ম্যার্কেলের পর কে হবেন জার্মানির চ্যান্সেলর? আসছে নির্বাচন৷ তবে তার অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে ম্যার্কেল-পরবর্তী জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভাবনা৷
(বা থেকে) আর্মিন লাশেট, আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও মার্কুস স্যোডার
বিজ্ঞাপন
আগামী সেপ্টেম্বরেই নির্বাচন৷ সেখানে কে জয় পাবেন, কে হবেন ম্যার্কেলের উত্তরসূরী তা জানতে এখনো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে৷ তবে আপাতত এটুকু বলা যায় যে, সম্ভাবনার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন আর্মিন লাশেট এবং মার্কুস স্যোডার৷ জার্মানির সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার মুখ্যমন্ত্রী লাশেট সম্প্রতি ম্যার্কেলের দল সিডিইউ-র প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন৷ দলের প্রধান হওয়ার পর থেকে দেশের চ্যান্সেলর হিসেবে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরার চেষ্টাও জোরেশোরেই করছেন তিনি৷ এ মাসে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘মানুষ এমন একজনকে চ্যান্সেলর হিসেবে দেখতে চায় যার পররাষ্ট্র এবং অভ্যন্তরীণ নীতিতে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে৷’’
লাশেটকে জবাব দিতে একটুও দেরি করেননি জার্মানির অন্যতম বড় রাজ্য বাভারিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্কুস স্যোর্ডার৷ স্যোর্ডার শুধু বাভারিয়ার প্রধানমন্ত্রী নন, সিডিইউ-এর সহযোগী দল সিএসইউ-র প্রধানও৷ লাশেট চ্যান্সেলর প্রার্থী হিসেবে নিজের যোগ্যতা ই্ঙ্গিতে তুলে ধরার পরই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে তার এক টেলিফোন আলাপচারিতার কথা৷ ৪৫ মিনিটের সেই কথোপকথনে দু দেশের মধ্যে বিমান চলাচল বিষয়ক প্রকল্প গুরুত্ব পেয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
শিল্পীর চোখে ম্যার্কেল
বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকা প্রথম সারির একজন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ বুধবার ৬৫ বছর পূর্ণ করেছেন তিনি৷ জন্মদিনে দেখে নিন, কীভাবে শিল্পের তুলিতে ধরা পড়েছেন ম্যার্কেল৷
ছবি: Elizabeth Peyton
বিবর্তন
‘ক্ষমতার পদচিহ্ন‘ নামের সিরিজে আঙ্গেলা ম্যার্কেল, সাবেক চ্যান্সেলর গেরার্ড শ্র্যুডার ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইওশকা ফিশারকে তুলে ধরেছেন আলোকচিত্রী হেরলিন্ডে কোয়েলব্ল ৷ ছবি ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে রাজনীতিকদের বিবর্তন তুলে ধরেছেন তিনি৷
ছবি: Herlinde Koelbl
পপ আইকন
ভগ ম্যাগাজিনের জন্য ২০১৭ সালে ম্যার্কেলের এই চিত্রটি এঁকেছেন মার্কিন চিত্রশিল্পী এলিজাবেথ পেইটন৷ যৌবনের ছাপ রাখা ছবিতে তাঁর দৃঢ়তাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন শিল্পী৷ ম্যার্কেলের ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের কয়েকশ’ ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটি আঁকা হয়েছে৷
ছবি: Elizabeth Peyton
মানবিকতা
২০১৫ সালে এভাবে টাইম ম্যাগাজিনের পারসন অব দ্য ইয়ার সংখ্যার প্রচ্ছদে স্থান পান আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ ছবির শিল্পী কলিন ডেভিডসন বলেন, ‘‘তাঁকে শান্ত ও নরম মনের মানুষ হিসাবে দেখানো হয়েছে, শরণার্থীদের প্রতি তাঁর মানবিক অবস্থানের কারণে৷’’ সেসময় ইউরোপের ঋণ এবং শরণার্থী সংকটে মানবিকতার হাত প্রসারিত করেছিলেন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Time Magazine
অবসাদ
ডাচ শিল্পী এরিক ফন লিশাউটের তুলিতে এভাবে ধরা দিয়েছেন অবসাদগ্রস্ত ও বিষন্ন ম্যার্কেল৷ বন শহরের সমসায়মিক চিত্রকর্মের সংগ্রহশালা সংগ্রহ করেছে এ চিত্রটি৷ ফন লিশাউট বলেছেন, প্রতিকৃতিটি আঁকতে মাত্র এক ঘন্টা সময় নিলেও লাল লিপিস্টিকে অন্যরকমভাবে ফুটে উঠেছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷
ছবি: Erik van Lieshout
জর্জ ডাব্লিউ বুশের তুলিতে
কেবল প্রখ্যাত শিল্পীদের নয়, শখের বশে চিত্রকরদের তুলিতে ধরা পড়েছেন ম্যার্কেল৷ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ তুলিতে যে ত্রিশ বিশ্বনেতার ছবি এঁকেছেন, তাঁদের একজন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. W. Smith
রাজনীতির দেয়ালচিত্র
দক্ষিণ অ্যামেরিকার রাজনৈতিক বক্তব্য সম্বলিত ম্যুরালটি এঁকেছেন ইটালিয়ান শিল্পী ইয়ুপিতারফাব৷ চিত্রটিতে গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে দেখা যায় ম্যার্কেলকে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/G. Georgiou
রম্যচিত্র
আর্ট জাদুঘরের সংগ্রহশালার অন্যতম অনুষঙ্গ রাজনৈতিক রম্যচিত্র৷ এই ছবিতে উলঙ্গ ম্যার্কেলে কোলে উঠে পড়েছেন নেপোলিয়ান হ্যাট পড়া সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি৷ এঁকেছেন ব্রিটিশ শিল্পী ও রম্যলেখক কায়া মার৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/B. Strenske
সংলাপ
বুলেগিরার স্টারো জেলেজারে গ্রামে এই দেয়ালচিত্রটি এঁকেছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের ছবি দিয়ে দেয়ালচিত্রটির সূচনা হলেও পরে ম্যার্কেলের মতো রাজনীতিকদের সেখানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে ম্যার্কেলের সংলাপ দেখানো হয় তাতে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/H. Rusev
প্রতিবাদ
প্রতিবাদী অনেক ভাস্কর্যে বিকৃতভাবে ম্যার্কেল উপস্থাপন করা হয়েছে ম্যার্কেলকে৷ ‘ইউরোপিয়ান সিটিজেনশিপ‘ শিরোনামের ভাস্কর্যে ম্যার্কেলকে তুলে ধরা হয়েছিল মুণ্ডুহীন৷ উপরের ছবিটি ‘ট্রানজিট‘ নামক ইনস্টলেশনের, যেখানে দুই হাজার ৬০০ জনের একজন ম্যার্কেল৷
ছবি: Courtesy Georg Korner
হিপস্টার
‘হিপস্টোরি’ নামের সিরিজে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তরুন হিপস্টার হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন ইসরায়েলি ইলুস্ট্রেটর আমিত শিমোনি৷ হাওয়াইয়ান শার্ট পড়া ট্রাম্প আর উঁচু খোপার ওবামার সঙ্গে ম্যার্কেল আছে সেখানে৷ কালো হ্যাট আর লিপিস্টিক পড়া ম্যার্কেলকে এভাবে হিপস্টার বানিয়েছেন শিমোনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
ব্যঙ্গচিত্র
কুঁচকানো চোখ আর মুখসমেত ম্যার্কেলের ছবিও কম আঁকা হয়নি৷ জার্মানির বাইরের বহু গণমাধ্যমেও এমন সব চিত্রায়ন দেশ ছাড়িয়ে তাঁর বিশ্বনেতা হওয়ার প্রমাণ বহন করে৷
11 ছবি1 | 11
ম্যার্কেলের সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে জার্মানি৷ নতুন চ্যান্সেলরের সময়ে জার্মানি সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারবে কিনা এ প্রশ্ন ম্যার্কেল-যুগ অবসানের আগেই বড় হয়ে উঠেছে৷
হালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইয়োহানেস ফারভিক মনে করেন, ম্যার্কেল দেড় দশক চ্যান্সেলর থাকার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তার বাইরে একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন, সুতরাং নতুন কাউকে সেই পর্যায়ে যেতে সময় দিতে হবে৷
লাশেটআরস্যোর্ডারেরপররাষ্ট্রনীতি
লাশেটের জন্ম বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডস সীমান্ত সংলগ্ন আখেন শহরে৷ ইউরোপীয় নীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞতায় তিনি স্যোর্ডারের চেয়ে এগিয়ে৷ করোনা সংকটের সময়ও তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গের সীমান্ত খোলা রাখার চেষ্টা করেছেন৷ অধ্যাপক ফারভিক মনে করেন, লাশেটের তুলনায় স্যোর্ডারের পররাষ্ট্র ভাবনা অনেকটাই অজ্ঞাত৷
তবে বার্লিনকেন্দ্রিক গ্লোবাল পাবলিক পলিসি ইন্সটিটিউটের পরিচালক থরস্টেন বেনার মনে করেন, ইউরোপীয় প্রকল্পের সঙ্গে স্যোর্ডারের সম্পৃক্ততা অতি নগণ্য৷
তবে মোটাদাগে দুজনই ইউরোপীয় ঐক্য ও মর্যাদা ধরে রাখার পক্ষে সদা সোচ্চার৷ ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান ছিল দুজনেরই৷ দুজনই মনে করতেন ট্রাম্পের কারণে ‘স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের ভূমি' যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে৷
এছাড়া লাশেট বা স্যোডার যিনিই চ্যান্সেলর হোন না কেন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক একই থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
রাশিয়ারবিরুদ্ধেনরমনীতি?
ম্যার্কেলের বিদায়ের পর ক্রেমলিনের বিষয়ে বার্লিনের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে তা সময়ই বলতে পারবে৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ের দুটি বিষয় একটা দিকনির্দেশনা দিতে পারে৷ নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ ওঠার পর কঠে্ার ভাষায় ক্রেমলিনের নিন্দা জানিয়েছিলেন লাশেট৷ সমালোচনা স্যোডারও করেছেন৷ তবে অতীতে লাশেট সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকার যেমন প্রশংসা করেছেন, সেরকম বক্তব্য স্যোডারের মুখে কখনো শোনা যায়নি৷ ২০১৪ সালে লাশেট ‘‘শুরুতে যখন রাশিয়া সবাইকে জিহাদিদের বিষয়ে সতর্ক করেছিল, তখন অনেক জার্মান বিষয়টিকে প্রোপাগান্ডা বলে উড়িয়ে দিয়েছিল’’ বলে পুটিনের প্রশংসাই করেছিলেন৷