দিল্লিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক হলো। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত যখন তুঙ্গে উঠেছে, সেই সময় ভারত সফরে এলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন। সোমবার পুটিনের সঙ্গে মোদীর দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তারপর দুই দেশের মধ্যে মন্ত্রীপর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। একগুচ্ছ চুক্তি সই হয়েছে। তার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে একাধিক চুক্তি সই হয়েছে।
বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ''আফগানিস্তানের মাটিকে ব্যবহার করে অন্য দেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানো যাবে না। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস করা যাবে না।'' ভারতের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বৈঠকের পরে জানিয়েছেন, ''ঠিক হয়েছে, লস্কর, আল কায়দা, আই এসের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। ভারতের প্রতিবেশী এলাকায় যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ হচ্ছে, সে সব নিয়েই আলোচনা হয়েছে।'' অর্থাৎ নাম না করলেও পাকিস্তানের প্রসঙ্গ যে আলোচনায় এসেছে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন শ্রিংলা।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতি আগ্রহী কেন ভারত?
ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ‘এস-৪০০ মিশাইল ডিফেন্স সিস্টেম’ কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত৷ রুশ প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় পাঁচ দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Malgavko
মজবুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
গত সপ্তাহে ‘মিশাইল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’-এ স্বাক্ষর করার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এক যৌথ বিবৃতিতে নতুন দিল্লি এবং মস্কোর মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমশ আরো মজবুত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন৷ চলতি বছর মোদী এবং পুটিনের এই নিয়ে তৃতীয়বার সাক্ষাৎ হলো৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Y. Kadobnov
এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম আসলে কী?
রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০০ সার্ফেস-টু-এয়ার মিশাইল ডিফেন্স সিস্টেম মূলত ধেয়ে আসা ‘ব্যালেস্টিক মিশাইল’ প্রতিরোধ করে৷ এটাকে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আধুনিক এবং মোক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Malgavko
ভারতের আগ্রহ
মূলত চীন এবং পাকিস্তান থেকে কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের দিকে নিক্ষেপ করা হলে, তা যাতে প্রতিরোধ সম্ভব হয়, সেজন্য এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করতে চাচ্ছে ভারতের সামরিক বাহিনী৷ এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে ভারতের পক্ষে অনেক দূরে অবস্থান করা যুদ্ধবিমান, এমনকি রাডার সোনার সিস্টেম সনাক্ত করতে অক্ষম বিমানও ধ্বংস করে দিতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo
আরো চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায়
রাশিয়ার কাছ থেকে চারটি ‘ক্রিভেক-ক্লাস ফ্রিগেট’ কেনারও পরিকল্পনা করছে ভারত৷ এগুলোর মধ্যে দু’টি যুদ্ধজাহাজ গোয়ার শিপইয়ার্ডে জোড়া দেয়া হবে৷ অন্য দু’টো একেবারে তৈরি অবস্থায় রাশিয়া থেকে আনা হবে৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
মার্কিন সতর্কবার্তা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, যেসব দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা খাতের জন্য সমরাস্ত্র কিনবে, সেসব দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে৷ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় সিএএটিএসএ আইন গতবছর অনুমোদন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
মার্কিন সমরাস্ত্রও কেনে ভারত
শীতল যুদ্ধের সময় ভারতের সামরিক সমরাস্ত্রের আশি শতাংশই এসেছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে৷ তবে নব্বইয়ের দশক থেকে আরো কয়েকটি উৎস থেকে সমরাস্ত্র কিনতে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ গত দশ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পনের বিলিয়ন মূল্যমানের সমরাস্ত্র কিনেছে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
ভারত কি ছাড় পাবে?
রাশিয়ার কাছ থেকে ‘এস-৪০০ মিশাইল সিস্টেম’ কেনায় চীনের সামরিক বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ যদিও ভারত আশা করছে, মার্কিন মিত্র দেশ হিসেবে তাদের এ ধরনের নিষেধজ্ঞায় পড়তে হবে না, তবে ট্রাম্প প্রশাসন ছাড় দেয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Dufour
7 ছবি1 | 7
পুটিনের বক্তব্য
পুটিন জানিয়েছেন, ''গ্লোবাল এজেন্ডা নিয়ে ভারত ও রাশিয়া সহযোগিতার ভিত্তিতে চলবে। দুই দেশের অবস্থানের মধ্যে ফারাক নেই। আমরা সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার, অপরাধমূলক কাজের বিরুদ্ধে লড়ব।''
পুটিন জানিয়েছেন, ''এটা খুবই স্বাভাবিক যে, আমরা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।'' রশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ''ভারত আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং একটি মহান দেশ।''
মোদী যা বলেছেন
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ''ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। আমাদের বিশেষ ও কৌশলগত সম্পর্ক আরো জোরালো হয়েছে।'' মোদীর বক্তব্য, ''গত কয়েক দশকে বিশ্বে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্বে কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং তা আরো মজবুত হয়েছে।''
বিশ্বে সামরিক ব্যয়ে ভারত এখন তৃতীয়
সুইডেনের ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ বা সিপ্রি ২০২১ সালে সামরিক খাতে বিভিন্ন দেশের খরচের তথ্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভারত তৃতীয়
২০২১ সালে ভারতের সামরিক ব্যয় ছিল ৭৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন, যা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০২০ সাল থেকে এই ব্যয় শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০১২ সালের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ।
ছবি: picture alliance/AP Photo/C. Anand
শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ৮০১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কম। প্রতিবেদন মতে, ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নে খরচ বাড়িয়েছে ২৪ শতাংশ এবং অস্ত্র কেনায় খরচ কমিয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
ছবি: picture-alliance/A. Widak
চীন দ্বিতীয়
তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ চীন ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ২৯৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
ছবি: Reuters
চতুর্থ যুক্তরাজ্য
তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য গত বছর সামরিক খাতে খরচ করেছে ৬৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৩ শতাংশ কম।
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
পঞ্চম রাশিয়া
পঞ্চম অবস্থানে থাকা রাশিয়া ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ৬৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। সেসময় রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনের সীমান্তে সামরিক স্থাপনা তৈরি করছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ছবি: picture-alliance/TASS/A. Demianchuk
ছয় নেমে গেছে সৌদি আরব
আগের তালিকায় তিন নম্বরে ছিল সৌদি আরব৷ ২০১৯ সালে ১৬ শতাংশ ব্যয় কমিয়েছে দেশটি৷ গতবছর দেশটি ৬১.৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ ইয়েমেনে সামরিক অভিযান ও ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে সৌদি আরবের সামরিক ব্যয় কমানোতে বিস্মিত হয়েছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
শীর্ষ পাঁচেই ৬২ শতাংশ
সিপ্রি বলছে, ২০১৯ সালে সামরিক খাতে বৈশ্বিক খরচ ছিল ১৯১৭ বিলিয়ন ডলার৷ এর মধ্যে ৬২ শতাংশই করেছে শীর্ষ পাঁচটি দেশ৷
ছবি: Reuters/J. Lee
প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি
২০১৯ সালে ২০১৮ সালের তুলনায় সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৩.৬ শতাংশ৷ এটি ২০১০ সালের পর কোনো এক বছরে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির হার৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
ইইউতে প্রথম ফ্রান্স, বিশ্বে সপ্তম
২০১৯ সালে ফ্রান্স ৫০.১ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, যা দেশটির জিডিপির ১.৯ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে তাদের ব্যয় ছিল ৫১.৪ বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Reuters/G. Fuentes
অষ্টম-এ জার্মানি
২০১৯ সালে জিডিপির ১.৩৮ শতাংশ ব্যয় করেছে জার্মানি, সংখ্যার হিসেবে যা ৪৯.৩ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১৮ সালে ছিল ৪৬.৫ বিলিয়ন৷ অর্থাৎ, জার্মানির ব্যয় বেড়েছে ১০ শতাংশ, যা সিপ্রির তালিকার শীর্ষ ১৫টি খরুচে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ রাশিয়ার কাছ থেকে হুমকি বাড়া এর একটি কারণ বলে মনে করছেন সিপ্রির বিশ্লেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
শীর্ষ দশে এশিয়ার আরো দুই দেশ
সিপ্রির তালিকায় শীর্ষ ১০ খরুচে দেশের তালিকায় নয় ও দশ নম্বরে যথাক্রমে আছে জাপান (৪৭.৬ বলিয়ন ডলার) ও সাউথ কোরিয়া (৪৩.৯ বিলিয়ন ডলার)৷
ছবি: AP
বাংলাদেশ
২০১৯ সালে বাংলাদেশের সামরিক ব্যয় ছিল ৪,৩৫৮ মিলিয়ন ডলার, ২০১৮ সালে যা ছিল প্রায় ৩,৬৯২ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: DW/M. Mamun
12 ছবি1 | 12
একগুচ্ছ চুক্তি
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে একগুচ্ছ চুক্তি হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, সামরিক-প্রযুক্তি চুক্তি। এই চুক্তি অনুসারে ১০ বছর ধরে রাশিয়া ভারতকে সামরিক প্রযুক্তি দেবে। তাছাড়া ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে এস৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে। চীনের মোকাবিলায় এই ক্ষেপণাস্ত্র জরুরি বলে ভারত মনে করে।
ক্ষেপণাস্ত্র কেনার এই চুক্তি ২০১৮ সালে হয়েছিল। কিন্তু এই চুক্তিতে অ্যামেরিকা অসন্তুষ্ট ছিল।
এছাড়া রাশিয়া ও ভারত কালাশনিকভ একে-২০৩ রাইফেল ভারতে বানানো নিয়েও একমত হয়েছে। ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম অস্ত্র ক্রেতা। আর মস্কো হলো ভারতে সব চেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রেতা।
এছাড়া বাণিজ্য নিয়েও ২৮টি চুক্তি সই হয়েছে। তার মধ্যে ইস্পাত, জাহাজ তৈরি, কয়লা ও বিদ্যুৎ আছে।