ভাষা নদীর স্রোতের মতো৷ আবর্জনা সেই স্রোতে ভেসে যাবে৷ সমাজ যেটা গ্রহণ করবে, সেটাই টিকে থাকবে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপে বলছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী৷
বিজ্ঞাপন
তার মতে, মৌলবাদী প্রবণতা থেকেই এখন সাম্প্রদায়িক শব্দ বেশি ব্যবহার হচ্ছে৷ কোনো গোষ্ঠী যদি এটা চাপিয়ে দিতে চায় সেটা চলবে না৷ ভাষা কিন্তু ওগুলো গ্রহণ করে না৷
ডয়চে ভেলে : বাংলা ভাষায় শব্দের সন্নিবেশ করা হয় কিসের ভিত্তিতে?
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : বাংলা ভাষায় শব্দের সন্নিবেশ দু'টো জায়গায় হয়৷ যারা অভিধান তৈরি করেন তারা সেখানে এই শব্দগুলো নিয়ে নেন৷ আরেকটা হলো যখন কোন বড় লেখক সুন্দরভাবে কোন শব্দ ব্যবহার করেন, যেটা আগে করা হয়নি৷ তখন সেটা একটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যায়৷ তারা সাধারণত সৃষ্টিশীল লেখক হন৷ অভিধান প্রণেতারাও তা করেন আর সৃষ্টিশীল লেখকেরাও করেন৷ তাদের রচনার মধ্য দিয়ে নতুন শব্দ সংযুক্ত হয়৷ আমাদের বাংলা ভাষাতেও তাই হয়েছে৷ অনেক শব্দ আবার বাদও পড়ে গেছে৷ যেগুলো এখন আর ব্যবহার করা হয় না৷ তবে পাকিস্তান আমলে আরবি শব্দ বেশি ব্যবহার করার একটা চেষ্টা হয়েছিল৷ সেটা টেকেনি৷ আবার সংস্কৃত বাহুল্যও বাংলা ভাষাতে আছে৷ বাঙালি মুসলমানরা আবার সেটাকেও গ্রহণ করতে পারেনি৷ সামাজিক কারণেও গ্রহণ-বর্জনের ঘটনা ঘটে৷
‘ভাষা সেটাকেই গ্রহণ করে যেটা তার সঙ্গে মেলে’
বাংলা একাডেমির অভিধানে নতুন নতুন শব্দ দেখা যায়৷ এগুলো কিসের ভিত্তিতে নেওয়া হয়?
এটা কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে করা হয় না৷ সব অভিধানেই নতুন যেসব শব্দ প্রচলিত হয় সেগুলো মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হয়৷ সব জায়গাতেই বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এগুলো আসে৷ তারাই নতুন নতুন শব্দের ব্যাপারে সুপারিশ করেন৷ কিন্তু বাংলা একাডেমি সেটা করে না৷ কারণ তারা কোন বিশেষজ্ঞ রাখেন নাই৷ এটা তারা পারেন নাই৷ এটার দরকার ছিল৷ একটা ভাষাকে বিকশিত করতে হলে এমন বিশেষজ্ঞ থাকতে হয়৷ তারা পরামর্শ দেবেন এই শব্দগুলো এখন ব্যবহৃত হচ্ছে, এগুলো অভিধানে সংযোজন করা প্রয়োজন৷ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আমাদের অনেক শব্দ আছে৷ ওরা লোক রাখে, তাদের পরামর্শ শোনে৷ কিন্তু আমাদের তো কোন আয়োজন নেই৷ এই কারণে আমাদের অভিধানে খুব একটা এমন সংযোজন ঘটে না৷
ভাষাবিদদের মধ্যে শব্দ নিয়ে কোনো মতবিরোধ আছে কি-না?
এটা তো ছিল৷ একদল চেষ্টা করেছে বাংলা ভাষায় সংস্কৃত বাহুল্য বজায় রাখতে৷ শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানরা এক সময় বলতেন, এই ভাষাটা আমাদের মাতৃভাষা না৷ আমাদের মাতৃভাষা উর্দু৷ মুসলমান লেখকেরাও চেষ্টা করেছেন আরবি-ফারসি ভাষা বেশি ব্যবহার করতে৷ বাংলা ভাষায় শব্দ যোগ করতে একটা বড় কাজ করে দিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম৷ তিনি অনেক আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করেছেন৷ যেগুলো প্রচলিত, মুখে মুখে ছিল কিন্তু ব্যবহৃত হত না৷ যেমন নজরুল ইসলাম খুন শব্দকে ব্যবহার করেছেন৷ খুন শব্দের অনেক অর্থ হয়৷ খুন করা, খুন মানে রক্ত, খুন হব, খুন হয়ে যাব অনেক রকম অর্থ হয়৷ এই খুন শব্দে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত আপত্তি করেছিলেন৷ তখন নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, এটা নিয়ে আপত্তির কী আছে, এটা তো কসাই খানার খুন না৷ এটা আবেগ থেকে চলে আসে৷ এরকম নজরুল ইসলাম অনেক শব্দ ব্যবহার করেছেন, যেগুলো বাংলা ভাষায় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল৷ এরকম বড় প্রতিভা যখন কোন শব্দ ব্যবহার করেন তখন সেটা গ্রহণযোগ্যতা পায়৷
ভাষা নিয়ে সাত মজার তথ্য
ইউনেস্কোর হিসেবে পৃথিবীর মানুষ প্রায় ছয় হাজার ভাষায় কথা বলে৷ এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ভাষায় কথা বলা মোট মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও কম৷
মোট ভাষা
ইউনেস্কো বলছে, পৃথিবীর মানুষ প্রায় ছয় হাজার ভাষায় কথা বলে৷ এর মধ্যে কমপক্ষে ৪৩ শতাংশ ভাষা বিলুপ্তির আশঙ্কায় রয়েছে৷ আরেক হিসেব বলছে, ছয় হাজার ভাষার মধ্যে ৯০ শতাংশ ভাষায় কথা বলা মোট মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও কম হতে পারে৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এসআইএল ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশনা ‘এথনোলোগ’-এর হিসেবে, বিশ্বে বর্তমানে ভাষার সংখ্যা ৭,১৩৯৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
সবচেয়ে বেশি ভাষার দেশ
পাপুয়া নিউ গিনির জনসংখ্যা প্রায় আশি লাখ৷ এথনোলোগের হিসেবে, সে দেশের মানুষ ৮৪০ ভাষায় কথা বলে! তবে অফিসিয়াল ভাষা তিনটি- ইংরেজি, টক পিসিন ও হিরি মটু৷ এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ায় ভাষার সংখ্যা ৭১২৷ এরপর ক্রমান্বয়ে আছে নাইজেরিয়া (৫২২), ভারত (৪৫৪) ও যুক্তরাষ্ট্র (৩২৬)৷
ছবি: picture- alliance/AP Photo/UN/S. Aupong
মহাকাশে ঘুরছে বাংলা
সৌরজগৎ নিয়ে গবেষণা করতে ১৯৭৭ সালে নাসা ভয়েজার ১ ও ২ মহাকাশযান প্রেরণ করে৷ প্রতিটিতে একটি করে সোনালি ডিস্ক রয়েছে৷ এতে পৃথিবীর বিভিন্ন শব্দ ছাড়াও আছে ৫৫ ভাষায় বলা শুভেচ্ছা বার্তা৷ এরমধ্যে বাংলাও আছে৷ সুব্রত মুখার্জি বলছেন, ‘‘নমস্কার, বিশ্বের শান্তি হোক৷’’ মহাকাশযান দুটি এখনও মহাকাশে সক্রিয় আছে৷
ছবি: picture alliance/Jet Propulsion Lab via AP/dpa
ইংরেজি ভাষায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বর্ণ
২০১৮ সালে রিডার্স ডাইজেস্টের এক প্রতিবেদন জানায়, ‘কনসাইস অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি’তে থাকা প্রায় ২৪ হাজার শব্দে যত বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে ‘ই’ বর্ণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, প্রায় ১১ শতাংশ৷ এরপরেই আছে ‘এ’৷ ‘ই’ এর চেয়ে প্রায় ছয় হাজার শব্দে পিছিয়ে আছে ‘এ’ বর্ণ৷ নরওয়েজিয়ান, ফিনিশ, ফ্রেঞ্চ ও ইটালিয়ান ভাষায়ও ‘ই’ এর অনেক ব্যবহার আছে৷
সবচেয়ে নতুন ভাষা লাইট ওয়ার্লপিরি
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে ওয়ার্লপিরি আদিবাসী গোষ্ঠীর বাস৷ তারা ‘ওয়ার্লপিরি’ ভাষায় কথা বলে৷ তাদের সংখ্যা ৩-৪ হাজার৷ ৭০/৮০-র দশকে ওয়ার্লপিরি বাবা-মা সন্তানদের সঙ্গে কথা বলার সময় ইংরেজি ও ‘ক্রিয়ল’ ভাষার শব্দ ব্যবহার করতেন৷ এই তিন ভাষা শোনা বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় আলাদা এক ভাষার জন্ম হয়, যা ‘লাইট ওয়ার্লপিরি’ নাম পেয়েছে৷ ঐ বাচ্চারা এতদিনে বড় হয়েছে৷ এখন তাদের সন্তানরাও এই ভাষা ব্যবহার করছে৷
জার্মানির ‘লাইবনিৎস ইনস্টিটিউট ফর দ্য জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ’ জানিয়েছে, ২০২০ সালে প্রায় ১,২০০ নতুন জার্মান শব্দ তৈরি হয়েছে৷ সাধারণত গড়ে প্রতিবছর প্রায় ২০০ নতুন জার্মান শব্দ তৈরি হয়৷ কিন্তু করোনার কারণে গতবছর রেকর্ড সংখ্যক শব্দ পাওয়া গেছে৷ যেমন করোনাম্যুডে (করোনায় ক্লান্ত), করোনাফ্রিজুয়া (করোনা হেয়ারস্টাইল), ইম্ফনাইড (টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি ঈর্ষা) ইত্যাদি৷
ছবি: Jürgen Fromme/firo/picture alliance
বানানো ভাষা
গেম অফ থ্রোনসের যাযাবর গোষ্ঠী ডোথরাকির সদস্যরা ডোথরাকি ভাষায় কথা বলেন৷ এই টিভি সিরিজের জন্য ডোথরাকি ভাষাটি তৈরি করেন ল্যাঙ্গুয়েজ ক্রিয়েটর ডেভিড পিটারসন৷ এমন প্রায় দুশোর মতো ভাষার সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলো বিভিন্ন বই, ফিল্ম ও টিভি সিরিজের প্রয়োজনে বানানো হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Sky
7 ছবি1 | 7
শব্দ কি অভিধান থেকে আসে, নাকি সমাজ থেকে বাংলা অভিধানে যায়?
ভাষা তো মানুষের মুখের ভাষা৷ শব্দ তো মানুষের মুখে থাকে৷ মুখ থেকেই অভিধানে যাবে৷ অভিধান থেকে মুখে আসে না৷ ভাষা সমাজ থেকেই অভিধানে যাবে৷ লেখকেরা এই শব্দগুলো সমাজ থেকেই নেন৷ তারা নিজেরা তৈরি করেন বা আকাশ থেকে পান তা নয়৷ এটা সমাজ থেকেই অভিধানে যায়৷ সমাজ থেকেই ভাষা সমৃদ্ধ হয়৷
ইদানিং কি সাম্প্রদায়িক শব্দগুলো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে?
এই ধরনের শব্দ বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে সমাজের কারণে৷ সমাজে এক ধরনের মৌলবাদী প্রবণতা দেখা দিয়েছে৷ ওই দিক থেকে আবার হিন্দু শব্দও আসছে৷ হিন্দু শব্দও কিন্তু বাংলা ভাষায় ঢুকেছে৷ এগুলো আগে আমরা ব্যবহার করতাম না৷ মৌলবাদী প্রবণতা থেকেই এগুলো ব্যবহার হচ্ছে৷
ধর্মীয় শব্দ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা অভিধানে উন্মুক্ত করা আছে কী-না?
এগুলো কিন্তু ধর্মীয় শব্দ না৷ যে শব্দগুলো সামাজিকভাবে গৃহীত হয়, সেগুলোই ব্যবহার হয়৷ ধর্মীয় শব্দ হওয়ার কোন সুযোগ নেই৷ সেটা ন্যায়সঙ্গতও না৷ কোন শব্দ যদি প্রচলিত হয় সেটাই মানুষ ব্যবহার করে৷ এটা কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না৷ কোন গোষ্ঠী যদি এটা চাপিয়ে দিতে চায় সেটা চলবে না৷ ভাষা কিন্তু ওগুলো গ্রহণ করে না৷
কেউ কেউ বাংলা ভাষায় তৎসম প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেন৷ আবার কেউ ইংরেজি শব্দকে গুরুত্ব দেন? কারণ কী?
আমাদের দেশে যে শ্রেণিটা সর্বক্ষেত্রে কর্তৃত্ব করে, যারা আদর্শ, যাদের দেখে অন্যরা শেখে তাদের কথাবার্তার মধ্যে ইংরেজি শব্দ আসে৷ এমনকি ইংরেজি বাক্য চলে আসে৷ তখন ওইভাবে চলে৷ কিন্তু এটা ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়নি৷ হবেও না৷ অভিধানে এটা ঢুকবে না, সাহিত্যও এটা গ্রহণ করবে না৷ অনেকে আবার আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করে৷ এমনকি আঞ্চলিক ভাষাকে সাহিত্যের ভাষা করার চেষ্টা হয়েছিল৷ সেটাও টেকেনি৷ কেউ কিন্তু এটা চাপিয়ে দিতে পারেনি৷ সমাজের সকল অংশের গ্রহণযোগ্যতা ছাড়া এটা টিকতে পারবে না৷
অ্যালকোহল থেকে কফি: ইংরেজি শব্দের আরবি মূল
কট্টরপন্থি দলগুলো জার্মানিতে ইসলামের কোনো জায়গা নেই বলে বিতর্কে মেতেছে৷ অথচ ভাষাগত দিক থেকে জার্মানির সঙ্গে আরবি ভাষার সম্পর্কটা পুরোনো৷ নিত্যদিনের ব্যবহারকৃত ইংরেজি ও জার্মান শব্দে রয়েছে আরবি ভাষা থেকে নেয়া শব্দ৷
ছবি: HappyAlex/Fotolia.com
অ্যালকোহল
আরবি শব্দ ‘আল-কুহিল’ থেকে ইংরেজি শব্দ অ্যালকোহলের উৎপত্তি৷ ‘কুহিল’ শব্দের অর্থ চোখে কাজল দেয়ার জন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থের নির্যাস৷ ইউরোপে রসায়নবিদদের মতে, যে কোনো পদার্থের নির্যাসই হলো অ্যালকোহল৷
ছবি: Karlosk - Fotolia.com
কফি
অনেকেরই ধারণা কফি শব্দটি ইটালি ভাষা কাফে থেকে এসেছে৷ তুরস্কে কফিকে বলা হয় ‘কাহুয়া’, যেটা আরবি শব্দ ‘কাহুহ’ থেকে এসেছে৷ এর অর্থ ওয়াইন বা মদ৷ অথচ ইসলামে মদ্যপান নিষিদ্ধ৷ তাই কফিকে বলা হয় ‘ওয়াইন অফ ইসলাম’৷
ছবি: Imago/Levine-Roberts
সুগার
কফিকে মিষ্টি বানাতে হলে আপনার দরকার চিনির৷ কয়েক শত বছর আগে আরব ব্যবসায়ীরা নিজ দেশ থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে চিনি সরবরাহ করত, যাকে তারা বলত ‘শার্কারা’ যার অর্থ কণা বা বালি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildagentur-online
সোফা
হাতে মিষ্টি কফি নিয়ে কোথায় বসবেন? নিশ্চয়ই সোফায়? আরব বিশ্বে সোফাকে বলা হয় ‘সুফহা’, মূলত কোনো স্থানে কার্পেটিং করে তার উপর বসার স্থান৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Tetra
ম্যাট্রেস
‘মাত্রাহুন’ শব্দের অর্থ কুশন বা কার্পেট৷ এটি ল্যাটিনে রূপান্তরিত হয়ে মাটেরাসিয়াম হয়েছে, পরবর্তীতে ইটালীয় ও অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় পরিবর্তিত হয়ে ম্যাট্রেসে রূপ নিয়েছে৷
ছবি: Colourbox/Maxx-Studio
ম্যাগাজিন
আরবি শব্দ ‘মাকজিন’-এর অর্থ হলো স্টোর হাউস বা গুদাম ঘর৷ এটি ইটালীয় ভাষায় মাগাৎসিনো এবং ফরাসিতে ম্যাগাসঁ-এ রূপান্তরিত হয়েছে, যার অর্থ দোকান৷ ইংরেজি ভাষায় গিয়ে এটি ম্যাগাজিনে রূপান্তরিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildagentur-online
জিরাফ
আরবি শব্দ ‘সারাফা’ ইটালি হয়ে ইংরেজিতে গিয়ে জিরাফে রূপান্তরিত হয়েছে৷
ছবি: Imago/Anka Agency International
7 ছবি1 | 7
ভাষাবিদদের এই প্রতিযোগিতা বাংলা ভাষাকে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে?
ভাষা কিন্তু নদীর স্রোতের মতো৷ এটাকে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না৷ চেষ্টা করলেও পারবে না৷ ভাষা নিজের মতো চলবে৷ মানসম্মত ভাষাটাই টিকবে৷ এটা সামাজিকভাবেও গৃহীত৷ ওইটাই চলে আসছে৷ ওটাকে বিকৃতও করা যাবে না৷ ভাষাকে বিকৃত করা সহজ না৷ এটা তো কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পত্তি না৷ এটাতে সকল মানুষের অধিকার আছে৷ ওই যে বললাম এটা নদীর স্রোতের মতো৷ স্রোতের সঙ্গে আবর্জনা চলে যাবে৷ এটা কেউ থামাতে পারবে না৷
নামবাচক বিদেশি শব্দ ছাড়া অন্য বিদেশি শব্দ গ্রহণ করার বিধান আছে কী?
না, নিয়ম নেই৷ অনেক শব্দ যেমন চলে গেছে৷ যেমন টেলিস্কোপ৷ আমরা তো ব্যবহার করেছি৷ এখন সেটা নেই৷ এটা কারো চাপিয়ে দেওয়া না৷ আমি আগেই তো বললাম, ইংরেজিতেও কত শব্দ আমাদের এখান থেকে নিয়েছে৷ যেমন বাজার, হাট ইংরেজি ডিকশনারিতে অনেক জায়গায় পাওয়া যায়৷ ওরা এগুলো নিয়ে নিয়েছে৷ কারণ ওরা দেখেছে, ওদের লোকেরাই এটা ব্যবহার করে৷ ভাষা ওই ধরনের রক্ষণশীল না৷ ভাষা গ্রহণ করে৷ ভাষা সেটাকেই গ্রহণ করে যেটা তার সঙ্গে মেলে৷ নতুন শব্দ এসে ভাষাকে বিকৃত করতে পারে না৷ ওগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যায়৷
বাংলা ভাষায় শব্দের ব্যবহার সহজ করার উপায় কী?
সেটা ব্যবহারের উপর নির্ভর করবে৷ সেটা নির্ভর করবে, কত ব্যবহার করছি আমরা৷ আমরা কতটা লিখছি৷ এটা মূলত সাহিত্যের লেখা৷ তার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক লেখা, বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখা৷ এগুলো যত লিখব, ততই নতুন নতুন শব্দ আসবে৷ আমরা ভাষাকে যত বেশি ব্যবহার করব সেটা উপর নির্ভর করবে৷ আরেকটা কাজ জরুরি, সেটা হল অনুবাদ৷ আমরা যদি বিভিন্ন সাহিত্য থেকে অনুবাদ করি তখন দেখা যাবে, আমাদের ভাষার ধারণ ক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে৷
সবচেয়ে বেশি ভাষার ১০টি দেশ
বর্তমান সময়ে যেসব ভাষা কোথাও-না-কোথাও বলা হয় সেগুলোই জীবিত ভাষা৷ অনেক দেশে রাষ্ট্র ভাষা ছাড়াও কয়েকশ’ ভাষায় কথা বলা হয়৷ এমন কয়েকটি দেশের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
ব্রাজিল
ভাষার উপর গবেষণাকারী সংগঠন এথনোলগের মতে, ব্রাজিলে বর্তমানে ২১৬ টি ভাষার প্রচলন আছে৷ তবে ২১ টি ভাষা এরইমধ্যে হারিয়ে গেছে৷ ব্রাজিলের প্রধান ভাষা পর্তুগিজ৷
ছবি: picture-alliance/AA/D. Oliveira
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় প্রধান ভাষা ইংরেজি৷ এখানেও ২১৬ টি ভাষার প্রচলন রয়েছে৷ তবে হারিয়ে গেছে ১৮৪টি ভাষা৷ এই দেশের কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই৷ কিন্তু কর্মক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাটিই ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/W. Teodoro
ক্যামেরুন
মধ্য আফ্রিকার এই দেশে ২৮১টি ভাষায় কথা বলা হয়৷ এর মধ্যে ৫৫টি আফ্রো-এশিয়ান এবং ১৬৯টি নাইজার কঙ্গো ভাষা৷ তবে দেশটির রাষ্ট্র ভাষা ইংরেজি এবং ফরাসি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
মেক্সিকো
মেক্সিকোতে ২৮৫টি ভাষার প্রচলন রয়েছে৷ এলাকাভিত্তিতে এখানে ভাষার ব্যবহার হয়৷ যেসব এলাকায় যে ভাষায় বেশি মানুষ কথা বলে, সেই এলাকার সরকারি কাজকর্মে ঐ ভাষার চল আছে৷ রাষ্ট্রভাষা স্প্যানিশ না হলেও অনেক মানুষ এই ভাষায় কথা বলে৷
ছবি: Gianni Ferrari/Cover/Getty Images
চীন
চীনে মোট ভাষার সংখ্যা ৩০০৷ দেশটির রাষ্ট্রভাষা ম্যান্ডারিন৷ দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে৷
ছবি: picture alliance/dpa/L. Xianbiao
অ্যামেরিকা
অ্যামেরিকায় ৪২২টি ভাষার প্রচলন রয়েছে৷ তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রবাসীরা এর মধ্যে ২১১ টি ভাষায় কথা বলে৷ অ্যামেরিকার রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি৷
ছবি: Getty Images
ভারত
ভারতে গত ৫০ বছরে ২৩০টি ভাষা বিলুপ্ত হয়েছে৷ তারপরও ৪৫৪ টি ভাষা টিকে আছে৷ ভারতে সবচেয়ে বেশি মানুষ হিন্দিতে কথা বলে৷ অফিসিয়াল ভাষা হিন্দি ও ইংরেজি হলেও নেই কোন রাষ্ট্রভাষা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jagadeesh
নাইজেরিয়া
নাইজেরিয়ায় বর্তমানে ৫২৯টি ভাষা চালু রয়েছে৷ রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি, কিন্তু ইয়োরুবা, হাওসা এবং ইগবো সংসদে ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: P. U. Ekpei/AFP/Getty Images
ইন্দোনেশিয়া
দ্বীপদেশ ইন্দোনেশিয়ায় মোট ৭০৭টি ভাষার প্রচলন রয়েছে৷ এর মধ্যে ৯৮টি ভাষা বিশেষ কিছু এলাকায় বলা হয়৷ এই ভাষাগুলো হুমকির মুখে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/epa/A. Weda
পাপুয়া নিউগিনি
পাপুয়া নিউগিনি এমন একটি দেশ যেখানে সবচেয়ে বেশি ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে৷ এথনোলগ তথ্যভাণ্ডারের তথ্য অনু্সারে এখানে মোট ৮৩৯টি ভাষার প্রচলন রয়েছে৷ কেবল পাপুয়ার পূর্বাঞ্চলে যত ভাষায় কথা বলা হয়, তা পুরো ইউরোপের ভাষার সমান৷ (এমএল/এপিবি)