মোবাইল গেম নিয়ে কলেজছাত্র খুন
১৮ এপ্রিল ২০২২![](https://static.dw.com/image/40112031_800.webp)
দৈনিক প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজহারুল ইসলাম৷
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন ১৯ বছর বয়সি রাকিবুল ইসলাম৷ চার দিন আগে ১৪ এপ্রিল কদমতলীর মিনাবাগ এলাকার ময়লার ভাগাড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷ রাকিবুলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার বাবা আবদুল আলী বাদী হয়ে কদমতলী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন৷
রাকিবুল মা-বাবার সঙ্গে কদমতলীর পাটেরবাগ এলাকায় থাকতেন৷ ঘটনার দিন বেলা তিনটার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন৷ রাকিবুল ইফতারের সময়ও বাসায় না ফেরায় তার স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন এবং এ সময় তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়৷
রাকিবুল নিখোঁজের খবর পুলিশকে জানায় পরিবার৷ রাত দুইটার দিকে কদমতলীর মিনাবাগের ময়লার ভাগাড় থেকে রাকিবুলের লাশ উদ্ধার হয়৷ পুলিশ রাকিবুলের মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) সংগ্রহ করে৷ সিডিআরের তথ্যে, রাকিবুলের সঙ্গে কদমতলীর রবীনের মুঠোফোনে কথা বলার তথ্য পায় পুলিশ৷
এরই মধ্যে ২৪ বছর বয়সি রবীন চলে গেছেন শরীয়তপুরে ৷ পরে রবীনের ছোট ভাই ২০ বছর বয়সি রাসেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করায় একপর্যায়ে রাসেল পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তার ভাই রবীন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন৷
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার এসআই আজহারুল প্রথম আলোকে বলেন, রাসেল যখন পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন, তখন তার ভাই রবীন শরীয়তপুরে৷ পরে অভিযান চালিয়ে রবীনকে গ্রেপ্তার করে কদমতলী থানায় আনা হয়৷ দুই ভাইকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করায় রবীন ও রাসেল এ হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং কারণসহ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন৷
রবীন ও রাসেলের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর৷ থাকেন ঢাকার কদমতলী এলাকায়৷ রবীন ডিশ লাইনের কাজ করেন৷ গতকাল দুপুরে রবীন ও রাসেল ঢাকার সিএমএম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পরে তাদের দুই ভাইকে পাঠানো হয় কারাগারে ৷
ঢাকার সিএমএম আদালত ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আদালতে দুই ভাইয়ের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী, রাকিবুল ও রবীন পূর্বপরিচিত৷ তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল৷ দুজনেই মুঠোফোনে ফ্রি ফায়ার গেম খেলতেন৷ একপর্যায়ে রবীন ফ্রি ফায়ার গেম খেলার পাসওয়ার্ডটি বিক্রি করতে রাকিবুলকে অনুরোধ করেন৷ কিন্তু রাকিবুল তা না করে নিজেই ওই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কয়েক দিন ধরে গেম খেলছিলেন৷এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ হয়৷
১৪ এপ্রিল রবীন কৌশলে রাকিবুলকে নিজের বাসায় ডেকে নেন, তখন বাসায় অন্য কেউ ছিল না৷ ফ্রি ফায়ার গেম বিষয়ে প্রথমে রাকিবুল ও রবীনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়৷ পরে ডিশ লাইনের কাজে ব্যবহৃত তার দিয়ে রাকিবুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন রবীন৷
ইফতারের আগমুহূর্তে রাকিবুলকে খুন করা হয়৷ হত্যার পর তার লাশ বাসার ওয়ার্ডরোবে ভরে রাখেন রবীন৷ গভীর রাতে রাসেলের সহযোগিতায় রাকিবুলের লাশ কাপড়ের আলমারি থেকে বের করে মিনাবাগের ময়লার ভাগাড়ে ফেলে আসেন রবীন৷
রাকিবুলের বাবা আবদুল আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে ওরা খুন করেছে৷ এখন আমরা শুনছি, মোবাইলে গেম খেলাকে কেন্দ্র করে রবীন এই খুন করেছে৷'
আবদুল আলী তার ছেলের হত্যাকারী রবীন ও রাসেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান৷
এনএস/কেএম (প্রথম আলো)