিন ধরে বিমানবন্দর স্যানিটাইজ করার চেষ্টা করছেন কর্মীরা। তারই ফাঁকে একটু জিরিয়ে নেওয়া। সকলেরই পরনে পিপিই কিট।
ছবি: DW/Syamantak Ghoshলাউঞ্জ থেকে বিমান পর্যন্ত যাওয়ার বাসেও চৌকো চৌকো খোপ। যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব মেনে ওই খোপেই দাঁড়াতে হবে।
ছবি: DW/Syamantak Ghoshবিমানে উঠে জানলার আসন বা আইলের আসনে বসলে শুধুমাত্র মাস্ক এবং ফেস শিল্ড পরলেই চলবে। কিন্তু মাঝের সিটে বসলে পরতে হবে পিপিই। ফেস শিল্ড, মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং পিপিই দিচ্ছে বিমান সংস্থাই।
ছবি: DW/Syamantak Ghoshবিমানের ভিতরে এ ভাবেই ফেস শিল্ড আর মাস্ক পরে বসতে হচ্ছে সকলকে। সঙ্গের ব্যাগও আগে থেকে স্যানিটাইজ করে দেওয়া হচ্ছে।
ছবি: DW/Syamantak Ghoshযাত্রী ওঠার সময় এ ভাবেই ধোঁয়ার মতো জীবাণুনাশক ব্যবহার করে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে বিমান। প্রায় আধঘণ্টা ধরে এই প্রক্রিয়া চলে।
ছবি: DW/Syamantak Ghoshবিমান সেবক এবং সেবিকারাও পিপিএ পরে কাজ করছেন। শারীরিক সংযোগ হয়, এমন কোনও কাজ তাঁরা করছেন না। এমনকী, বিমানে খাবার দেওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ছবি: DW/Syamantak Ghoshলাগেজ বেল্ট থেকে জিনিস নিয়ে এ ভাবেই দাঁড়াতে হচ্ছে লাইনে। সামাজিক দূরত্ব মেনে একজন একজন করে বাইরে যেতে পারছেন।
ছবি: DW/Syamantak Ghoshবিমানবন্দর থেকে বেরনোর আগে এ ভাবেই মেপে নেওয়া হচ্ছে শরীরের উত্তাপ। থার্মাল স্ক্যানে তাপমাত্রা বেশি এলে যাত্রীদের পাঠানো হচ্ছে অন্যান্য পরীক্ষায়।
ছবি: DW/Syamantak Ghosh এখানেই শেষ নয়। কেন্দ্রীয় সরকার গত ৮ জুন থেকে আনলক-১ চালু করে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যে অফিস, শপিং মল খুলে গিয়েছে। শহরের অফিস, মলে যাঁরা কাজ করতে আসেন, তাঁদের একটা বড় অংশ গ্রাম বা মফস্বলে থাকেন। লোকাল ট্রেনের উপরেই তাঁদের ভরসা করতে হয়। কিন্তু রেল কেন্দ্রের হাতে। এখনও পর্যন্ত রেল মন্ত্রক শহরতলির ট্রেন চালানো শুরু করেনি। ফলে সাধারণ মানুষ অফিস খুলে যাওয়া সত্ত্বেও কাজে যেতে পারছেন না। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে এটা একটা বড় সমস্যা। এই বিষয়গুলি বৈঠকে তোলার পরিকল্পনা ছিল রাজ্যের। কিন্তু সে সুযোগই হচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্ভবত বুধবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী যোগ দেবেন না। এতটাই ক্ষুব্ধ তিনি। প্রোটোকল মেনে অন্য কোনও মন্ত্রী বা আমলাকে বৈঠকে পাঠানো হবে।
বস্তুত, এ বিষয়ে মমতার পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের বিরোধীপক্ষও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ''এটা রাজ্যকে অপমান করা এবং তাচ্ছিল্য করা। কেন্দ্র এই দ্বিচারিতা করতে পারে না।'' প্রদেশ কংগ্রেসও একই কথা বলেছে। তাদের বক্তব্য, বিজেপি ভুলে যাচ্ছে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় চলে। সেখানে প্রত্যেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই কেন্দ্রের লকডাউন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী একা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এটা নীতিবিরুদ্ধ।