কয়েক মাস আগেও ঘরে-বাইরে অনেকেই ধরে নিচ্ছিল, জার্মানির আগামী নির্বাচনে আঙ্গেলা ম্যার্কেল হয়ত ধাক্কা খাবেন৷ পরপর তিনটি রাজ্য নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে দলের জয়ের পর নিন্দুকদের মুখ বন্ধ হয়ে গেল৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য হিসেবে উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের যে গুরুত্ব, জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যেরও সেই প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে৷ তাই সেপ্টেম্বর মাসের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই রাজ্যের ক্ষমতা পেয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দল৷
সারলান্ড ও শ্লেসভিক হলস্টাইন রাজ্যের পরএবার এই নিয়ে তৃতীয় জয়৷ নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে রবিবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সিডিইউ দলের ভরাডুবি হয়েছে৷ আগামী জোট সরকার গড়তে চলেছে সিডিইউ দল৷
এই অবস্থায় সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে ম্যার্কেলের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলো, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ বিশেষ করে নিজের শিবিরে তাঁর নেতৃত্বকে ঘিরে সংশয় অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ তবে ম্যার্কেল নিজে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ সংযত মনোভাব প্রকাশ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, জয়ের আনন্দে ভেসে যাবার কোনো অবকাশ নেই৷ সুখবর সত্ত্বেও সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কোনো ঢিলেমি চলবে না৷ সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আসরে নামতে হবে৷
কিছুদিন আগে পর্যন্ত সাধারণ নির্বাচনে ম্যার্কেলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এসপিডি দলের নেতা মার্টিন শুলৎসকে ঘিরে প্রবল উৎসাহ দেখা যাচ্ছিল৷ পর্যবেক্ষকরা বলছিলেন, অবশেষে ম্যার্কেলের গদি টলাতে যোগ্য নেতা আসরে নেমেছেন৷ তাঁকে ঘিরে দলের মধ্যেও জোরালো উৎসাহ দেখা যাচ্ছিল৷ অথচ তাঁরই নেতৃত্বে তিন-তিনটি রাজ্যে ক্ষমতা হারালো এসপিডি৷ শুলৎস অবশ্য দমে যাবার পাত্র নন৷ রবিবার তিনি বলেছেন, রাজ্য নির্বাচনের সঙ্গে সাধারণ নির্বাচনের তুলনা করলে চলবে না৷ রাজ্যে ভোটারদের সামনে আঞ্চলিক বিষয়গুলি বিশেষ গুরুত্ব পায়৷ তাছাড়া সবে দলের হাল ধরেছেন তিনি৷ তাই পরাজয়ের সব দায়িত্ব তিনি নিতে প্রস্তুত নন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন৷
সিডিইউ দলের এই ধারাবাহিক সাফল্যের রহস্য কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যার্কেলের নেতৃত্বে এই দল এমন সব বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে, যা ভোটারদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷ যেমন পরিবহণ, শিক্ষা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইত্যাদি৷ অন্যদিকে এসপিডি নেতা শুলৎস সামাজিক ন্যায়ের মতো বৃহত্তর বিষয়ে বেশ অস্পষ্ট কথা বলে আসছেন৷ প্রথমদিকে এমন ভাসা ভাসা কথা তাঁকে কিছুটা সুবিধা এনে দিলেও এবার তাঁর উপর স্পষ্ট অবস্থান নেবার জন্য চাপ বাড়ছে৷ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ম্যার্কেলের বিকল্প পথ দেখাতে পারলে তবেই সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করতে পারবেন তিনি৷
নানা মুডে আঙ্গেলা ম্যার্কেল
সারা বিশ্বের মিডিয়া জুড়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ছবি৷ তাঁর সরকারি মুখাবয়ব প্রায়শই গম্ভীর, কথা বলেন সুচিন্তিতভাবে৷ ছবি তোলেন দু’হাতের আঙুলগুলো জুড়ে, তাঁর সুপরিচিত ভঙ্গি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুবিখ্যাত ম্যার্কেল মুদ্রা
ব্রীড়া থেকেই হোক, বা ঝানু রাজনীতিকের পরিশীলিত ভঙ্গিই হোক, ম্যার্কেল যে হাতের আঙুলগুলো জোড়া দিয়ে কী বলতে চাইছেন, তা তিনি নিজেই জানেন...
ছবি: picture-alliance/dpa/Michael Kappeler
ইউরোপীয় রাজনীতিক
সার্বভৌম, উৎসাহী অথচ নিরুদ্বেগ অভিব্যক্তি নিয়ে ইউরোপীয় রাজনীতির মঞ্চে চলাফেরা করেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ ছবিতে তিনি ব্রাতিস্লাভায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক শীর্ষবৈঠকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Hoslet
চ্যান্সেলরের সঙ্গে সেলফি
উদ্বাস্তু সংকট ম্যার্কেলের রাজনৈতিক জীবনে একটা বড় প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তবুও গতবছর বার্লিনের মারৎসান এলাকার একটি উদ্বাস্তু শিবিরে সিরিয়া থেকে আগত এক রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীকে তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ দেন ম্যার্কেল৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
সরকারপ্রধান
চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেলকে দেখা যায় তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমা ও ভূমিকায়৷ সঙ্গে ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
নারীসুলভ
হঠাৎ কিছুটা অন্তরঙ্গতা ও একটি হাসি৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদকেও পার্ফেক্ট জেন্টলম্যান বলা চলে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Mori
জোট সরকার
ম্যার্কেলের দুই জোট সহযোগী, এসপিডি প্রধান সিগমার গাব্রিয়েল ও সিএসইউ প্রধান হর্স্ট জেহোফারকে দেখলে বোঝা যায়, ‘অ্যাঞ্জি’ মাথা ঠান্ডা না রাখলে বিপদ ঘটতে কতক্ষণ?
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. von Jutrczenka
বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তি
পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রির অধিকারিনী ম্যার্কেলের ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মিডিয়াগুলোর জন্যে খুব একটা সময় থাকে না৷ তবে টুইট করতে ভালোবাসেন৷ ২০১৫ সালে জাতিসংঘের একটি ফোরামে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গের সঙ্গে আগ্রহ নিয়েই আলোচনা করছেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
যাজক তনয়া
২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ প্রটেস্টান্ট যাজকের কন্যা ম্যার্কেলের পক্ষে একটি বিশেষ মুহূর্ত৷
ছবি: Reuters/A. Pizzoli
শ্যাম্পেন পান করার মতো উপলক্ষ্য চাই
যেমন জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে এলিসি চুক্তির ৫০ বছর পূর্তি৷
ছবি: AP
ক্ষমতার নেশা চেনেন ম্যার্কেল
২০১১ সালে ডয়চে ব্যাংকের প্রধান ইয়োসেফ আকারমান-এর সঙ্গে বৈঠকে সম্ভবত চলতি আর্থিক সংকট নিয়েই কথা হয়েছিল৷
ছবি: AP
ছুটিছাটায়
চ্যান্সেলরও মানুষ, তাঁরও ছুটি লাগে৷ তবে ছুটিতেও পাপারাৎসিদের হাত থেকে মুক্তি নেই আঙ্গেলা ম্যার্কেলের৷ ছবিতে তাঁর স্বামী ইওয়াখিম সাওয়ারকে দেখা যাচ্ছে (বাঁয়ে)৷
ছবি: dapd
সে অনেকদিন আগের কথা
তরুণ সিডিইউ রাজনীতিক আঙ্গেলা ম্যার্কেল দলীয় সতীর্থ আনেট শাভান ও প্রবীণ সিডিইউ রাজনীতিক এর্ভিন টয়ফেল-এর সঙ্গে দক্ষিণ জার্মানিতে সাইকেল টুরে৷ তখনও তাঁর মুখে অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতার ছাপ পড়েনি৷