1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীর হিন্দুত্ব বনাম নীতীশ-রাহুলের সংরক্ষণের লড়াই

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৯ নভেম্বর ২০২৩

ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লড়াইটা ক্রমশ বিজেপি-র হিন্দুত্ব বনাম বিরোধীদের সংরক্ষণের লড়াইয়ে পরিণত হচ্ছে।

লালুপ্রসাদ, রাবড়ি দেবী, তেজস্বী যাদবের সঙ্গে নীতীশ কুমার।
মোদীর হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে সংরক্ষণকে অস্ত্র করতে চান নীতীশ কুমার, লালু যাদব, তেজস্বীরা। ছবি: Santosh Kumar/Hindustan Times/IMAGO

২০১৪-র পর থেকে বিজেপি যে লোকসভা নির্বাচন হিন্দুত্বের কর্মসূচির ভিত্তিতে লড়ে, সেটা আর নতুন কোনো কথা নয়। এবারও লোকসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই বিজেপি হিন্দুত্বের কর্মসূচি সামনে আনছে। আগামী ২১ জানুয়ারি অযোধ্য়ায় রামমন্দিরের উদ্বোধনের পর যা রীতিমতো গতি পাবে।

কিন্তু বিরোধীরা এবার নতুন বিষয় সামনে এনেছে। সেটা হলো, জাতিগত সংরক্ষণ। আরো সহজ করে বললে, ওবিসি বা অন্য অনগ্রসর জাতির জন্য আরো বেশি করে সংরক্ষণ। এর প্রথম পরীক্ষাটা হচ্ছে বিহারে। সেখানে ঝানু রাজনীতিক নীতীশ কুমার এই বিষয়টিকে সামনে আনাই নয়, তার উপর কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

কী করছেন নীতীশ?

নীতীশ কুমার প্রথমে জাতিগত সমীক্ষার ফলাফল সামনে এনেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিহারে ৯৪ লাখ পরিবারের আয় মাসে ছয় হাজার টাকা বা তার থেকে কম। দলিত ও আদিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশ গরিব। অন্য অনগ্রসরদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ গরিব। অতি অনগ্রসরদের মধ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ গরিব।  অনগ্রসরদের মধ্যে যাদবদের অবস্থা খুব খারাপ। তিনটি যাদব পরিবারের মধ্যে একটি গরিব।

মুসলিমদের মধ্যে শেরশাহবাদি ও ধুনিয়ারা অতি অনগ্রসরদের মধ্যে পড়ে। তাদের প্রায় ৩২ শতাংশ গরিব। মোমিনদের মধ্যে ২৮ শতাংশ ও কুঞ্জরাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ গরিব। অনগ্রসর তালিকায় থাকা সূর্যপূরি মুসলিমদেরও প্রায় ৩০ শতাংশ গরিব। এর বাইরে শেখদের মধ্যে ২৬ শতাংশ, পাঠানদের মধ্যে ২২ শতাংশ, সৈয়দদের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ গরিব।

বিহারে উচ্চবর্ণের সংখ্যা ২০ লাখ ৪৯ হাজার। তার মধ্যে ছয় লাখ ৪১ হাজার জন সরকারি কর্মী। ফলে জনসংখ্যার তুলনায় তারা অনেক বেশি সংখ্যায় সরকারি চাকরিতে আছেন।

নীতীশের সিদ্ধান্ত

মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এই পরিস্থিতিতে দুইটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথমটি হলো, ৯৪ লাখ পরিবারকে দুই লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো, তিনি ঘোষণা করেছেন, দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসর, অতি অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণের পরিমাণ ৬৫ শতাংশ করে দেয়া হবে। এছাড়া আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়াদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু আছে। সবমিলিয়ে তাহলে সংরক্ষণের পরিমাণ হয়ে যাবে ৭৫ শতাংশ।

তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় হলো, ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ দেয়া যায় না। কিন্তু নীতীশ কুমার বলেছেন, তিনি পথ বের করবেন। প্রথমে বিধানসভায় সংরক্ষণের প্রস্তাব পাশ করবেন। তারপর তা চালুর ব্যবস্থা করবেন। তবে কীভাবে তা তিনি জানাননি।

অযোধ্যার রামমন্দির এবং উত্তরপ্রদেশের ভোট

04:02

This browser does not support the video element.

কংগ্রেসও একই পথে

কংগ্রেস এবার রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ক্ষমতায় এলে তারা জাতিগত সমীক্ষা করবে এবং সেইমতো ব্যবস্থা নেবে। ফলে কংগ্রেসও যে নীতিশের পথে চলতে চাইছে, সেটা তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, সংরক্ষণের উপর থেকে ৫০ শতাংশের সীমা তুলে নিতে হবে। গরিবদের ও পিছিয়ে পড়া মানুষের ক্ষমতায়ণ নিয়ে ফাঁকা বুলি দিলে হবে না, তাদের জন্য সত্যিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিজেপি-র কর্মসূচি

বিজেপি এখন রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি। তার আগে এখন থেকে শুরু হচ্ছে নানা ধরনের কর্মসূচি। যোগী আদিত্যনাথ বৃহস্পতিবারই তার মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন অযোধ্যায়। এই প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক অযোধ্যায় হলো। তিনি নির্মীয়মান রামমন্দিরেও যান।

দিওয়ালিতে অয়োধ্য়ায় ২১ লাখ প্রদীপ জ্বলানো হবে। সরযূর ধারে লাখ লাখ প্রদীপ জ্বালবে। জানুয়ারি থেকে শুরু হবে রামমন্দিরকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠান। ২১ জানুয়ারি উদ্বোধনের পর থেকে এক মাস ধরে চলবে উদযাপন পর্ব।

ফলে হিন্দুত্বের হাওয়া তোলার সব আয়োজন সম্পূর্ণ। এছাড়াও আছে কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দির ও মথুরায় কৃষ্ণজন্মভূমি মন্দির নিয়ে বিশেষ প্রচারাভিযান।

আবার মণ্ডল বনাম কমন্ডল?

১৯৮৯ সালে হিমাচলের পালামপুর অধিবেশনে বিজেপি প্রথমবার রামমন্দির আন্দোলনে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯০ থেকে শুরু হয়  আডবাণীর রামরথ যাত্রা। তার মোকাবিলায় বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং নিয়ে আসেন মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টকে। তিনি ওবিসি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এই কমণ্ডলকে ঠেকাতে মণ্ডল কমিশনকে হাতিয়ার করে লড়াই করাটাকেই ভারতে মণ্ডল বনাম কমণ্ডল বলা হয়।

এবারও বিজেপি-র হিন্দুত্বকে ঠেকাতে নীতীশ কুমার-রাহুল গান্ধীরা সেই সংরক্ষণকতেই হাতিয়ার করেছেন। তাহলে লোকসভার লড়াইটা কি আবার মণ্ডল বনাম কমণ্ডলে পরিণত হচ্ছে?

নিস্তব্ধ বাবরি মসজিদের বিকল্প জমি

02:21

This browser does not support the video element.

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''২০১৪ থেকে মোদী সমানে এই জাতপাতের বেড়া ভাঙার জন্য হিন্দুত্বকে সামনে এনেছেন। তিনি উত্তরপ্রদেশে এই কাজে সফল হয়েছেন। অন্য কিছু রাজ্যেও সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু তাই বলে জাতপাতের বিষয়টি তো হারিয়ে যায়নি।'' তার মতে, ''নীতীশ ও রাহুলরা চেষ্টা করছেন জাতিগত বিষয়টাকে উসকে দিতে। না হলে মোদীর হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইটা কঠিন হয়ে যাবে। তারা কতটা সফল হবেন, সেটা অন্য প্রশ্ন, তবে এই কৌশল লোকসভার লড়াইটাকে কৌতূহলকর জায়গায় নিয়ে এসেছে।''

কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর নীতীশদের পক্ষে কি সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব? সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অরিন্দম দাস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''নীতীশরা তো রাজনৈতিক কথা বলছেন। এই সংরক্ষণ  চালু করতে গেলে সংবিধান সংশোধন দরকার। সংসদের দুই সভায় তার জন্য দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা দরকার। তাছাড়া এই সংশোধন হবে না।'' তবে সুপ্রিম কোর্টই কিছুদিন আগে রায় দিয়েছে, গরিবদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণ বৈধ। 

শুভাশিস অবশ্য মনে করছেন, ''আন্দোলনের চাপ থাকলে সুপ্রিম কোর্টও মত বদলায় তা আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি।  ফলে এক্ষেত্রেও মতবদল হওয়াটা একেবারে অসম্ভব নয়। তার আগে মানুষের কাছে দাবিটা বিশ্বাসযোগ্যভাবে পৌঁছতে হবে, এটাকে আন্দোলনের রূপ দিতে হবে।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ