মোদী-হাসিনা বৈঠকে প্রতিরক্ষা, জল-সহ নানা বিষয়ে সমঝোতা
২২ জুন ২০২৪
মোদী-হাসিনা বৈঠক ও দুই দেশের আলোচনায় প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে গঙ্গার জলবন্টন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা হলো।
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও সেনার আধুনিকীকরণে সাহায্য করবে ভারত। সন্ত্রাসবাদ ও কট্টরপন্থার মোকাবিলায় দুই দেশ সহযোগিতা করবে। গঙ্গার জলবন্টন চুক্তির নবীকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তিস্তার সংরক্ষণ নিয়ে শীঘ্রই টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশ সফর করবে।
মোদী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে যারা চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন, তাদের জন্য শীঘ্রই ই-মেডিকেল ভিসা চালু করবে ভারত। বাংলাদেশের মানুষের সুবিধার জন্য রংপুরে অ্যাসিসটেন্ট হাই কমিশন অফিস খোলা হবে।
এছাড়া মহাকাশের ক্ষেত্রে দুই দেশ সহযোগিতা করবে। মৈত্রী উপগ্রহ নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে। ডিজিটাল ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্র নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। ফিরোজগঞ্জে ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোর কাজ ভারত শেষ করবে।
আগামী ৯ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তার আগে হাসিনাকে পাশে নিয়ে নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, ভারত মহাসাগর নিয়ে ভারতের ভিশনকে সমর্থন করেছে বাংলাদেশ। সেজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মোদীর বক্তব্য, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে। আর ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। ভারতও ২০২৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত হবে।
ভারতের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের ভাবনা
ভারতে সাত ধাপে লোকসভা নির্বাচন চলছে৷ শেষ হবে ১ জুন৷ ফল ঘোষিত হবে ৪ জুন৷ সে দেশের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন দল কী ভাবছে, তা নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: Subhadip Basak/DW
খরতাপের কারণে ভোটের হার কম: এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগ
ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ৷ সেখানে ভোট হচ্ছে৷ ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন৷ তারাই তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করছেন৷ আশা করি, সেখানে শেষ পর্যন্ত ভোট ভালোই হবে৷ ভোটে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তাদের সঙ্গেই আমাদের সরকারের সুসম্পর্ক থাকবে৷ ভারতে ভোটের হার কমার কারণ হতে পারে খরতাপ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া৷
ছবি: Sazzad Hossain/DW
মোদী এখন টালমাটাল: ড. আসাদুজ্জামান রিপন, বিএনপি
এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে মোদীর ৪০০ পার হওয়া তো দূরের কথা ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কাছে তারা পরাজিতও হতে পারে৷ আর কাশ্মীরে বিজেপি কোনো আসন পাবে না জেনেই প্রার্থী দেয়নি৷ তাদের সীমিত স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে সেখানে কাশ্মীরী জনগণ আগের চেয়ে বেশি হারে ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়েছে৷ মোদীর নাগরিকত্ব আইন, ধর্মীয় উন্মাদনা কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে৷ মোদী এখন টালমাটাল অবস্থায় আছেন৷
ছবি: DW
ভারতে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে: ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, জাতীয় পার্টি
আমার মনে হয় ভারতে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হতে যাচ্ছে৷ আমরা বিজেপি ও আরএসএসের যে শক্ত ভিত্তির কথা মনে করেছিলাম, তাতে ভাটার টান দেখতে পাচ্ছি৷ এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য যে, একটি দল বা মত দীর্ঘদিন শাসন করতে পারবে না৷ ভারতের জনগণ তার প্রকাশ ঘটাচ্ছে৷ আমাদের এখানেও যদি নির্বাচন ব্যবস্থা ঠিক থাকে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, তাহলে এখানেও কোনো দল দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না৷
ছবি: DW
ভারতে নির্বাচন পরিচালনাকারীরা তুলনামূলক স্বাধীন: হাসানুল হক ইনু, জাসদ
নির্বাচনি প্রচারে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাসহ আরো যে সমস্যা আছে তা প্রাধান্য না পেয়ে ঘৃণা, ধর্ম, জাতপাত এগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে৷ এটা ভারতের মতো দেশের জন্য দুঃখজনক৷ আর সেই কারণেই এবার ভোটারের উপস্থিতি কম৷ কাশ্মীরের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার ডান্ডা ও ঘুস নীতি প্রয়োগ করছে৷ তাই সেখানে বিজেপির প্রার্থী দেয়া, না দেয়ায় কিছু এসে যায় না৷ ভারতে যারা নির্বাচন পরিচালনা করছেন, তারা তুলনামূলক নিরপেক্ষ ও স্বাধীন৷
ছবি: DW
নীতির তেমন পরিবর্তন হবে না: মাহমুদুর রহমান মান্না, নাগরিক ঐক্য
মোদীনীতির প্রতি ভারতে সমর্থন কমছে৷ বিশেষ করে নাগরিকত্ব আইন এবং নির্বাচনের আগে ধর্মের যে ব্যবহার, তা নির্বাচনের পরিবেশকে খারাপ করেছে৷ ভোটাররা এই কারণে কম ভোট দিতে গেছেন৷ আর ওই অবস্থার প্রতি সমর্থন কমছে৷ নির্বাচন পুরো শেষ হলে বোঝা যাবে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়৷ তবে মনে হচ্ছে কংগ্রেস আবার ছাই থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছে৷ তবে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে সেখানকার নীতির পরিবর্তন যে খুব বেশি হবে সেটা বলা যাচ্ছে না৷
ছবি: DW
ভারতের জনগণ প্রগতিশীলতার দিকে যেতে চাইছে: রুহিন হোসেন প্রিন্স, কমিউনিস্ট পার্টি
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ভারতে যারা প্রগতিশীলতার জন্য লড়াই করেন ও যারা সংবিধান রক্ষা করতে চান, তাদের পক্ষে সমর্থন বাড়ছে৷ এতে আমরা খুশি, কারণ, আমরা ভারতের জনগণের সঙ্গে কাজ করতে চাই৷ মোদীকে তো আমরা জানি৷ তিনি আবারো ক্ষমতায় আসলে শুধু ভারত নয়, এই উপমহাদেশের জন্য ক্ষতি৷ আমাদের দেশের জন্যও ক্ষতি৷ আর কাশ্মীরে প্রার্থী দিলে বিজেপির লোকজন প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের মুখে পড়তো৷ তাই প্রার্থী দেয়নি বলে মনে হয়েছে৷
ছবি: DW
6 ছবি1 | 6
হাসিনা যা বলেছেন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ''ভারত হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী। ভারত বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্য করেছে। মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি ভারতের সেনাও শহিদ হয়েছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।''
হাসিনা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মোদী যোগ দিয়েছিলেন। তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।
হাসিনা বলেন, ''আমি ২০২২ সালে এসেছি। ২০২৩ সালে জি২০ বৈঠকে ভারতের আমন্ত্রণে এসেছি। কয়েকদিন আগে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এসেছি। মোদী তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলে তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জলবন্টন, জ্বালানি, শক্তি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঝোতা হয়েছে। দুই দেশের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকবে।''
মোদীকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন হাসিনা।
যে সমঝোতা হয়েছে
দুই দেশের মধ্যে একাধিক সমঝোতাপত্রে সই হয়েছে। তার মধ্যে আছে, ডিজিটাল, গ্রিন পার্টনারশিপ, সমুদ্র ও ব্লু ইকনমি, স্বাস্থ্য, মহাকাশ, মৈত্রী উপগ্রহ, রেল, সমুদ্রবিজ্ঞান ও সামরিক ক্ষেত্র।