২০২১ সালে জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের আগে চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সম্ভাব্য উত্তরসূরি খোঁজার উদ্যোগ আবার নতুন করে শুরু করতে হবে৷ দেশের রাজনীতির কঠিন সময়ে এমন সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
চতুর্থ বারের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর হয়ে আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে যাকে তুলে ধরেছিলেন, সেই আনেগ্রেট কাম্প-কারেনবাউয়ার সোমবার হাল ছেড়ে দিলেন৷ ফলে দলের নেতা ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর কে হবেন, সেই প্রশ্ন আবার সামনে চলে এলো৷ জার্মানির রাজনীতির উত্তাল সময়ে সবচেয়ে বড় দলের মধ্যে এই সংকট বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের মধ্যে লাগাতার সংকটের পর সিডিইউ দলের মধ্যে অন্তর্কলহ ও নেতৃত্বের শূন্যতা জার্মানির দলীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলছে৷
জার্মানির পূর্বাঞ্চলে টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের নির্বাচনের পর সিডিইউ দলের মধ্যে সংকট আরও জোরালো করে তুলেছে৷ দলের প্রধান হিসেবে কাম্প-কারেনবাউয়ার নিজের কর্তৃত্ব কতটা খুইয়েছেন, টুরিঙ্গিয়ার রাজ্য শাখা তা স্পষ্ট করে দিয়েছে৷ হাই কমান্ডের নির্দেশ অমান্য করে চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দলের সঙ্গে সহযোগিতা, এমনকি প্রয়োজনে বামপন্থি দলের সঙ্গে হাত মেলানোর প্রস্তাব দিয়ে দলের ঐক্যে চিড় ধরিয়েছে৷
ম্যার্কেলের দলের মধ্যে সাম্প্রতিক কালে বিভাজনের আরও দৃষ্টান্ত দেখা গেছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে কাম্প-কারেনবাউয়ার বলেন, কর্তৃত্বের খাতিরে দলের নেতা ও চ্যান্সেলর পদে একই ব্যক্তি থাকা উচিত৷ অর্থাৎ তাঁর মতে, বর্তমান পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে৷ যত দ্রুত সম্ভব নেতার পদ ছেড়ে দিলেও ম্যার্কেলের অনুরোধে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে চান তিনি৷
২০২১ সালে সাধারণ নির্বাচনের আগে সিডিইউ দলকে নেতৃত্ব ও চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীর প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ সোমবার কোনো নেতা সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে না এলেও কয়েকজনের নাম নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে৷ কাম্প-কারেনবাউয়ার দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হবার ঠিক আগে যে দুই নেতা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন, তাঁরা আবার সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন৷ অতীতের নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান আবার আসরে নামবেন কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়ার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আর্মিন লাশেটকে ঘিরেও প্রত্যাশা তৈরি হচ্ছে৷ তবে এই তিন জনই একই রাজ্য শাখার প্রতিনিধি হওয়ায় দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে৷ বাভেরিয়ার বর্তমান মূখ্যমন্ত্রী ও সহযোগী সিএসইউ দলের নেতা মার্কুস স্যোডার ইউনিয়ন শিবিরের যৌথ চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক আঙিনায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, আস্থা ও মর্যাদার যে জায়গা ম্যার্কেল তৈরি করেছেন, সেই শূন্যস্থান পূরণ করা যে অত্যন্ত কঠিন হবে, সে বিষয়ে জার্মানির যে কোনো রাজনৈতিক নেতাই সচেতন৷ তবে দীর্ঘদিনের মহাজোট সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে ও অনেক বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান না নিয়ে ম্যার্কেল সার্বিকভাবে নিজের দল ও জার্মান রাজনীতির ক্ষতি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠছে৷ বিশেষ করে চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দলের বাড়বাড়ন্তের জন্য অনেকে তাঁকেই পরোক্ষভাবে দায়ী করছেন৷ সিডিইউ দলের মধ্যে বর্তমান সংকটের ফলেও এএফডি লাভবান হবে বলেও আশঙ্কা বাড়ছে৷
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর মেয়াদে অভিবাসন নীতি নিয়ে ঘরে বাইরে বেশ লড়াই করতে হচ্ছে আঙ্গেলা ম্যার্কেলেকে৷ তার পরিবর্তে কারা হতে পারেন জার্মান চ্যান্সেলর? এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার
ক্রাম্প-কারেনবাউয়ারকে ম্যার্কেলের নিজের পছন্দের প্রতিনিধি মনে করা হয়৷ কিন্তু জার্মানি জুড়ে তাঁর পরিচিতি বেশ কম৷ সিডিইউ-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার আগে ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার সারল্যান্ডের রাজ্য প্রধান হিসেবে সিডিইউ-এসপিডি জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷ ম্যার্কেলের উদার অভিবাসন নীতির সমর্থক তিনি৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
ফল্কার বুফিয়ার
হেসের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০১০ সাল থেকে রাজ্য প্রধান বুফিয়ার৷ বর্তমানে ভিসবাডেনে সিডিইউ-গ্রিন জোটের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ ম্যার্কেলের সিডিইউ পার্টির নির্বাহী কমিটির পাঁচ ডেপুটি চেয়ারপার্সনের একজন তিনি৷
ছবি: Reuters
ভোলফগাং শয়েবলে
কয়েক দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শয়েবলের৷ সিডিইউয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ নেতাদের একজন তিনি৷ ৭৫ বছর বয়সি এই সাবেক আইনজীবী ২০১৭ সালে জার্মান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ম্যার্কেলের অধীনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন৷ জার্মানির অভিবাসন নীতির সমালোচনা করলেও ম্যার্কেলের সাথে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভালো বলেই ধরে নেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Fischer
ইয়েনস স্পান
চ্যান্সেলর হওয়ার দৌঁড়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে কনিষ্ঠতম স্পান৷ ২০০২ সালে সংসদ সদস্য এবং পরবর্তীতে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন তিনি৷ ২০১৬ সালে ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে গিয়ে সিডিইউ সম্মেলনে দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিলের প্রস্তাব পাশ করাতে ভূমিকা রাখেন৷ জার্মানির দারিদ্র্য নিয়ে মন্তব্যে তাঁকে সম্প্রতি বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন
জার্মানির প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী তিনি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণস্বাস্থ্যের ওপর তাঁর পড়াশোনা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বিত প্রতিরক্ষার অন্যতম সমর্থক তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Kappeler
ইউলিয়া ক্ল্যোকনার
ক্ল্যোকনার বর্তমানে ম্যার্কেলের কৃষিমন্ত্রী৷ তবে ম্যার্কেলের চেয়ে অনেক বেশি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত তিনি৷ গর্ভপাত এবং ভ্রূণ নিয়ে গবেষণার বিরুদ্ধে তিনি৷ ম্যার্কেলের অভিবাসন নীতির বিকল্প প্রস্তাবেরও একজন সমর্থক ক্ল্যোকনার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
হর্স্ট সেহোফার
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেহোফারকেই বর্তমান সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ জার্মানির নতুন অভিবাসন নীতি নিয়ে মূলত সেহোফারই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ম্যার্কেলকে৷ বাভারিয়া অঞ্চলে সিডিইউর সহযোগী দল সিএসইউর প্রধান সেহোফার৷ অক্টোবরে বাভারিয়ার নির্বাচনে তাঁর দল ভালো করার আশা করলেও বাকি জার্মানি তাঁকে চ্যান্সেলর হিসেবে না-ই দেখতে চাইতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
মার্কুস স্যোডার
বাভারিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যোডার৷ অভিবাসন বিষয়ে ম্যার্কেলকে চ্যালেঞ্জ করে তিনিও এসেছেন আলোচনায়৷ জার্মানির দক্ষিণের এই রাজ্যে অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়াদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এবং রাষ্ট্রীয় ভবনে ক্রুশ স্থাপনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ সমালোচনাতেও পড়তে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: Reuters/L. Barth
পেটার আল্টমায়ার
জার্মান অর্থমন্ত্রী আল্টমায়ার ম্যার্কেলের অভিবাসননীতির সমর্থক৷ সারল্যান্ড থেকে আসা এই রাজনীতিবিদ আগে কাজ করতেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে৷ ম্যার্কেলের খুব ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আল্টমায়ার কাজ করেছেন পরিবেশমন্ত্রী হিসেবেও৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
আরমিন লাশেট
উদারপন্থি এই নেতাকে বিরোধীরা ‘রাজনীতির জন্য একটু বেশিই নরম’ বলে সমালোচনা করে থাকেন৷ সিডিইউর হয়ে গত বছর জার্মানির সবচেয়ে বড় রাজ্য নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার রাজ্য প্রধান নির্বাচিত হন লাশেট৷ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জন্য এই পরাজয় ছিল বিশাল এক ধাক্কা৷ সাবেক এই সাংবাদিকও ম্যার্কেলের পাঁচ ডেপুটির একজন৷