জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তুরস্ক গেছেন উদ্বাস্তু সংকট নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য৷ বিশেষ করে আলেপ্পোয় যুদ্ধের ফলে হাজার হাজার ঘরছাড়া মানুষ এখন তুরস্ক সীমান্তে জমায়েত৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ-এর সঙ্গে ম্যার্কেলের সাক্ষাতের পর উভয়েই উদ্বাস্তু সংকটের একটি ইউরোপীয় সমাধানের উপর জোর দেন৷
তার পর পরই ম্যার্কেল আবার গেলেন তুরস্কে, কেননা ম্যার্কেলের ‘ইউরোপীয় সমাধানের' একটি গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো এই দেশটি৷ গত অক্টোবর মাসেই ম্যার্কেল তুরস্কে গিয়েছিলেন৷ মন্ত্রী পর্যায়ে জার্মান-তুর্কি সরকারি আলাপ-আলোচনাও সম্পন্ন হয়েছে মাত্র মাসখানেক হলো৷ গত নভেম্বরে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে তিনশ' কোটি ইউরো পাবে উদ্বাস্তু ত্রাণ খাতে – পরিবর্তে তুরস্ক ইউরোপের বহির্সীমান্ত রক্ষায় সাহায্য করবে৷
তুরস্কে ইতিমধ্যেই প্রায় সাতাশ লাখ সিরীয় উদ্বাস্তু অবস্থান করছে – অপরদিকে আলেপ্পোয় সরকারি সেনাদলের সাম্প্রতিক অভিযানের ফলে ৩৫ হাজারের বেশি উদ্বাস্তু এখন তুরস্ক সীমান্তে এসে জমা হয়েছে৷ এই নতুন স্রোতের মুখে তুরস্ক তার সীমান্ত সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে, কিন্তু উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ পাঠাচ্ছে৷ ম্যার্কেল দৃশ্যত তুর্কি নেতৃত্বকে সীমান্ত খোলা রাখতে অনুরোধ করবেন – কিন্তু কোন সীমান্ত? যা নিয়ে টুইটারে ঠাট্টা চলেছে৷ অ্যান্ড্রু স্ট্র্যোলাইনের ভাষ্যে ম্যার্কেল আংকারাকে বলছেন, ‘সীমান্ত খুলে দাও! না, দাঁড়াও, ঐ সীমান্ত নয়৷ বরং অন্যটা...৷'
জার্মানিতেও সকলে যে ম্যার্কেলের এই নতুন তুরস্ক যাত্রায় সুখি, এমন নয়৷ ইউরোপীয় পর্যায়ে জার্মান উদারপন্থিদের নেতৃস্থানীয় রাজনীতিক আলেক্সান্ডার গ্রাফ লাম্সডর্ফ এই সফরকে অপ্রয়োজনীয় বলে চিহ্নিত করেছেন, এবং জার্মান সরকারের কাছ থেকে একটি ‘‘সংগঠিত উদ্বাস্তু নীতি'' দাবি করেছেন৷ এমনকি জার্মানির তুর্কি সমিতিও ম্যার্কেলকে তাঁর এই সফরে তুরস্কে মানবাধিকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করতে বলেছে৷
‘গোলাপি সোমবারে' জার্মানির মানুষ কার্নিভাল নিয়ে মত্ত হলেও, তারাও উদ্বাস্তু সমস্যাকে ভুলে যাননি৷ কার্নিভালের এই ফ্লোটটিতে যেরকম লেখা রয়েছে: ‘তুমি কি আমাদের বোকা পেয়েছো? পিপে যে ছাপিয়ে উঠল! ‘‘আমরা পারব'', ও বাজে কথা, হে উকারমার্কের মেয়ে' – অর্থাৎ ম্যার্কেল৷
এসি/ডিজি (এপি, ডিপিএ)
শরণার্থী সংকট নিরসনে তুরস্ককে ম্যার্কেলের আশ্বাস
তুরস্ক সফর করলেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ তাঁর সঙ্গে বৈঠকে তুরস্ককে ইইউ-র সদস্য করার দাবি তুলে ধরেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী৷ জার্মান চ্যান্সেলর তাতে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, শরণার্থী সংকট নিরসনে পারস্পরিক সহযোগিতা খুব প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Berg
আঙ্কারায় ম্যার্কেল
ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্রোত নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলুর সঙ্গে বৈঠক করতে রবিবার আঙ্কারায় যান ম্যার্কেল৷ বৈঠকে শরণার্থী ইস্যু নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে৷ নিজের বক্তব্যে ম্যার্কেল তুরস্কের ইইউ সদস্য হওয়ার দাবিকে সমর্থন করার আশ্বাস দেন৷ তুরস্কের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবিও বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি৷
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ২০ লক্ষ সিরীয়কে আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক৷ জার্মান চ্যান্সেলরের বক্তব্যে এই বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়ায় এবং জার্মানি এই সংকটে তুরস্কের পাশে থাকবে জানানোয় আহমেদ দাভুতোগলু জানান, ‘‘(শরণার্থীর) চাপ ভাগাভাগির বেলায় আন্তর্জাতিক মহল দুঃখজনকভাবে তুরস্ককে একা ফেলে রেখেছিল৷ আগের চেয়ে ভালো দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমরা খুশি৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
তুরস্ক প্রসঙ্গে ইইউ-র সাম্প্রতিক অবস্থান
ম্যার্কেলের সঙ্গে বৈঠকে দাভিতোগ্লু যে দু’টি বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, সেগুলো ইতিমধ্যে ইইউ বৈঠকেও আলোচিত হয়েছে৷ তুরস্কে অবস্থানরত সিরীয়দের জন্য তুর্কি সরকারকে ৩ বিলিয়ন ইউরোর অর্থ সহায়তা দেয়া এবং ইইউ অঞ্চলে তুর্কিদের ভিসা প্রাপ্তি সহজ করার সিদ্ধান্ত ইউরোপের ২৮টি দেশের জোট মোটামুটি চূড়ান্ত করেছে বলেই জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/K. Ntantamis
জার্মানিতে অভিবাসীবিরোধীতা
ইতিমধ্যে ব্যাপক শরণার্থীর ঢল নামায় জার্মানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ কয়েকজন সরকার এবং বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ৷ শরনার্থীবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ নতুন করে শুরু করছে পেগিডা৷ এদিকে শনিবার কোলনের মেয়র প্রার্থী হেনরিয়েটে রেকার-এর ওপর হামলা হয়৷ ছুরির আঘাতে আহত হলেও তিনি এখন সুস্থ হওয়ার পথে৷ প্রথম নারী হিসেবে কোলনের মেয়রও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি৷ অভিবাসীবিরাধী সংগঠন পেগিডা এই হামলায় জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে৷