ম্যার্কেল-এর মোবাইলে আড়ি পাতার এক বছর
২৩ অক্টোবর ২০১৪![Angela Merkel mit sicherem Smartphone BlackBerry Z10](https://static.dw.com/image/17194702_800.webp)
গত গ্রীষ্মে চ্যান্সেলর দপ্তরের সাবেক প্রধান এবং গুপ্তচর সেবার সমন্বয়কারী রোনাল্ড পোফালা বড় গলা করে বলছিলেন, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ-র জার্মানিতে আড়ি পাতার সঙ্গে জার্মান গুপ্তচর সংস্থাগুলির কোনো সংযোগ নেই৷ বৈদেশিক গুপ্তচর সংস্থা বিএনডি যে তাদের মার্কিনি সতীর্থদের খোঁজখবর দিয়েছে, তা পুরোপুরি অস্বীকার করে পোফালা বলেন, তথ্য সুরক্ষার নিয়মাবলী ‘‘শতকরা একশো ভাগ'' মেনে চলা হয়েছে৷
এছাড়া মার্কিন তথা ব্রিটিশ গুপ্তচররা যে চিরকাল জার্মান আইন মেনে চলেছে, সে তো তারা লিখিতভাবেই জানিয়েছে! কাজেই জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের প্রচার অভিযানের মাঝখানে আড়ি পাতার বিষয়টি নিয়ে উত্তেজিত হবার কোনো কারণ আছে কি? মার্কিন হুইসলব্লোয়ার এডোয়ার্ড স্নোডেন হাটে হাঁড়ি ভাঙার পর পোফালা-র এই ‘সরলতা' তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স-পেটার ফ্রিডরিশ-এর অনুরূপ সান্ত্বনাদায়ক মন্তব্যের সঙ্গে মেলে ভালোই৷ ফ্রিডরিশ একেবারে ওয়াশিংটন থেকে এই আশ্বাস নিয়ে এসেছিলেন যে, এনএসএ সঠিক আচরণই করেছে৷
এক বছর আগে মনে হচ্ছিল যেন তথ্য-সুরক্ষার পণ্ডিতরা আর যারা সর্বত্র আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রের ছায়া দেখেন, শুধু তারাই আড়ি পাতার ঘটনাটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন৷ ম্যার্কেল ও তাঁর সতীর্থরা ব্যাপারটাকে অন্তত নির্বাচনী প্রচারদ্বন্দ্বের অঙ্গ হয়ে উঠতে দেননি৷ কিন্তু সেপ্টেম্বরে সেই নির্বাচনে জয়লাভের পর পরই যেন হাটে হাঁড়ির পর বাজারে বোমা ফাটে! খবর ফাঁস হয়, এনএসএ খোদ চ্যান্সেলরের মোবাইলেও আড়ি পেতেছে৷ যেখানে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ জার্মানদের সম্বন্ধে অকারণে খোঁজখবর রাখা এবং তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, সেখানে ম্যার্কেল-এর মোবাইলের ওপর আড়ি পাতাটা অকিঞ্চিৎকর হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত ছিল – কিন্তু সেই আড়ি পাতাই হয়ে দাঁড়ায় একটা বিরাট কেলেঙ্কারি৷
‘বন্ধুদের ওপর আড়ি পাতা? সেটা কোনোমতেই চলে না!'
চলে বৈকি, জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত মিত্রদেশ হওয়া সত্ত্বেও৷ বিস্মিত ম্যার্কেলের উক্তি যতোই খ্যাতি অর্জন করে থাক না কেন, সেই উক্তি উচ্চারিত হবার বারো মাস পরে আজ মনে হচ্ছে, তাতে বোধহয় কিছু কপটতা ছিল – কেননা সব মানুষের সাংবিধানিক অধিকার এক: ম্যার্কেল-এর মোবাইলে আড়ি পাতা অন্য কোনো ‘সাধারণ' জার্মানের মোবাইলে আড়ি পাতা থেকে বেশি গর্হিত হতে পারে না৷
তবে এনএসএ যে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মহিলার মোবাইলে আড়ি পাততে ভয় পায়নি, তার একটা সুফল হয়েছে এই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি জার্মান রাজনীতি ও রাজনীতিকদের আচরণ আজ আর ততোটা কাপুরুষোচিত নয়, এমনকি সেই মনোভাব মাঝেমধ্যে দৃঢ়বদ্ধ হয়ে ওঠে বললেও ভুল করা হবে না৷ এ ক্ষেত্রে সরকারপক্ষের চেয়ে বিরোধীপক্ষের দুঃসাহসিকতা স্বভাবতই বেশি৷ গত বসন্ত যাবৎ একটি সংসদীয় কমিটি যে এনএসএ ও জার্মান গুপ্তচর সেবা বিএনডি-র কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে দেখছে, সেটা সবুজ এবং বামদলের উদ্যোগেই সম্ভব হয়েছে৷
একচোখো হরিণ
চ্যান্সেলরের দপ্তর যে বারংবার কমিটিকে ফাইল পাঠাতে অস্বীকার করে, কিংবা নথিপত্রের অংশবিশেষ কালো করে দিয়ে তবেই ফাইল পাঠায় – এ সব পন্থাকে বিরক্তিকর বললে কম বলা হয়৷ এর ফলে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিবারেই আরো কিছুটা কমে যায়৷ অপরদিকে বার্লিনের মার্কিন দূতাবাসের একজন কর্মীকে জার্মানি ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে একটি কার্যকরী সংকেত প্রদান করা হয়েছে: কর্মীটি জার্মানিতে এনএসএ-র কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন৷ তা সত্ত্বেও মার্কিন তরফ যে খুব ত্রস্ত নয়, তার প্রমাণ, ওয়াশিংটন এ যাবৎ তথাকথিত ‘নো-স্পাই' চুক্তি অর্থাৎ পারস্পরিক গুপ্তচরবৃত্তি বন্ধ রাখা সংক্রান্ত চুক্তিটি সম্পাদন করতে অস্বীকার করে এসেছে৷
সব লক্ষণ দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির মতো বন্ধুরাষ্ট্রেও তাদের গুপ্তচরবৃত্তি অব্যাহত রাখবে – এবং জার্মান সরকার সেটা একরকম মেনে নিয়েছেন৷ তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, জার্মান গুপ্তচর বিভাগ ভবিষ্যতে বিদেশি গুপ্তচরবৃত্তি প্রতিরোধে শুধুমাত্র পুবের দিকে, অর্থাৎ রাশিয়া এবং চীনের দিকে না তাকিয়ে, ‘‘৩৬০ ডিগ্রি নজর দেবে'', অর্থাৎ পশ্চিমি দেশগুলির উপরেও নজর রাখবে৷ সেটা একটা ভালো লক্ষণ বৈকি৷