শরণার্থী ইস্যুতে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে৷ সেহোফার বলেছেন, ম্যার্কেল যদি তাঁর (সেহোফার) কাজে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে তাঁর উচিত হবে জোট সরকার ভেঙে দেয়া৷
বিজ্ঞাপন
সেহোফার সিএসইউ দলের প্রধান৷ এই দলটি জার্মানির জোট সরকারের একটি অংশ৷ বাভেরিয়া রাজ্যে ম্যার্কেলের দল সিডিইউর সঙ্গী দল হচ্ছে সিএসইউ৷
সম্প্রতি সেহোফার অভিবাসন বিষয়ক একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরি করেছেন৷ কিন্তু ম্যার্কেলের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় এখনও তা প্রকাশ করা হয়নি৷ জানা গেছে, যেসব শরণার্থী ইউরোপের অন্যদেশে নিবন্ধিত হয়েছেন, তাঁদেরকে জার্মান সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিতে চান সেহোফার৷ তবে ম্যার্কেল এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ তিনি শরণার্থী সংকটের একটি ইউরোপীয় সমাধান চান৷
ম্যার্কেলের সঙ্গে সেহোফারের এই মতভিন্নতার কারণে জার্মানির জোট সরকারের ভবিষ্যৎ সংকটের মুখে পড়েছে৷ শরণার্থী সমস্যার সমাধান খুঁজতে ম্যার্কেলকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন সেহোফার৷
শুক্রবার ‘পাসাওয়ার নয়্যার প্রেসে’তে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে সেহোফার বলেন, ‘‘ম্যার্কেল যদি আমাকে বরখাস্ত করেন তাহলে সেটা ‘দেশের নিরাপত্তা দেখভালের কারণে কোনো মন্ত্রীকে বরখাস্তের প্রথম ঘটনা হবে৷’’
ইউরোপে বাংলাদেশিদের আশ্রয় পাওয়ার হার বাড়ছে
ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট’-এর গত ১০ বছরের হিসেব বলছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন সফল হওয়ার হার বাড়তির দিকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
তিন ধরনের সুরক্ষা
শরণার্থী, হিউম্যানিটারিয়ান ও সাবসিডিয়ারি – এই তিন ক্যাটাগরিতে আশ্রয় দেয়া হয়ে থাকে৷ যাঁরা শরণার্থী স্ট্যাটাসের যোগ্য নন, কিন্তু দেশে ফিরে গেলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের সাবসিডিয়ারি সুরক্ষা দেয়া হয়৷ আর অসুস্থতা ও অভিভাবকহীন শিশুদের মানবিক (হিউম্যানিটারিয়ান) বিবেচনায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/R. Schlesinger
২০১৭
বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গতবছর ১৬,০৯৫টি আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে৷ আর একই সময়ে বাংলাদেশিদের করা ২,৮৩৫টি আবেদন সফল হয়েছে৷ শতকরা হিসেবে সেটি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ৷ জার্মানিতে আবেদন পড়েছে ২,৭২৫টি৷ সফল হয়েছে ৩১৫টি৷ এমনিভাবে অন্য কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান এরকম – যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৬৩০; সফল ৬৫), ইটালি (আবেদন ৫,৭৭৫; সফল ১,৮৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১৫; সফল ৪৪০)৷
ছবি: imago/Cronos
২০১৬
বাংলাদেশিরা ১৪,০৮৫টি আবেদন করেছেন৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে ২,৩৬৫টি৷ অর্থাৎ সফলতার হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৬৬৫; সফল ১১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৪০৫; সফল ৮০), ইটালি (আবেদন ৬,২২৫; সফল ১,৬১০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১০; সফল ৪৪০)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
২০১৫
সেবছর সফলতার হার ছিল ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ৷ আবেদন পড়েছিল ১১,২৫০টি৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ১,৭৮৫টি৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৬৫; সফল ৩৫), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,০১৫; সফল ১২০), ইটালি (আবেদন ৫,০১০; সফল ১,২২৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৫৬০; সফল ৩১৫)৷
ছবি: Imago/Frank Sorge
২০১৪
আবেদন ৭,৫৮০টি৷ সফল ৭৮৫৷ শতকরা হার ১০ দশমিক ৩৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪৬৫; সফল ৫০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৭০০; সফল ৭৫), ইটালি (আবেদন ৭৩৫; সফল ৩১৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৮৭০; সফল ২৬৫)৷
ছবি: Megan Williams
২০১৩
সফলতার হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ৷ আবেদন ৮,৩৩৫৷ সফল ৫৯৫৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৫০; সফল ২০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮৩০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ৫৯০; সফল ৩০০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৬১৫; সফল ১৪৫)৷
ছবি: picture alliance/robertharding/A. Robinson
২০১২
সফলতার হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১৯০; সফল ১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮০০; সফল ৫০), ইটালি (আবেদন ১,৪১০; সফল ১,০৪৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৫৫; সফল ৮৫)৷
ছবি: Imago/Rainer Weisflog
২০১১
সফলতার হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১১০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৮০; সফল ৪০), ইটালি (আবেদন ৮৬৫; সফল ৬৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৭০; সফল ৪৫)৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/M. Cohen
২০১০
সফলতার হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১০৫; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৬০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ২১৫; সফল ৪০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ২,৪১০; সফল ২৫)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Uhlemann
২০০৯
সফলতার হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৭৫; সফল ৪৫), ইটালি (আবেদন ৮৮৫; সফল ৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৭৮০; সফল ৩৫)৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
২০০৮
সফলতার হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৯৫; সফল ৯৫), ইটালি (আবেদন ৯৫০; সফল ৫০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৬৬০; সফল ৩৫)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
৩২ দেশের হিসাব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ সদস্যরাষ্ট্র এবং ‘ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বা ইএফটিএ-এর অন্তর্ভুক্ত আইসল্যান্ড, লিখটেনস্টাইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউরোস্ট্যাট৷ আরও পরিসংখ্যান জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Megan Williams
12 ছবি1 | 12
উল্লেখ্য, আগামী অক্টোবরে বাভেরিয়া রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ সেখানে শরণার্থীবিরোধী দল এএফডির কাছ থেকে সেহোফারের সিএসএউ দল প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করছে৷ সে কারণে সেহোফার শরণার্থীবিরোধী ঢেউ তুলছেন বলে অনেকে মনে করছেন৷
এদিকে, শরণার্থী সংকটের একটি সমাধানসূত্র খুঁজতে রবিবার ইইউর কয়েকটি দেশের নেতারা রবিবার ব্রাসেলসে বৈঠক করবেন৷ এরপর বৃহস্পতিবার ইইউর শীর্ষ সম্মেলনেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
আলবেনিয়ার সঙ্গে চুক্তি?
ম্যার্কেলসহ ইইউর কয়েকজন নেতা ইউরোপের মধ্যে, কিন্তু ইইউর বাইরে, শরণার্থী গ্রহণের কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা সমর্থন করছেন৷ সেক্ষেত্রে আলবেনিয়া একটি সম্ভাব্য দেশ হতে পারে বলে আলোচনা চলছে৷ কারণ, দেশটি ইইউ'র অংশ নয়৷ তাছাড়া দেশটি, অধিকাংশ শরণার্থী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য যে বলকান রুট ব্যবহার করে, সেই পথে অবস্থিত৷
শরণার্থীদের গ্রহণ করতে আলবেনিয়ায় অনেক ‘রিসিপশন সেন্টার’ও আছে৷ শরণার্থীদের সঙ্গে আলবেনিয়ার আচরণ সন্তোষজনক বলেও মনে করে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা৷
ফলে শরণার্থীদের প্রথমে আলবেনিয়ায় নিয়ে গিয়ে, সেখানেই তাদের আবেদন বিবেচনা করার পরিকল্পনা করছে ইইউ৷
আলবেনিয়ারও ইইউর এই পরিকল্পনায় সায় আছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যে ইইউর কয়েকটি দেশ সফর করেছেন৷ আলবেনিয়ার বিরোধী দল মনে করছে, ভবিষ্যতে ইইউতে প্রবেশের আলোচনায় সুবিধা পাওয়ার আশায় সরকার রিসিপশন সেন্টারগুলো খুলছে৷
আডেলহাইড ফাইলকে, ফল্কার ভাগেনার/জেডএইচ
শরণার্থী শিল্পীরা
বিখ্যাত বেশ কিছু শিল্পী বাধ্য হয়ে দেশান্তরি হয়েছিলেন৷ চলুন ছবিঘরে জেনে আসি তাদের জীবনের গল্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/APA Publications Arnold Schönberg Center
ফ্রেডি মার্কারি
কুইন ব্যান্ডের প্রধান গায়ক ফ্রেডি মার্কারি ১৯৪৬ সালে জানজিবার রাজ্যে (এখন তানজানিয়ার অংশ) জন্মান৷ মার্কারির শৈশব পুরোটা কাটে ভারতের একটি বোর্ডিং স্কুলে৷ ১৯৬৩ সালে তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে জানজিবার যান৷ কিন্তু এর ঠিক একবছর পর জানজিবারে বিপ্লব শুরু হলে, সপরিবারে ইংল্যান্ডে পালিয়ে আসেন মার্কারি৷
ছবি: Imago/Leemage
গ্লোরিয়া এস্তেফান
জন্মেছিলেন কিউবায়৷ কিউবার বিপ্লবের সময় তাঁর পরিবার অ্যামেরিকার মায়ামিতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন৷ তিনবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন গ্লোরিয়া৷ এছাড়া অ্যামেরিকার সঙ্গীতাঙ্গণে ভূমিকার জন্য ২০১৫ সালে তাঁকে প্রেসিডেন্সিয়াল পদকেও সম্মানিত করা হয়৷
১৯৭৬ সালে জামাইকার রাজনৈতিক দলগুলো যখন নিজেদের মধ্যে সংঘাতে ব্যস্ত ছিল, তখন এক অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারী গুলি করে বব মার্লেকে৷ তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও নিজ দেশ জামাইকা ছেড়ে চলে আসেন৷ এরপর অনেকটা স্বেচ্ছা নির্বাসনেই ছিলেন বব মার্লে৷
ছবি: AP
আর্নল্ড শোয়েনবর্গ
অস্ট্রিয়ার ইহুদি বংশোদ্ভূত মিউজিক কম্পোজার ১৯৩৪ সালে নাৎসি জার্মানি থেকে পালিয়ে অ্যামেরিকায় আসেন৷ তাঁর আধুনিক ও গৎবাঁধা স্কেলের বাইরে সুর করা গানগুলো হিটলার বাহিনীর কোপানলে পড়ে৷ আর্নল্ড শোয়েনবর্গকে ২০ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিভাবান মিউজিশিয়ান বলা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/APA Publications Arnold Schönberg Center
এম.আই.এ
ব্রিটিশ র্যাপার মাথাঙ্গি ‘মায়া’ আরুলপ্রাগাসাম এম.আই.এ নামেই বেশি পরিচিত৷ যদিও তিনি জন্ম নিয়েছেন ব্রিটেনে, তবুও তাঁর পরিবার কিন্তু শ্রীলঙ্কার৷ এম.আই.এ-র যখন মাত্র ছ’মাস বয়স, তখন তার পরিবার শ্রীলঙ্কা ফিরে গেলেও তাঁর বাবা উগ্রপন্থি এলটিটিই-এর সদস্য বলে মাতৃভূমিতে থাকতে পারেননি৷ ফলে এম.আই.এ-র মা তাঁকেসহ অন্যান্য সন্তানদের নিয়ে আবারো ব্রিটেন পালিয়ে আসতে বাধ্য হন৷
বিখ্যাত গীতিকার ও গায়ক মিকার জন্ম লেবাননের বৈরুতে, ১৯৮৩ সালে৷ তবে তাঁর পরিবার ১৯৮৪ সালে প্যারিস চলে আসতে বাধ্য হয়৷ কেননা তখন লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলছে৷ শোনা যায় সেসময় অ্যামেরিকার দূতাবাসে আক্রমণও চালানো হয়েছিল৷