বৃহস্পতিবার আরএসএস-এর একশ বছরের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত। সেখানেই অবসর নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদী ও মোহন ভগবৎছবি: ANI Photo
বিজ্ঞাপন
আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ৭৫ বছর বয়স হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। রাজনৈতিক মহলের একটি অংশ বলছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) নিয়ম মেনে ৭৫ হয়ে গেলে পদত্যাগ করবেন মোদী। সংঘের নির্দেশেই সে কাজ করতে বাধ্য হবেন তিনি। বস্তুত, সেপ্টেম্বরে ৭৫ বছর হবে সংঘপ্রধান মোহন ভাগবতেরও। তিনিও নিজের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন, এমন আলোচনা চলছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভাগবত জানিয়ে দিলেন, নিজের অবসর নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি তিনি, ৭৫ হলে অন্য কাউকে অবসর নিতে হবে, এমন কথাও কখনো বলিনি। তার কথায়, ''আমরা সেকাজই করবো, সংঘ আমাদের যা করতে বলবে।''
ভগবৎ বলেছেন, ''সংঘ আমাদের যে কাজের দায়িত্ব দেয়, আমরা সেকাজ করতে বাধ্য থাকি। পছন্দ না হলেও। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছানোর পরেও যদি সংঘ আমায় নিজের কাজ চালিয়ে যেতে বলে, আমি তা করতে বাধ্য থাকবো।''
মোদীর অবসর বিষয়ে
এদিনের অনুষ্ঠানে একাধিক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবসর নিয়ে ভাগবতকে প্রশ্ন করেছেন। এবিষয়ে বিজেপির নেতৃত্বের কাছেও একাধিকবার প্রশ্ন করা হয়েছে। ভাগবতের মতোই বিজেপির নেতৃত্বও মোদীর অবসরের প্রশ্ন কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, বিজেপিতে এমন কোনো নিয়ম নেই। এবিষয়ে উত্তর দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার এমন এক মন্ত্রী আছেন, যার বয়স ৮০ বছর। বিজেপি তাকে সরিয়ে দেয়নি। বিহারে বিজেপির অন্যতম নেতা জিতান রাম মাঁঝি ছোট এবং মাঝারি শিল্পের মন্ত্রী। ৮০ বছর বয়স হয়ে গেলেও তিনি যথেষ্ট ভালো কাজ করছেন।
রামমন্দিরের অযোধ্যায়
অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হবে ২২ জানুয়ারি। প্রস্তুত অযোধ্যা। জনকপুরে সীতার বাড়ি থেকেও জিনিস এসে গেছে।
ছবি: Goutam Hore/DW
অযোধ্যা রামময়
অযোধ্যার রাস্তায় এখন শ্রীরামের ছবির বন্যা, ফ্লাইওভার, রাস্তার ধারে, বিভিন্ন বাড়িতে, পোস্টার, গ্রাফিটিতে ছেয়ে আছেন শ্রীরাম ও রামায়ণের কিহিনি। তবে শ্রীরামের পরই যার ছবি সবচেয়ে বেশি শোভা পাচ্ছে, তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ২২ জানুয়ারি মোদীই রামমন্দিরের উদ্বোধন করবেন।
ছবি: Goutam Hore/DW
সীতার বাড়ি থেকে
এই যে কলসিগুলো দেখছেন, সেগুলি এসেছে জনকপুর থেকে। সীতার দেশ থেকে অযোধ্যায় এসে পৌঁছেছে ঘি, বিভিন্ন কুণ্ডের জল এবং আরো অনেক কিছু। রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এগুলি ব্যবহৃত হবে।
ছবি: Goutam Hore/DW
দুই হাজার চারশ কিলোর ঘণ্টা
অষ্টধাতুর তৈরি এই ঘণ্টার ওজন দুই হাজার চারশ কিলোগ্রাম। এসেছে বিজনোর থেকে। এভাবেই ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে নানান জিনিস। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছে সুন্দবরনের মধু। এই ঘণ্টা মন্দির চত্বরে লাগানো হবে।
ছবি: Goutam Hore/DW
নারী ভক্ত
অযোধ্যার রাস্তায় চোখে পড়বে এই নারী ভক্তদের। কপালে শ্রীরাম লেখা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা এসেছেন এবং আসছেন।
ছবি: Goutam Hore/DW
মহারাষ্ট্র থেকে আসা নারীরা
এই নারীরা মহারাষ্ট্র থেকে এসেছেন। উদ্দেশ্য রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সামিল হওয়া। কাজ করা। তাদের যে কাজ দেয়া হবে, সেটাই তারা করবেন। তবে কবে তারা মন্দিরে ঢুকতে পারবেন তা জানেন না। কারণ, ২২ তারিখ মন্দিরে ঢোকার ক্ষেত্রে খুবই কড়াকড়ি তাকবে।
ছবি: Goutam Hore/DW
সাইকেল করে
উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাইকেলে করে প্রচুর মানুষ এসেছেন অযোধ্যায়। ছবিতে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে, তিনি এসেছেন কানপুর থেকে। সঙ্গে ছোট একটা ব্যাগ। তাছাড়া আছে পতাকা ও ফুল।
ছবি: Goutam Hore/DW
অযোধ্যার পেড়া ও লাড্ডু
মন্দিরের আশপাশের এলাকা তো বটেই, গোটা অযোধ্যা জুড়ে এখন অসংখ্য পেড়া ও লাড্ডুর দোকান। ২২ তারিখের পর থেকে মানুষের ঢল নামবে মনে করে, প্রতিটি দোকানে প্রচুর পেড়া ও লাড্ডু বানিয়ে রাখা হচ্ছে। এই দেশি ঘিয়ে তৈরি বেসনের লাড্ডু থাকেও অনেকদিন।
ছবি: Goutam Hore/DW
রঘুপতি রাঘব
তখন সবে সন্ধ্যা নেমেছে। সেই সময় অযোধ্যা মন্দিরের দরজার কাছ থেকে শুরু হলো এই নাচ ও গান। রঘুপতি রাঘব রাজারাম, পতিত পবন সীতারাম-- গান্ধীজির অতি প্রিয় এই গান গাইতে গাইতে এবং নাচতে নাচতে এগিয়ে চললো দলটি। আর নাচে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নেপাল থেকে আগত এই অতিথি।
ছবি: Goutam Hore/DW
সামিল কিন্নররা
অযোধ্যার এই অনুষ্ঠানে সামিল কিন্নররাও। শুক্রবার বিকেলে তাদের একটি বড় দল অযোধ্যায় ঘুরলেন। তাদের কপালেও লেখা ছিল শ্রীরাম। তারা বললেন, রামমন্দিরের এই উৎসবে তারাও সামিল হয়েছেন। তারা তাদের আনন্দের কথা জানাচ্ছেন।
ছবি: Goutam Hore/DW
কড়া নিরাপত্তা
অযোধ্যায় এখন কড়া নিরাপত্তা। শহর মুড়ে পালা হয়েছে নিরাপত্তার বেড়াজালে। দাঙ্গাবিরোধী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। তাছাড়া আছে প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী, রাজ্য়ের সশস্ত্র পুলিশ ও লাঠিধারী পুলিশের দল। বিভিন্ন রাস্তায় ব্যারিকেড লাগানো আছে।
ছবি: Goutam Hore/DW
বদলের অযোধ্যা
এই রাস্তাই চলে গেছে রামমন্দিরের দিকে। দুইপাশের দোকান নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। তাতে নতুন রং লাগানো হয়েছে। রাজদ্বার মন্দিরের উপর থেকে তোলা ছবিতে ধরা পড়লো সেই বদলে যাওয়া অযোধ্যার একটুকরো ছবি।
ছবি: Goutam Hore/DW
দুই পতাকার মাঝখানে
দুই পতাকার মাঝখানে দেখা যাচ্ছে তাকে। মাঝেমধ্য়ে এই পতাকার ডাণ্ডায় কাম়ড়ও বসাচ্ছেন তিনি। তবে তার দুষ্টুমিতে কেউ বিরক্ত হয় না অযোধ্যায়।
ছবি: Goutam Hore/DW
অযোধ্যা-জুড়ে
অযোধ্যা-জুড়ে দেখা যাচ্ছে নানান ধরনের, নানান সম্প্রদায়ের সাধুদের।
ছবি: Goutam Hore/DW
পতাকায় পতাকায়
অযোধ্যা-জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই পতাকা। প্রচুর দোকানেও তা বিক্রি হচ্ছে। মন্দির উদ্বোধনের আগে এই পতাকার চাহিদা তুঙ্গে।
ছবি: Goutam Hore/DW
14 ছবি1 | 14
কেন এই প্রশ্ন
২০১৯ সালে নির্বাচনের সময় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন অমিত শাহ। তিনি এখন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেসময় একাধিকবার অমিত শাহ বলেছিলেন, যে সব ব্যক্তির ৭৫ বছর বয়স হয়ে গেছে, দল তাদের ভোটে লড়ার টিকিট দিতে চায় না। উল্লেখ্য, একথা বলেই লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো বরিষ্ঠ নেতাকে সেবার ভোটে দাঁড়াতে দেয়নি বিজেপি।
বিরোধীরা সে কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন বার বার। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, বিজেপির এই নিয়ম নরেন্দ্র মোদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না কেন? বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে এমন কোনো নিয়মের উল্লেখ নেই। শাহ ২০১৯ সালের নির্বাচনের নিরিখে ওই নিয়ম তৈরি করেছিলেন মাত্র।
এদিন ভাগবতও সে কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন। তিনিও জানিয়ে দিলেন, সংঘের সংবিধানে এমন কোনো লিখিত নিয়ম নেই।
বিতর্কের সূত্রপাত
চলতি বছরের গোড়ার দিকে নাগপুর গেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে সংঘপ্রধান ভাগবতের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপরেই মার্চ মাসে একটি চিঠি নিয়ে জলঘোলা শুরু করে বিরোধীরা। শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত দাবি করেন, অবসর এবং পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়ে আলোচনা করতেই আরএসএস মোদীকে ডেকে পাঠিয়েছিল। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম নাগপুরে সংঘের সদর দপ্তরে গেছিলেন মোদী।
তবে বিজেপি এবং আরএসএস দুইপক্ষই এই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছে।