1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীর ‘মনের কথা' – রাজনীতির নতুন খেল!

দেবারতি গুহ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

এ যেন এক নতুন ‘রামরাজ্য'৷ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, ভারতের আপামর জনসাধারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে চিঠি লিখে জানাচ্ছেন তাঁদের হিতোপদেশ আর মোদী ঐ ইচ্ছেগুলোকেই বাস্তবায়ন করছেন নিজের ‘মনের কথা' বলে৷

zum Thema - Neue Minister im Kabinett Modi - Vereidigung
ছবি: picture-alliance/AP/Mustafa Quraishi

রাজা-মহারাজারা জনসাধারণের সুখ-দুঃখের কথা জানতে সাধারণ পোশাকে হেঁটে বেড়াতেন, এমন গল্প আমরা বহুবার শুনেছি৷ তবে ভারতের বর্তমান ‘রাজা' মোদী জনসাধারণের ‘ইচ্ছার' কথা জানছেন তাঁদেরই চিঠিতে৷ এখানেই শেষ নয়, সেই সব ইচ্ছে, নিজের ‘মনের কথা' এরপর তিনি সর্ব সমক্ষে তুলে ধরছেন রেডিও-র মাধ্যমে৷

‘স্বচ্ছ ভারত' অভিযানে রাস্তা-ঘাট, পার্ক, পাবলিক টয়লেট ইত্যাদি পরিষ্কারের পর্ব শেষ করার পর, এবার তিনি ডাক দিয়েছেন ‘নেশামুক্ত ভারত' গড়ার আন্দোলনের৷ বলেছেন, ‘‘মাদক সেবন জীবনে অন্ধকার, বিনাশ ও বিপর্যয় ডেকে আনে৷'' তাই নেশা মুক্তি অভিযানে সকলকে এক জোট হয়ে কাজ করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী৷

সোশ্যাল মিডিয়ায় এ আন্দোলন আরো জোরদার করার ঘোষণা দিয়ে মোদী বলেছেন হ্যাশট্যাগ #ড্রাগফ্রিইন্ডিয়া ব্যবহার করতে৷ প্রধানমন্ত্রীর মনের কথা মন থেকে মুখে উঠে আসতে না আসতেই টুইটার জগতে ঝড় উঠেছে৷

এমনটা অবশ্য ‘স্বচ্ছ ভারত' অভিযানের সময়ও হয়েছিল৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অর্থাৎ তা শিরোধার্য৷ ভারতের সাধারণ মানুষ তো বটেই, আমলা-মন্ত্রী, বলিউডের নামি-দামি অভিনেতা – সকলেই রাস্তায় নেমেছেন৷ এমনকি আহমেদাবাদে একটি সম্মিলিত বিবাহ অনুষ্ঠানেও বর-কনেরা ঝাড়ু হাতে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সম্প্রতি৷

এছাড়া খাদ্য সুরক্ষা, জমি অধিগ্রহণ, শ্রম আইন সংশোধন, কর্মসংস্থান, শিক্ষার অধিকার ইত্যাদি প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে মোদী সরকার৷ হাত দিয়েছে আর্থিক সংস্কার এবং ‘কালো টাকা' পুনরুদ্ধারে৷ বলা বাহুল্য, নরেন্দ্র মোদীর স্পষ্টবাদিতা এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা আজ সর্বত্র সুবিদিত৷ তাই তিনি যখন ভারতবাসীকে পরামর্শ দেন, তখন কারুর মনেই কোনো প্রশ্ন ওঠে না৷ বরং মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর বাণী শোনেন:

দেবারতি গুহ, ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের সম্পাদকছবি: DW

- মাদক সেবন এক ধরণের ব্যাধি৷

- চিকিৎসকেরা পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ ব্যবহার করবেন না৷ অনেক সময়ে কাশির ওষুধও নেশার উৎস হয়ে থাকে৷

- বর্তমান প্রতিযোগিতার দৌড়ে বাবা-মা তাদের সন্তানকে সময় দিতে পারেন না৷ তাঁরা কখনই শিশুর পড়াশোনার বাইরে তার মনের কথা শোনেন না৷

- শিশুদের মনের পরিবর্তন একদিনে হয় না৷ ধীরে ধীরে শিশুর মানসিক পরিবর্তন হয়৷ প্রথম ধাপেই যদি অভিভাবক তাঁর সন্তানের দিকে সঠিক নজর দেন, তাহলে তারা জীবনে চলার পথে নেশা বেছে নেবে না৷

- নেশা খারাপ, তবে যারা নেশা করে তারা খারাপ না৷

- স্বামী বিবেকানন্দ যুব সমাজের আদর্শ নিদর্শন৷ তাই তাঁর দেখানো পথে চলুন৷

- মাদক ব্যবসায়ীদের সাহায্য করবেন কেন? প্রশ্ন তুলেছেন মোদী৷

আক্ষরিক অর্থে কথাগুলো ঠিক৷ মাদক বিরোধী অভিযানে ‘হেল্পলাইন' এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার – এ সবের গুরুত্ব আছে৷ এতে জনমানসে সচেতনতা বাড়ে, সন্দেহ নেই৷ এই যেমন তভলিন সিং-এর মতো বিখ্যাত সাংবাদিক যখন #ড্রাগফ্রিইন্ডিয়া ব্যবহার করে টুইট করেন, তখন মানুষ আরো আশ্বস্ত হয়৷

কিন্তু আমার ভয় করে তখনই, যখন এ সবের মধ্যে একটা ‘হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুস্থান'-এর গন্ধ পাই৷ যখন দেখি, একটার পর একটা হিন্দু আশ্রম ফাঁক পেয়ে সুযোগ খুঁজছে৷ এই যেমন ‘আশ্রম ব্যাঙ্গালোর' টুইট করেছে:

অর্থাৎ তারা বলছে, ‘আয়ুর্বেদেই সব উত্তর আছে৷ তাই অ্যান্টিবায়োটিক বর্জন করুন৷' অথবা ‘নেশা দূর করতে যোগব্যায়ামের বিকল্প নেই৷ তাই আপনি ‘অমুক' বা ‘তমুক' আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত হন৷'

ভয়টা আরো বেড়ে যায় যখন দেখি রেনু শরাফের মতো সাধারণ একজন মানুষ ‘নেশামুক্ত ভারত' গড়ার আন্দোলনকে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতবর্ষকে তুলনার কাজে ব্যবহার করছেন৷

তখন আমার প্রভাকরণের মতো প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই একের পর এক সামাজিক অভিযানকে ‘অসাধারণ সব রাজনৈতিক কৌশল' বলে মনে হয়৷ এটা যেন তাঁর নতুন ‘খেলা'৷

মনে হয়, মানুষের আশা-আকাঙ্খাকে নিজের ‘মনের কথা' বলে তিনি একদিকে যেমন অগুন্তি ভারতবাসীর মন জয় করছেন, তেমন তাঁদেরই অজান্তে খুব ধীর গতিতে তিনি পাল্টে দিতে চাইছেন ভারতীয়দের মনন৷ ভারতের জনমানসে তিনি সঞ্চারিত করছেন হিন্দুত্বের বীজ৷ অথচ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় এসে মোদী কিন্তু একবারও গৌরিক ধ্বজা ওড়াননি৷ বরং মানুষের ইচ্ছে, তাঁদের সমস্যা, আশা-আকাঙ্খাকে গুরুত্ব দিয়ে বুদ্ধিমত্তারই পরিচয় দিয়েছেন৷ তারপরও সন্দেহ যায় না৷ ভুলতে পারি না তাঁর ‘লঙ্কাকাণ্ড’ থুড়ি ‘গুজরাট কাণ্ড'...৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ