জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাঁর দল সিডিইউর প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর যাঁকে সেই পদে এনেছিলেন তিনি সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন৷ সেই পদে ‘ট্রাম্প লাইট' বলে পরিচিত এক রাজনীতিক আসতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
বিজ্ঞাপন
তাঁর নাম ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস৷ অভিবাসনবিরোধী বক্তব্যের কারণে জার্মানির জোট সরকারের অংশ এসপিডি দল তাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে একসময় ‘ট্রাম্প লাইট' হিসেবে উল্লেখ করেছিল৷ এমনকি জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসনরোধী দল এএফডিও ম্যার্ৎসের বিরুদ্ধে তাদের নীতি চুরি করার অভিযোগ এনেছিল৷
ম্যার্কেলের পর সিডিইউ দলের প্রধান হয়েছিলেন আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার৷ ‘মিনি-ম্যার্কেল' হিসেবে পরিচিত কারেনবাউয়ার ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ম্যার্ৎসকে হারিয়ে দলের প্রধান নির্বাচিত হন৷ ৫১৭-৪৮২ ভোটে তিনি জয়ী হয়েছিলেন৷
তবে দলের প্রধান হিসেবে কারেনবাউয়ার নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি৷ টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটনা সেটি আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে৷ হাই কমান্ডের নির্দেশ অমান্য করে ঐ রাজ্যের সিডিইউ নেতৃবৃন্দ এএফডির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল৷
এরপর কারেনবাউয়ার পদত্যাগ করেন৷
ফলে নতুন কাউকে সিডিইউ প্রধানের দায়িত্ব নিতে হবে৷ ২০১৮ সালে কারেনবাউয়ারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যার্ৎস আবারও নির্বাচন করতে পারেন বলে ধারনা করা হচ্ছে৷
আঙ্গেলা ম্যার্কেল: এক বিজয়ীর নাম
রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সুকৌশলে কাবু করা বা হটিয়ে দেয়ার কাজটি খুব ভালো পারতেন তিনি৷ প্রতিপক্ষ দলের লোকেরা তো আছেই, নিজ দলেরও প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষেত্রে এই কৌশল অবলম্বন করতেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
কোলকেই পেছনে ফেলে
সিডিইউ নেতা সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল হাতে ধরে ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় পদ দেন, ম্যার্কেলের উত্থানে ভুমিকা রাখেন৷ ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর দলের তহবিল নিয়ে একটি ঘটনা দু’জনকে মুখোমুখি দাঁড় করায়৷ তখন ম্যার্কেল সাহস করে বলেন যে, কোলকে ছাড়াই সিডিইউ’র এগিয়ে যাওয়া উচিত৷ দল ম্যার্কেলের পক্ষেই দাঁড়ায়৷ কোলকে ছাড়াই এগিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
হটে গেলেন গ্যুন্টার হ্যারমান ও্যটিঙার
রাজনীতিতে পথ থেকে সরিয়ে দেয়া মানে কিন্তু সবসময় জোর খাটানো নয়৷ যেমনটি তিনি করেছেন বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের সিডিইউ নেতা গুন্টার ওয়েটিঙ্গারের সঙ্গে৷ দলে তাঁর এই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২০১০ সালেই তিনি ইউরোপিয়ান কমিশনে বড় চাকরি দিয়ে পাঠিয়ে দেন, যদিও ইউরোপের রাজনীতিতে ওয়েটিঙ্গারের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
হারিয়ে গেলেন রোল্যান্ড কখ
দালাই লামার সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্য কখ অনেকের কাছেই পরিচিত ছিলেন৷ তিনি সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্বের পরিকল্পনার বিরুদ্ধেও চালিয়েছেন প্রচারণা৷ হেসে রাজ্যে দলের ম্যার্কেলবিরোধী অংশের একজন বলেই তাঁকে গণ্য করা হতো৷ কখ এ-ও ভেবেছিলেন যে, বার্লিন থেকে চাকরির জন্য তাঁকে ডাকা হবে৷ তাঁর কোনো ভাবনাই হালে পানি পায়নি৷ বরং নিজেই মিলিয়ে গিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ – দুর্ভাগা প্রেসিডেন্ট
লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ৷ জনপ্রিয়তার কারণে ২০০৫ সালের নির্বাচনে সিডিইউ থেকে চ্যান্সেলর পদের জন্য অন্যতম প্রতিযোগী ছিলেন৷ কিন্তু পরে আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে সমর্থন দেন৷ অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদের প্রশ্ন এলে তিনি ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ হর্স্ট ক্যোলারের হঠাৎ পদত্যাগের পর তিনি নির্বাচিত হন৷ অবশ্য পরে দুর্নীতির দায়ে সেই চাকরিও হারাতে হয়৷ মামলাও খেতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস – ক্ষমতার লড়াইয়ে পরাজয়
সাবেক ইউরোপীয় ও জার্মান সংসদ সদস্য ফ্রিডরিশ ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সিডিইউ/সিএসইউ পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ কিন্তু সিডিইউ নেতা ম্যার্কেল তাঁকে হটিয়ে চেয়ারম্যান হন, যা তিন বছর পর চ্যান্সেলর পদের জন্য লড়তে তাঁকে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
5 ছবি1 | 5
কে এই ম্যার্ৎস?
ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস একসময় ম্যার্কেলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন৷ পরে দলের মধ্যে ম্যার্কেলের একজন সমালোচক হয়ে ওঠেন তিনি৷
১৯৮৯ সালে ইউরোপীয় সাংসদ হয়েছিলেন৷ এরপর ১৯৯৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন জার্মানির সাংসদ৷ এর মধ্যে দুই বছর (২০০০-২০০২) সিডিইউ সংসদীয় দলের প্রধান ছিলেন৷
২০০২ সালে সাধারণ নির্বাচনে সিডিইউর হারের পর ম্যার্ৎসের জায়গায় দায়িত্ব নেন ম্যার্কেল৷ এরপর ২০০৯ সালে রাজনীতির মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ম্যার্ৎস৷
২০১৮ সালে সিডিইউ প্রধান নির্বাচনের আগে তিনি আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন৷
মাঝের সময়টায় বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কর্পোরেট আইনজীবী ম্যার্ৎস৷ এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে৷ জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা অলাভজনক সংস্থা ‘আটলান্টিক ব্রিজ'-এর চেয়ারম্যান ছিলেন ১০ বছর৷
২০১৬ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকরক-এর জার্মান শাখার প্রধান হন ম্যার্ৎস৷ রাজনীতিতে ফেরার লক্ষ্যে চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি সেই পদ থেকে পদত্যাগ করেন৷
ম্যার্ৎস ছাড়াও সিডিইউর প্রধান হিসেবে জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়ার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আর্মিন লাশেটকে ঘিরে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে৷