রোহিঙ্গারা যাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করতে পারে সে বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে পদেক্ষপ নিতে সব মোবাইল অপারেটরকে জরুরি নির্দেশনা পাঠিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রতিবদনে বলছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গুরুত্ব বিবেচনা, আইন শৃংখলা রক্ষা ও জনসুরক্ষার স্বার্থে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে মোবাইল সুবিধা না পায় তা নিশ্চিত করতে অপারেটরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল৷
"কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকারী কমিটি এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে কমিশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কর্তৃক ব্যাপক হারে সিম/রিম ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে৷''
‘‘এমতাবস্থায়, আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো প্রকার সিম বিক্রি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কর্তৃক সিম ব্যবহার বন্ধ তথা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মোবাইল সুবিধাদি প্রদান না করা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করে বিটিআরসিকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হল৷''
নানা কাজে যুক্ত হচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা
গতবছরের ২৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করা এই শরণার্থীরা জীবন ও জীবিকার তাগিদে নানা কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
কৈশোরেই ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান
কুতুপালং মধুরছড়া ৮নং ব্লকে পরিবারসহ থাকে আব্দুর রহমান৷ ৬ সদস্যের পরিবারটি গেল বছরের আগস্টে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে৷ তারপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন আব্দুর রহমানের বাবা৷ তাই পরিবারের ভার এখন রহমানের কাঁধে৷ মিয়ানমারে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে ১১ বছর বয়সি রহমান৷ কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর থেকে সে থেকে সে মুদি দোকানদার৷ ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা এ দোকানে রহমানের মা-ও মাঝে মাঝে বসেন৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
সেলাই করে সংসার চালান ইউনুচ
১০ জনের পরিবার৷ তাই বাংলাদেশ সরকারের দেয়া ত্রাণে সংসার চলে না৷ মিয়ানমারে ইউনুচের দর্জির দোকান ছিল৷ সে কারণে বাংলাদেশে এসেও ৩ হাজার টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনে শুরু করেছেন একই কাজ৷ পরিবারের ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই মেয়ে৷ তাই মেয়েদের বিয়েসহ অন্যন্য খরচ জোগানোর জন্য দর্জির কাজ করেই টাকা জমাচ্ছেন ইউনুচ৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
মাতৃহারা আমির
গত বছরের ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর অভিযানের মূখে মিয়ানমার থেকে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে পালিয়ে আসে আমির সদু (১১)৷ মা মিয়ানমারে সেনাদের হাতে মারা যান৷ ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে আমির সবার ছোট৷ বাবা আবার বিয়ে করেছেন৷ ৭ ভাই-বোনকে থাকতে হয় আলাদা বাসায়৷ পরিবারের স্বার্থে আমিরও নেমে পড়েছে কাজে৷ মধুরছড়ায় রাস্তার পাশে অস্থায়ী এক মুচির দোকান দিয়েছে সে৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
নুর সেহারাও দোকানদার
আলী জোহা রাজমিস্ত্রি৷ তবে তাঁর ছেলে নুর সেহারা এখন দোকান চালায়৷ এক বছর আগে স্ত্রী’র গহনা বিক্রি করে সেই টাকায় দোকান খুলেছিলেন আলী জোহা৷ বড় পরিবারের খরচ নির্বাহ করতে নূরকে দোকানের দায়িত্ব দিয়ে নিজের পুরোনো পেশায় ফিরে গেছেন আলী জোহা৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
মোবাইল মেরামতকারী আতাউল্লাহ
আতাউল্লাহর বয়স এখন ১৯ বছর৷ মিয়ানমারে থাকতে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন৷ এখন বাংলাদেশে এসে কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি মেরামতের কাজ পারেন৷ কুতুপালং লোহার ব্রিজ এলাকার এই দোকানে চাকরি করে মাসে ৩ হাজার টাকা পান তিনি৷ ৭ সদস্যের সংসার চালাতে তাঁর বাবাকেও রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হয়৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
মামার দোকানে চাকরি
রেজাউল করিমমনের বাবা নেই৷ তাই ১১ বছর বয়সেই সংসার চালাতে মামার দোকানে চাকরি নিতে হয়েছে তাকে৷ মাত্র ৮-৯ হাজার টাকার পুঁজির এ দোকানের আয় খুব বেশি নয়৷৭ সদস্যের পরিবারের জন্য এ মুহূর্তে অবশ্য সামান্য টাকাই অনেক৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
ফি ছাড়া রোগী দেখেন রোহিঙ্গা ‘ডাক্তার’
মিয়ানমারে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন শামসুল আলম৷ সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কুতুপালং লম্বাশিয়া বাজারে ঔষধের দোকান দিয়েছেন৷ প্রায় ১ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে খোলা এ দোকানে রোগীদের চিকিত্সা সেবা দিতেও দেখা যায় তাঁকে৷ শামশুল জানান, রাখাইন ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি পাশ করার পর হাসপাতালে চাকরি পেয়েছিলেন৷ ওই চাকরি করার সময় ডাক্তারি সম্পর্কেও ধারণা হয়ে যায় তাঁর৷ কুতুপালংয়ে তাঁর মূল পেশা ওষুধ বিক্রি৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
চুল কাটেন রফিক
সেলুনে চাকরি করেন রফিক৷ বালুখালীর পানবাজারের এই সেলুনে কাজ করার পর মাত্র ৬ মাসেই চুল কাটায় বেশ দক্ষ হয়েছে উঠেছেন রফিক৷ আগে এক সময় টমটম চালাতেন৷ তবে এখন চুল কাটাই রফিকের পেশা৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
8 ছবি1 | 8
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কাছ থেকে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা পেয়ে রোববার মোবাইল অপারেটরদের ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে৷
কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার একটি বড় অংশের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে বলে বিভন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে৷ এসব অবৈধ মোবাইল সিম চাঁদাবাজি, মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা৷