জার্মানির জোট সরকারের প্রধান শরিক দল সিডিইউ নেতৃত্বের সংকটে পড়েছে৷ সভাপতি পদের দাবিদারের সংখ্যা বাড়ছে৷ চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেল মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন কিনা, সেই প্রশ্নও উঠে আসছে৷
বিজ্ঞাপন
২০২১ সালে জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন হবার কথা৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল চতুর্থবার মেয়াদ পূরণ করে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছেন৷ সেই লক্ষ্যে সিডিইউ দলের সভাপতিত্ব আগেই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি৷ ম্যার্কেল নিজে যাকে উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরেছিলেন, সেই আনেগ্রেট কাম্প কারেনবাউয়ার সভাপতি হিসেবে আচমকা দায়িত্ব ছেড়ে দেবার ঘোষণা করেছেন৷ সেই শূন্যস্থান পূরণ করার আশায় আসরে নামছেন একের পর এক নেতা৷ প্রথমে দলের সভাপতি, তারপর নির্বাচনে জিতলে চ্যান্সেলর পদের দাবিদার হতে পারেন দলের নতুন নেতা৷
কাম্প কারেনবাউয়ার পদত্যাগের ঘোষণা করার পর থেকে তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিন ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে৷ তাঁদের মধ্যে দু'জন এর আগে দলীয় ভোটে তাঁর কাছেই হেরে গিয়েছিলেন৷ জনপ্রিয় নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান আবার সেই প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে চান৷ তালিকায় রয়েছেন জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়ার মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেট৷
মঙ্গলবার আচমকা প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী নর্বার্ট রোটগেন নিজেকে প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরলেন৷ বর্তমানে সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান হিসেবে তিনি সক্রিয় রয়েছেন৷ রোটগেন বলেন, সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হলে তিনি চরম দক্ষিণ ও বামপন্থিদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দলকে আবার মধ্যপন্থি শক্তি হিসেবে শক্তিশালী করতে চান৷ যেসব ভোটার বীতশ্রদ্ধ হয়ে সিডিইউ-কে আর ভোট দিচ্ছেন না, তাঁদের কথা মন দিয়ে শুনতে চান রোটগেন৷
দলের একই রাজ্য শাখা থেকে চার জন পুরুষ সিডিইউ দলের সভাপতি হবার দৌড়ে আগ্রহ দেখানোর পরিণতি নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়ে গেছে৷ একদল মনে করছেন, এমন খোলামেলা প্রতিযোগিতা হলে বর্তমান সংকট পেছনে ফেলে আখেরে দল আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে৷ বিশেষ করে তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীরা উৎসাহ পাবেন৷ কিন্তু সরকারের অপর শরিক দল এসপিডি খোলামেলা প্রতিযোগিতার ফলে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সিডিইউ দলের মধ্যে অনেকে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন৷
এ সবের মধ্যে চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেলের কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে৷ শুধু সভাপতি হিসেবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যে কতটা কঠিন, কাম্প কারেনবাউয়ার তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন৷ তাই নতুন নেতা নির্বাচিত হলে ম্যার্কেলের পদত্যাগ করা উচিত বলে কিছু মহল মনে করছে৷ সভাপতি ও চ্যান্সেলর হিসেবে নতুন নেতা দলকে ঢেলে সাজিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে পারবেন বলে তাঁদের আশা৷ তবে ম্যার্কেল বিদায় নিলে মহাজোট সরকার আদৌ টিকবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷ কারণ, এসপিডি দল ম্যার্কেল ছাড়া অন্য কোনো সিডিইউ নেতাকে চ্যান্সেলর হিসেবে না-ও মানতে পারে৷
শিল্পীর চোখে ম্যার্কেল
বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকা প্রথম সারির একজন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ বুধবার ৬৫ বছর পূর্ণ করেছেন তিনি৷ জন্মদিনে দেখে নিন, কীভাবে শিল্পের তুলিতে ধরা পড়েছেন ম্যার্কেল৷
ছবি: Elizabeth Peyton
বিবর্তন
‘ক্ষমতার পদচিহ্ন‘ নামের সিরিজে আঙ্গেলা ম্যার্কেল, সাবেক চ্যান্সেলর গেরার্ড শ্র্যুডার ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইওশকা ফিশারকে তুলে ধরেছেন আলোকচিত্রী হেরলিন্ডে কোয়েলব্ল ৷ ছবি ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে রাজনীতিকদের বিবর্তন তুলে ধরেছেন তিনি৷
ছবি: Herlinde Koelbl
পপ আইকন
ভগ ম্যাগাজিনের জন্য ২০১৭ সালে ম্যার্কেলের এই চিত্রটি এঁকেছেন মার্কিন চিত্রশিল্পী এলিজাবেথ পেইটন৷ যৌবনের ছাপ রাখা ছবিতে তাঁর দৃঢ়তাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন শিল্পী৷ ম্যার্কেলের ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের কয়েকশ’ ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটি আঁকা হয়েছে৷
ছবি: Elizabeth Peyton
মানবিকতা
২০১৫ সালে এভাবে টাইম ম্যাগাজিনের পারসন অব দ্য ইয়ার সংখ্যার প্রচ্ছদে স্থান পান আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ ছবির শিল্পী কলিন ডেভিডসন বলেন, ‘‘তাঁকে শান্ত ও নরম মনের মানুষ হিসাবে দেখানো হয়েছে, শরণার্থীদের প্রতি তাঁর মানবিক অবস্থানের কারণে৷’’ সেসময় ইউরোপের ঋণ এবং শরণার্থী সংকটে মানবিকতার হাত প্রসারিত করেছিলেন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Time Magazine
অবসাদ
ডাচ শিল্পী এরিক ফন লিশাউটের তুলিতে এভাবে ধরা দিয়েছেন অবসাদগ্রস্ত ও বিষন্ন ম্যার্কেল৷ বন শহরের সমসায়মিক চিত্রকর্মের সংগ্রহশালা সংগ্রহ করেছে এ চিত্রটি৷ ফন লিশাউট বলেছেন, প্রতিকৃতিটি আঁকতে মাত্র এক ঘন্টা সময় নিলেও লাল লিপিস্টিকে অন্যরকমভাবে ফুটে উঠেছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷
ছবি: Erik van Lieshout
জর্জ ডাব্লিউ বুশের তুলিতে
কেবল প্রখ্যাত শিল্পীদের নয়, শখের বশে চিত্রকরদের তুলিতে ধরা পড়েছেন ম্যার্কেল৷ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ তুলিতে যে ত্রিশ বিশ্বনেতার ছবি এঁকেছেন, তাঁদের একজন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. W. Smith
রাজনীতির দেয়ালচিত্র
দক্ষিণ অ্যামেরিকার রাজনৈতিক বক্তব্য সম্বলিত ম্যুরালটি এঁকেছেন ইটালিয়ান শিল্পী ইয়ুপিতারফাব৷ চিত্রটিতে গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে দেখা যায় ম্যার্কেলকে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/G. Georgiou
রম্যচিত্র
আর্ট জাদুঘরের সংগ্রহশালার অন্যতম অনুষঙ্গ রাজনৈতিক রম্যচিত্র৷ এই ছবিতে উলঙ্গ ম্যার্কেলে কোলে উঠে পড়েছেন নেপোলিয়ান হ্যাট পড়া সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি৷ এঁকেছেন ব্রিটিশ শিল্পী ও রম্যলেখক কায়া মার৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/B. Strenske
সংলাপ
বুলেগিরার স্টারো জেলেজারে গ্রামে এই দেয়ালচিত্রটি এঁকেছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের ছবি দিয়ে দেয়ালচিত্রটির সূচনা হলেও পরে ম্যার্কেলের মতো রাজনীতিকদের সেখানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে ম্যার্কেলের সংলাপ দেখানো হয় তাতে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/H. Rusev
প্রতিবাদ
প্রতিবাদী অনেক ভাস্কর্যে বিকৃতভাবে ম্যার্কেল উপস্থাপন করা হয়েছে ম্যার্কেলকে৷ ‘ইউরোপিয়ান সিটিজেনশিপ‘ শিরোনামের ভাস্কর্যে ম্যার্কেলকে তুলে ধরা হয়েছিল মুণ্ডুহীন৷ উপরের ছবিটি ‘ট্রানজিট‘ নামক ইনস্টলেশনের, যেখানে দুই হাজার ৬০০ জনের একজন ম্যার্কেল৷
ছবি: Courtesy Georg Korner
হিপস্টার
‘হিপস্টোরি’ নামের সিরিজে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তরুন হিপস্টার হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন ইসরায়েলি ইলুস্ট্রেটর আমিত শিমোনি৷ হাওয়াইয়ান শার্ট পড়া ট্রাম্প আর উঁচু খোপার ওবামার সঙ্গে ম্যার্কেল আছে সেখানে৷ কালো হ্যাট আর লিপিস্টিক পড়া ম্যার্কেলকে এভাবে হিপস্টার বানিয়েছেন শিমোনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
ব্যঙ্গচিত্র
কুঁচকানো চোখ আর মুখসমেত ম্যার্কেলের ছবিও কম আঁকা হয়নি৷ জার্মানির বাইরের বহু গণমাধ্যমেও এমন সব চিত্রায়ন দেশ ছাড়িয়ে তাঁর বিশ্বনেতা হওয়ার প্রমাণ বহন করে৷