গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের ফল বুঝিয়ে দিল মোদীর নিজস্ব ‘ক্যারিসমা' আজও অম্লান৷ এখন পর্যন্ত গুজরাটের ১৮২টি আসনের মধ্যে বিজেপির ঝুলিতে গেছে ৯৯ আর কংগ্রেস পেয়েছে ৮০টি আসন৷ হিমাচল প্রদেশও ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি৷
বিজ্ঞাপন
গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন হলেও গোটা দেশ এই নির্বাচনি ফলাফলের দিকে সাগ্রহে তাকিয়েছিল৷ কেন? নোটবন্দি, কর ব্যবস্থার সংস্কার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়ায় অনেকেই মনে করেছিলেন জনসাধারণ বেজায় খাপ্পা৷ বিরোধী দলগুলি এই নিয়ে মোদী বিরোধিতায় আসরে নেমেছিল কোমর বেঁধে৷ তা দেখে বিজেপি শিবিরে ভেতরে ভেতরে যে একটা কম্পন শুরু হয়েছিল, তাতে সন্দেহ নেই৷
কথাটা আংশিক হলেও সত্যি৷ গত ২২ বছরের মধ্যে বিজেপি এবার পেয়েছে সবথেকে কম আসন৷ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি রাহুল গান্ধী মোদী সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণ করতে গুজরাট চষে বেড়িয়েছেন৷ প্রতিটি নির্বাচনি জনসভায় মোদীকে দাঁড় করিয়েছেন কাঠগোড়ায়৷ বোঝাতে চেষ্টা করেছেন আমজনতার দুঃখ কষ্টের আসল কারণ মোদী সরকার৷ পাশাপাশি রাজ্যের পাতিদার সম্প্রদায় হার্দিক প্যাটেলের নেতৃত্বে রাজ্যে যথেষ্ট ধুলো উড়িয়েছিল৷ ফলে একমাত্র সৌরাষ্ট্র অঞ্চলেই তারা মোটামুটি ছাপ রাখতে পেরেছে৷
নির্বাচনে জেতার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি বক্তব্য রেখেছেন টেলিভিশনে৷
তবে এবারের নির্বাচনি প্রচারের মান নিয়ে দেখা দিয়েছিল বিতর্ক৷ কংগ্রেস নেতা মনিশংকর আইয়ারের মন্তব্য মোদী ‘নীচ' চলতি অর্থে যার মানে ছোটলোক৷ অন্যদিকে মোদী স্বয়ং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং অন্যানদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ তোলেন৷ দু'টোই ন্যক্কারজনক৷ এই নিয়ে অনেকের অনুমান ছিল দুই রাজ্যের নির্বাচনি ফলাফলে হয়ত তার প্রতিফলন পড়তে পারে৷ কিন্তু সব আশংকা নস্যাত করে দিয়ে মোদী তাঁর আপন রাজ্য গুজরাটে এই নিয়ে টানা ছয়বার সরকার গড়তে চলেছেন৷ মোদীবিরোধী প্রচার তাঁর জনপ্রিয়তায় তেমন কোনো আঁচড় লাগাতে পারেনি৷
হিমাচল প্রদেশে ছিল কংগ্রেসের রাজত্ব৷ সেখানেও মোদীর ‘ম্যাজিক' আর অমিত শাহের ভোট রণনীতিতে একেবারে কূপকাত কংগ্রেস৷ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা বিজেপির৷ এই হারের পর কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁর টিউটার অ্যাকাউন্টে নিজের হার শিকার করেছেন৷
রাজ্যের ৬৮টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৪৪টি আসন আর কংগ্রেস পেয়েছে ২১টি আসন৷ উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনেও অনেকে ভেবেছিলেন বিজেপি সরকারর নোটবন্দি নীতি, করনীতি এবং তাৎক্ষণিক তালাক রদ করার সিদ্ধান্ত মানুষ মেনে নেবে না৷ তালাক প্রথা রদ করার নীতিত মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাংক হাতছাড়া হয়ে যাবে বিজেপির৷ কিন্তু হলো একেবারে বিপরীত৷ বিপুল সংখ্যাধিক্যে জিতে এলো মোদী তথা বিজেপি৷ পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, মোদীর গেরুয়া ঝড় যেভাবে একের পর এক রাজ্য দখল করছে৷ তাতে আর মাত্র ১০টি রাজ্য নিতে পারেই বিজপি হয়ে উঠবে দেশে একম অদ্বিতীয়ম৷ ঐ ১০টি রাজ্য সিপিএম-শাসিত কেরালা ও ত্রিপুরা, এআইএডিএমকে শাসিত তামিলনাড়ু, তৃণমূল কংগ্রেস-শাসিত পশ্চিমবঙ্গ, বিজেডি শাসিত ওড়িষা, টিআরএস-এর তেলেঙ্গানা, আম আদমি পার্টি শাসিত দিল্লি, কংগ্রেস শাসিত মেঘালয় ও মিজোরাম এবং নাগা পিপলস ফ্রন্টের নাগাল্যান্ড, অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি এবং জেডি (ইউ) শাসিত বিহার কেন্দ্রে বিজেপি সরকারে জোটসঙ্গি৷
ভারত চলে বাপের নামে
বংশ নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয় ভারতে৷ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন ভারতের বৈশিষ্ট্যই বংশপরম্পরা৷ রাজনীতি থেকে শুরু করে খেলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সাম্রাজ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
আম্বানির রাজত্ব
বিখ্যাত শিল্পপতি ধীরুভাই আম্বানি যে সাম্রাজ্য গড়ে গিয়েছিলেন, উত্তরাধিকারসূত্রে তার সম্রাট বনেছেন মুকেশ এবং অনীল আম্বানি৷ বাবার রাজ্য বেশ ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন তাঁরা৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়েও নিচ্ছেন বহুদূর৷
ছবি: picture-alliance/AP
বচ্চন, দ্য বচ্চন
অমিতাভ বচ্চন সম্পর্কে নতুন করে কাউকে কিছু বলার নেই৷ গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে যে বচ্চন রাজত্ব শুরু হয় বলিউডে, এখনও তা টলাতে পারেনি কেউই৷ তাঁর নামের অংশীদার হয়েই বড় পর্দায় এসেছেন অভিষেক বচ্চন৷ অনেকেই মনে করেন, অমিতাভের ছেলে না হলে বর্তমান অবস্থানে আসা কঠিনই হতো জুনিয়র বচ্চনের৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
ছোট দেওল, বড় দেওল
বলিউডের আরেক শীর্ষ অভিনেতা ধর্মেন্দ্র৷ জনপ্রিয় এই অভিনেতার বংশধরেরা অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও নাম কামিয়েছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে৷ সানি দেওল ও ববি দেওলের কিছু ছবি হিট হলেও তুখোড় অভিনয়শিল্পীদের সাথে প্রতিযোগিতায় বেশ পিছিয়েই পড়েন তাঁরা৷ চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে নাম কামিয়েছেন ধর্মেন্দ্রর মেয়ে ইশা দেওলও৷
ছবি: Ambalika Misra
কাপুর খানদান
কাপুরদের রাজত্বের ইতিহাস অন্য অনেকের চেয়ে বেশ লম্বা৷ ব্রিটিশ শাসনামলে যখন নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ ছিল, তখন হিন্দি সিনেমার পথিকৃৎদের একজন ছিলেন পৃথ্বিরাজ কাপুর৷ চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য পদ্মভূষণ দেয়া হয় তাঁকে৷ তাঁকে দিয়েই শুরু কাপুর বংশের চার প্রজন্মের রাজত্ব৷ রাজকাপুর, তাঁর ছেলে ঋষি কাপুর এবং সর্বশেষ এখন রণবীর কাপুর আনন্দ দিয়ে চলেছেন বলিউড ভক্তদের৷
ছবি: DW
প্রযোজনা, পরিচালনা, অভিনয়
বাবা মহেশ ভাট বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক৷ কিন্তু মেয়ে আলিয়া ভাট সেদিকে না গিয়ে সোজা অভিনয়ে৷ শুধু নাম নয়, মেধাতেও যে বাপের চেয়ে কোন অংশে কম না, তা এখনও প্রমাণ করে চলেছেন আলিয়া ভাট৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
গান্ধী বংশ
ভারতের রাজনীতি, নেহেরুর গড়ে যাওয়া রাজত্ব এবং কংগ্রেস দায়িত্ব এখন রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ কংগ্রেস পরবর্তীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে রাহুলই হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: UNI
উত্তর প্রদেশের যাদব
মুলায়েম সিং যাদবের ‘বংশের সুনাম রক্ষা’ করছেন অখিলেশ যাদব৷ সভাপতি হিসেবে বাবার সমাজবাদী দলের হাল তো ধরেছেনই, বাবার মতো হয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
বিহারের যাদব
বিহার প্রদেশের আরেক যাদব, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের ছোট ছেলে তেজস্বী যাদব৷ জোট সরকারের সময় উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/A. Yadav
কাশ্মিরের মুফতি
জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি৷ সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ সাঈদের মেয়ে মেহবুবা৷ রাজ্যটিতে তিনিই প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী৷ সমর্থকরা তাঁকে সম্মান করে ‘বাজি’ বলে ডাকেন, উর্দুতে যার অর্থ ‘বড় বোন’৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/N. Kanotra
জম্মুর আবদুল্লাহ
জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক নেতা ফারুক আবদুল্লাহর ছেলে ওমর আব্দুল্লাহ৷ তিনিও বাবার কাছ থেকে শুধু রাজনীতিই নয়, পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পদও৷
ছবি: picture-alliance/epa/F. Khan
আল্লা রাখার উত্তরাধিকার
শুধু উপমহাদেশ নয়, তবলায় জাদু দেখিয়ে পুরো বিশ্বকেই তাক লাগিয়েছিলেন আল্লা রাখা৷ তাঁর সন্তান ওস্তাদ জাকির হোসেন ধরে রেখেছেন সেই বংশপরম্পরা, ছড়িয়ে যাচ্ছেন তবলার ম্যাজিক৷
ছবি: AP
বাপ কা বেটি
উপমহাদেশের আরেক গর্ব পণ্ডিত রবিশংকর৷ এই সিতার মায়েস্ত্রোর যোগ্য কন্যা আনুশকা শংকর৷ বিশ্বের নামকরা সিতারবাদকদের মধ্যে অন্যতম স্থান দখলে নিয়েছেন আনুশকা৷
ছবি: AP
গীতা ফোগাট
আমির খানের চলচ্চিত্র দঙ্গল-এর সৌজন্যে মোটামোটি সবাই এখন জানেন গীতা ফোগাটের নাম৷ বিখ্যাত কুস্তিগীর মহাবীর ফোগাটের মেয়ে গীতা ভারতের হয়ে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কুস্তিতে স্বর্ণপদক পাওয়া নারী৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
বিচারক চন্দ্রচূড়
ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় ছিলেন ভারতে প্রখ্যাত প্রধান বিচারপতি৷ তাঁর ছেলে ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড়ও আইনজ্ঞ হিসেবে ধরে রেখেছেন সুনাম৷ ধনঞ্জয়ও এখন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
14 ছবি1 | 14
গৈরিক পার্টির মতে, মোদী সরকারের নীতি যে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ট অংশ অনুমোদন করেছে গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশের নির্বাচনি ফালাফলই তার প্রমাণ৷ মোদীর বিকাশ নীতির জয়৷ মোদী সরকারের আস্থা ভোট৷ ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ'৷ এর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ১০১৮ সালে কেন্দ্রের শেষ পূর্ণাঙ্গ সাধারণ বাজেট সম্ভবত দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে৷