সব সমীকরণ ভেস্তে দিয়ে উত্তর প্রদেশ বিধানসভা ভোটে তিন-চতুর্থাংশ আসন এখন বিজেপির ঝুলিতে৷ এই আশাতীত সাফল্য সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে মোদীর আসন আরও পাকা করেছে৷ মোদীর জয়ের কারণ ব্যাখা করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশ হিন্দি বলয়ের ভরকেন্দ্র৷ জাতীয় রাজনীতির বাতিস্তম্ভ বলা হয়ে থাকে একে, যদিও রাজ্যটির ভোট বিভাজিত হয়ে থাকে কার্যত জাতপাত ও ধর্মীয় মেরুকরণের ভিত্তিতে৷ কিন্তু এবারের ভোটে সেই ফর্মুলাটা একেবারেই উল্টে গেল৷ বেড়া ভেঙে উচ্চবর্ণ, নিম্নবর্ণ ও বিজেপি বিরোধী মুসলিম সম্প্রদায় একযোগে ভোট দিয়েছে গৈরিক পার্টিকেই৷ বিশেষ করে মুসলিম প্রধান পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মজফ্ফরনগর, সামলি, বেরিলি, খলিলাবাদ, মিরাট, মোরাদাবাদ ইত্যাদি এলাকার ২৪টি আসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ প্রার্থী হেরে গেছেন৷ ভোট আড়াআড়িভাবে ভাগ হয়ে গেছে৷ অনেকে বিস্মিত হয়েছেন, কিন্তু স্বীকার করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সর্বভারতীয় গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে গেছে অনেক গুণ৷ সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খার নাড়িটা বুঝে তিনি অর্থনৈতিক বিকাশ এবং জাতীয়তাবাদের পেশিশক্তিকে নির্বাচনি প্রচারে কাজে লাগিয়েছেন এবং তাতে সফল হয়েছেন৷ সব সম্প্রদায়ের ধারণা হয়েছে, রাজ্যের বড় বড় দল যেমন, মুলায়েম সিং-এর পরবর্তিকালে অখিলেশ সিং-এর সমাজবাদী পার্টি, মায়াবতীর দলিত বান্ধব বহুজন সমাজ পার্টির শাসন তো দেখা হলো, এবার বিজেপিকে ভোট দিয়ে দেখা যাক, রাজ্যের বিকাশে কতদূর কী করতে পারে৷ কারণ কেন্দ্রে আছে মোদী সরকার৷ কাজেই রাজ্যের উন্নয়নের একটা ইতিবাচক সংযোজন এটা৷ সময় এসেছে জাতপাত ও ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক পরিচয় পালটাবার. দরকার স্রেফ বিকাশ৷
একজন নরেন্দ্র মোদী
উগ্র সাম্প্রদায়িক আদর্শ এবং বিভাজনের রাজনীতির কারণে ভারতের বহু মানুষের কাছে তিনি খলনায়ক৷ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নিজেকে নতুন মোড়কে সামনে এনে সেই নরেন্দ্র মোদীই শোনাচ্ছেন ভারতকে বদলে দেয়ার মন্ত্র৷
ছবি: dapd
চা ওয়ালা
১৯৫০ সালে গুজরাটের নিম্নবিত্ত এক ঘাঞ্চি পরিবারে জন্ম নেয়া নরেন্দ্র মোদী কৈশরে বাবাকে সাহায্য করতে রেল ক্যান্টিনে চা বিক্রি করেছেন৷ ঘাঞ্চি সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী ১৭ বছর বয়সে যশোদাবেন নামের এক বালিকার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়, যদিও বেশিদিন সংসার করা হয়নি৷ ছাত্র হিসেবে সাদামাটা হলেও মোদী বিতর্কে ছিলেন ওস্তাদ৷ ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর প্রচারক হিসাবে রাজনীতির দরজায় পা রাখেন মোদী৷
ছবি: UNI
গুজরাটের গদিধারী
১৯৮৫ সালে আরএসএস থেকে বিজেপিতে যোগ দেয়ার ১০ বছরের মাথায় দলের ন্যাশনাল সেক্রেটারির দায়িত্ব পান ১৯৯৫ সালে গুজরাটের নির্বাচনে চমক দেখানো মোদী৷ ১৯৯৮ সালে নেন দলের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব৷ ২০০১ সালে কেশুভাই প্যাটেলের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে দলের মনোনয়নে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আবির্ভূত হন নরেন্দ্র মোদী, যে দায়িত্ব তিনি এখনো পালন করে চলেছেন৷
ছবি: Reuters
দাঙ্গার কালিমা
মোদীকে নিয়ে আলোচনায় ২০০২ সালের দাঙ্গার প্রসঙ্গ আসে অবধারিতভাবে৷ স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় গুজরাটে প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন৷ মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি দাঙ্গায় উসকানি দেন৷ তিনি এ অভিযোগ স্বীকার করেননি, আদালতও তাঁকে রেহাই দিয়েছে৷ তবে দাঙ্গার পক্ষে কার্যত সাফাই গেয়ে, হিন্দুত্ববাদের গান শুনিয়েই তিন দফা নির্বাচনে জয় পান মোদী৷
ছবি: AP
রূপান্তর
দাঙ্গার পর নিজের ভাবমূর্তি ফেরানোর উদ্যোগ নেন নরেন্দ্র মোদী৷ একজন বিতর্কিত নেতার বদলে উন্নয়নের কাণ্ডারি হিসাবে তাঁকে প্রতিষ্ঠা দিতে শুরু হয় ‘গুজরাট মডেল’-এর প্রচার৷ ২০০৭ সালের পর নিজেকে একজন সর্বভারতীয় নেতা হিসাবে তুলে ধরতে নতুন প্রচার শুরু করেন এই বিজেপি নেতা, প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্র্যান্ড মোদী’৷গুজরাটের উন্নয়নের চিত্র দেখিয়ে কলঙ্কিত ভাবমূর্তিকে তিনি পরিণত করেন ভারতের ত্রাতার চেহারায়৷
ছবি: UNI
ভারতের পথে পথে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে নরেন্দ্র মোদী পাড়ি দিয়েছেন তিন লাখ কিলোমিটার পথ৷ সারা ভারতে পাঁচ হাজার ৮২৭টি জনসভায় তিনি অংশ নিয়েছেন, নয় মাসে মুখোমুখি হয়েছেন পাঁচ কোটি মানুষের৷ কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসাবে শুরু করলেও এবার তিনি হিন্দুত্ব নিয়ে প্রচার এড়িয়ে গেছেন সচেতনভাবে, যদিও বাংলাদেশের মানুষ, ভূখণ্ড এবং ধর্ম নিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতাদের বক্তব্য নতুন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে৷
ছবি: AP
নতুন ইতিহাস
ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটই যে এবার ভারতে সরকারগঠন করতে যাচ্ছে, বুথফেরত জরিপ থেকে তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ ৬৩ বছর বয়সি মোদীর নেতৃত্বে এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি৷ ৭ই এপ্রিল থেকে ১২ই মে অনুষ্ঠিত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৮১ কোটি ৪০ লাখ৷ তাঁদের মধ্যে রেকর্ড ৬৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেষ হাসি
নির্বাচনে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল – মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের অর্থনীতি নতুন গতি পাবে, গুজরাটের আদলে তিনি ভারতকে বদলে দেবেন৷ অবশ্য সমালোচকরা বলছেন, ‘কলঙ্কিত ভাবমূর্তি’ ঢাকতে এসব মোদীর ফাঁপা বুলি৷ তাঁর স্বৈরাচারী মেজাজ, শিক্ষা ও অর্থনীতির জ্ঞান নিয়েও ঠাট্টা-বিদ্রুপ হয়েছে৷ বলা হচ্ছে, ভোটাররা টানা তৃতীয়বার কংগ্রেসকে চায়নি বলেই বিজেপি জয় পেয়েছে৷ যদিও শেষ হাসি দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর মুখেই৷
ছবি: dapd
7 ছবি1 | 7
এরই প্রতিধ্বনী তুলে বিকাশের জোরাল বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ বিজেপির সাফল্যের পর গত রবিবার নতুন দিল্লির দলীয় সদর দপ্তরে বক্তব্য রেখে ২০১৪ সালের অচ্ছে দিনের স্লোগান সরিয়ে ২০২২ সালের মধ্যে নব ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখা তিনি, বললেন খয়রাতি বা ভরতুকির পরিবর্তে গরিবদের দিতে হবে স্ব-রোজগারের সুযোগ৷ মধ্যবিত্তদের দায়দায়িত্বের বোঝা হাল্কা করতে হবে৷ দেওয়া হবে মহিলাদের স্বশক্তিকরণের সুবিধা৷ এটাই হবে তাঁর নব-ভারতের স্বপ্ন সাকার করার মন্ত্র৷ এটা ২০১৯ সালের নির্বাচনি স্লোগান নয়, এটা আগামী পাঁচ বছরে দলের উদ্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা৷
উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস কোথায় দাঁড়িয়ে? কংগ্রেসের শক্তি রাজ্যে আর ধর্তব্যের মধ্যে নেই৷ শাসকদল সমাজবাদী পার্টির হাত ধরেও মোট ৪০৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন৷ কংগ্রেস কর্ণধার রাহুল গান্ধীর আমেথি সংসদীয় আসনের আওতায় থাকা আসনগুলিতেও সুবিধা করতে পারেনি৷ দলিত পার্টি বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) ভোট ছিল মায়াবতীর হাতে এবারে তাও হাতছাড়া৷ তাই বিএসপির এখন অস্তিত্বের সংকট৷
উত্তর প্রদেশে বিজেপির সাফল্যের কারণ ডয়চে ভেলের কাছে ব্যাখ্যা করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা৷ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রবীর কুমার দে মনে করেন, ধর্মীয় মৌলবাদ কাজ করেনি৷ গুজরাট দাঙ্গার পর সংসদীয় নির্বাচনে মোদী যেভাবে জয়ী হলেন, তাতে মনে হয় সেটা জনমানসে তেমন দাগ রাখতে পারেনি৷ এখন দেশ চাইছে সংসদীয় ভোটের সময়কার বিকাশের মডেল৷ উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে সেটাই ছিল সাধারম মানুষের প্রত্যাশা৷ ভেবেছে মোদী জমানা একটা স্থিতিশীল উন্নয়নের সুফল এনে দিতে পারবে৷ সেটা কতটা পারবে, সেটা সময়ই বলে দেবে৷ নোট বাতিল ইস্যুতে সাধারণ মানুষের মনে হয়েছে এটা বিকাশের একটা পন্থা৷ প্রথমদিকে কিছুটা সংশয় থাকলেও পরে সেটা কেটে যায়, ডয়চে ভেলেকে বললেন অধ্যাপক প্রবীর দে৷
যোগচর্চা নিয়ে রাজনীতি, বিতর্ক
সারা বিশ্বেই আজ যোগাসনের কদর৷ পশ্চিমে দেহ-মন চর্চার এক পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে যোগব্যায়াম বা ‘ইয়োগা’৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী স্কুলগুলোয় যোগাভ্যাসকে বাধ্যতামূলক করতে চান৷ আর সেখানেই সমস্যা!
ছবি: Fotolia/W. Goldswain
স্বাস্থ্য সুরক্ষার দারুণ উপায়
সুস্থ, সুন্দর স্বাস্থ্যের জন্য যোগব্যায়ামের তুলনা নেই৷ তাই শিশুদের নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে যোগচর্চা যে সাহায্য করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ তার ওপর মানসিক চাপ কমাতে যোগাসনের তুলনা হয় না৷ ‘ওয়েলনেস আর ফিটনেস’-এর জগতে ‘ইয়োগা’ আজ এক অপরিহার্য অঙ্গ৷ কিন্তু তাই বলে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক যোগশিক্ষা?
ছবি: MFA+ FilmDistribution e.K./ Jan Schmidt-Garre
বাধ্যতামূলক যোগচর্চা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি চাইছে, যোগচর্চা বা ‘ইয়োগা’-কে ভারতের জাতীয় সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তুলে ধরার৷ তাই স্কুলগুলোর পাঠ্যক্রমে যোগব্যায়ামকে বাধ্যতামূলক করতে লবি-ও করা হচ্ছে৷ কিন্তু ভারতের কট্টর মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই এই যোগচর্চার বিরোধী৷
ছবি: AFP/Getty Images/I. S. Kodikara
সুপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদ?
যোগাভ্যাসের সময় সাধারণত বেশ কিছু সংস্কৃত শব্দ এবং শ্লোকের ব্যবহার করা হয়৷ সাধনার জন্য ‘ওম’ ধ্বনির প্রচলন সর্বজনসিদ্ধ৷ এছাড়া আসনগুলোর নামেও রয়েছে পৌরাণিক ছোঁয়া৷ তাই স্কুলগুলোয় যোগব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধীদের বক্তব্য স্পষ্ট: এমন কিছু করলে তা ভারতের অ-হিন্দু জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করবে৷
ছবি: AP
‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়োগা ডে’
ভারতের ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, স্কুলের শিশুদের যোগাসন ও সূর্যপ্রণাম করতে বাধ্য করা তাদের ধর্মবিশ্বাসের বিরোধী৷ তাই সারা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রস্তুত তাঁরা৷ ওদিকে, যোগশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্য নিয়ে ২১শে জুনকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়োগা ডে’ হিসেবে পালন করার পরিকল্পনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যোগ, তুমি কার?
যোগসাধনার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা নয়, পাঠক্রমে ‘সূর্যপ্রণাম’ থাকবে কিনা – তা নিয়ে রাজনীতির ‘টাগ অফ ওয়ার’ চলছে এখন৷ অথচ যোগচর্চাকে কি আজ আদৌ ভারতীয় বলা যায়? বিশ্বজুড়ে এক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে যোগাভ্যাস৷ যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত দু’কোটি মানুষ যোগব্যায়াম করেন – এর মধ্যে আছেন অগণিত খ্রিষ্টান, মুসলমান, ইহুদি এবং নাস্তিকও৷
ছবি: Fotolia/XtravaganT
সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান
জার্মানির হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারততত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. আক্সেল মিশায়েল যোগসাধনার নানা মার্গের সঙ্গে পরিচিত৷ তাঁর কথায়, ‘‘যোগচর্চা আজ যে রূপ নিয়েছে, তা ভারতীয়ও নয়, নয় পশ্চিমেরও৷ এ হলো বহুজাতিক, আন্তঃসাংস্কৃতিক৷ বিভিন্ন সংস্কৃতির মাঝে এর অবস্থান৷ তাই হিন্দুধর্মের ঐতিহ্য থেকে যোগসাধনাকে বের করে আনলে চলবে না৷’’
ছবি: Colourbox/George Dolgikh
যোগসাধনা করতে হবে স্বেচ্ছায়
হলিউডের এর ‘ওয়েলনেস গুরু’ দীপক চোপরা মনে করেন, যোগ গোটা মানবজাতির উত্তরাধিকার৷ এছাড়া আধুনিক শরীরনির্ভর, পশ্চিমে জনপ্রিয় ‘হঠযোগ’ ১০০ বছরের বেশি প্রাচীন নয়৷ তাই যোগব্যায়াম নিয়ে রাজনীতি নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে এর গুণাগুণ তুলে ধরা প্রয়োজন৷ তবে সেটা গায়ের জোরে নয়, আর আইন করে তো নয়ই৷
ছবি: Africa Yoga Project
7 ছবি1 | 7
বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, রাজ্যে ভোটের মুখে পারিবারিক ভাঙনকেই শাসকদল সমাজবাদী পার্টির ভরাডুবির অন্যতম কারণ৷ এতে দলের বিশ্বাসযোগ্যতা মার খেয়েছে৷ বরিষ্ঠ নেতারা যেহেতু ছিল দলের প্রতিষ্ঠাতা মুলায়েম সিং যাদবের পক্ষে সেহেতু অখিলেশ সিং-এর গ্রহণীয়তায় ভাটা পড়ে৷ অখিলেশকে রাজনৈতিকভাবে অপরিণত বলে মনে হয়েছে ভোটারদের৷ মুসলিমদের ভোট ভাগ হবার কারণ হিসেবে ড. চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলে বলেন, কেন্দ্রে আছে বিজেপি সরকার৷ রাজ্যে মুসলিমদের আলাদা ভোট ব্যাংক থাকলে তাতে আখেরে লাভের চেয়ে লোকসান হবে বেশি৷ মুসলিমরা আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে৷ বিমুদ্রাকরণ প্রসঙ্গে তিনি মনে করেন, আচমকা নোট বাতিলের ফলে প্রথমদিকে সাধারণ মানুষের কিছুটা সমস্যা হয়েছিল ঠিকই৷ কারণ তাঁদের কাছে নগদ ছিল না৷ পরে বুতে পেরেছে, নোটবন্দির ফলে কালো টাকার ওপর যারা বসে আছে, কর ফাঁকি দিয়ে তাঁদের শায়েস্তা করার এটা মোক্ষম দাওয়াই৷ ফলে ভোটে সেটা ইস্যু হয়নি৷ বরং মোদীর সাহসী পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে৷ কর্মসংস্থানের জন্য তরুণ প্রজন্মের আস্থা আছে মোদীর ওপর৷ সেটা কতটা পূরণ হবে তা সময়ই বলবে৷ অন্যদিকে কংগ্রেসে এখন নেতৃত্বের সংকট৷ রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বের ওপর এখন প্রশ্নচিহ্ন৷ গান্ধী পরিবারের বাইরে বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তোলা দরকার৷ তা না হলে কংগ্রেসে দেখা দিতে পারে ভাঙন৷
প্রেসিডেন্সি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডক্টর অমল মুখোপাধ্যায় মনে করেন, মোদীর ক্যারিশমাই উত্তর প্রদেশে বিজেপির আশাতীত জয়ের মূল কারণ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, মোদী যেভাবে প্রচার অভিযান চালিয়েছিলেন, তার ফলেই এই মোদী ঝড়ের উত্পত্তি৷ তাতে উড়ে গেছে সব বিরোধিশক্তি৷ এই ঝড় আগামী ভোট পর্যন্ত মোদী ধরে রাখতে পারবে বলে তিনি মনে করেন৷ নোট বাতিল ইস্যু নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে যে জোট বাঁধার চেষ্টা করেছিলেন তা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ৷ কারণ পশ্চিমবঙ্গের বাইরে মমতার দাপট নেই৷ মোদীর জয়ে কি রামমন্দির, বাবরি মসজিদ ইস্যু আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে ড. মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বললেন, অবশ্যই সেই বিপদটা আছে৷ মৌল হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস মোদীর ওপর এই নিয়ে চাপ বাড়াতে পারে এবং সেটা হবে দেশের পক্ষে ভয়ের কারণ৷
ধর্মের নামে মন্দির, মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় হামলা
প্রাচীন স্থাপনা ও অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করে চলেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ মসজিদের ওপরও হামলা হয়েছে৷ উপমহাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ইতিহাসও দীর্ঘ৷ ধর্মের নামে এমন ধ্বংসের ‘খেলা’ থামবে কবে?
ছবি: Reuters
মালিতে ধ্বংসলীলা
এক সময় মালির টিমবাকটু শহরের অন্য নাম ছিল ‘মরুদ্যানের মুক্তা’৷ সেই শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেই চলেছে সেখানকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠন৷ ২০১২ সালে শহরটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলমানদের গড়া অনেক স্থাপত্য নিদর্শনও ধ্বংস করেছে তারা৷ সম্প্রতি শহরটিকে জঙ্গিদের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করার দাবি করেছে মালির সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP
সন্ত্রাসপ্রীতি এবং জ্ঞানভীতি
শুধু স্থাপনা বা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনই নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপিও ধ্বংস করেছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/P. Breu
তথাকথিত আইএস-এর হামলা
সিরিয়ার পালমিরা শহরের প্রায় ২,০০০ বছরের পুরনো স্থাপনাগুলোও রেহাই পায়নি৷ সে দেশে চলছে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর ধ্বংসযজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পালমিরার মন্দির ধ্বংস
এক সময় সিরিয়ার হোমস নগরীর এই স্থাপনাটিকে নিয়ে গর্ব করত সিরিয়া৷ এটি এক সময় ছিল মন্দির৷ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন এই উপসনালয় দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হতেন৷ আইএস-এর হামলায় স্থাপনাটি এখন ক্ষতবিক্ষত৷
ছবি: Reuters/Stringer
ধ্বংস যখন প্রচারণার হাতিয়ার
ধর্মীয় সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক সহাবস্থানকে হুমকির মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টায় আইএস অক্লান্ত৷ নৃশংসতা, বর্বরতা ক্রমেই আইএস-এর প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠছে৷ এভাবে পেট্রল ঢেলে স্থাপনা পোড়ালে সংবাদমাধ্যম লুফে নেয় খবর, খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত জঙ্গিরাও পেয়ে যায় তাদের কাঙ্খিত প্রচার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আয়ের উৎস
সিরিয়া ও ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ শুধু ধ্বংসই করে না, অনেক সময় কদর বুঝে সেগুলো চোরাপথে চড়াদামে বিক্রিও করে আইএস৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ আছে আইএস-এর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/IS/Internet
আফগানিস্তানে তালেবান বর্বরতা
আফগানিস্তানের এই বৌদ্ধ মন্দিরটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো৷ ২০০১ সালে হামলা চালিয়ে এটি প্রায় ধ্বংস করে দেয় তালেবান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Ahmed
আফ্রিকায় হামলার শিকার মসজিদ
মসজিদও অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্মীয় উন্মত্ততার শিকার৷ ২০১৫ সালে মুসলমানদের উপাসনালয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলার খবর আসে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান থেকে৷ খ্রিষ্টান-মুসলিম দাঙ্গায় সেখানে অন্তত ৪১৭টি মসজিদ আংশিক অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করা হয়৷
ছবি: ISSOUF SANOGO/AFP/Getty Images
গির্জায় হামলা
ইসলামি জঙ্গিরা আফ্রিকা অঞ্চলে গির্জাতেও প্রায়সময়ে হামলা চালায়৷ হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ ওপরের ছবিটিতে কেনিয়ার এক গির্জায় হামলার পরের দৃশ্য৷
ছবি: dapd
ভারতের ইতিহাসের কালো অধ্যায়
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসের ‘কালো দিন’৷ ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার বাবরি মসজিদে সেদিনই হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে হিন্দু মৌলবাদীরা৷ মুঘল সম্রাট বাবরের নামে গড়া সুপ্রাচীন এই মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
বাংলাদেশে প্রতিবছরই মন্দিরে হামলা
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মূলত একাত্তরের মুক্তযুদ্ধের সময় থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুরা হামলা, নির্যাতনের শিকার৷ তবে মন্দিরে মুর্তি ভাঙা, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনা ঘটে প্রতিবছর৷ বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হামলার কারণ ধর্মীয় উগ্রতা৷ সারা বিশ্বে ধর্মের নামে ধর্মীয় উপাসনালয় বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর হামলা থামবে কবে?