জার্মানির এসপিডি দল ওলাফ শলৎসকে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিলো৷ ফলে ম্যার্কেল-পরবর্তী রাজনৈতিক সমীকরণ জমে উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে আর ক্ষমতায় ফিরতে প্রস্তুত নন৷ এমনকি করোনা সংকট ভালোভাবে সামলানোর জন্য জনপ্রিয়তা আবার বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি পঞ্চম কার্যকাল সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করছেন না৷ জার্মানি তথা ইউরোপের এত বড় মাপের নেতা হিসেবে স্বীকৃত মানুষটির প্রস্থানের পর যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে, তা পূরণ করতে জার্মানির রাজনৈতিক জগত এখনো প্রস্তুত নয়, এমনটাই এতকাল ধারণা করা হচ্ছিল৷ ২০২১ সালের সাধারণ নির্বাচনের বেশ কিছুকাল আগেই চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী স্থির করলো মহাজোট সরকারের ছোট শরিক দল এসপিডি৷ সেই দল আগামী সরকারের নেতৃত্ব দেবার সুযোগ পেলে বর্তমান অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস হবেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ সোমবারই আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা করা হয়৷
করোনা সংকটের মাঝে এমন রাজনৈতিক ঘোষণার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ আগামী নির্বাচনে শলৎস যে এসপিডি দলের শীর্ষ প্রার্থী হতে পারেন, বেশ কিছুকাল ধরে সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা হচ্ছিল৷ অর্থমন্ত্রী হিসেবে করোনা সংকটের মাঝে জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে তিনিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন৷ জনপ্রিয়তা ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার বিচারে তাঁর দলে অন্য কেউ ধারেকাছে আসতে পারেন না৷ তবে দল হিসেবে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডির জনপ্রিয়তার অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ জনমত সমীক্ষায় মাত্র ১৪-১৬ শতাংশ সমর্থনের ভিত্তিতে আগামী সরকারের নেতৃত্ব দেবার স্বপ্ন বড়ই অবাস্তব৷ তবে শলৎস-কে সামনে রেখে সেই সংকট কাটিয়ে তোলার আশা করছে এসপিডি৷
অন্যদিকে সরকারের প্রধান শরিক সিডিইউ ও বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের রক্ষণশীল ইউনিয়ন শিবিরেও ম্যার্কেলের উত্তরসূরী বাছাইয়ের জন্য জোরালো তৎপরতা চলছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক নেতা সেই প্রতিযোগিতায় শামিল হয়েছেন৷ এর মধ্যে করোনা সংকটের মাঝে সুযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান এবং বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার৷ নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেটও নিজেকে শিবিরের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হবার যোগ্য বলে মনে করছেন৷ আসরে নেমেছেন ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস ও নরবার্ট ব়্যোটগেন নামের আরও দুই নেতা৷
জোট সরকারে অভ্যস্ত জার্মানিতে আগামী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে অন্যান্য দলের ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ আপাতত জনপ্রিয়তার শিখরে রয়েছে সবুজ দল৷ আগামী সরকারে এই দলের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করা হচ্ছে৷ যথেষ্ট ভোট পেলে উদারপন্থি এফডিপি ও বামপন্থি দলও জোট সমীকরণে শরিক হিসেবে গুরুত্ব পেতে পারে৷ শলৎস এবং ইউনিয়ন শিবিরের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীর মধ্যে কে সম্ভাব্য শরিকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবেন, সেই রসায়নের উপর আগামী জোট সরকারের গঠন নির্ভর করতে পারে৷
ম্যার্কেলের প্রস্থানের পরেও যারা ম্যার্কেলকে চ্যান্সেলর হিসেবে পেতে চান, তাদের কাছে ওলাফ শলৎস ‘মিনি ম্যার্কেল’ হিসেবে বেশ গ্রহণযোগ্য হতে পারেন, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এমনটাই মনে করছেন৷ ম্যার্কেলের মতোই ধীর-স্থির, বিচক্ষণ, বাস্তববাদী, অন্তর্মূখী অথচ দক্ষ প্রশাসক হিসেবে ওলাফ শলৎস সুনাম কুড়িয়েছেন৷ এমনকি ইউনিয়ন শিবিরের কিছু ভোটার তাঁর প্রতি ঝুঁকতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)
২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীর ব্যক্তিগত জীবন
তিনি সুপার মার্কেটে বাজার করেন, নাপিতের দোকানে অন্যদের পাশে বসে অপেক্ষা করেন, এমনকি সরকারি ভবন নয়, নিজের বাড়িতে থাকাই তাঁর পছন্দ৷ তিনি আর কেউ নন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
ম্যার্কেলের নাপিত উডো ভালৎস
২০১৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ উডো ভালৎস (ছবিতে মাঝখানে) গত দশ বছর ধরে ম্যার্কেলের চুল কাটেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘চ্যান্সেলার হওয়ার আগেও তিনি যেমন সেলুনে অন্যদের সাথে বসতেন, এখনও তাই করেন৷ তাঁকে কোনো বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় না৷ অর্থাৎ তিনিও অন্যদের মতো ৬৫ ইউরো দেন৷ একদম আগের মতো আছেন তিনি৷’’
ছবি: picture-alliance/schroewig
নিজেদের বাড়িতেই থাকেন
বার্লিনের ‘মিউজিয়াম আইল্যান্ড’-এর একটি জাদুঘরের কাছে নিজস্ব, কিন্তু পুরানো একটা ফ্ল্যাটে থাকেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও তাঁর স্বামী ইওয়াখিম সাউয়ার৷ শুধু নিরাপত্তার জন্য দু’জন পুলিশ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে৷ এছাড়া কিন্তু সব কিছু আগের মতো আছে৷ এই যেমন, ছুটি পেলে আজও কাছের উকারমার্ক নামের ছোট্ট শহরে চলে যান দু’জনে৷ সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
নিজেই বাজার করেন
চ্যান্সেলার ম্যার্কেল সাধারণ সুপার মার্কেটেই বাজার করতে যান, বিশেষ করে যেগুলো একটু বেশি সময় খোলা থাকে৷ বাজার করা সম্পর্কে আঙ্গেলা ম্যার্কেল একবার এক দোকানিকে বলেছিলেন, ‘‘আমার এই অল্প অবসর সময়ে বাজার করার মতো সব কাজই করার চেষ্টা করি, যেমনটা আগে করতাম৷ অবশ্য যখন নিজে পারি না, তখন বাজারের লিস্ট তৈরি করে স্বামীর হাতে তুলে দেই৷’’
ছবি: picture-alliance/Markus C. Hurek
তিনিই ‘চ্যান্সেলার’
দোকানের একজন নারী কর্মী জানান, ‘‘চ্যান্সেলার ম্যার্কেল অন্যান্য ক্রেতার মতোই কিছু খুঁজে না পেলে কোথায় কী রাখা আছে, তা সাধারণ গৃহিনীদের মতোই জানতে চান৷ তাঁর নিরাপত্তার জন্য দেহরক্ষী সাথে না থাকলে কেউ হয়ত বুঝবেই না যে তিনিই আমাদের ‘অ্যাঞ্জি’৷’’ কর্মীটি আরো জানান, ‘‘শত ব্যস্ততার মধ্যেও কিন্তু চ্যান্সেলারের মুখে হাসিটুকু লেগে থাকে, যা ভীষণ ভালো লাগে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
চ্যান্সেলারের পছন্দ ফ্রেঞ্চ চিজ
জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ভীষণ পছন্দ ফ্রেঞ্চ চিজ বা পনির, যা তিনি নিজেই কিনতে ভালোবাসেন৷ আর সে’কথাই গর্ব করে জানান ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের একজন কর্মী৷
হাতে দামি ব্যাগ নেওয়ার চেয়ে ভালো খাওয়া-দাওয়া ম্যার্কেলের কাছে বেশি গুরত্বপূর্ণ৷ যখন তিনি রান্না করার সময় পান না, তখন স্বামী ইওয়াখিম সাউয়ারকে নিয়ে বার্লিনের ‘কাসামবালিস’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান৷ দামি খাবারের চেয়ে অবশ্য ‘গ্রিক মিটবল’-এর মতো সাধারণ খাবারই বেশি পছন্দ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই নারীর৷
ছবি: picture alliance/Markus C. Hurek
বিলাসিতা পছন্দ নয়
অন্যান্য রাজনীতিকদের মতো বিলাসিতা আঙ্গেলা ম্যার্কেলের তেমন পছন্দ নয়৷ বরং সাধারণ জীবনযাপনই তাঁর বেশি ভালো লাগে৷ তাই তিনি যতটা সম্ভব সেভাবেই চলার চেষ্টা করেন স্বামীকে নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Fusco
চাই মুক্ত হাওয়া আর হাঁটা-চলা
আঙ্গেলা ম্যার্কেল সময় সুযোগ পেলে স্বামীকে সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হন৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ‘ফিট’ থাকতে মুক্ত বাতাসে হাঁটা-চলা যে ভীষণ জরুরি – সেটা তিনি যেন সকলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন৷ এই না হলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/AP Photo/C. De Luca