সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করার জন্য কলেজিয়াম সিস্টেমের পরিবর্তে অন্য এক ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে ভারতে৷ বুধবার জাতীয় বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন বিল ২০১৪ পাশ হয়েছে সংসদে৷
বিজ্ঞাপন
তবে এ নিয়ে বিচার বিভাগ কার্যত বিভাজিত৷ সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগে জাতীয় বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন বিলটি পাশ হবার পর বর্তমানের কলেজিয়াম সিস্টেমের অবসান হলো ভারতে৷ বিলটি পাশ হয় সময়াভাবে ধ্বনিভোটে৷ পক্ষে পড়ে ৩৬৭ এবং বিপক্ষে শূন্য৷ এবার সরকার ৯৯তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করবে যাতে এই কমিশনকে সাংবিধানিক ক্ষমতা ও মর্যাদা দেয়া যায়৷
সব দলকে সঙ্গে নিয়ে এই ঐতিহাসিক বিল পাশ করিয়ে মোদী সরকার সংসদে এই প্রথম বড় রকম সাফল্য পেল৷ এই ব্যবস্থায় বিচারপতি নিয়োগে আসবে আরো স্বচ্ছতা৷ তবে বিল পাশ হওয়ায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং মর্যাদা কোনোমতেই ক্ষুন্ন হতে দেয়া হবে না৷ এর পাশাপাশি এটাও দেখা দরকার যে, সংসদ যেহেতু সংবিধানের সর্বোচ্চ ধারক ও বাহক, তাই সংসদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখাও খুব জরুরি, বলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ৷ সরকার এই বিল পাশে তাড়াহুড়ো করেছে – এই অভিযোগ খণ্ডন করেন তিনি৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
তাঁর মতে, বিচার বিভাগের সংস্কারের লক্ষ্যে এটা এক বড় পদক্ষেপ যা নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ব্যাপক আলোচনা ও পরামর্শ চলে বিশিষ্ট আইনজীবী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে৷ জাতীয় বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গঠিত হবে ছয়জন সদস্য নিয়ে৷ এঁদের মধ্যে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ অন্য দু'জন বিচারপতি, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী এবং দু'জন বিশিষ্ট ব্যক্তি৷ প্রত্যেক বিচারপতি নিয়োগে কমিশনের ছয় জন সদস্যের মধ্যে অন্তত পাঁচজনকে একমত হতে হবে৷ প্রসঙ্গত, কলেজিয়াম সিস্টেমে সব সদস্যই হতেন সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি৷
মোদী সরকারের আইনমন্ত্রী বিল পেশ করায় গোড়ার দিকে কংগ্রেস বেঁকে বসেছিল৷ বলেছিল বিলে কিছু ফাঁক-ফোঁকর আছে, যা সংশোধন করতে হবে৷ কিন্তু মোদী সরকার অতি কৌশলে যখন অন্য সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়, কংগ্রেসের তখন একঘরে অবস্থা৷ কোনো উপায় না দেখে কংগ্রেস ঐ বিলে সায় দিতে বাধ্য হয়৷
কলেজিয়াম প্রথার পরিবর্তনের কারণ
বিচার বিভাগের বর্তমান ব্যবস্থায় বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে৷ বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু সম্প্রতি সোচ্চার হন৷ অন্যান্য কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিও তাঁকে সমর্থন করেন৷ তাই তাঁরা চান কলেজিয়াম পদ্ধতির পরিবর্তন যাতে আরও যোগ্য ও সৎ বিচারপতিপদে আসীন হন৷ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে.টি টমাস সংশয় প্রকাশ করেন যে, জাতীয় নিয়োগ কমিশনের নিযুক্ত বিচারপতি আরো যোগ্য ও সৎ হবে তার কোনো গ্যারান্টি আছে কি?
উল্লেখ্য, অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত সরকারের কাজকর্মে সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়৷ এবার বোধকরি সরকার সেটা বিপরীতমুখী করতে চান৷ যেমন কারোর নিয়োগে দু'জন সদস্য আপত্তি করলে কমিশনকে তা মেনে নিতে হবে৷ কিন্তু আইনমন্ত্রী যদি একা আপত্তি করেন, তাহলে তা গ্রাহ্য হবে না৷ জাতীয় কমিশন অনুমোদন করলে তা যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য৷ কিন্তু রাষ্ট্রপতি যদি কোনো নাম পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠান, তাহলে কমিশনের সব সদস্যের সম্মতি লাগবে৷ তখনো যদি কোনো সদস্য তাঁর আপত্তিতে অনড় থাকেন, তাহলে তাঁকে নিয়োগ করা যাবে না৷