মোবাইল ফোন নজরদারিতে বিনিয়োগ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ মোবাইল ফোন নজরদারির এই উন্নত ব্যবস্থায় ফোন কল, এসএমএস এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য, ছবি এবং কথোপকথন সব কিছুরই নজরদারি সম্ভব৷ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই বিনিয়োগের অংশ হিসেবে ৬টি মোবাইল ফোন কোম্পানি দিয়েছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা৷ ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটর্স বাংলাদেশ' (অ্যামটব)-এর প্রধান নির্বাহী নুরুল কবির ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী মোবাইল ফোন অপারেটরদের অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে৷'' তবে এই অর্থের পরিমাণ কত তা জানাতে রাজি হননি তিনি৷ আর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অর্থের পরিমাণ ভুল না ঠিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না৷''
চলতি মাসেই মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে মোবাইল ফোন কথোপকথনের কিছু রেকর্ড উপস্থাপন করা হয়৷ তাতে দেখা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কিছু নির্দেশনা রয়েছে নেতা-কর্মীদের প্রতি৷ এই বৈঠকের পরই মোবাইল ফোনে নজরদারি ব্যবস্থা আরো উন্নত করার সিদ্ধান্ত হয়৷
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে নজরদারির যে ব্যবস্থা চালু আছে, তা পাঁচ বছরের পুরনো৷ এর প্রযুক্তি নেয়া হয় নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্ক থেকে৷ তারা তাদের ব্যাবসার একটি অংশ এখন জার্মানির আরেকটি নতুন কোম্পানি ট্রোভিকর-এর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে এবং তারাই এখন বাংলাদেশের মোবাইল ফোন মনিটিরিং সার্ভিলেন্স-এর প্রযুক্তিগত সহয়াতার চুক্তি অধিগ্রহণ করেছে৷
সরকারের ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টারের (এনএমসি) মাধ্যমে এই নজরদারি করা হয়৷ বর্তমান ব্যবস্থায় একবারে ২০ হাজার মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড করা যায়৷ ধারণা করা হচ্ছে উন্নত ব্যবস্থায় এই ফোন কল রেকর্ডের সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ এছাড়া থ্রিজি মোইল ফোন মনিটরিং-এর সর্বশেষ প্রযুক্তিও বসানো হবে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী বৃদ্ধি, প্রযুক্তির উন্নতি এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের বিস্তৃতির কারণে সার্ভিলেন্স এবং মনিটরিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ প্রয়োজন৷
বাংলাদেশের টেলি-যোগাযোগ আাইনের ৯৭ (ক) ধারায় বলা আছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে টেলি-যোগাযোগ সেবা ব্যবহারকারীর পাঠানো বার্তা ও কথাবার্তা প্রতিহত, ধারণ বা এ সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহে সরকার সময়ে সময়ে নির্ধারিত সময়ের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা বা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কাজে সম্পৃক্ত কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে পারবে৷ ঐ আইনের মধ্যে থেকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার কাজ করছে৷
মনিটরিং কাজে এনএমসি-র মোবাইল ফোন ডাটাবেজের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন হয় জানতে চাইলে অ্যামটব-এর প্রধান নির্বাহী নুরুল কবির ডয়চে ভেলে জানান, ‘‘এ ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারব না৷ এ তথ্য দিতে পারবে এনএমনি ও বিটিআরসি৷''
জানা গেছে, এর আগে ২০১২ সালে ইন্টারনেটে নজরদারি করতে পারে এমন কয়েকটি সফটওয়্যার ইউরোপীয় একটি কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছিল বাংলাদেশ৷ ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে অডিও, ভিডিও এবং লিখিত কোনো ডকুমেন্ট দূরবর্তী অবস্থান থেকে নজরদারি করার জন্য ‘ফিনস্পাই' নামে এই সফটওয়ারের লাইসেন্স কেনে বাংলাদেশ৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিনস্পাই কম্পিউটারে একবার যুক্ত করার পর এটি নির্দিষ্ট অন্য একটি কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে৷ এর মাধ্যমে তাত্ক্ষণিকভাবে ইন্টারনেটের যে কোনো অ্যাপস-এর কথোপকথনও রেকর্ড করতে পারে৷ এছাড়া ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, ই-মেল এবং লুকানো ফাইল উদ্ধার করতে পারে সফটওয়্যারটি৷ ব্যবহারকারীর কোনো পাসওয়ার্ড থাকলেও ফিনস্পাই তা উদ্ধার করতে সক্ষম৷
ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (ব়্যাব) ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের সরকারি একটি ওয়েবসাইটে ‘ইউএইচএফ ট্রান্সমিটার অ্যান্ড সার্ভিলেন্স ইকুইপমেন্ট' ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে৷ ব়্যাব যে নজরদারি সরঞ্জাম ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে, তা হলো গাড়িতে ব্যবহারযোগ্য শক্তিশালী আইএমএসআই ক্যাচার৷ দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ২০১৪-এর ১২ই ফেব্রুয়ারি৷ দরপত্র জয়ী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা ঐ বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন৷ প্রসঙ্গত, দরপত্র বিবরণে স্পষ্ট করে বলা আছে জয়ী প্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে ২০ দিনের প্রশিক্ষণ দিতে হবে৷
সব মিলিয়ে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটে নজরদারি যে বাড়ছে, তা পরিষ্কার৷ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ফাইবার অ্যাট হোম-এর চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এটা স্পষ্ট যে সরকার মোবাইল ফোন সার্ভিলেন্স এবং মনিটরিং-এর বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে৷ ব্যবহার করছে সর্বাধুনিক, সর্বশেষ প্রযুক্তি৷ তবে এই বিনিয়োগের পরিমাণ কত, তা হয়ত সরকার প্রকাশ করছে না অভ্যন্তরীণ কারণে৷''