জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনের ২০১৫ সালের ব্যক্তিত্ব৷ টাইম শুধু তাঁর ভালোর দিকগুলোই দেখেছে ও দেখিয়েছে৷ সে কারণেই এর সাথে কিছু সমালোচনা যোগ করেছেন ফেলিক্স স্টাইনার৷
বিজ্ঞাপন
টাইম ম্যাগাজিনের ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার' হওয়াটা যে সবসময়ে খুব বাহাদুরি নয়, বরং তার উল্টোটাই হতে পারে৷ তাই সেটাও ভেবে দেখা দরকার৷ ১৯৩৮, ১৯৪২ ও ১৯৭৯ সালের ‘ব্যক্তিত্বরা' ছিলেন যথাক্রমে আডল্ফ হিটলার, জোসেফ স্টালিন এবং আয়াতুল্লা খামেনি৷ আর এ বছর ম্যার্কেলের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট'-এর নেতা আবু-বকর আল-বাগদাদি৷ তবুও টাইম তার ‘টুইট ফিডে' যে কভারটি দেখিয়েছে, সেটা হলো:
যাজক তনয়া
টাইম ম্যাগাজিন যে ম্যার্কেলকে সু- এবং শ্রদ্ধার নজরে দেখছে, তার প্রমাণ: পত্রিকাটির প্রচ্ছদে ম্যার্কেলের যে প্রতিকৃতি দেওয়া হয়েছে, তার পাশে লেখা রয়েছে, ‘আঙ্গেলা ম্যার্কেল, মুক্ত বিশ্বের চ্যান্সেলর'৷ খেয়াল করবেন, মুক্ত বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী অনেক আছেন, চ্যান্সেলর কিন্তু সামান্য কয়েকজন৷ কাজেই খেতাবটা দেখতে যতটা ওজনদার, ভাবতে ততটা ওজনদার নয়৷
টাইম-এর সম্পাদকরা ম্যার্কেলের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন৷ ম্যার্কেল যে একটির পর একটি সংকটে একটা গোটা মহাদেশকে ‘‘অনড় নৈতিক নেতৃত্ব'' দিয়েছেন – ইউক্রেন সংকট, ইউরো সংকট, উদ্বাস্তু সংকট ছাড়া প্যারিস সন্ত্রাসের পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে – সে'কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ যাজক তনয়া ম্যার্কেলের ‘‘মানবতা, বদান্যতা ও সহিষ্ণুতার'' কথা বলেছেন সম্পাদকরা৷ প্রায় কবিতা করে লিখেছেন, ‘‘একজন নেতাকে এভাবে তাঁর সুপ্রাচীন, বেদনাদায়ক জাতীয় সত্তাকে পিছনে ফেলে যেতে দেখাটা বিরল৷''
এখন প্রশ্ন হলো, গ্রিসের অবসরভাতাভোগী অথবা কর্মহীনরা টাইম ম্যাগাজিনের সম্পাদকদের এই উচ্চ মনোভাবের ভাগীদার হবেন কিনা৷ মার্কিন মুলুকে ম্যার্কেলের গুণগ্রাহীরা হলেন উচ্চ আয়ের বামঘেঁষা বুদ্ধিজীবী, অথচ দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু খুব কম উদ্বাস্তু নিচ্ছে৷ ওদিকে জার্মান ভোটারদের মধ্যেও ম্যার্কেলের সমর্থন কমছে৷ জার্মান শহর আর পৌরসভাগুলোর প্রধান দুশ্চিন্তা হলো, আরো কত উদ্বাস্তু আসবে ও তাদের কোথায় রাখা হবে, তাই নিয়ে৷
শতভঙ্গ মহাদেশ, তবু রঙ্গে ভরা
জার্মানির বহু ইউরোপীয় প্রতিবেশীর কাছে আদত জার্মানিই ভালো ছিল, ম্যার্কেলের ক্ষমতাশীল জার্মানি নয়৷ এমনকি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘‘নৈতিক সাম্রাজ্যবাদের'' অভিযোগ তুলেছেন এবং তাঁর সমব্যথীও জুটছে৷ বলতে কি, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তার কর্মক্ষমতার বিচারে শুধু ‘কাগজের বাঘ' বলেই মনে হচ্ছে৷ এই কি সঠিক নেতৃত্বের চেহারা?
আসলে টাইম ম্যাগাজিনের উদ্দেশ্য হলো, বছরের শেষে বিক্রি বাড়ানো৷ সেক্ষেত্রে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নিজস্ব মার্কার সামাজিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যে মনোমুগ্ধকর একটা কিছু আছে, তা অনস্বীকার্য, বিশেষ করে অ্যাটলান্টিকের অপরপার থেকে দেখলে তার ঝুঁকিটা যখন কম বলে মনে হয়৷
বন্ধুরা, ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার' হওয়ার জন্য জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল কি সত্যিই উপযুক্ত? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
ম্যার্কেলের কিছু অন্যরকম ছবি
২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর থেকে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ জার্মানদের কাছে এখনও তিনি বেশ জনপ্রিয়৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁর এমন কিছু ছবি, যা দেখতে হয়ত আপনার ভালই লাগবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stefan Sauer
চেনা যায়?
হ্যাঁ, ইনিই আজকের ক্ষমতাধর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ ১৯৫৪ সালের ১৭ই জুলাই জার্মানির বন্দর নগরী হামবুর্গে জন্মগ্রহণ করেন তিনি৷ সে সময় আঙ্গেলার পুরো নাম ছিল - আঙ্গেলা ডোরোটেয়া কাসনার৷ বাবা হর্স্ট কাসনার ছিলেন একজন লুথেরান যাজক৷ আর মা হ্যারলিন্ড কাসনার ইংরেজি ও ল্যাটিন ভাষার শিক্ষিকা৷ তিন ভাইবোনের মধ্যে আঙ্গেলাই ছিলেন সবচেয়ে বড়৷
ছবি: imago
বন্ধুদের সঙ্গে
দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে ম্যার্কেল৷ এতজনের মাঝ থেকে চ্যান্সেলরকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব কিন্তু পাঠক আপনার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যাম্পিং
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার আনন্দে আমরা অনেক কিছুই করেছি৷ ম্যার্কেলও এর বাইরে ছিলেন না৷ তাই ‘আবিটুয়র’ শেষের পর বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পিংয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি৷ ছবিটি ১৯৭৩ সালে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ছুটিতে ঘোরাঘুরি
জার্মান চ্যান্সেলর হলেও সেটিতো একটি চাকরি, তাই না? তাইতো ছুটি পেলেই স্বামী রসায়নের অধ্যাপক ইওয়াখিম সাউয়ারকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন ম্যার্কেল৷ ছবিতে ইটালির ইসকিয়া দ্বীপে ম্যার্কেলকে ‘থার্মাল বাথ’ করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এরপর হাঁটাহাঁটি
থার্মাল বাথ শেষে স্বামীর সঙ্গে হেঁটে বেড়াচ্ছেন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/AP Photo/C. De Luca
নিজের বাসাতেই থাকছেন ম্যার্কেল
বার্লিনের মাঝে একটি ‘মিউজিয়াম আইল্যান্ড’ আছে৷ সেখানেই একটি জাদুঘরের কাছে এই ভবনটির অবস্থান৷ চ্যান্সেলর হওয়ার আগে যেমন, তেমনি এখনও স্বামীকে নিয়ে সেখানেই থাকছেন ম্যার্কেল৷ ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ তাঁর বাসার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে৷ নিরাপত্তার জন্য শুধু দুজন পুলিশ সবসময় এই ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে৷ বাসার গেটে নেমপ্লেটে কিন্তু ম্যার্কেলের নাম নেই, আছে স্বামী অধ্যাপক সাউয়ারের নাম৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘সামার স্কুল’
ভৌত রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে ম্যার্কেলের৷ ১৯৮৯ সালে শিক্ষার্থী অবস্থায় পোল্যান্ডে একটি সামার স্কুলে গিয়ে ছবিটি তোলা হয়৷ ছবির মাঝখানের মানুষটি আজকের চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের স্বামী অধ্যাপক সাউয়ার, আর ম্যার্কেলকে তো নিশ্চয় চেনা যাচ্ছে!
ছবি: Bogumil Jeziorski/AFP/Getty Images
কোনজন ম্যার্কেল?
বলুনতো ছবিতে কোনটা ম্যার্কেল? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, ডান থেকে তৃতীয়জন৷ ১৯৮২ সালের এই ছবিতে দুজন অধ্যাপক সহ অন্যান্যদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লেমুর সঙ্গে দেখা
মেকলেনবুর্গ-ফোয়রপোমার্ন রাজ্যের মার্লো পাখি পার্কে গিয়ে লেমুরের সঙ্গে দেখা হয় ম্যার্কেলের৷ তাইতো এই দোস্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stefan Sauer
‘টোস্ট’
২০১৩ সালে জার্মানি সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ম্যার্কেল৷
ছবি: Reuters
এত বন্ধুত্ব!
২০১৩ সালের এই ছবি দেখে কে বলবে রাশিয়া ও জার্মানির সম্পর্কের মধ্যে এখন যোজন যোজন দূরত্ব? রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জি২০ দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের এক অনুষ্ঠানে তোলো ছবি এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অপেরা হাউসের উদ্বোধনীতে
নরওয়ের অসলোর অপেরা হাউস পর্যটকদের কাছে এখন অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনা৷ ২০০৮ সালে এই অপেরা হাউসের উদ্বোধনীতে উপস্থিত ছিলেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ ছবিতে তাঁকে নরওয়ের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Bjorn Sigurdson/AFP/Getty Images
কোথায় যাচ্ছেন তিনি!
২০০৬ সালে জার্মান নৌবাহিনীর একটি সাবমেরিনে প্রবেশ করছেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷
ছবি: Reuters
ফুটবলপ্রিয় চ্যান্সেলর
যত ব্যস্ততাই থাকুক ফুটবলের খবর নিয়মিতই রাখেন ম্যার্কেল৷ জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলাগুলোতেও উপস্থিত থাকতে চেষ্টা করেন৷ ছবিতে ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর খেলোয়াড়দের সঙ্গে ম্যার্কেলকে দেখা যাচ্ছে৷