1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মোহাম্মদ’ নাম নিয়ে জার্মানিতে বিতর্ক

৮ মে ২০১৯

নামে কি আসে যায়? কিন্তু জার্মানিতে যদি নাম হয় ‘মোহাম্মদ’, সেটা নিয়ে হতে পারে ভয়াবহ রাজনীতি৷ কট্টর ডানপন্থি দল এএফডি নিচ্ছে তেমনই এক সুযোগ৷

Kleines staunendes glucksendes Baby unter einer Decke
ছবি: picture-alliance

২ মে সোসাইটি ফর দ্য জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ নামের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান জার্মানদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশুদের নামের বার্ষিক তালিকা প্রকাশ করে৷

সাত শতাধিক নাম নিবন্ধন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় এ প্রতিবেদন৷ দেখা যায়, ২০১৮ সালে জার্মানদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম ছিল মেয়েশিশুর জন্য ‘মারি’ এবং ছেলে শিশুর জন্য ‘পল’৷

আপাত নির্দোষ এই প্রতিবেদন খুব দ্রুতই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে সম্পূর্ণ অন্য কারণে৷ বার্লিনের ২২ হাজার নবজাতকের মধ্যে প্রতি ২৫ জনে একজনের নাম রাখা হয়েছে ‘মোহাম্মদ’৷

গণমাধ্যমের উন্মত্ততা

বার্লিনের দৈনিক সংবাদপত্র টাগেসস্পিগেল শিরোনাম করেছে ‘কার্ল-হাইনৎসের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় মোহাম্মদ’৷ ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য ডেইলি মেইল উল্লেখ করেছে, ‘‘জার্মানির ১৬ রাজ্যের ৬টিতে ১০ জনপ্রিয় নামের একটি মোহাম্মদ৷’’ তবে এসব সংবাদের কোনোটিতেই আসল তথ্য তুলে ধরা হয়নি৷

কট্টর ডানপন্থি অভিবাসনবিরোধী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি  (এএফডি)-র সংসদীয় দলের উপনেতা আলিসে ভাইডেল জার্মান ট্যাবলয়েড বিল্ড-এর প্রতিবেদন টুইটারে শেয়ার করতে এক মুহূর্তও দেরি করেননি৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘কী আসে যায়! গত বছর বার্লিনে ছেলে নবজাতকের জন্য সবচেয়ে পছন্দের নাম ছিল মোহাম্মদ...ক্রমবর্ধমান প্রবণতা৷’’

এএফডির বার্লিন শাখার বক্তব্য আরো স্পষ্ট৷ টুইট অ্যাকাউন্টে একটি ছবি শেয়ার করেছে দলটি৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে হিজাব পরা এক শিক্ষক স্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন৷ ছবিটির সাথে ক্যাপশন দেয়া হয়েছে, ‘‘ইসলামীকরণ বন্ধ করুন৷ কেবলমাত্র এএফডির সহায়তায়৷’’

এর কড়া জবাবও মিলছে৷ ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মধ্য-বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদ সাওসান শেবিল এএফডির তীব্র সমালোচনা করেছেন৷ তিনি বলছেন, ‘‘আমার বাবার নাম মোহাম্মদ৷ আমার নাম রাখা হয়েছে সাওসান মোহাম্মদ শেবিল৷ আমার বড় ভাতিজার নাম মোহাম্মদ...আমরা সচেষ্ট থাকবো, যাতে মোহাম্মদ নামটি কখনো হারিয়ে না যায়৷’’

অসঙ্গতিতে ভরা প্রতিবেদন

লাইপসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পারিবারিক ঐতিহ্য বিষয়ক গবেষক গাব্রিয়েলে রদ্রিগেস ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, জার্মান প্রতিষ্ঠানটির করা প্রতিবেদনটি নবজাতকের নামকরণের পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে৷

জার্মানিতে অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ার কারণে ‘মোহাম্মদ’ নাম বাড়ছে, এটা অনেকাংশে সত্যি৷ কিন্তু একই সঙ্গে এটিও বুঝতে হবে, আরব বিশ্বে প্রতিটি পরিবারে অন্তত একটি ছেলের নাম রাখা হয় মোহাম্মদ৷ মুসলিমদের নবি মোহাম্মদের সঙ্গে মিল রেখে নিজের সন্তানের নাম রাখতে চান অনেকেই৷

রদ্রিগেস বলেন, জার্মান পরিবারগুলোর যেমন অনেক নাম থাকে বেছে সন্তানের নামকরণের জন্য৷ জার্মানিতেই প্রতি বছর অর্ধেকের বেশি শিশুর সম্পূর্ণ নতুন নাম রাখা হয়৷ আর সবচেয়ে জনপ্রিয় যে নামগুলোর কথা বলা হচ্ছে, তা মোট জন্ম নেয়া শিশুর দুই থেকে তিন শতাংশ৷

এছাড়া, অন্য কোনো নামের ক্ষেত্রে এত ধরনের ভ্যারিয়েশন পাওয়া যায় না৷ কিন্তু মোহাম্মদ নামটির ২৫ রকমের বানানের খোঁজ পেয়েছেন জরিপকারীরা৷

দেশের সব নামকে বিবেচনায় নিলে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম আলেকজান্ডার৷ এই হিসেবে মোহাম্মদ আছে তালিকার ২৪তম স্থানে৷

ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি

রদ্রিগেস বলছেন, কিভাবে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে, এ বিষয়েও বিস্তারিত জানানো হয়নি৷ ফলে এ থেকে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়৷

সংস্থাটির গবেষক ফ্রাউকে র‍্যুডেবুশ ডয়চে ভেলের কাছে স্বীকার করছেন, ‘‘আমাদেরও মনে হয়েছে, ফলটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে৷’’

ভয়ের পরিবেশ তৈরি

রদ্রিগেস বলছেন, আপাত নির্দোষ এই প্রতিবেদনকে পরিপ্রেক্ষিত ছাড়া ব্যবহার করে ভয়ের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মানিতে বেশিরভাগ নবজাতকের নামই বাইরের দেশ থেকে আসা৷ ফলে জার্মানদের কানেরও কিছুটা অভ্যস্ততা প্রয়োজন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘শহর এলাকায় তেমন একটা সমস্যা নেই৷ কিন্তু অন্যান্য এলাকায় মানুষ এতে হুমকি বোধ করে৷ সেসব এলাকায় বিদেশিদের উপস্থিতিও খুব কম৷’’ শুধু নাম নয়, বিদেশিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে-কোনো বিষয়েই এই ভীতি কাজ করে বলে মনে করেন তিনি৷ আর এই ভয়কে পুঁজি করেই এএফডি ফায়দা লুটতে চাইছে বলেও বিশ্লেষণ তাঁর৷

অস্টিন ডাভিস/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ