মোদী এনডিএ-র নেতা নির্বাচিত, দাবি জানাবেন সরকার গঠনের
৫ জুন ২০২৪
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এবার তিনি সরকার গঠনের দাবি জানাবেন।
বিজ্ঞাপন
বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী নেতা নির্বাচিত হলেন। তিনি এবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে সরকার গঠনের দাবি জানাবেন। দুই প্রধান শরিক দলের নেতা নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুও সেসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন। ইতিমধ্যেই নাইডু, নীতীশ, পাসোয়ান-সহ সব এনডিএ শরিক সমর্থনের লিখিত চিঠি বিজেপি সভাপতির কাছে জমা দিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহেই মোদী তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে পারেন। এর আগে জওহরলাল নেহরু পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। শপথ নেয়ার পর সেই রেকর্ড স্পর্শ করবেন মোদী। এনডিএ বৈঠকে গৃহীত একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ছয় দশক পর দেশের মানুষ আবার পরপর তৃতীয়বারের জন্য একজনকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিচ্ছেন।
এনডিএ-র কাছে সরকার গঠনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ৫৪৩ সদস্যের লোকসভায় সরকার গঠন করতে গেলে ২৭২ জন সাংসদ দরকার। এবার বিজেপি একার ক্ষমতায় সরকার গঠন করতে পারবে না। তারা ২৪০টি আসন পেয়েছে। তাই এবার প্রকৃত অর্থে জোট সরকার গঠন করতে হবে নরেন্দ্র মোদীকে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য তাকে নির্ভর করতে হবে জোটের দলগুলির উপর।
এই পরিস্থিতিতে চন্দ্রবাবু ও নীতীশ কুমারকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার আলাদা তাৎপর্য থাকবে। কারণ, এই দুই নেতাকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট সঙ্গে পেতে চাইছে। তবে এই দুই নেতাই কেন্দ্রীয় সরকারে বেশি মন্ত্রী ও ভালো মন্ত্রক পাওয়ার জন্য প্রথম থেকে চাপ সৃষ্টি করতে পারেন।
সূত্র জানাচ্ছে, চন্দ্রবাবু নাইডু স্পিকারের পদ চাইতে পারেন। কিন্তু এবার স্পিকারের পদ খুবই গুরুকত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তাই বিজেপি সেই পদ চন্দ্রবাবুর দলকে ছাড়বে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন আছে।
ভারতে ভোট : নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাহাড়, মরুভূমি, নদী পাড়ি দেয়া
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯৭ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি৷ ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাহাড়, মরুভূমি, নদী পাড়ি দিতে হচ্ছে৷
ছবি: Anupam Nath/AP Photo/picture alliance/dpa
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক অনুশীলন
ভারতে এখন লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে৷ সাত পর্বের নির্বাচনের তিনটি পর্ব ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে৷ বাকি পর্বগুলো শেষ করে ৪ জুন ফল ঘোষণা করা হবে৷ প্রায় ৯৭ কোটি (বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি) ভোটার লোকসভার ৫৪৩ জন সদস্য নির্বাচিত করবেন৷
ছবি: Deepak Sharma/AP/picture alliance
নির্বাচনি আইনে শর্ত
ভারতের নির্বাচনি আইন বলছে, একজন ভোটারের কাছ থেকে ভোটকেন্দ্রের দূরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি হতে পারবে না৷ এছাড়া একটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত ছয়জন পোলিং স্টাফ ও দুজন পুলিশ সদস্য থাকতে হবে৷ এসব শর্ত মানতে প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে যেতে হচ্ছে নির্বাচন কর্মকর্তাদের৷ ছবিতে কর্মকর্তাদের আসামের মাজুলীর বাগমরা চাপোরিতে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Anupam Nath/AP Photo/picture alliance
ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা
ভারতের নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটিং উপকরণ বহনে হেলিকপ্টার, বাস, ট্রাক, নৌকা, এমনকি গাধা, খচ্চরও ব্যবহার করছেন৷ তারা জঙ্গল, তুষারাবৃত পাহাড়, ছোট নদীও হেঁটে পার হয়ে তাঁবু, শিপিং কনটেনার, প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করছেন৷ ছবিতে কর্মকর্তাদের পাহাড়ি পথ পেরিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যন্ত গ্রাম ডেসায় যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Channi Anand/AP Photo/picture alliance
একজন ভোটারের জন্যও ভোটকেন্দ্র
গুজরাটের গির অরণ্যের গহীনে একটি মন্দির আছে৷ সেটির দেখাশোনা করেন মহন্ত হরিদাস উদাসীন৷ মঙ্গলবার (৭ মে) তিনি ভোট দিয়েছেন৷ নির্বাচন আইন মেনে তার জন্য ভোটকেন্দ্র বসাতে সেখানে গিয়েছিলেন কয়েকজন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য৷ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা বাসে করে অসমতল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের৷ এছাড়া ভোটার একজন হলেও আইন মেনে সারাদিনই ভোটকেন্দ্র খোলা রাখতে হয়েছিল তাদের৷
ছবি: Indranil Mukherjee/AFP/Getty Images
পাহাড়ি পথ পাড়ি
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যন্ত গ্রাম ডেসায় ভোটকেন্দ্র বসাতে এক নির্বাচনি কর্মকর্তা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে ছোট্ট এক ঘোড়ার পিঠে চেপে বসেছেন৷ বাকি কর্মকর্তারা পাহাড়ি এই পথ হেঁটে পার হচ্ছেন৷
মেঘালয়ের শিলংয়ের এক কুলি পিঠে ভোটিং মেশিন নিয়ে একটি সাসপেনশন ব্রিজ পার হচ্ছেন৷
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
মরুভূমিতে হাঁটা
রাজস্থানের মরুভূমি এলাকায় অবস্থিত আকলি গ্রামে ভোটকেন্দ্র বসাতে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা৷
ছবি: Deepak Sharma/AP Photo/picture alliance
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভোটকেন্দ্র
১ জুন হিমাচল প্রদেশের তাশিগাংয়ে ভোটগ্রহণ হবে৷ সেখানকার ভোটকেন্দ্রটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত ভোটকেন্দ্র৷ সমুদ্র থেকে ১৫ হাজার ২৫৬ ফুট (৪,৬৫০ মিটার) উঁচুতে অবস্থিত৷ ছবিতে ২০০৯ সালের নির্বাচনের সময় সাড়ে ১৫ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত হিকিম গ্রামের নারীদের ভোট দিতে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
এর আগে বিদায়ী মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠকে মোদী বলেছেন, ''রাজনীতিতে জয়-পরাজয় থাকে। এতে ভেঙে পড়লে চলবে না। শাসক দল মানুষের মানুষের ভরসা জিততে পেরেছে। তাই মানুষ তাদের ক্ষমতায় এনেছে। এখন আবার তাদের জন্য কাজ করতে হবে।''
বিজেপি সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রে দলের খারাপ ফলের দায়িত্ব নিয়ে উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ইস্তফা দিতে চেয়েছেন।
ইন্ডিয়ার বৈঠক
কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়ার নেতারাও বুধবার আলোচনায় বসছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের ডাকা এই বৈঠকে যোগ দিতে অখিলেশ যাদব দিল্লি এসেছেন। রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বৈঠকে থাকবেন। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও বৈঠকে যোগ দেবেন।
নির্বাচনি মৌসুমে মোদী ‘লুক-এলাইকদের’ রমরমা
ভারতে এখন নির্বাচন চলছে৷ তাই মোদীর মতো চেহারার ব্যক্তিদের সমাবেশে নিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি নেতারা৷ এমন দুজনের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
‘মোদী চাচা’
দিল্লির ইলেক্ট্রিক রিকশাচালক রশিদ আহমেদ৷ পোশাকআশাক ও চেহারায় মোদীর মতো হওয়ায় তার এলাকায় তাকে অনেকে ‘আমাদের মোদী’ বলে ডাকেন৷ আর যে বাচ্চাদের তিনি তার রিকশায় করে স্কুলে পৌঁছে দেন তারা তাকে ‘মোদী চাচা’ বলে ডাকে৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
মোদীর মতো করে চুল, দাড়ি কাটা
‘‘আমি শুরু থেকেই এমন ছিলাম, তবে মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বেশি আলোচনা শুরু হয়,’’ রয়টার্সকে বলেন ৬০ বছর বয়সি রশিদ আহমেদ৷ তার দাড়ি ও চুল সাদা, কাটাও মোদীর মতন করে৷ রশিদ পোশাকও পরেন নরেন্দ্র মোদীর মতো৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
তারকা
স্ত্রী, সন্তান ও নাতিপুতি নিয়ে দুই ঘরের এক বাসায় থাকে রশিদ আহমেদ৷ তার এলাকায় অনেকটা তারকাখ্যাতি পান তিনি৷ অনেকেই তার সঙ্গে দেখা করতে, ছবি তুলতে যান৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
নির্বাচনি সমাবেশে হাজিরা
মাঝেমধ্যে বিজেপির নির্বাচনি সমাবেশে হাজির হন রশিদ আহমেদ৷ এজন্য দিনপ্রতি প্রায় এক হাজার রূপি পান, যেটি রিকশা চালিয়ে তার সারাদিনের আয়৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
মোদীর দোষ দেখেন না রশিদ
রশিদ আহমেদ মুসলমান৷ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মুসলমানদের উপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ বিরোধী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর৷ তবে রশিদ আহমেদ মনে করেন, মোদী নন, বরং তার দলের নিচু স্তরের নেতা-কর্মীরা ‘ধর্মীয় বিভাজন’ করে থাকে৷ ছবিতে রশিদকে মসজিদে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
অর্থ নেন না ভাটিয়া
দিল্লির আরেক ‘মোদী’ ৬৮ বছর বয়সি জগদীশ ভাটিয়া৷ এই আবাসন ব্যবসায়ী একটি আধ্যাত্মিক সম্প্রদায়ের মানুষ, অর্থাৎ, তিনি কোনো ধর্মের নন৷ তিনি বিজেপির সমাবেশে অংশ নিতে কোনো টাকা নেন না৷ কারণ, একে ‘সমাজ সেবা’ হিসেবে দেখেন ভাটিয়া৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
মোদীর কাজ তার পছন্দ
‘‘আমি আসলে মোদীর কাজ পছন্দ করি, তিনি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন,’’ বলেন ভাটিয়া৷ ‘‘তাই আমি তার দলের কিছু কাজে লাগতে পছন্দ করছি,’’ যোগ করেন তিনি৷ পোশাক পরার ধরন পালটে তিনি মোদী রূপ ধারণ করেন৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
7 ছবি1 | 7
শরদ পাওয়ার, অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়-সহ অন্য শরিক দলের নেতারাও যোগ দেবেন। তবে উদ্ধব ঠাকরে বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন না। তার দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন সঞ্জয় রাউত।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পরের পরিস্থিতি নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে। শরদ পাওয়ার জানিয়েছেন, তিনি নীতীশ বা চন্দ্রবাবুর সঙ্গে কথা বলেননি। বৈঠকে এই বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।