আঙ্গেলা ম্যার্কেল সহ একাধিক ইউরোপীয় নেতার পিছনে চরবৃত্তি করেছে ডেনমার্কের গোয়েন্দারা। তথ্য পাচার করা হয়েছে অ্যামেরিকায়।
বিজ্ঞাপন
কার্যত বোমা ফাটিয়েছে ইউরোপের একাধিক প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম। মার্কিন গোয়েন্দা দফতরের সূত্র তাদের হাতে তুলে দিয়েছে বিস্ফোরক তথ্য। যাতে দেখা যাচ্ছে, ডেনমার্কের গোয়েন্দা সংস্থা ইউরোপের একাধিক নেতার পিছনে চরবৃত্তি করেছে এবং সেই তথ্য তুলে দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। আঙ্গেলা ম্যার্কেলের পিছনেও তারা চরবৃত্তি করেছে এবং তথ্য তুলে দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ-এর হাতে।
কে কার উপর গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে?
চ্যান্সেলর ম্যার্কেল-এর ফোনে এনএসএ-র আড়ি পাতার অভিযোগ নিয়ে জার্মানি উত্তাল হয়ে উঠেছিল৷ এবারের অভিযোগ, জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা নাকি এনএসএ-র অনুরোধে ফ্রান্স, ইইউ সহ ইউরোপীয় নেতাদের উপর নজরদারি চালিয়েছে৷ এর পরিণাম কী হবে?
ছবি: imago
সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
নাইন-ইলেভেনের পর থেকে এনএসএ সহ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্কের শেষ নেই৷ অভিযোগ উঠছে, খোদ অ্যামেরিকার আইনও তোয়াক্কা করে না এনএসএ৷ তাদের বিদেশি সহযোগীরাও আইন ও নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে উঠে বে-আইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে বার বার শোনা যাচ্ছে৷ ব্যক্তি, রাজনীতিক, কোম্পানি সংক্রান্ত সব তথ্যের রাক্ষুসে ক্ষুধার যেন শেষ নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বন্ধুদের মধ্যে এ সব চলে না’
মোবাইল-কেলেঙ্কারির জের ধরে ক্ষুব্ধ ম্যার্কেল এমন মন্তব্য করেছিলেন৷ ফলে অ্যামেরিকার উপর আস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল৷ এখন যদি প্রমাণিত হয় যে, খোদ জার্মানির বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ-এর উপর নজরদারি চালিয়েছে – তাও আবার সেই অ্যামেরিকার এনএসএ-র অনুরোধে, তখন ম্যার্কেল কীভাবে মুখ দেখাবেন?
ছবি: Reuters/Y. Herman
শুধুই রাজনীতি, নাকি ব্যবসা?
শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর নজরদারির কী কারণ থাকতে পারে? তাদের সাফল্যের ফর্মুলা চুরি করা? এয়ারবাস প্রস্তুতকারক সংস্থা ইএডিএস এই সন্দেহের বশে পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছে – তবে সরাসরি এনএসএ-র বিরুদ্ধে নয়৷ মনে রাখতে হবে, শুধু যাত্রীবাহী বিমান নয়, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও তৈরি করে ফ্রান্স ও জার্মানির এই কোম্পানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
ক্ষুব্ধ ইউরোপ
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার তাঁর দপ্তরের উপর এনএসএ ও বিএনডি-র গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে অত্যন্ত বিচলিত৷ তবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের কাঠামোর মধ্যে থেকে তিনি বলেছেন, জার্মান কর্তৃপক্ষ ও সংসদকে এর তদন্ত করে সত্য ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে হবে৷
ছবি: Reuters/E. Vidal
কেঁচো খুঁড়তে সাপ
এনএসএ কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আনতে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন এডওয়ার্ড স্নোডেন৷ রাশিয়ায় নির্বাসিত এই ‘হুইসেলব্লোয়ার’-কে জার্মানিতে এনে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব পাবার চেষ্টা করেছিলেন সবুজ দলের সদস্য হান্স ক্লিস্টিয়ান স্ট্র্যোবেলে৷ সে যাত্রায় ফল হয়নি৷ ওয়াশিংটন-কে চটাতে সাহস পায়নি অনেক মহল৷ এবারের কেলেঙ্কারির পর সেই আপত্তি ধোপে টিকবে কিনা, বলা কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কোণঠাসা ম্যার্কেল প্রশাসন
এনএসএ-বিএনডি কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর আস্থার পাত্র বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের-এর ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে৷ চ্যান্সেলর-এর দপ্তরের প্রধান হিসেবে তিনি এ বিষয়ে কতটা জানতেন, কোন তথ্য গোপন করেছেন এবং সংসদে প্রশ্নের মুখে মিথ্যা কথা বলেছেন কিনা, তা জানতে চাপ বেড়েই চলেছে৷ শেষ পর্যন্ত তিনি সহ অনেকেরই গদি নিয়ে টানাটানি হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
6 ছবি1 | 6
২০১৩ সালেই বিষয়টি সামনে এসেছিল। স্নোডেনও এ বিষয়ে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় সাংবাদিকদের হাতে এই পরিমাণ তথ্য আসেনি। কিন্তু সম্প্রতি এনএসএ-এর এক কর্মকর্তা বিস্তারিত তথ্য তুলে দেন একাধিক ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমের হাতে। তারপরেই বিস্ফোরক তথ্য সামনে চলে আসে।
জার্মান চ্যান্সেলর ছাড়াও দেশের প্রেসিডেন্টের পিছনেও চরবৃত্তি করেছে ডেনমার্কের গোয়েন্দা সংস্থা এফই। ২০১৩ সালে এসপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীর পিছনেও চরবৃত্তি করা হয়। ঘটনার কথা শুনে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ''এটা রাজনৈতিক স্ক্যান্ডাল।'' জার্মান কূটনীতি মহলেও বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো সাড়া পড়ে গেছে। কারণ জার্মানির সঙ্গে ডেনমার্কের কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। ডেনমার্ক জার্মানির প্রতিবেশী দেশ। তা সত্ত্বেও কেন তারা এ কাজ করল এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তথ্য তুলে দিল, তা নিয়ে অনেকেই বিস্মিত।
বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি ম্যার্কেল। তবে চ্যান্সেলরের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি ম্যার্কেলের গোচরে আনা হয়েছে। জার্মান প্রেসিডেন্টও এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। ডেনমার্কও বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ২০২০ সালেই ডেনমার্কের প্রশাসনের কানে পৌঁছেছিল খবরটি। বিষয়টি নিয়ে জলঘোলাও হয়েছে অনেক। সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালে তৎকালীন গোয়েন্দা বিভাগের সমস্ত উচ্চপদস্থ কর্তাকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।