অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, নতুন বছরের শুভেচছা বিনিময় করেছেন দুই নেতা৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইরান নিয়েও তাঁদের কথা হয়েছে৷
ছবি: picture- alliance/AP Photo/E. Vucci
বিজ্ঞাপন
নরেন্দ্র মোদী ফোন করলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে৷ প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বা পিআইবি জানিয়েছে, দুই নেতা নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন৷ তাঁরা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরালো করার কথা বলেছেন৷ মোদী জানিয়েছেন, দুই দেশের স্বার্থ যেখানে জড়িত, সেই সব ক্ষেত্রে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চান। আর গত কয়েক বছরে দুই দেশের সম্পর্ক যেভাবে আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে ট্রাম্প তাতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সম্পর্কের আরও উন্নতি করতে হবে৷
কিন্তু মোদী-ট্রাম্প কথা হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন ইরানে মার্কিন ড্রোন হানায় সোলেইমানির মৃত্যু হয়েছে এবং সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যত যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে দুই নেতার আলোচনায় ইরান প্রসঙ্গ আসাটা স্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের মতে, ''ইরান প্রসঙ্গ আলোচনায় উঠে আসাটা খুবই স্বাভাবিক৷'' ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''ইরানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে৷ আমেরিকার আক্রমণে নিহত সোলেইমানির মৃত্যুর পর ইরাক পর্যন্ত ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে৷ এই পরিস্থিতি ভারতের পক্ষে অস্বস্তির৷ কারণ, একদিকে ইরান, অন্যদিকে আমেরিকা, দুই দেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক আছে৷ সেটা বজায় রেখেই চলতে হবে৷ ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে তেল নিয়ে ভারত সমস্যায় পড়বে৷ আবার আমেরিকাকেও চটানো যাবে না৷ তাঁদের বোঝাতে হবে ভারতের অসুবিধার কথা৷''
সোলেইমানি হত্যা, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
ইরানের সেনা বাহিনীর শী্র্ষ কর্মকর্তা এবং কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসিম সোলেইমানির নিহত হওয়ার খবরে ইরানসহ কয়েকটি দেশে অ্যামেরিকাবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে৷ শুক্রবার বাগদাদে মার্কিন বিমান হানায় নিহত হন সোলেইমানি৷
ছবি: Reuters/WANA/N. Tabatabaee
মার্কিন পতাকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় কাসিম সোলেইমানির নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ইরানের রাজধানী তেহরানে মার্কিন পতাকা পুড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: Reuters/WANA/N. Tabatabaee
পুড়ছে ইসরায়েলের পতাকাও
সোলেইমানি নিহতের ঘটনায় এশিয়ার মুলসমান অধ্যুষিত দেশ পাকিস্তানের লাহোরে বিক্ষোভ হয়েছে৷ বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের পাশপাশি ইসরায়েলের পতাকাতেও আগুন দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. M. Chaudary
গুপ্তহত্যার প্রতিবাদ
সাধারণ ইরানীদের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন কাসিম সোলেইমানি৷ তাকে হত্যা করার খবরে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন৷
ছবি: Reuters/WANA/N. Tabatabaee
ছবি হাতে মাতম
তেহরানে বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খমেনির ছবি ছিল৷ যেন তারা খমেনির কাছে সোলেইমানি হত্যার বিচার চাইছেন৷
ছবি: AFP/T. Mustafa
পাকিস্তানে আরো প্রতিবাদ
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদসহ আরো কয়েকটি শহরে সোলেইমানি হত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে৷ বিক্ষোভে নারীরাও অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/B. K. Bangash
কাশ্মীরেও বিক্ষোভ
ভারতের কাশ্মীরেও কাসিম সোলেইমানি হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/F. Khan
দ্বিতীয় প্রভাবশালী নেতা
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খমেনির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন কাসিম সোলেইমানি দেশটির দ্বিতীয় প্রভাবশালী নেতা হিসেবে বিবেচিত হতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Leaders Official Website
7 ছবি1 | 7
ভারতের কাছে ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রখাটা খুবই জরুরি৷ কারণ, এর সঙ্গে ভারতের বানিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে৷ ইরান ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে চা, চাল ও অন্য জিনিস নেয়৷ ইরান থেকে তেল পাওয়াটা ভারতের কাছে খুবই জরুরি৷
পরিকল্পনা বিশারদ ও লেখক অমিতাভ রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''ইরানের চাবাহার বন্দরে বিপুল বিনিয়োগ, তাদের সহায়তায় পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান সহ পশ্চিম এশিয়ায় বানিজ্যিক যোগযোগ বাড়ানো এবং অবশ্যই তেল আমদানি করা ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ ট্রাম্প ইরানকে একঘরে করে রাখার নীতি নিয়েছেন৷ তাই নয়াদিল্লিকে তেহরানের থেকে দূরে রাখতে চাইছে তারা৷ আমেরিকা চায়, ইরান নয়, পুরো তেল সৌদি আরব থেকে কিনুক ভারত৷ এই অবস্থায় ভাপরত ও আমেরিকা নিজেদের জাতীয় স্বারথ বজায় রেখে বারসাম্য বজায় রাখতে চাইবে৷''
ফলে এই প্রেক্ষাপটে মোদী-ট্রাম্প কথা আলাদা মাত্রা পেয়ে যাচ্ছে৷
সোলেইমানির জানাযায় জনতার এক আওয়াজ, ‘প্রতিশোধ, প্রতিশোধ’
কাসিম সোলেইমানির জানাযায় লাখো মানুষের ঢল নামে৷ সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা৷ সোলেইমানির কন্যা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কালো দিন অপেক্ষা করছে৷ জনতার ঢলে ওঠে, ‘‘প্রতিশোধ, প্রতিশোধ’’ আওয়াজ৷
ছবি: picture-alliance/AP/Tasnim/M. Hossein Thaghi
জানাযায় জনস্রোত
শুক্রবার এক ড্রোন হামলায় ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান কাসিম সোলেইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী৷ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে ইরান সরকার৷ ইরাক থেকে সোলেইমানির মৃতদেহ আনার পর সোমবার রাজধানী তেহরানে প্রথম জানাযা হয়৷ ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানাযায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের অংশ নেয়ার কথা বলেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/ISNA/A. Mohammadi
ডুকরে কেঁদে ওঠেন খামেনি
তিনদিনের শোক শেষে অনুষ্ঠিত জেনারেল সোলেইমানির প্রথম জানাযা পড়ান ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি৷সোলেইমানির কফিনের ওপর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ এ সময় প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, কুদস বাহিনীর নতুন প্রধান এসমাইল কা’নিসহ ইরানের অন্য অনেক শীর্ষ নেতাও খামেনির পাশে ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Iran Press TV
সোলেইমানির কন্যার হুমকি
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সোলেইমানির কন্যা জয়নাব সোলেইমানি বলেন, ‘‘এখন থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে সেনাসদস্যরা আছেন তাদের পরিবার সন্তানের মৃত্যুর খবরের অপেক্ষায় থাকবেন৷’’ তার বাবাকে হত্যার নির্দেশ দেয়া ডনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘উন্মাদ ট্রাম্প, ভেবো না আমার বাবা শহিদ হওয়ায় সব শেষ হয়ে গেছে৷’’ তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্র ইসরায়েলের জন্য ‘কালো দিন’ অপেক্ষা করছে৷
ছবি: AFP/Office of Iran's Supreme Leader Ayatollah Ali Khamenei
‘যুক্তরাষ্ট্রকে তাড়াবো’
তেহরানে জানাযা শুরুর আগে রাষ্ট্রীয় বেতারকে সোলেইমানির মৃত্যুর পর কুর্দস বাহিনীর দায়িত্ব নেয়া কা’নিও প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের বাহিনী নিয়ে শহিদ সোলেইমানির দেখানো পথেই এগিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করছি৷ এ অঞ্চল থেকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে তাড়াবো, কারণ, এটাই উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ৷’’