ফিরে এলেন আডবানি
১২ জুন ২০১৩সব ভালো যার শেষ ভালো৷ তবে কতটা ভালো তা সময়ই বলবে৷ বিজেপির ৮৫ বছরের প্রবীণতম নেতা লালকৃষ্ণ আডবানি দলীয় সব পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত অবশেষে তুলে নিতে সম্মত হয়েছেন৷ মোদীর নয়া অভিষেক মেনে নিয়েছেন আডবানি৷ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব গত ৩৬ ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও শেষপর্যন্ত হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ আরএসএস-এর হস্তক্ষেপে তা সফল হয়েছে৷
দলের প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে আডবানির সঙ্গে আলোচনা করার পর নাম ঘোষিত হবে৷ তবে এই শান্তি সূত্র কতদিন বহাল থাকবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধন্দ কাটেনি৷ তাঁদের মতে, আডবানিকে সম্মানজনকভাবে বিদায় দিয়ে মোদীর নতুন নেতৃত্বকে শেষপর্যন্ত জায়গা করে দেবে বিজেপি৷
আগামী নির্বাচনে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দলের নেতৃত্ব দেয়ায় আডবানি যারপরনাই অসন্তুষ্ট ছিলেন৷ তাঁর মতে, মোদী গোটা ভারতকে নেতৃত্ব দেবার উপযুক্ত নন৷ এই ইস্যু নিয়ে দলের মধ্যে সংকট সৃষ্টি করার পেছনে আডবানির কূটনৈতিক চাল থাকতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷
কী ছিল সেই চাল? আডবানিকে যাঁরা চেনেন এবং যাঁরা জানেন তাঁর কাজের ধারা, তাঁরা মনে করেন এতবড় সিদ্ধান্তের পেছনে আছে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন৷ আডবানির ধারণা, ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেনা৷ ত্রিশঙ্কু সংসদ হলে ঐ পরিস্থিতিতে অ-কংগ্রেস এবং বিজেপির অ-মোদী শাখার বিকল্প নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন৷ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী পদের স্বাভাবিক পছন্দ হতে পারবেন৷
লক্ষণীয়, দলের সব পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ কেন ছাড়লেন না?এর পেছনেও আছে রাজনৈতিক চাল৷ বর্তমানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের চেয়ারম্যান তিনি৷ সদস্য পদ ছাড়লে সেটাও ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছকের ভিত্তি ১৯৮০-র দশকের শেষাশেষি রাজনৈতিক পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতায় ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়েছিল প্রয়াত ভি.পি সিং-এর নেতৃত্বে৷ তখন রাজনৈতিক মতাদর্শের পরোয়া না করে সব দল একজোট হয়ে তৃতীয় ফ্রন্টের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল কংগ্রেস সরকারকে উচ্ছেদ করতে৷ তার মধ্যে বামদলও ছিল৷
হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ আরএসএস-এর নির্দেশেই যে মোদীকে নির্বাচনে দলের মুখ করা হয়েছে, বিজেপি নেতৃত্ব সেটা অস্বীকার করে আডবানিকে বোঝাতে চাইছে, দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের ইচ্ছাতেই মোদীকে নির্বাচনী হাল ধরার দায়িত্ব দেয়া হয়৷ সবাই জানে, মোদীর হিন্দুত্ববাদে কোন ভেজাল নেই৷ এটাকে মূলধন করেই মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে হ্যাট্রিক করেন৷ হালের উপ-নির্বাচনে কাউকে জিততে দেননি তিনি৷
মোদীর এই নয়া অভিষেকে এনডিএ শরিক দলগুলির অবস্থান কী? পাঞ্জাবের আকালি দল মোদীর অভিষেককে স্বাগত জানিয়েছে৷ ওড়িষার বিজু জনতা দল এবং মহারাষ্ট্রের শিবসেনা নিমরাজি৷ সবথেকে ফাঁপরে পড়েছে বিহারে নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল৷ সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখতে হলে নীতীশ কুমারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীকে মেনে নেয়া সম্ভব হবেনা৷ তাই তিনি বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংকে বারংবার চাপ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করার জন্য৷ কিন্তু রাজনাথ সিং তা এড়িয়ে গেছেন৷ সম্ভবত শুধু নীতীশ কুমারকেই নয়, আডবানিকেও খুশি রাখতে৷
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষিত না হওয়া অবধি এনডিএ ছাড়ার প্রশ্ন আসছেনা নীতীশ কুমারের৷ নীতীশ কুমারের এই সংকটের ফায়দা নিতে ময়দানে নেমে পড়েছে কংগ্রেস৷ নীতীশ কুমারকে বিজেপি সঙ্গ ছাড়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দিয়ে চলেছে৷ বোঝাতে চেষ্টা করছে, ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়ার এটাই মোক্ষম সময়৷ নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল ২০১৪-এর নির্বাচনের আগে বিজেপি-জোট ছাড়লে ধাক্কা খাবে বিজেপি সন্দেহ নেই ৷ তার ফায়দা তুলবে কংগ্রেস৷ আপাতত কংগ্রেসের সে গুড়ে বালি৷