এক মিলিয়ন শরণার্থীকে জায়গা দেয়ার যে সিদ্ধান্ত আঙ্গেলা ম্যার্কেল নিয়েছিলেন, সেটি সঠিক ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ ইয়ুঙ্কার৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বিল্ড পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘একদিন ইতিহাস সাক্ষী দেবে যে, প্রায় ১০ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আঙ্গেলা ম্যার্কেল সঠিক কাজই করেছেন৷’’ ম্যার্কেল যদি শরণার্থীদের আশ্রয় না দিতেন তাহলে এর পরিণতি ভয়াবয় হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘জার্মান রাষ্ট্রপ্রধান যদি সেই সময় শরণার্থীদের ঢুকতে না দিয়ে সীমান্ত আটতে দিতেন, তাহলে প্রতিবেশী দেশ অষ্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি তছনছ হয়ে যেতো, কেননা এত শরণার্থীর ভার তারা বহন করতে পারতো না৷’’
২০১৫ সালের শেষ দিকে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ, বিশেষ করে ইরাক এবং সিরিয়া থেকে আগত প্রায় ১০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল ম্যার্কেল সরকার৷ এ নিয়ে নিজ দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমালোচনার মুখেও পড়েন ম্যার্কেল৷ সেই সময় এক ভাষণে তিনি সকলকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, ‘‘আমরা এটি পারব৷’’ তাঁর এ কথাটি পরবর্তীতে সারা দেশে প্রায় প্রবাদ বাক্যে রূপ নেয়৷ তবে বিরোধী শিবির ম্যার্কেলের এ কথাটি থেকেও ফায়দা লুটতে চেয়েছে৷
ধীরে চলা জার্মানি
ইয়ুঙ্কার বলেন, ‘‘ইউরোপে জার্মানির অবস্থান কোনো দ্রুতগামী জাহাজ নয়, বরং ধীরে ধীরে বয়ে যাওয়া সামুদ্রিক ট্যাংকারের মতো৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘ইউরোপে বিভক্তি বা একতা কোনোটিই ম্যার্কেল একা তৈরি করেননি, কিংবা কেউ চাইলেই একা এটি করতে পারবে না৷ এর জন্য প্রয়োজন বিশ্বস্ত সহযোগীর আর ম্যার্কেল হলেন তেমনই একজন সহযোগী, যিনি একতাবদ্ধ থাকতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷’’ শরণার্থী সংকটের সফল সমাধানের জন্য ম্যার্কেলের পদক্ষেপগুলোই সঠিক ছিল উল্লেখ করে ইয়ুঙ্কার আরো বলেন, এ সময় রাজনৈতিক সহকর্মীরা ও কিছু বিজ্ঞ লোক তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন৷
নিকোল গোয়েবেল/আরআর
আঙ্গেলা ম্যার্কেল: এক বিজয়ীর নাম
রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সুকৌশলে কাবু করা বা হটিয়ে দেয়ার কাজটি খুব ভালো পারতেন তিনি৷ প্রতিপক্ষ দলের লোকেরা তো আছেই, নিজ দলেরও প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষেত্রে এই কৌশল অবলম্বন করতেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
কোলকেই পেছনে ফেলে
সিডিইউ নেতা সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল হাতে ধরে ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় পদ দেন, ম্যার্কেলের উত্থানে ভুমিকা রাখেন৷ ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর দলের তহবিল নিয়ে একটি ঘটনা দু’জনকে মুখোমুখি দাঁড় করায়৷ তখন ম্যার্কেল সাহস করে বলেন যে, কোলকে ছাড়াই সিডিইউ’র এগিয়ে যাওয়া উচিত৷ দল ম্যার্কেলের পক্ষেই দাঁড়ায়৷ কোলকে ছাড়াই এগিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
হটে গেলেন গ্যুন্টার হ্যারমান ও্যটিঙার
রাজনীতিতে পথ থেকে সরিয়ে দেয়া মানে কিন্তু সবসময় জোর খাটানো নয়৷ যেমনটি তিনি করেছেন বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের সিডিইউ নেতা গুন্টার ওয়েটিঙ্গারের সঙ্গে৷ দলে তাঁর এই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২০১০ সালেই তিনি ইউরোপিয়ান কমিশনে বড় চাকরি দিয়ে পাঠিয়ে দেন, যদিও ইউরোপের রাজনীতিতে ওয়েটিঙ্গারের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
হারিয়ে গেলেন রোল্যান্ড কখ
দালাই লামার সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্য কখ অনেকের কাছেই পরিচিত ছিলেন৷ তিনি সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্বের পরিকল্পনার বিরুদ্ধেও চালিয়েছেন প্রচারণা৷ হেসে রাজ্যে দলের ম্যার্কেলবিরোধী অংশের একজন বলেই তাঁকে গণ্য করা হতো৷ কখ এ-ও ভেবেছিলেন যে, বার্লিন থেকে চাকরির জন্য তাঁকে ডাকা হবে৷ তাঁর কোনো ভাবনাই হালে পানি পায়নি৷ বরং নিজেই মিলিয়ে গিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ – দুর্ভাগা প্রেসিডেন্ট
লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ৷ জনপ্রিয়তার কারণে ২০০৫ সালের নির্বাচনে সিডিইউ থেকে চ্যান্সেলর পদের জন্য অন্যতম প্রতিযোগী ছিলেন৷ কিন্তু পরে আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে সমর্থন দেন৷ অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদের প্রশ্ন এলে তিনি ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ হর্স্ট ক্যোলারের হঠাৎ পদত্যাগের পর তিনি নির্বাচিত হন৷ অবশ্য পরে দুর্নীতির দায়ে সেই চাকরিও হারাতে হয়৷ মামলাও খেতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস – ক্ষমতার লড়াইয়ে পরাজয়
সাবেক ইউরোপীয় ও জার্মান সংসদ সদস্য ফ্রিডরিশ ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সিডিইউ/সিএসইউ পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ কিন্তু সিডিইউ নেতা ম্যার্কেল তাঁকে হটিয়ে চেয়ারম্যান হন, যা তিন বছর পর চ্যান্সেলর পদের জন্য লড়তে তাঁকে সহায়তা করে৷