ম্যার্কেল জমানা কি শেষ হতে চলেছে?
১৫ জুন ২০১৮২০১৫ সালে জার্মানিতে শরণার্থীদের ঢল নামার পর থেকেই চাপের মুখে রয়েছেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ জার্মানি এই চাপ সামলে নেবে – এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত দমে যেতে হয়েছিল তাঁকে৷ তুরস্কের সঙ্গে ইইউ-র চুক্তির মাধ্যমে শরণার্থীদের ঢল শেষ পর্যন্ত থামানো গিয়েছিল৷ ইউরোপীয় স্তরে এক সার্বিক সমাধানসূত্রের মাধ্যমে শরণার্থী সংকটের স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ম্যার্কেল৷
কিন্তু বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করায় সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়৷ সাধারণ নির্বাচনে ম্যার্কেলের শিবিরের খারাপ ফলের জন্যও তাঁর শরণার্থী নীতিকে ঘরে-বাইরে দায়ী করতে থাকেন অনেক সমালোচক৷ জোট সরকার গড়ার পরেও সেই ভূত ম্যার্কেলের পেছন ছাড়ছে না৷ ফলে তাঁর ক্ষমতার ভিত্তি আবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে৷
সিএসইউ দল গত সাধারণ নির্বাচনে অত্যন্ত খারাপ ফল করেছিল৷ দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট এএফডি দল তাদের সেই দুর্বলতার ফায়দা তুলতে পেরেছিল৷ আগামী অক্টোবর মাসে বাভেরিয়ায় রাজ্য নির্বাচন৷ অভিবাসন নীতির প্রশ্নে অত্যন্ত কড়া অবস্থান নিয়ে ভোটারদের মন জয় করে হারানো সমর্থন ফিরে পেতে মরিয়া সিএসইউ দল৷
দলের নেতা ও জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার তাই নিজস্ব উদ্যোগে অভিবাসন নীতির এক খসড়া প্রস্তুত করেছেন৷ প্রয়োজনে ম্যার্কেলকে অমান্য করেও সেই নীতি কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর তিনি৷ সেহোফার চান, কোনো শরণার্থী অন্য দেশে নিজেকে নথিভুক্ত করে জার্মানিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাঁকে সীমান্ত থেকেই বহিষ্কার করা হবে৷ এই প্রশ্নে সেহোফার অস্ট্রিয়া ও ইটালির রক্ষণশীল শিবিরের সঙ্গে জোট বাঁধতে চান৷
ম্যার্কেল এই নীতির ঘোরতর বিরোধী৷ তিনি ইউরোপীয় স্তরে সমাধান খুঁজতে কিছুদিন সময় চেয়েছেন৷ বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে তিনি ইউরোপের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর৷ আগামী ২৮ ও ২৯শে জুন ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগেই সাধারণ শরণার্থী ও অভিবাসন নীতি স্থির করা সম্ভব না হলেও আপাতত বেআইনি অনুপ্রবেশ রুখতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে চান ম্যার্কেল৷
ম্যার্কেল প্রথমে এই প্রশ্নে নিজের সিডিইউ দলের মধ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন৷ বৃহস্পতিবার দলের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি স্পষ্ট সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার প্রথা ভেঙে সিডিইউ ও সিএসইউ সংসদীয় দল আলাদা করে বৈঠক করে যে যার অবস্থানে অটল থেকেছে৷ এমনকি সেই কারণে সংসদের অধিবেশনও মুলতুবী রাখতে হয়৷ এই অবস্থায় ম্যার্কেল নিজের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেহোফারকে বরখাস্ত করতে পারেন৷ অথবা ১৯৪৯ সালের পর এই প্রথম সহযোগী দল সিএসইউ'র সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে হবে৷ সে ক্ষেত্রে সিডিইউ ও এসপিডি দলের জোট সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে৷ সোমবারই সিএসইউ দল নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
নিয়ে জার্মানির মানুষের মনেও চরম মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ একটি জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ সীমান্তে অবৈধ শরণার্থীদের বিদায় করার পক্ষে৷ মাত্র ৩৭ শতাংশ মানুষ ম্যার্কেলের সরকারের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)