ম্যার্কেলের প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যারৎস চ্যান্সেলর হতে চান
ক্রিস্টফ স্ট্রাক/জেডএইচ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের একসময়কার প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রিডরিশ ম্যারৎস জার্মানির ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর হতে চান৷ জরিপে এগিয়ে থাকা খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সিডিইউ দলের চ্যান্সেলর প্রার্থী তিনি৷
বিজ্ঞাপন
২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ এতে সিডিইউ সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে বলে জরিপগুলো বলছে৷ তাই পরবর্তী চ্যান্সেলর হওয়ার দৌ়ড়ে এগিয়ে আছেন ম্যারৎস৷
দুই মেয়াদে রাজনীতি
২০০৫ সালে আঙ্গেলা ম্যার্কেল চ্যান্সেলর হওয়ার আগে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন ম্যারৎস৷ ১৯৮৯ সালে ৩৩ বছর বয়সে তিনি ইউরোপীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ এরপর ১৯৯৪ সালে জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগের সদস্য নির্বাচিত হন৷ ২০০৫ সালে ম্যার্কেল চ্যান্সেলর হওয়ার পর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন ম্যারৎস৷ কারণ তিনি ম্যার্কেলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ ম্যার্কেল ছিলেন বাস্তববাদী ও মধ্যপন্থি৷ আর ম্যারৎস ছিলেন কট্টর রক্ষণশীল৷ সে কারণে ২০০৯ সালে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যারৎস৷
২০২৫-এর নির্বাচনে জার্মানির চ্যান্সেলর প্রার্থী যারা
২০২৫-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগের আগাম নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করছে৷ ছবিঘরে দেখে নেয়া যাক কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর প্রার্থী।
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
ওলাফ শলৎস, এসপিডি
বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এবারও চ্যান্সেলর হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের ৬৬ বছর বয়সি চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শলৎসের নিজের একটি আইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অতীতে হামবুর্গ শহরের মেয়র, দেশের শ্রমমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শলৎসের জনপ্রিয়তা এখন অবশ্য বেশ পড়তির দিকে।
ছবি: Annegret Hilse/REUTERS
ফ্রিডরিশ ম্যারৎস, সিডিইউ
রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটদের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ফ্রিডরিশ ম্যারৎসের জন্ম ১৯৫৫ সালে। আইনজীবী ম্যারৎস বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা ব্ল্যাকরক-এ কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার।
ছবি: Ruffer/Caro/picture alliance
রবার্ট হাবেক, গ্রিন পার্টি
৫৫ বছর বয়সি রবার্ট হাবেক গ্রিন পার্টি চ্যান্সেলর প্রার্থী। তার সবচেয়ে বড় গুণ নিজের ভুল স্বীকার করতে পিছপা হন না। রবার্ট হাবেক-ই প্রথম বর্তমান জোট সরকারের ব্যর্থতা ও জোটের শরিকদের মধ্যে মতবিরোধ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন। রাজনীতির বাইরে হাবেক একজন লেখক, অনুবাদক ও দার্শনিক।
ছবি: appeler/dpa/picture alliance
আলিস ভাইডেল, এএফডি
অর্থনীতিতে পিএইচডি করা আলিস ভাইডেলের জন্ম ১৯৭৯ সালে৷ উগ্র ডানপন্থি দল এএফডির কো-চেয়ারম্যান পড়ালেখা ও চাকরি করেছেন চীনে। অভিবাসনবিরোধী প্রচারণার কারণে আলিস ভাইডেল ইতিমধ্যে বেশ আলোচিত-সমালোচিত। শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত এক নারী তার ‘সিভিল পার্টনার’৷ বছরের বেশির ভাগ সময় সেই নারীর সঙ্গে সুইজারল্যান্ডে থাকেন আলিস। দুটি শিশু দত্তক নিয়েছেন তারা।
আলিস ভাইডেলের মতো জার্মানির বর্তমান অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারের জন্মও ১৯৭৯ সালে। মন্ত্রীসভা থেকে তাকে বহিষ্কার করার মাধ্যমেই ভেঙে পড়ে জোট সরকার। ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার পড়াশোনা করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে৷ একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ সংস্থার মালিক লিন্ডনার জার্মান বিমান বাহিনীর একজন রিজার্ভ সদস্যও। ৩৪ বছর বয়সে নিওলিবারেল রাজনৈতিক দল ফ্রি ডেমোক্র্যাট (এফডিপি)-র চেয়ারম্যান হন তিনি।
ছবি: Hannes P Albert/dpa/picture alliance
জাহরা ভাগেন্কনেখট, বেএসভে
রাজনৈতিক টকশোর পরিচিত মুখ, সাবেক বাম রাজনীতিবিদ জাহরা ভাগেন্কনেখট বর্তমানে পপুলিস্ট মতাদর্শের প্রচারক। রক্ষণশীল সামাজিক নীতি, বাম ধারার অনুপ্রাণিত অর্থনৈতিক নীতি ও অভিবাসন বিরোধিতার কারণে তিনি বেশ পরিচিত। জারাহ জলবায়ু পরিবর্তন ও ন্যাটোর বিষয়েও কঠোর।
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
ইয়ান ফান আকেন, লেফট পার্টি
পশ্চিম জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করা ইয়ান জীববিজ্ঞানে পিএইচডি৷ ২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত কাজ করেছেন জাতিসংঘের বায়োলজিক্যাল উইপন্স পরিদর্শক হিসেবে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত জার্মান সংসদে বামদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ইয়ান। চলতি বছর অক্টোবরে জার্মান বাম দলের কো-চেয়ার নির্বাচিত হয়েছেন ৬৩ বছর বয়সি ইয়ান।
ছবি: Axel Heimken/dpa/picture-alliance
7 ছবি1 | 7
এরপর ২০১৮ সালে ম্যার্কেল সিডিইউ দলের নেতার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে সেই পদ পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ম্যারৎস৷ কিন্তু সফল হননি৷ এরপর ২০২১ সালের শুরুর দিকেও একবার সিডিইউ প্রধান হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন৷ এরপর ঐ বছরই আরেক দফা দলের প্রধান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে সফল হন ম্যারৎস৷
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজনীতিতে না থাকার সময় ম্যারৎস নিজেকে একজন ধনী কর্পোরেট আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন৷
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে জন্মগ্রহণ করা ম্যারৎস তিন সন্তানের জনক ও একজন ক্যাথলিক৷
২০০৮ সালে প্রকাশিত তার এক বইয়ে ম্যারৎস উদার অর্থনৈতিক নীতি, আমলাতন্ত্রের জটিলতা কমানো, সামাজিক ভাতা কমানো ও কোম্পানি কর কমানোর পক্ষে লিখেছিলেন৷
১৯৯০ এর দশকে ম্যারৎস সংসদে গর্ভপাত আইন উদারীকরণের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন৷ ১৯৯৭ সালে বৈবাহিক ধর্ষণকে অন্যান্য ধর্ষণের মতোই অপরাধ বিবেচনা করে সংসদে বিল পাসের সময়ও তিনি এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷
ম্যারৎস সবসময় পরমাণু শক্তির সমর্থক ছিলেন৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যখন জ্বালানির মূল্য অনেক বেড়ে গিয়েছিল তখন ম্যারৎস জার্মানির তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারের বিয়েতে উপস্থিত হতে ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন৷
‘বিদেশিদের নিয়ে সমস্যা'
এক টিভি টক শোতে ম্যারৎস বলেছিলেন, জার্মানির স্কুলের নারী শিক্ষকেরা ‘লিটল পাশা'দের কাছ থেকে যথেষ্ট সম্মান পাচ্ছেন না৷ ‘লিটল পাশা' বলতে তিনি মুসলমান শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বুঝিয়েছিলেন৷
এই টক শোর কয়েক সপ্তাহ আগে ম্যারৎস যুদ্ধের কারণে জার্মানিতে আসা ইউক্রেনীয়দের ‘ওয়েলফেয়ার টুরিস্ট' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন৷ তিনি বলতে চেয়েছিলেন, ইউক্রেনীয়দের অনেকে নিরাপত্তার খোঁজে জার্মানিতে এসেছিলেন৷ এরপর জার্মানিতে সামাজিক ভাতা পাওয়া নিশ্চিত হওয়ার পর তারা দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন৷
ম্যারৎস পরে ‘ওয়েলফেয়ার টুরিজম' শব্দ ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চান৷