জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দেশটির একজন স্যাটায়ার রচয়িতা৷ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানকে নিয়ে লেখা ব্যাঙ্গোক্তিমূলক একটি কবিতার সমালোচনা করায় মামলা করেন ইয়ান ব্যোমারমান৷
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালে জার্মানির সরকারি জেডডিএফ টেলিভিশনে এরদোয়ানকে নিয়ে রচিত ঐ কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন ব্যোমারমান৷ সে সময় এ কবিতাটি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে মন্তব্য করেছিলেন ম্যার্কেল৷ যদিও পরে তিনি তাঁর ‘ভুল' স্বীকার করে নিয়েছিলেন৷
রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সুকৌশলে কাবু করা বা হটিয়ে দেয়ার কাজটি খুব ভালো পারতেন তিনি৷ প্রতিপক্ষ দলের লোকেরা তো আছেই, নিজ দলেরও প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষেত্রে এই কৌশল অবলম্বন করতেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
কোলকেই পেছনে ফেলে
সিডিইউ নেতা সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল হাতে ধরে ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় পদ দেন, ম্যার্কেলের উত্থানে ভুমিকা রাখেন৷ ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর দলের তহবিল নিয়ে একটি ঘটনা দু’জনকে মুখোমুখি দাঁড় করায়৷ তখন ম্যার্কেল সাহস করে বলেন যে, কোলকে ছাড়াই সিডিইউ’র এগিয়ে যাওয়া উচিত৷ দল ম্যার্কেলের পক্ষেই দাঁড়ায়৷ কোলকে ছাড়াই এগিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
হটে গেলেন গ্যুন্টার হ্যারমান ও্যটিঙার
রাজনীতিতে পথ থেকে সরিয়ে দেয়া মানে কিন্তু সবসময় জোর খাটানো নয়৷ যেমনটি তিনি করেছেন বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের সিডিইউ নেতা গুন্টার ওয়েটিঙ্গারের সঙ্গে৷ দলে তাঁর এই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২০১০ সালেই তিনি ইউরোপিয়ান কমিশনে বড় চাকরি দিয়ে পাঠিয়ে দেন, যদিও ইউরোপের রাজনীতিতে ওয়েটিঙ্গারের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
হারিয়ে গেলেন রোল্যান্ড কখ
দালাই লামার সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্য কখ অনেকের কাছেই পরিচিত ছিলেন৷ তিনি সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্বের পরিকল্পনার বিরুদ্ধেও চালিয়েছেন প্রচারণা৷ হেসে রাজ্যে দলের ম্যার্কেলবিরোধী অংশের একজন বলেই তাঁকে গণ্য করা হতো৷ কখ এ-ও ভেবেছিলেন যে, বার্লিন থেকে চাকরির জন্য তাঁকে ডাকা হবে৷ তাঁর কোনো ভাবনাই হালে পানি পায়নি৷ বরং নিজেই মিলিয়ে গিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ – দুর্ভাগা প্রেসিডেন্ট
লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ৷ জনপ্রিয়তার কারণে ২০০৫ সালের নির্বাচনে সিডিইউ থেকে চ্যান্সেলর পদের জন্য অন্যতম প্রতিযোগী ছিলেন৷ কিন্তু পরে আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে সমর্থন দেন৷ অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদের প্রশ্ন এলে তিনি ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ হর্স্ট ক্যোলারের হঠাৎ পদত্যাগের পর তিনি নির্বাচিত হন৷ অবশ্য পরে দুর্নীতির দায়ে সেই চাকরিও হারাতে হয়৷ মামলাও খেতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস – ক্ষমতার লড়াইয়ে পরাজয়
সাবেক ইউরোপীয় ও জার্মান সংসদ সদস্য ফ্রিডরিশ ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সিডিইউ/সিএসইউ পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ কিন্তু সিডিইউ নেতা ম্যার্কেল তাঁকে হটিয়ে চেয়ারম্যান হন, যা তিন বছর পর চ্যান্সেলর পদের জন্য লড়তে তাঁকে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
5 ছবি1 | 5
বার্লিনের আদালতের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, ব্যোমারমান আদালতের কাছে দুটি বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছেন৷ একটি হলো, ম্যার্কেলকে প্রকাশ্যে কবিতাটির রাজনৈতিক সমালোচনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া৷ অপরটি হচ্ছে, যদি আদালত ম্যার্কেলকে কবিতাটির সমালোচনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ না দেয় তাহলে ম্যার্কেলের সমালোচনাকে বেআইনি বলে ঘোষণা দেওয়া৷
আগামী ১৬ তারিখে আদালতে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে৷ মামলার শুনানিতে ম্যার্কেল স্বশরীরে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানানো হয়েছে৷ একজন আইনজীবী আদালতে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে ডিপিএ জানায়৷
কী ছিল কবিতাটিতে
২০১৬ সালের মার্চ মাসে জেডডিএএফ চ্যানেলের ‘নিউ ম্যাগাজিন রয়্যাল' নামে এক অনুষ্ঠানে এরদোয়ানকে নিয়ে একটি কবিতা আবৃতি করেন ব্যোমারমান৷ কবিতাটিতে এরদোয়ান ‘শিশু পর্নোগ্রাফি দেখেছেন এবং প্রাণীদের সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছেন' বলে দাবি করা হয়েছিল৷ ঘটনার জেরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে তদন্ত করতে জার্মান সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন৷ জার্মান সরকার কবিতাটির কিছু অংশ নিষিদ্ধ করেছিল৷
কী বলেছিলেন ম্যার্কেল?
টেলিভিশন অনুষ্ঠানের পর ম্যার্কেলের মুখপাত্র স্টেফেন সাইব্যার্ট সেইসময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, আঙ্গেলা ম্যার্কেল মনে করেন, কবিতাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ তবে পরে তিনি তাঁর এ মন্তব্য ‘ভুল' বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন৷