1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২২ মে ২০১৪

নরেন্দ্র মোদীর অন্য অভিজ্ঞতা থাকলেও পররাষ্ট্র নীতি পরিচালনায় তিনি নতুন৷ তাই এক্ষেত্রে তাঁর সামনে নানা চ্যালেঞ্জ৷ প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশের প্রতি মোদীর দৃষ্টিভঙ্গী কী হবে – সেটাই দেখার বিষয়৷

ছবি: Reuters

বিপুল জনাদেশ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন ২৬শে মে৷ দিল্লির রাজনৈতিক মহল মনে করেন, আর্থিক এবং প্রশাসনিক দক্ষতা থাকলেও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে কার্যত তিনি নতুন৷ তবে শপথ গ্রহণের আগেই তিনি প্রতিবেশী দেশগুলিসহ বিভিন্ন দেশের কাছে বন্ধুত্বের বার্তা পাঠিয়েছেন৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের সরকার প্রধানদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে দিল্লির পাকিস্তানি হাই কমিশনার তাঁর সরকারের বিবৃতিতে বলেছেন যে, ভারত-পাক শান্তি আলোচনা চলবে কোনো পূর্বশর্ত ছাড়া৷ দুটি গণতান্ত্রিক দেশ একসঙ্গে বসে স্থির করবে সংঘাত নাকি শান্তি, কোন পথে যাবে দুটি প্রতিবেশী দেশ৷

পররাষ্ট্র নীতির বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুরুতেই যেন তালভঙ্গ হলো, যেটা কাঙ্খিত ছিল না৷ অর্থাৎ, আগে ভাগেই পাকিস্তান আলোচনার সুর বেধেঁ দিল৷ নিউ ইয়র্কে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে বলেছিলেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর জঙ্গি হামলা বন্ধ না হলে শান্তি প্রক্রিয়া বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে৷ পাকিস্তান সরকারের ঐ বিবৃতির নিহিত অর্থ হলো সেই দাবিকে নস্যাৎ করে দেয়া৷ এই ধরণের চাপা হুঁশিয়ারি হবে ভারতের পক্ষে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাবার প্রধান অন্তরায় মনে করছেন দিল্লির কূটনৈতিক মহল৷ তার ওপর আছে মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার অপরাধীদের শাস্তি না দেয়া৷

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধনে কোনো তারতম্য হবে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা৷ কারণ এটা একটা ধারাবাহিক বিষয় – বলছেন পররাষ্ট্র নীতির বিশেষজ্ঞরা৷ পক্ষান্তরে মনে করা হচ্ছে, শরিক দলের চাপমুক্ত মোদী সরকার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা নদীর জলবণ্টন এবং স্থলসীমা চুক্তি বাস্তবায়নে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেন৷ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোদীর সম্পর্কে যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মমতার আপত্তিকে মোদী কতটা আমল দেবেন সে বিষয়ে সন্দেহ আছে, বিশেষ করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে৷

পররাষ্ট্র নীতিতে কেন্দ্রীয় সরকারই বলে থাকেন শেষ কথা৷ বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা অতিরঞ্জিত বলে মনে করছেন দিল্লির কূটনৈতিক মহল৷ উল্লেখ্য, মমতা-মোদী তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিভিন্ন রাজ্য সরকার এবং আঞ্চলিক দল মোদীকে অভিনন্দন জানালেও সৌজন্যের খাতিরেও মমতা তা জানাননি৷

ভারতের প্রাচীন প্রতিবেশী এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন মোদীর সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছে৷ চীনের নেতৃত্ব মনে করেন, মোদীর জয়লাভের আসল চাবিকাঠি তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কার ও প্রবৃদ্ধি৷ তাই মোদীর প্রাথমিক অগ্রাধিকার হবে অভ্যন্তরীণ আর্থিক পুনর্জ্জীবন এবং নির্বাচনি অঙ্গীকারগুলির দ্রুত বাস্তবায়ন৷ চীনের সঙ্গে সংঘাতের পথে মোদী যেতে চাইবেন না৷ রাতারাতি চীন নীতিতে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না এনে মোদী চাইবেন একটা স্থিতাবস্থা বজায় রেখে চীনের সঙ্গে আর্থিক সহযোগিতা বাড়াতে – এমনই মনে করছেন ভারতের চীন নীতি পর্যবেক্ষকরা৷ চীনও ভারতকে নতুন করে ঘাটাতে সাহস পাবে না৷ কারণ, চীনের প্রধান মাথা ব্যথা এখন পূর্ব এবং দক্ষিণ চীন সাগরে একদিকে জাপান এবং অন্যদিকে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন্সকে নিয়ে৷

শপথ গ্রহণের আগেই প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন দেশের কাছে বন্ধুত্বের বার্তা পাঠিয়েছেন মোদীছবি: Reuters

পররাষ্ট্র নীতিতে মোদীর আর একটা বড় চ্যালেঞ্জ আফগানিস্তান৷ মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করেছে৷ একটা রাজনৈতিক এবং সামরিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে৷ যেটা হয়েছিল ৮০-র দশকে সাবেক সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়ার সময়ে৷ যুযুধান তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে সামাল দিতে নতুন নির্বাচিত সরকারের প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন আবদুল্লা আবদুল্লা৷ সেই কাজে এবং আফগানিস্তানের আর্থ-সামাজিক বিকাশে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে চাইবে নতুন সরকার৷

ওদিকে মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বকে স্বাগত জানিয়েছে ওবামা প্রশাসনও৷ ওবামা এবং তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি শুভেচ্ছা বার্তা ছাড়াও ফোনে মোদীকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন সমীকরণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ কারণ আজকের বিশ্বে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের কাছে শুধু অপরিহার্য নয়, পরিপূরকও বটে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য