ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মোসাদের নতুন ডিরেক্টর নিয়োগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিস তাঁকে 'ডি' বলে সম্বোধন করেছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী গুপ্তচর সংস্থা ইসরায়েলের মোসাদ। কোভার্ট বা গুপ্ত অপারেশনের জন্য যারা বিখ্যাত। মঙ্গলবার দেশের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সেই সংস্থার নতুন ডিরেক্টরের নাম ঘোষণা করেছেন। বলা হয়েছে, এখন থেকে মোসাদের ডিরেক্টর 'ডি'। কে এই ডি? কেন তাঁর পুরো নাম বলা হলো না?
সাধারণত এই ধরনের গুপ্তচর সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না। তবে মোসাদের সাবেক ডিরেক্টরের নাম সকলে জানতেন। ইওসি কোহেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। বাহরাইন এবং আর আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন কোহেন। অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরবের যুবরাজের সঙ্গেও তিনি দেখা করতে গিয়েছিলেন বলে ইসরায়েলের একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি। যদিও ওই বৈঠকের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে আরব।
এক নজরে বিশ্বের তুখোড় সব গুপ্তচর সংস্থা
ফরেন পলিসি পত্রিকা বিশ্বের সবচেয়ে তুখোড় গুপ্তচর সংস্থাগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে৷ এই সংস্থাগুলিকে চিনুন ছবিঘরে...
ছবি: McPHOTO/blickwinkel/picture alliance
সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
১৯৪৭ সালে সিআইএ-র জন্ম৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে নজরদারি চালাতেই মূলত এই সংস্থার জন্ম৷ বর্তমানে, অ্যামেরিকার হ্যালিফ্যাক্স শহরে কেন্দ্রীয় দপ্তর রয়েছে সিআইএ-র৷ খবর চালাচালি ছাড়াও একাধিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে এই সংস্থার নাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এসভিআর), রাশিয়া
সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের পর সাবেক রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি ভেঙে বেশ কয়েকটি ছোট সংগঠন তৈরি করা হয়৷ এসভিআরের জন্ম ১৯৯১ সালের সেই সময়েই৷ মার্কিন সূত্রের মতামত, সাবেক কেজিবি-কর্মকর্তা ভ্লাদিমির পুটিন ক্ষমতায় আসার পর থেকে এসভিআরের কর্মক্ষমতা আরো বেড়েছে৷
ছবি: AP
এমআই৬, যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেরই জনপ্রিয় নাম ‘এমআই৬’-এর জন্ম ১৯০৯ সালে৷ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন গোয়েন্দা সংস্থা এটি৷ লন্ডনের এসআইএস বিল্ডিঙে অবস্থিত এমআই৬ এককালে পরিচিত ছিল অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজের মতো প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্মী নিয়োগ করার জন্য৷ পাশাপাশি জেমস বন্ড ছবির সিরিজেও ছিল এমআই৬-এর অনেক প্রভাব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Arrizabalaga
মিনিস্ট্রি অফ স্টেট সিকিউরিটি, চীন
চীনের গুপ্তচরবৃত্তির ধরন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সংস্থার থেকে ভিন্ন বলে মনে করছে ফরেন পলিসি৷ চীনা পদ্ধতি এতটাই ভিন্ন যে, একটি নির্দিষ্ট সংস্থার বদলে চীনা গুপ্তচররা সাধারণ ছাত্র, কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশে থাকে৷ ফলে, তাদের খুঁজে বের করাও হয়ে পড়ে কঠিন৷
ছবি: Wikipedia/Shizhao
রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স উইং (র), ভারত
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল পাকিস্তান বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা৷ কিন্তু বর্তমানে এই সংস্থার সাথে জড়িয়েছে বহু বিদেশি অপারেশনের কাহিনী৷ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংগঠন ‘র’৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Qureshi
ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই), পাকিস্তান
ফরেন পলিসি জানাচ্ছে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও ভারতের বিষওয়ে এই সংস্থা বিশেষভাবে সক্রিয়৷ শুধু তাই নয়, ২০০৬ সালে মুম্বাইতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সাথেও জড়িয়েছে আইএসআই-এর নাম৷ অন্যদিকে, সিআইএ-র সাথে মিলে জঙ্গি দমনেও আইএসআই-এর সক্রিয়তার কথা উঠে এসেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa
মোসাদ, ইসরায়েল
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার সাথে জড়িত রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের গল্প৷ ১৯৬০ সালে যুদ্ধাপারাধী আইচমানের গ্রেপ্তারি থেকে ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে হামলার তদন্ত, মোসাদের সাফল্যের রয়েছে অনেক উদাহরণ৷ ইহুদিদের ইসরায়েলে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে বিরাট অবদান রেখে আসছে মোসাদ, জানাচ্ছে ফরেন পলিসি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বুন্ডেসনাখরিশটেনডিন্সট (বিএনডি), জার্মানি
জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার জন্ম ১৯৫৬ সালে, অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে৷ তার আগে, জার্মানির ‘গেলেন অর্গানাইজেশন’ মূলত গোপন তথ্য সরবরাহের কাজ করতো৷ সিআইএ, এসভিআর, এমআই৬, মিনিস্ট্রি অফ স্টেট সিকিউরিটি, র, আইএসআই, মোসাদ আর বিএনডি ছাড়াও ফ্রান্সের ডিজিএসই, অস্ট্রেলিয়ার এসআইএস ও ক্যানাডার সিএসআইএস-ও বিশ্বের তুখোড় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
8 ছবি1 | 8
কোহেন এক সময় নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। বরাবরই তিনি পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সে কারণেই মোসাদের ডিরেক্টর হিসেবেও সকলে তাঁকে চিনত। কিন্তু বর্তমান ডিরেক্টরকে কেউ চেনেন না। সে কারণেই তাঁর নামও গোপন রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর আগে ডি মোসাদের ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। মোসাদের প্রায় প্রতিটি ডিভিশনেই তিনি কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ইসরায়েলের এলিট ফোর্সে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে যুক্ত ছিলেন তিনি। সম্প্রতি ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার ঘটনাতেও তাঁর ভূমিকা ছিল বলে কোনো কোনো মহলের দাবি। তবে ওই ঘটনা ঘটেছিল কোহেনের আমলে।
ডি-কে ডিরেক্টর ঘোষণা করায় খুশি মোসাদের সাবেক ডিরেক্টররা। সকলেরই বক্তব্য গুপ্তচরবৃত্তিতে অত্যন্ত পারদর্শী ডি। তাঁর নেতৃত্বে মোসাদ নতুন নতুন অপারেশন চালাবে বলেই মনে করছেন সাবেক মোসাদের কর্মকর্তারা।