জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার জানিয়েছেন, বিশ্বাস করা কঠিন হলেও ম্যার্কেলের জোট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার কোনও ইচ্ছাই নেই তাঁর, কেননা তিনি এই সরকারেরই অংশ৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু শরণার্থী ইস্যুতে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সাথে বনিবনা না হলে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন৷
এসময় তিনি দাবি করেন, তাঁর দল সিএসইউ-এরও সরকারের সাথে সংসদীয় জোট ভাঙার কোনও পরিকল্পনা নেই৷
বুধবার বাভেরিয়ার রক্ষণশীল দল ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ)-এর নেতা সেহোফোর জার্মান টেলিভিশন এআরডিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি জানি না আমার দলের মধ্যে কে আছেন, যিনি বার্লিনের সরকারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটদের (সিডিইউ) সঙ্গে সংসদীয় জোট ভাঙার চেষ্টা করেছেন কিংবা ম্যার্কেলকে চ্যান্সেলর পদ থেকে নামানোর চেষ্টা করছেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘অনেক মানুষই এটা বিশ্বাস করেন না৷''
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর মেয়াদে অভিবাসন নীতি নিয়ে ঘরে বাইরে বেশ লড়াই করতে হচ্ছে আঙ্গেলা ম্যার্কেলেকে৷ তার পরিবর্তে কারা হতে পারেন জার্মান চ্যান্সেলর? এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার
ক্রাম্প-কারেনবাউয়ারকে ম্যার্কেলের নিজের পছন্দের প্রতিনিধি মনে করা হয়৷ কিন্তু জার্মানি জুড়ে তাঁর পরিচিতি বেশ কম৷ সিডিইউ-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার আগে ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার সারল্যান্ডের রাজ্য প্রধান হিসেবে সিডিইউ-এসপিডি জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷ ম্যার্কেলের উদার অভিবাসন নীতির সমর্থক তিনি৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
ফল্কার বুফিয়ার
হেসের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০১০ সাল থেকে রাজ্য প্রধান বুফিয়ার৷ বর্তমানে ভিসবাডেনে সিডিইউ-গ্রিন জোটের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ ম্যার্কেলের সিডিইউ পার্টির নির্বাহী কমিটির পাঁচ ডেপুটি চেয়ারপার্সনের একজন তিনি৷
ছবি: Reuters
ভোলফগাং শয়েবলে
কয়েক দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শয়েবলের৷ সিডিইউয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ নেতাদের একজন তিনি৷ ৭৫ বছর বয়সি এই সাবেক আইনজীবী ২০১৭ সালে জার্মান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ম্যার্কেলের অধীনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন৷ জার্মানির অভিবাসন নীতির সমালোচনা করলেও ম্যার্কেলের সাথে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভালো বলেই ধরে নেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Fischer
ইয়েনস স্পান
চ্যান্সেলর হওয়ার দৌঁড়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে কনিষ্ঠতম স্পান৷ ২০০২ সালে সংসদ সদস্য এবং পরবর্তীতে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন তিনি৷ ২০১৬ সালে ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে গিয়ে সিডিইউ সম্মেলনে দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিলের প্রস্তাব পাশ করাতে ভূমিকা রাখেন৷ জার্মানির দারিদ্র্য নিয়ে মন্তব্যে তাঁকে সম্প্রতি বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন
জার্মানির প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী তিনি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণস্বাস্থ্যের ওপর তাঁর পড়াশোনা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বিত প্রতিরক্ষার অন্যতম সমর্থক তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Kappeler
ইউলিয়া ক্ল্যোকনার
ক্ল্যোকনার বর্তমানে ম্যার্কেলের কৃষিমন্ত্রী৷ তবে ম্যার্কেলের চেয়ে অনেক বেশি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত তিনি৷ গর্ভপাত এবং ভ্রূণ নিয়ে গবেষণার বিরুদ্ধে তিনি৷ ম্যার্কেলের অভিবাসন নীতির বিকল্প প্রস্তাবেরও একজন সমর্থক ক্ল্যোকনার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
হর্স্ট সেহোফার
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেহোফারকেই বর্তমান সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ জার্মানির নতুন অভিবাসন নীতি নিয়ে মূলত সেহোফারই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ম্যার্কেলকে৷ বাভারিয়া অঞ্চলে সিডিইউর সহযোগী দল সিএসইউর প্রধান সেহোফার৷ অক্টোবরে বাভারিয়ার নির্বাচনে তাঁর দল ভালো করার আশা করলেও বাকি জার্মানি তাঁকে চ্যান্সেলর হিসেবে না-ই দেখতে চাইতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
মার্কুস স্যোডার
বাভারিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যোডার৷ অভিবাসন বিষয়ে ম্যার্কেলকে চ্যালেঞ্জ করে তিনিও এসেছেন আলোচনায়৷ জার্মানির দক্ষিণের এই রাজ্যে অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়াদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এবং রাষ্ট্রীয় ভবনে ক্রুশ স্থাপনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ সমালোচনাতেও পড়তে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: Reuters/L. Barth
পেটার আল্টমায়ার
জার্মান অর্থমন্ত্রী আল্টমায়ার ম্যার্কেলের অভিবাসননীতির সমর্থক৷ সারল্যান্ড থেকে আসা এই রাজনীতিবিদ আগে কাজ করতেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে৷ ম্যার্কেলের খুব ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আল্টমায়ার কাজ করেছেন পরিবেশমন্ত্রী হিসেবেও৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
আরমিন লাশেট
উদারপন্থি এই নেতাকে বিরোধীরা ‘রাজনীতির জন্য একটু বেশিই নরম’ বলে সমালোচনা করে থাকেন৷ সিডিইউর হয়ে গত বছর জার্মানির সবচেয়ে বড় রাজ্য নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার রাজ্য প্রধান নির্বাচিত হন লাশেট৷ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জন্য এই পরাজয় ছিল বিশাল এক ধাক্কা৷ সাবেক এই সাংবাদিকও ম্যার্কেলের পাঁচ ডেপুটির একজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
10 ছবি1 | 10
সম্প্রতি সেহোফার অভিবাসন বিষয়ক একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান' তৈরি করেছেন৷ কিন্তু ম্যার্কেলের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় এখনও তা প্রকাশ করা হয়নি৷ জানা গেছে, যেসব শরণার্থী ইউরোপের অন্য দেশে নিবন্ধিত হয়েছেন, তাঁদেরকে জার্মান সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিতে চান সেহোফার৷ তবে ম্যার্কেল এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ তিনি শরণার্থী সংকটের একটি ইউরোপীয় সমাধান চান৷
ম্যার্কেলের সঙ্গে সেহোফারের এই মতভিন্নতার কারণে জার্মানির জোট সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্প্রতি টানাপড়েন শুরু হয়৷
সোহোফোর শরণার্থী সংকট নিয়ে নিজের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদের ক্ষমতা ব্যবহারের হুমকি দিলেও শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি দেশগুলোর সাথে শীর্ষ সম্মেলনে কী সমাধান হয়, সেটির জন্য অপেক্ষা করছেন৷
সোহোফোর বলেন, ম্যার্কেল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সাথে বসার পর শরণার্থী নিয়ে সংকট সমাধানে ব্যর্থ হলে রোববার সিডিইউ এবং সিএসইউ বৈঠকে বসবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে ‘কীভাবে সামনে এগোনো যায়'৷
তিনি আরও বলেন, ‘‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জার্মান নাগরিকদের কাছে সরকারকে এটা তুলে ধরতে হবে যে, শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণেই আছে৷''
জার্মান অর্থমন্ত্রী ও সোশাল ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য ওলাফ শলৎস এর আগে বলেছিলেন, দুটি রক্ষণশীল দলের নেতারা নিজেদের আন্তঃবিতর্কের মীমাংসা করে শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় আসবেন বলে তিনি আশাবাদী৷
জার্মান টিভি জেডডিএফ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘দিন শেষে সবাই একসাথেই কাজ করতে পারবে৷''
এদিকে সিডিইউ ও সিএসইউ সংকট উৎরাতে পারবে বলে বিশ্বাস করলেও, যদি সেটি না পারে তাহলে সেহোফোর পদত্যাগ করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিতে কিছু দৃঢ় অবস্থান থাকে৷ সেসব ক্ষেত্রে দাপ্তরিক কাজের চেয়ে বিশ্বাসটাকে প্রাধান্য দিতে হয়৷''