চলে গেলেন মার্কেস
১৯ এপ্রিল ২০১৪![Autor Gabriel Garcia Marquez](https://static.dw.com/image/17576743_800.webp)
পেশায় সাংবাদিক, মজাদার চরিত্র, কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর বন্ধু, তাঁকে নাকি সাহিত্যে নোবেল সতীর্থ মারিও ভার্গাস লোসা একবার ঘুসি মেরেছিলেন! অথচ মার্কেস বলতেন, তিনি লেখেন তাঁর বন্ধুদের মন জয় করার জন্য৷ বন্ধু ও গুণমুগ্ধদের অভাব কোনোকালেই ছিল না, মৃত্যুর পরে তো নয়ই৷
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট খুয়ান মানুয়েল সান্টোস টুইট করেছেন: ‘‘চিরকালের মহান কলম্বিয়ানদের একজন চলে যাওয়ায় এক হাজার বছরের নির্জনতা ও বিষাদ''৷ সান্টোস তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন: ‘‘বিশ্ব একজন মহৎ স্বপ্নদ্রষ্টাকে হারালো''৷
মার্কেসের জন্ম কলম্বিয়ার ক্যারিবিয়ান উপকূলের একটি ছোট্ট গ্রামে৷ বাবা ছিলেন টেলিগ্রাফ অপারেটর৷ ২৩ বছর বয়সে আইন পড়ায় ক্ষান্ত দেন সাহিত্যচর্চা করবেন বলে৷ সেটা ছিল ১৯৫০ সালে৷ তাঁর সবচেয়ে নামকরা উপন্যাস, ‘‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অফ সলিচুড'', প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে, অনুদিত হয় ৩৫ ভাষায়, বিক্রি হয় তিন কোটি কপি৷
‘‘একশো বছরের নির্জনতা''-র কাহিনিও কিন্তু ক্যারিবিয়ান উপকূলের একটি কাল্পনিক গ্রামের এক কাল্পনিক পরিবারকে নিয়ে৷ মার্কেসের রচনাশৈলীর নামকরণ হয়েছে ‘ম্যাজিক রিয়ালিজম', মার্কেস যার সংজ্ঞা দিয়েছিলেন, ‘‘আমরা যে বাস্তবকে দেখি, তার পিছনে যে ধারণাটা আছে''৷
সালটা ধরা যাক ১৯৬১, মেক্সিকো সিটি-তে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন মার্কেস, দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম আসন্ন৷ মার্কেস কখনো অ্যাডভার্টাইজিং কোম্পানির হয়ে কাজ করছেন, কখনো চিত্রনাট্য লিখছেন, কখনো বা লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদনা করছেন৷ ন'মাসের বাড়িভাড়া বাকি৷ মার্কেস লিখে চলেছেন: ‘‘একশো বছরের নির্জনতা''৷
এই ‘‘একশো বছরের নির্জনতা'' প্রকাশিত হবার ১৫ বছরের মধ্যে মার্কেসকে নোবেল সাহিত্যে পুরস্কার পেতে দেখা যায়৷ নোবেল কমিটির প্রশংসাপত্রে বলা হয়েছিল, মার্কেসের উপন্যাসগুলি কল্পনা ও বাস্তবের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ৷ স্টকহোল্মে পুরস্কার গ্রহণ করার সময় মার্কেস কিন্তু বলেন, ল্যাটিন অ্যামেরিকার নির্মম একনায়কদের শাসন ও গৃহযুদ্ধের ‘‘অতিকায় বাস্তব''-ই সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ লেটার্স-এর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, ‘‘শুধু সাহিত্যে তার অভিব্যক্তি'' নয়৷
মার্কেস ছিলেন কিউবার গুণমুগ্ধ ভক্ত৷ দেশটির ‘প্রেন্সা লাতিনা' সংসাদ সংস্থার হয়ে বহুদিন বিশেষ সংবাদদাতার কাজ করেছেন৷ কাস্ত্রোর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব নিয়ে আজও বিতর্ক আছে৷ অথচ গত ৯০-এর দশকে মার্কিন প্রোসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন এবং কাস্ত্রোর মধ্যে দৌত্যকার্য করেছেন মার্কেস, কেননা দু'জনেই ছিলেন তাঁর বন্ধু৷ মার্কেসের বন্ধুদের মধ্যে ল্যাটিন অ্যামেরিকার সাহিত্যজগতের বহু তারকা-নক্ষত্রকে পাওয়া যাবে, যেমন মেক্সিকোর অক্টাভিও পাস এবং কার্লোস ফুয়েন্টেস৷
এসি/ডিজি (এএফপি, এপি)