সংসদীয় নির্বাচনের সাত সপ্তাহ আগে জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল তাদের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎসকে গোটা জার্মানি সফরে পাঠাচ্ছে৷ জরিপে এসপিডি দল সিডিইউ-সিএসইউ দলের চেয়ে বেশ কিছুটা পিছিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
সামাজিক গণতন্ত্রীরা তাদের নির্বাচনি প্রচার অভিযানের যে পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছে, তাতে প্রাথমিকভাবে দলের নীতিসমূহের উপর জোর দেওয়া হবে; দ্বিতীয় স্থানে থাকবেন চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎস৷ এসপিডি এই প্রচার অভিযানে মোট দু'কোটি ৪০ লক্ষ ইউরো ব্যয় করতে চলেছে৷
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে সামাজিক গণতন্ত্রীরা খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীদের সহযোগী৷ কিন্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে দু'দল পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী – কাজেই এসপিডি দল তাদের নির্বাচনি প্রচার অভিযানে নিজেদের স্বাতন্ত্র্যের উপরেই বেশি জোর দেবে৷ এসপিডি দলের মহাসচিব হুব্যার্টুস হাইল মঙ্গলবার পাঁচটি নির্বাচনি পোস্টারের কথা বলেন, যেগুলিতে পরিবারবর্গের জন্য সুযোগসুবিধা, অবৈতনিক শিক্ষা, পর্যাপ্ত অবসরভাতা, প্রযুক্তিগত নবায়ন ও নারী-পুরুষের সমান পারিশ্রমিকের মতো সামাজিক গণতন্ত্রীদের বুনিয়াদি নীতিগুলিকে তুলে ধরা হবে৷
একটি পোস্টারে কারখানার এক নারীশ্রমিকের ছবির নীচে লেখা রয়েছে: ‘যে ১০০ শতাংশ কাজ করে, সে ২১ শতাংশ কম আয় করতে পারে না৷' জার্মানিতে মহিলারা যে একই কাজের জন্য পুরুষদের চেয়ে গড়ে ২১ শতাংশ কম রোজগার করে থাকেন – তারই প্রতি ইঙ্গিত৷
এসপিডি-র প্ল্যাকার্ডগুলি থেকে অভিবাসন, উদ্বাস্তু বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলি অনুপস্থিত থাকছে বটে, কিন্তু জার্মানির ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত সব প্রসঙ্গই নির্বাচনি অভিযানে আলোচিত হবে, বলে হাইল সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছেন৷ এসপিডি দল প্রতিদ্বন্দ্বিকে যথেষ্ট আক্রমণ না করে, মানুষজনকে খুশি রাখার প্রচেষ্ট করছে, এই অভিযোগের উত্তরে হাইল বলেন যে, এসপিডি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলির মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে৷ ‘‘আমরা এমনভাবে প্রচার চালাব না যাতে লোকে ভয় পান অথবা তাদের মেজাজ খারাপ হয়'', বলেন হাইল৷
রাজনৈতিক পুনরুত্থান?
মঙ্গলবার যে নির্বাচনি প্রচার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়, তার কেন্দ্রবিন্দু হবে দলীয় নেতা মার্টিন শুলৎস-এর একটি দেশব্যাপি সফর – যা আগস্ট মাসের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হবে৷ শুলৎস প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার সফর করে ৬০টি স্থানে ভাষণ দেবার পরিকল্পনা করছেন৷ এসপিডি দল বর্তমানে রক্ষণশীল দলগুলির চেয়ে ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ পিছিয়ে আছে, বলে বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে৷
ইউরোপীয় সংসদের সাবেক সভাপতি শুলৎস যখন এ বছরের সূচনায় সিগমার গাব্রিয়েলের পরিবর্তে দলীয় সভাপতি ও যুগপৎ চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হন, তখন স্বল্পকালের জন্য জরিপে এসপিডি দলের জনসমর্থন লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যায় – সাংবাদিকরা যার নাম দেন ‘শুলৎস এফেক্ট'৷ শুলৎসের দেশ জুড়ে সফর ও বক্তৃতার মাধ্যমে হয়ত সেই ‘শুলৎস প্রভাব'-এর পুনরাবৃত্তি করার আশা করছে এসপিডি দল৷
‘‘নির্বাচনি প্রচার অভিযান এবার বাস্তবিক চালু হচ্ছে'', বলেছেন দলের মহাসচিব হুব্যার্টুস হাইল: ‘‘শেষ দৌড়টাই গুরুত্বপূর্ণ আর আমরা তার জন্য ভালোমতো প্রস্তুত৷''
ম্যার্কেলের ছায়া?
ইতিহাস থেকে দেখা যাচ্ছে, ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের সঙ্গে জোট সরকারে সংশ্লিষ্ট দলগুলির তার পরের নির্বাচনেই সাধারণত ভরাডুবি হয়ে থাকে – ২০১৩ সালে মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দলের যা হয়েছিল৷ এফডিপি দল সেবার পাঁচ শতাংশ ন্যূনতম ভোটের বেড়া পার হতে পারেনি৷ এবার এসপিডি দলেরও সেই অবস্থা হতে পারে, কেননা এফডিপি এখন জরিপে ৯শতাংশ ভোটে; এমনকি সবুজদের সঙ্গেও সিডিইউ-সিএসইউ দলের জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনার কথা বলেছেন কেউ কেউ৷ অপরদিকে অভিবাসন বিরোধী ও জাতীয়তাবাদী এএফডি (‘জার্মানির জন্য বিকল্প') দল প্রায় সব দলের কাছ থেকেই সমর্থক ভাঙিয়েছে – কাজেই এসপিডি-কে সে ব্যাপারটারও মোকাবিলা করতে হবে৷
সামাজিক গণতন্ত্রীরা এবার নির্বাচনি প্রচারে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করছে৷ সিডিইউ দল দু'কোটি ইউরো মতন খরচা করছে; ছোট ছোট দলগুলির ব্যয় ২০ থেকে ৩০ লাখ৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)
জার্মানির সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷
জার্মানির জাতীয় নির্বাচন ২০১৭: কবে, কী হচ্ছে
তিনটি রাজ্যে নির্বাচনের পাশাপাশি জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০১৭ সালে৷ চলুন জেনে নেই জাতীয় নির্বাচনের টাইমলাইন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
জার্মানির বড় নির্বাচনের বছর
জার্মানিতে চলতি বছর আয়োজন করা হচ্ছে একের পর এক নির্বাচন৷ একদিকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর পদে লড়ছেন, অন্যদিকে পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) অভিবাসীবিরোধী অবস্থানের কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এটা নিশ্চিত যে, ২০১৭ সালের শেষে জার্মানির রাজনৈতিক অবস্থা এখনকার মতো থাকবে না৷
ছবি: Getty Images
জুন ১৯: দলের মনোনয়ন জমা দেয়ার দিন ছিল
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আবেদনের শেষ দিন ছিল জুন ১৯৷ সেদিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে আগ্রহী দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আবেদন জানাতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
জুলাই ৭: কোন কোন দল লড়ছে?
সংসদ নির্বাচনে কোন কোন দল অংশ নিতে পারবে তা ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ যদি কোন দল নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে পরবর্তী চারদিনের মধ্যে জার্মানির সাংবিধানিক আদালতে নালিশ করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
জুলাই ১৭: কারা কারা থাকছেন?
চলতি বছরের ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কোন কোন প্রার্থী কোন কোন এলাকায় লড়বেন, তা চূড়ান্ত করতে হবে৷ জার্মানিতে একসঙ্গে দু’টি ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ প্রথমটি প্রার্থীকে, দ্বিতীয়টি দলকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
জুলাই ২৭: ব্যালটে নাম উঠানোর লড়াই
যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে, তাদের বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ ২০১৩ সালে এই পন্থা চালু করা হয়েছিল৷ সেবছর এগারোটি দল আদালতের স্মরণাপন্ন হলেও কেউই মামলা জেতেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
আগস্ট ১৩: আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা
জার্মানিতে নির্বাচন শুরুর ছয় সপ্তাহ আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিক প্রচারণার পোস্টার বা টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে না৷ চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর তারিখ ১৩ আগস্ট৷ এই দিন থেকে দলগুলো তাদের প্রচারণায় কোনো ঘাটতি রাখবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
আগস্ট ২০: কে ভোট দিতে পারবেন?
নির্বাচনের মাসখানেক আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তালিকা চূড়ান্ত হবে৷ ভোটার লিস্ট ঘোষণা করবে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানিতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যে কোনো জার্মান নাগরিক ভোট দিতে পারবেন৷ সে হিসেবে চলতি বছর ভোটারের সংখ্যা সাড়ে ৬১ মিলিয়ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-D. Gabbert
সেপ্টেম্বর ৩: তিন সপ্তাহ বাকি
এই সময়ের মধ্যে সকল ভোটার পোস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে ভোট দেয়ার সার্টিফিকেট পাবেন৷ যারা তখন অবধি ভোটার লিস্টে নিজেদের নাম পাননি, তারা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাবেন৷ আর যারা পোস্টের মাধ্যমে ভোট দিতে চান, তারা ব্যালট পেপার চাইতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
সেপ্টেম্বর ২৪: নির্বাচনের দিন
অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ৷ জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ সেপ্টেম্বর৷ সেদিন সকাল আটটায় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে, চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত৷ ভোটগণনা সেদিনই শেষ হবে এবং নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ রাতে প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেপ্টেম্বর ২৫: বিজয়ী এবং বিজিত
সকল প্রতিনিধি এবং দলগত ভোট গণনা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা দেয়া হবে ২৫ সেপ্টেম্বর৷ যদি কোনো প্রার্থী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় জিততে ব্যর্থ হন, তা সত্ত্বেও দলগত জয়ের কারণে তিনি সংসদে একটি আসন পেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
অক্টোবর ২৪: নতুন সাংসদরা সংসদে
নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে নতুন সাংসদদের সংসদে মিলিত হওয়ার নিয়ম রয়েছে৷ এ বছর সেই দিনটি হচ্ছে অক্টোবর ২৪৷ সেদিন গোপন ব্যালটের মাধ্যমে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর নির্বাচিত হবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নভেম্বর ২৪: সবকিছু কি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে?
যদি কেউ জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চান, তাহলে তার হাতে সময় থাকে নির্বাচন পরবর্তী দুই মাস৷ ভোটাররাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কেউ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রাখেন এই সময়ের মধ্যে৷