ম্যার্কেলের বদলে ‘মিনি-ম্যার্কেল', নাকি ‘ট্রাম্প লাইট'?
৭ ডিসেম্বর ২০১৮
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল গত অক্টোবরে জানিয়েছিলেন, তিনি আর তাঁর দল সিডিইউ-র প্রধানের পদের জন্য নির্বাচন করবেন না৷ তাঁর বদলে কে দলের প্রধান হচ্ছেন, জানা যাবে আজ শুক্রবার৷
বিজ্ঞাপন
হামবুর্গে সিডিইউর প্রতিনিধিরা ভোটের মাধ্যমে দলের প্রধান নির্বাচন করবেন৷ সম্ভাব্য প্রধান হিসেবে তিন জনের নাম আলোচনায় এসেছে৷ তাঁরা হলেন, আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার, ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস এবং ইয়েন্স স্পান৷
জার্মানির সরকারি প্রচারমাধ্যম এআরডি'র সবশেষ জরিপ বলছে, ৪৫ শতাংশ ভোটার সিডিইউর প্রধান হিসেবে কারেনবাউয়ারকে চান৷ তিনি বর্তমানে দলের সাধারণ সম্পাদক৷ ম্যার্কেল তাঁর উত্তরসূরি বিবেচনা করে কারেনবাউয়ারকে গত ফেব্রুয়ারিতে দলের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন৷ ফলে কারেনবাউয়ার নির্বাচিত হলে দলে ম্যার্কেলের নীতিই বহাল থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ তাই মাঝেমধ্যে কারেনবাউয়ারকে ‘মিনি-ম্যার্কেল' হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে৷
এআরডির জরিপে দ্বিতীয় স্থানে আছেন ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস৷ প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটার তাঁকে ম্যার্কেলের উত্তরসূরি হিসেবে পছন্দ করেছেন৷ তবে ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির সমর্থক নন তিনি৷ বরং ম্যার্ৎসের অভিবাসনবিরোধী বক্তব্যের কারণে জার্মানির জোট সরকারের অংশ এসপিডি তাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে ‘ট্রাম্প লাইট' হিসেবে উল্লেখ করেছে৷ এমনকি জার্মানির অভিবাসনরোধী দল এএফডি ম্যার্ৎসের বিরুদ্ধে তাদের নীতি চুরি করার অভিযোগ এনেছে৷
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে ম্যার্কেল ম্যার্ৎসকে সিডিইউ সংসদীয় গোষ্ঠীর প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার পর তিনি ২০০৯ সালে রাজনীতির মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন৷ এরপর এতদিন তিনি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ গত অক্টোবরে ম্যার্কেলের ঘোষণার পর তিনি আবার রাজনীতিতে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷
সম্ভাব্য তিন প্রার্থীর মধ্যে এআরডির জরিপে সবচেয়ে কম সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান৷ তাঁর বয়স মাত্র ৩৮ হওয়ায় তাঁকে এই পদের জন্য এখনই যোগ্য মনে করছেন না অনেকে৷ তিনিও ম্যার্কেলের সমালোচক হিসেবে পরিচিত৷
এআরডির জরিপে সব দলের ভোটারদের মতের প্রতিফলন দেখা গেছে৷ তবে শুধু সিডিইউর ভোটার ও প্রতিনিধিরা বলছেন, কারেনবাউয়ার আর ম্যার্ৎসের মধ্যে ব্যবধান খুব কম৷ সেক্ষেত্রে প্রথম দফা ভোটে কেউ যদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে প্রধান নির্বাচিত হতে না পারেন, তাহলে মূল দুই প্রার্থীর মধ্যে রান-অফের প্রয়োজন দেখা দেবে৷ সেইসময় স্পান সমর্থকদের ভোট ম্যার্ৎসের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন৷
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর মেয়াদে অভিবাসন নীতি নিয়ে ঘরে বাইরে বেশ লড়াই করতে হচ্ছে আঙ্গেলা ম্যার্কেলেকে৷ তার পরিবর্তে কারা হতে পারেন জার্মান চ্যান্সেলর? এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার
ক্রাম্প-কারেনবাউয়ারকে ম্যার্কেলের নিজের পছন্দের প্রতিনিধি মনে করা হয়৷ কিন্তু জার্মানি জুড়ে তাঁর পরিচিতি বেশ কম৷ সিডিইউ-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার আগে ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার সারল্যান্ডের রাজ্য প্রধান হিসেবে সিডিইউ-এসপিডি জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷ ম্যার্কেলের উদার অভিবাসন নীতির সমর্থক তিনি৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
ফল্কার বুফিয়ার
হেসের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০১০ সাল থেকে রাজ্য প্রধান বুফিয়ার৷ বর্তমানে ভিসবাডেনে সিডিইউ-গ্রিন জোটের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ ম্যার্কেলের সিডিইউ পার্টির নির্বাহী কমিটির পাঁচ ডেপুটি চেয়ারপার্সনের একজন তিনি৷
ছবি: Reuters
ভোলফগাং শয়েবলে
কয়েক দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শয়েবলের৷ সিডিইউয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ নেতাদের একজন তিনি৷ ৭৫ বছর বয়সি এই সাবেক আইনজীবী ২০১৭ সালে জার্মান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ম্যার্কেলের অধীনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন৷ জার্মানির অভিবাসন নীতির সমালোচনা করলেও ম্যার্কেলের সাথে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভালো বলেই ধরে নেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Fischer
ইয়েনস স্পান
চ্যান্সেলর হওয়ার দৌঁড়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে কনিষ্ঠতম স্পান৷ ২০০২ সালে সংসদ সদস্য এবং পরবর্তীতে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন তিনি৷ ২০১৬ সালে ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে গিয়ে সিডিইউ সম্মেলনে দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিলের প্রস্তাব পাশ করাতে ভূমিকা রাখেন৷ জার্মানির দারিদ্র্য নিয়ে মন্তব্যে তাঁকে সম্প্রতি বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন
জার্মানির প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী তিনি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণস্বাস্থ্যের ওপর তাঁর পড়াশোনা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বিত প্রতিরক্ষার অন্যতম সমর্থক তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Kappeler
ইউলিয়া ক্ল্যোকনার
ক্ল্যোকনার বর্তমানে ম্যার্কেলের কৃষিমন্ত্রী৷ তবে ম্যার্কেলের চেয়ে অনেক বেশি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত তিনি৷ গর্ভপাত এবং ভ্রূণ নিয়ে গবেষণার বিরুদ্ধে তিনি৷ ম্যার্কেলের অভিবাসন নীতির বিকল্প প্রস্তাবেরও একজন সমর্থক ক্ল্যোকনার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
হর্স্ট সেহোফার
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেহোফারকেই বর্তমান সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ জার্মানির নতুন অভিবাসন নীতি নিয়ে মূলত সেহোফারই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ম্যার্কেলকে৷ বাভারিয়া অঞ্চলে সিডিইউর সহযোগী দল সিএসইউর প্রধান সেহোফার৷ অক্টোবরে বাভারিয়ার নির্বাচনে তাঁর দল ভালো করার আশা করলেও বাকি জার্মানি তাঁকে চ্যান্সেলর হিসেবে না-ই দেখতে চাইতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
মার্কুস স্যোডার
বাভারিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যোডার৷ অভিবাসন বিষয়ে ম্যার্কেলকে চ্যালেঞ্জ করে তিনিও এসেছেন আলোচনায়৷ জার্মানির দক্ষিণের এই রাজ্যে অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়াদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এবং রাষ্ট্রীয় ভবনে ক্রুশ স্থাপনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ সমালোচনাতেও পড়তে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: Reuters/L. Barth
পেটার আল্টমায়ার
জার্মান অর্থমন্ত্রী আল্টমায়ার ম্যার্কেলের অভিবাসননীতির সমর্থক৷ সারল্যান্ড থেকে আসা এই রাজনীতিবিদ আগে কাজ করতেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে৷ ম্যার্কেলের খুব ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আল্টমায়ার কাজ করেছেন পরিবেশমন্ত্রী হিসেবেও৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
আরমিন লাশেট
উদারপন্থি এই নেতাকে বিরোধীরা ‘রাজনীতির জন্য একটু বেশিই নরম’ বলে সমালোচনা করে থাকেন৷ সিডিইউর হয়ে গত বছর জার্মানির সবচেয়ে বড় রাজ্য নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার রাজ্য প্রধান নির্বাচিত হন লাশেট৷ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জন্য এই পরাজয় ছিল বিশাল এক ধাক্কা৷ সাবেক এই সাংবাদিকও ম্যার্কেলের পাঁচ ডেপুটির একজন৷