ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যে অলিম্পিয়াকস পিরেয়ুসের কাছে ২-০ গোলে হারবে, এটা বোধহয় ম্যান ইউ ফ্যানরা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি৷ বিশেষ করে তার আগেই যখন জার্মানির বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড রাশিয়ার জেনিট সেন্ট পিটার্সবার্গ-কে ৪-২ গোলে হারায়৷
সেন্ট পিটার্সবার্গে ডর্টমুন্ড যে ক্ষেপে খেলবে, সেটা আগেই আন্দাজ করা গিয়েছিল, বিশেষ করে গত সপ্তাহান্তে বুন্ডেসলিগার খেলায় দীন-হীন, সংকটপীড়িত হামবুর্গ ডর্টমুন্ডকে ৩-০ গোলে হারানোর পর৷ এছাড়া এবারকার চ্যাম্পিয়নস লিগে ডর্টমুন্ডকে প্রমাণ করতে হবে যে, গতবছর তাদের ফাইনালে ওঠাটা কাকতালীয় ছিল না৷
জেনিটের বিরুদ্ধে খেলায় ডর্টমুন্ড গোড়াতেই ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর জেনিট প্রতিবার একটি গোল পরিশোধ করলেই ডর্টমুন্ড আরেকটি গোল করেছে৷ খেলার মাত্র চার মিনিটের মাথায় ডর্টমুন্ডের মার্কো রয়েসের একেবারে পেনাল্টি এরিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়া একটি দৌড় থেকে ডর্টমুন্ডের প্রথম গোলটি করেন হেনরিখ ম'খিতারিয়ান৷
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ছিল জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ আর বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড৷ ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে ‘ট্রেবল’ জিতেছে বায়ার্ন৷ বুন্ডেসলিগার নতুন মৌসুম শুরুর আগের দিন ফিরে তাকানো যাক বুন্ডেসলিগার ৫০ বছরে৷
ছবি: picture-alliance/dpaবুন্ডেসলিগা শুরু হয়েছিল ১৯৬৩ সালে৷ প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচ৷ প্রথম গোলের জন্য এক মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি৷ বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ফ্রিডহেল্ম ‘টিমো’ কনিয়েটস্কা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বল জালে জড়িয়ে উল্লাসে মাতলেন৷ কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, কনিয়েটস্কা-র জীবন এবং বুন্ডেসলিগার ইতিহাসের এমন স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি কেউ কোনোদিন দেখতে পারবেন না৷ ক্যামেরা হাতে নেয়ার সময় না দিয়েই গোল করলে ছবি তোলা যায়, বলুন!
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৬৫ সাল৷ খেলোয়াড়দের সঙ্গে লেনদেনে ঘাপলা ধরা পড়ায় লিগ থেকে বাদ দেয়া হয় হ্যার্টা বার্লিনকে৷ সুযোগ পায় বার্লিনের আরেক ক্লাব ‘তাসমানিয়া ১৯০০’৷ বড় আসরে খেলার সুযোগটাকে একটুও কাজে লাগাতে পারেনি দলটি৷ পয়েন্ট টেবিলের একেবারে নীচে ছিল তারা৷ মাত্র ৮ পয়েন্ট পেতে গোল করেছিল ১৫টি আর খেয়েছিল ১০৮টি৷ লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে দল বাছতে গেলে আজও তাই ‘তাসমানিয়া ১৯০০’-এর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যায়না৷
ছবি: picture-alliance/dpaডর্টমুন্ড আর শালকের ১৯৬৯ সালের ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মজার একটি কারণে৷ প্রিয় দল ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ায় রেগেমেগে মাঠে ঢুকে পড়েছিল শালকের কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক৷ পরিস্থিতি খারাপ দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোও গেল ক্ষেপে৷ সমর্থকদের দোষে শালকের খেলোয়াড় ফ্রিডেল রাউশ আর গেয়ার্ড নয়সার-কে খেতে হলো কুকুরের কামড়৷ রাউশ-এর পশ্চাৎদেশে এখনো নাকি একটি কামড়ের দাগ বিদ্যমান!
ছবি: picture-alliance/dpaকাঠও ঢুকে পড়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷ এক সময় গোলপোস্টগুলো ছিল কাঠের৷ তো ১৯৭১ সালে ব্রেমেনের বিপক্ষে গোল করার আনন্দে গোলপোস্টের পেছনের জাল বেয়ে উঠছিলেন ম্যোনশেনগ্লাডবাখ-এর স্ট্রাইকার হ্যারব্যার্ট লাউমান৷ কাঠ যে পচে দুর্বল হয়ে আছে বোঝেননি৷ ফলে ভেঙে পড়ল গোলপোস্ট৷ অনেক চেষ্টা হলো, কিন্তু গোলপোস্ট আর ঠিক করা গেল না৷ মাঠের এক দিকে পোস্ট না থাকায় সেদিন খেলাই পরিত্যক্ত হয়ে গেল৷
ছবি: picture-alliance/dpaতখনো ফুটবলে এত টাকার খেলা শুরু হয়নি৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সিতে তখনো কোনো বহুজাতিক কোম্পানির নাম ওঠা শুরু হয়নি৷ ১৯৭৩ সালে বুন্ডেসলিগায় আইনট্রাখট ব্রাউনশোয়াইগ ক্লাবের খেলোয়াড়দের জার্সিতে প্রথম আসে বিজ্ঞাপন৷ খেলোয়াড়দের জার্সিতে ‘ইয়েগারমাইস্টার’ মদের লোগো হরিণের কাটা মাথার ছবি দেখে চটে গিয়েছিল জার্মান ফুটবল ফেডারেশন৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সি স্পন্সর করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৮১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpaম্যাচের ৩২ মিনিটেই প্রথমার্ধ শেষ৷ সবাই অবাক৷ জানা গেল রেফারি ভেল্ফ-ডিটমার আলেনফেলডার ম্যাচের আগে বেশি করে মদ গেলায় নিজেকে ঠিক সামলাতে পারছিলেন না বলে ১৩ মিনিট বাকি থাকতেই বাজিয়ে দিয়েছেন প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি৷ এমন কাণ্ডের সমালোচনা করায় আলেনফেল্ডার বলেছিলেন, ‘‘আমরা পুরুষ, আমরা তো ফান্টা খাইনা৷’’ ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের৷ ব্রেমেন শহরে অনেক বারে এখনো অনেকে মদের অর্ডার দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আলেনফেল্ডার আছে?’’
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে লিগ জিতেছিল বায়ার্ন মিউনিখ৷ কিন্তু তাদের হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হতো ব্রেমেন৷ ম্যাচের ৮৯ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল তারা৷ গোল করলে জয় অবধারিত৷ কিন্তু মিশায়েল কুতসুপ বল মারলেন গোলপোস্টে৷ ব্রেমেন পারলোনা চ্যাম্পিয়ন হতে৷ কুতসুপ বুন্ডেসলিগায় মোট ৪০ বার পেনাল্টি নিয়ে গোল করেছেন ৩৯টি৷ একটা মাত্র মিসের জন্য সারা জীবন আফসোস করতে হবে তাকে!
ছবি: picture-alliance/dpaঅদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে৷ এনারগি কটবুস মাঠে নামিয়েছিল এমন এক দল যেখানে একজনও জার্মান নেই, এগার জনের প্রত্যেকেই বিদেশি৷ অখ্যাত দলটি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে সে কারণেই৷ পিপলিকা, হুইদুরোভিচ, মাটিয়ুস, আক্রাপোভিচ, কোবিলানস্কি, লাতাউনজি, মিরিউটা, রেগেকাম্ফ, ভাটা, ফ্রাঙ্কলিন এবং লাবাক – সেদিনের ওই এগারোজন খেলোয়াড়ের নাম তাই খুব গুরুত্ব দিয়ে লিখে রাখা হয়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷
ছবি: picture-alliance/dpaসেবার ১৯৫৮ সালের পর প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবার সুযোগ পেয়েছে শালকে৷ লিগের শেষ দিন৷ নিজেদের শেষ ম্যাচটা জিতে সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়োৎসব শুরু করে দিয়েছেন শালকের খেলোয়াড়রা৷ তাঁরা জানতেন না বায়ার্ন-হামবুর্গের ম্যাচ তখনো চলছে৷ হঠাৎ জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হলো সেই খেলার ফলাফল৷ শেষ মুহূর্তে সমতা ফিরিয়ে ২০০২ সালের আসরেরও চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন! সমর্থকদের ভিড়েই কাঁদতে শুরু করলেন শালকের খেলোয়াড়রা৷
ছবি: picture-alliance/dpa জেনিট সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই, মাত্র দু'মিনিট পরে রবার্ট লেভান্ডোভস্কির পাসে দ্বিতীয় গোলটি করেন রয়েস৷ ৫৮ মিনিটের মাথায় জেনিটের হয়ে অলেগ শাটভ একটি গোল শোধ করেন বটে, কিন্তু লেভান্ডোভস্কির চটজলদি গোলে স্কোর আবার দাঁড়ায় ৩-১৷ পরে জেনিট-এর ব্রাজিলিয়ান ‘হোয়াইট হোপ' হুল্কের পেনাল্টি শটে জেনিট ৩-২-তে এসে পড়লেও, সেই লেভান্ডোভস্কিই আবার রয়েসের পাসে তাঁর দ্বিতীয় গোলটি করেন: খেলার চূড়ান্ত ফলাফল দাঁড়ায় ৪-২৷ এরপর ডর্টমুন্ডের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ রিটার্ন লেগের খেলা সম্পর্কে যতই সতর্ক করে দিন না কেন, মোটামুটি ধরেই নেওয়া যায় যে ডর্টমুন্ড কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছচ্ছে৷
ম্যানচেস্টারের ‘মেল্টডাউন'
আণবিক চুল্লির দুর্ঘটনায় যেরকমটি হয়ে থাকে আর কী! অথচ পিরেয়ুসে ম্যানচেস্টারের বল পজেশন ছিল ৫৪ শতাংশ৷ অলিম্পিয়াকস কিন্তু ম্যানচেস্টারের চাপ সামলে নিয়ে পাল্টা-আক্রমণের সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছে – এবং এই নীতি সফলও হয়েছে: ৩৮ মিনিটের মাথায় আলেহান্দ্রো দমিঙ্গেজ পিরেয়ুসের হয়ে প্রথম গোলটি করেন৷
তারপরে আবার ৫৪ মিনিটের মাথায় পিরেয়ুসের আর্সেনাল থেকে ধার করা খেলোয়াড় জোয়েল ক্যাম্পবেল দ্বিতীয় গোলটি করেন – যেখানে ম্যানচেস্টারের হয়ে প্রায় একমাত্র সুবর্ণ সুযোগটি বিনষ্ট করেন রবিন ফ্যান পার্সি স্বয়ং৷ সাধে কি আর ম্যান ইউ-এর বিপদগ্রস্ত কোচ ডেভিড ময়েস খেলার পর বলেছেন: ‘‘ইউরোপে আমরা কখনো আর এর চেয়ে খারাপ খেলিনি৷''
এসি/এসবি (ডিপিএ, এএফপি)