ম্যারাডোনার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ক্লিনিকে এবং বাড়িতে তল্লাশিও হয়েছে। চিকিৎসকের বক্তব্য, তিনি নির্দোষ।
ছবি: Ciro Fusco/ANSA/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ম্যারাডোনার মৃত্যুর জন্য কি তাঁর চিকিৎসক দায়ী? অনিচ্ছাকৃত খুনের তদন্ত শুরু করেছে আর্জেন্টিনার পুলিশ। রোববার চিকিৎসকের বাড়িতে তল্লাশিও চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। যদিও চিকিৎসকের বক্তব্য, তাঁর 'বন্ধু'র জন্য যা করণীয় ছিল, তার চেয়ে বেশিই করেছেন তিনি। আদালতে জবানবন্দী দিতেও প্রস্তুত তিনি।
ছবি: Enrique G. Medina/Agencia EFE/imago images
ম্যারাডোনারপারিবারিক চিকিৎসক লিওপোল্ডো লুকিউ। ৩৯ বছরের এই ডাক্তারই গত বেশ কিছু বছর ধরে ম্যারাডোনার চিকিৎসা করছিলেন। কিছু দিন আগে তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। লিওপোল্ডোই তার চিকিৎসা করেছিলেন। ফুটবল স্টারকে ভর্তি করেছিলেন হাসপাতালে। সেখানে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রপচার হয়। আট দিন হাসপাতালে থাকার পর মারাদোনাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। লিওপোল্ডো ম্যারাডোনার সঙ্গে একটি সেলফি তুলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন ওই দিন।
ম্যারাডোনার পরিবারের একাংশের অভিযোগ, মস্তিষ্কে অস্ত্রপচারের পর তাঁকে যতটা পরিষেবা দেওয়া উচিত ছিল, লিওপোল্ডো ততটা দেননি। সে কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়। পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে। তল্লাশি চালানো হয়েছে তাঁর বাড়িতে এবং ক্লিনিকে।
কথায়, তথ্যে ম্যারাডোনা
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা৷ পেশাদার জীবন শেষে অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটিয়ে, অন্যের সম্পর্কে মন্তব্য করে মাঝেমধ্যেই আলোচনায় আসতেন তিনি৷
১৯৮৪ সালে ক্লাওদিয়া ভিলইয়াফানিয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় তার৷ ২০০৪ সালে তা ভেঙে যায়৷ ডালমা ও খিয়ানিনা (আগুয়েরোর সাবেক স্ত্রী) নামে তাদের দুটি সন্তান আছে৷ এর বাইরে বিভিন্ন সময় অনেকের সঙ্গে জড়িয়ে আরও সন্তানের জনক হয়েছেন ম্যারাডোনা৷ তবে ডালমা ও খিয়ানিনাকেই তিনি তার বৈধ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ বাকিরা তার ‘টাকা আর ভুলের’ ফসল বলে মন্তব্য করেন ম্যারাডোনা৷ ছবিতে দুই মেয়ের সঙ্গে ম্যারাডোনা৷
ছবি: VALERY HACHE/AFP
‘চার্চ অফ ম্যারাডোনা’
হ্যাঁ, সত্যিই ম্যারাডোনার নামে একটি ধর্ম আছে৷ ১৯৯৮ সালে আর্জেন্টিনার তিন সমর্থক ‘ইগলেসিয়া মারাডোনিয়ানা’ বা ‘চার্চ অফ মারাডোনা’ গড়ে তোলেন৷ ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর ম্যারাডোনা জন্মান৷ সে হিসেবে ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর ছিল ৬০ ডি.ডি৷ ডি.ডি অর্থ ‘ডেসপুয়েস ডিয়েগো’ বা ডিয়েগোর পর৷ প্রতিবছর ৩০ অক্টোবর ক্রিসমাস পালন করা হয়৷ একশ’র বেশি দেশে এই ধর্মের অনুসারীরা রয়েছেন৷ ছবিতে এক অনুসারীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Natacha Pisarenko/AP/picture alliance
ফিফা ‘প্লেয়ার অফ দ্য সেঞ্চুরি’
বিশ শতকের সেরা ফুটবলার নির্বাচনে ২০০০ সালে জরিপ করেছিল ফিফা৷ প্রথমে ইন্টারনেট জরিপে ৫৩ শতাংশ ভোট পান ম্যারাডোনা৷ পেলে পান ১৮ শতাংশ ভোট৷ কিন্তু ইন্টারনেট জরিপে ম্যারাডোনা-প্রজন্মের বেশি ভোট পড়া নিয়ে কথা ওঠায় ফিফা তার ম্যাগাজিনের পাঠক, বিভিন্ন দেশের কোচ, কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের নিয়ে দ্বিতীয় একটি জরিপ করে৷ তাতে ৭৩ শতাংশ ভোট পান পেলে৷ ম্যারাডোনা পান ৬ শতাংশ৷ ফলে দুজনকেই যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে ফিফা৷
ছবি: Reuters//C. Platiau
ম্যারাডোনাকে নিয়ে পেলের মন্তব্য
যৌথভাবে ‘প্লেয়ার অফ দ্য সেঞ্চুরি’ নির্বাচিত হওয়ার পর ম্যারাডোনা সম্পর্কে পেলে বলেছিলেন, ‘‘যদি সে নিজেকে শতাব্দীর সেরা প্লেয়ার মনে করে তাহলে সেটা তার সমস্যা৷’’ এছাড়া ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্ব পাওয়া সম্পর্কে পেলে বলেছিলেন, ‘‘এটা ম্যারাডোনার ভুল নয়৷ ভুল হচ্ছে তার, যে তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে৷’’ অবশ্য ম্যারাডোনা মারা যাওয়ার পর পেলে এক টুইটে তার সঙ্গে স্বর্গে ফুটবল খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷
ছবি: picture alliance/dpa
পেলেকে নিয়ে ম্যারাডোনার মন্তব্য
আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্ব পাওয়ার পর পেলের করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘‘পেলের মিউজিয়ামে ফিরে যাওয়া উচিত৷ এবং সেখানেই থাকা উচিত৷’’ এছাড়া ২০০৬ বিশ্বকাপের উদ্বোধনীতে না যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘‘ব্লাডি পেলে আমার আশপাশে হেঁটে বেড়াবে সেটা দেখতে আমি আসিনি৷’’ অথচ ২০০৫ সালে টিভিতে নিজের টকশোর প্রথম অতিথি হিসেবে পেলেকে নিয়েছিলেন ম্যারাডোনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa//TASS/M. Metzel
‘হ্যান্ড অফ গড’
১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে করা প্রথম গোল সবসময় আলোচনায় থাকবে৷ ম্যাচ শেষে ম্যারাডোনা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সেই গোলের ক্ষেত্রে ‘ম্যারাডোনার মাথার সামান্য আর ইশ্বরের হাতের সামান্য’ (এ লিটল উইথ দ্য হেড অফ ম্যারাডোনা অ্যান্ড এ লিটল উইথ দ্য হ্যান্ড অফ গড) অবদান আছে৷ ঐ ম্যাচের রেফারি টিউনিশিয়ার আলী বিন নাসেরের সঙ্গে ২০১৫ সালে দেখা হয়েছিল ম্যারাডোনার৷ আলীকে তিনি ‘চিরকালের বন্ধু’ বলেছিলেন৷
ছবি: pictures-alliance/dpa/empics
‘হ্যান্ড অফ রিজন’
একবার এক আলোকচিত্রীর গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলেছিলেন ম্যারাডোনা৷ এরপর বলেছিলেন, ‘‘আমি যুক্তির হাত দিয়ে (হ্যান্ড অফ রিজন) এটা করেছি৷’’ ছবিটি প্রতীকী৷
ছবি: Getty Images/A. Morton
১০ নম্বর তুলে রাখা?
ম্যারাডোনাকে সম্মান জানাতে ফ্রান্সের মার্সেই ক্লাবের কোচ আন্দ্রেই ভিলাশ-বোয়াশ সব দল ও সব প্রতিযোগিতা থেকে জার্সি নম্বর ‘১০’কে অবসরে পাঠাতে ফিফার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ এর আগে ২০০১ সালে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশন তাদের জাতীয় দলে আর ১০ নম্বর জার্সি ব্যবহার না করতে ফিফার অনুমতি চাইলে ফিফা সেটি দেয়নি৷ তবে ২০০০ সাল থেকে নেপোলি ক্লাব আর কাউকে ১০ নম্বর জার্সি দিচ্ছে না৷
ছবি: picture alliance/Offside
মেসিকে সমর্থন
২০১০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা৷ কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে ৪-০ গোলে হেরে সেবার বিদায় নিয়েছিল মেসির দল৷ এরপর মেসির সমালোচনা শুরু হলে ম্যারাডোনা তাকে রক্ষায় এগিয়ে এসে বলেছিলেন, ‘‘যারা বলছেন বিশ্বকাপটা মেসির ভাল যায়নি, তারা বোকা৷’’ একমাত্র ম্যারাডোনা আর মেসিই অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ও বিশ্বকাপ - দুটোতেই ‘গোল্ডেন বল’ জিতেছেন৷
ছবি: Jon Hrusa/dpa/picture alliance
সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার
১৯৮২ সালে ইটালির সঙ্গে ম্যাচে ম্যারাডোনাকে ২৩ বার ফাউল করা হয়েছিল৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার হওয়া ফুটবলার তিনি৷ এরপর ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মোট ৫৩ বার ফাউল করা হয় তাকে৷ সেটিও একটি রেকর্ড৷ এক বিশ্বকাপে কোনো এক ফুটবলারকে এতবার ফাউল করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
রোবার রাতে একটি টেলিভিশন শোয়ে অংশ নিয়েছিলেন লিওপোল্ডো। সেখানে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, তদন্তে সবরকম সাহায্য তিনি করবেন। প্রয়োজনে আদালতে জবানবন্দি দেবেন। ম্যারাডোনার জন্য যা করা যেত, তার চেয়ে বেশিই করেছেন বলে এ দিন দাবি করেছেন তিনি।
বস্তুত, এর আগে বেশ কিছু কঠিন রোগের শিকার হয়েছিলেন ম্যারাডোনা। জীবন-মৃত্যুর যুদ্ধ চলেছে একাধিকবার। লিপোল্ডোর চিকিৎসায় বার বারই তিনি জীবনে ফিরে এসেছেন। তবে ফুটবল স্টারের পরিবারের অভিযোগ, এ বার বাড়িতে আসার পর মারাদোনার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল চিকিৎসকের। দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হয়েছে। প্রতিবেশীরা তা দেখেছেন। শুধু তাই নয়, ম্যারাডোনার হার্ট অ্যাটাকের পরেও তিনি সেখানে যাননি বলে অভিযোগ। ফোন করে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকেছিলেন কেবল। ওই ফোন কলের রেকর্ড পুলিশের হাতে রয়েছে।
তা হলে কি চাইলে বাঁচিয়ে দেওয়া যেত ৬০ বছরের ম্যারাডোনাকে? গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে এখন এটাই অন্যতম আলোচনার বিষয়।