তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান জার্মানি তথা ইউরোপের প্রতি তাঁর বিষোদগার কিছুতেই থামাচ্ছেন না৷ এবার তিনি সরাসরি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘নাৎসি পদ্ধতি' কাজে লাগাবার অভিযোগ করলেন৷
বিজ্ঞাপন
আগামী ১৬ই এপ্রিল তুরস্কে গণভোটের আগে এর্দোয়ান ও তাঁর অনুগামীদের চড়া সুর স্তিমিত হবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ একের পর এক প্ররোচনামূলক মন্তব্য করে ইউরোপে চরম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করাই যেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য৷ ইউরোপের ভূখণ্ডে তাঁর মন্ত্রীদের নির্বাচনি প্রচারে বাধার প্রেক্ষাপটে এর আগেও তিনি জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের বর্তমান অবস্থাকে নাৎসি জমানার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন৷ রবিবার এক টেলিভিশন ভাষণে এর্দোয়ান বলেন, তুরস্ক ইউরোপীয়দের নাৎসি বললেই তারা অস্বস্তিতে পড়ে৷ তখন তারা একজোট হয়ে পড়ে, বিশেষ করে ম্যার্কেল৷ এরপর সরাসরি ম্যার্কেলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘তুমিও তো এই মুহূর্তে নাৎসি পদ্ধতি প্রয়োগ করছো৷''
উল্লেখ্য, এর্দোয়ানের বর্তমান রোষের পেছনে জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরের একটি রাজনৈতিক সমাবেশ৷ তুরস্কের গণভোটে এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে আয়োজিত সেই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন অসংখ্য কুর্দি বিদ্রোহী৷ সেখানে নিষিদ্ধ ঘোষিত কুর্দি সংগঠন পিকেকে-র পতাকাও শোভা পাচ্ছিল৷ জার্মানিতে তুর্কি মন্ত্রীদের অনেক প্রচারসভা বাতিল করলেও বিরোধীদের এমন সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে জার্মানির ‘দ্বিচারিতা' হিসেবে দেখছেন এর্দোয়ান৷
তার উপর জার্মানির বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান বলেছেন, তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পেছনে গ্যুলেন আন্দোলনের হাত নেই৷
বলা বাহুল্য, জার্মান চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে এমন সরাসরি মন্তব্যের ফলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল বলেন, জার্মানি সহনশীল হলেও বোকা নয়৷ তিনি তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, এই মন্তব্য শালিনতার সীমা লঙ্ঘন করেছে৷ এমনকি আসন্ন নির্বাচনে ম্যার্কেলের প্রতিদ্বন্দ্বী এসপিডি দলের মার্টিন শুলৎস-ও এর্দোয়ানের কড়া সমালোচনা করেছেন৷
এসবি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)
নতুন তুরস্ক গড়ার অঙ্গীকার দিলেন এর্দোয়ান
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর টানা তিন সপ্তাহ ধরে এর্দোয়ানের পক্ষে ব়্যালির পর, তুরস্কের ৮০টি শহরে গত রবিবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ আঙ্কারা থেকে জানাচ্ছেন ডিয়াগো কুপোলো৷
ছবি: DW/D. Cupolo
রাজপথে নামার আহ্বান
গতমাসে সেনা অভ্যুত্থানের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর সমর্থকদের রাজপথে নেমে ক্ষমতাসীনদের রক্ষায় সেনাবাহিনীকে হটাতে সহায়তার আহ্বান জানান৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যিই রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ এবং সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ এরপর এর্দোয়ান প্রতিরাতে তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাখো মানুষের উপস্থিতি
রবিবার চূড়ান্ত ব়্যালিতে ইস্তানবুলে হাজির ছিলেন ২০ লাখের মতো মানুষ৷ আঙ্কারায় ছিলেন দশ হাজার৷ তুরস্কের মোট ৮০টি শহরে এ সময় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ এর্দোয়ানের একেপি হচ্ছে প্রথম দল, যেটি ইসলামিক মনোভাব প্রদর্শন সত্ত্বেও একটি সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা একে দেশটির ইতিহাসরচনাকারী সেনাবাহিনী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিপরীতে বড় জয় মনে করছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
এক নতুন তুরস্ক নিয়ে আশাবাদ
ইস্তানবুল থেকে দেয়া বক্তব্যে এর্দোয়ান নতুন এক তুরস্ক গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং তাঁর সমর্থকরাও এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ আঙ্কারার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী লালে আলিচি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আয়োজিত প্রতিটি ব়্যালিতে অংশ নিয়েছেন৷ তিনি জানান, অভ্যুত্থানে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার পর তুরস্ক দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে, কেননা তখন সরকারকে বাধা দেয়ার আর কেউ থাকবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘‘আমরা বড় শক্তি হবো’’
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আতালে জানান, তিনি এর্দোয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন কেননা তিনি তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান বিশ্বকে জানিয়েছেন, আমরাও আছি এবং শীঘ্রই বড় শক্তিতে পরিণত হবো৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এইচডিপিকে নেয়া হয়নি
যদিও রবিবারের ব়্যালিতে অংশ নেয়া অনেকে দাবি করেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা, তাসত্ত্বেও বিরোধীরা জানিয়েছেন, সেদেশের তৃতীয়-বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কুর্দিপন্থি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-কে ব়্যালিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি৷ এক কুর্দ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কুর্দ হিসেবে আমি সেখানে যেতে পারি না, কেননা আমি নিরাপদ বোধ করছি না৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উত্থান
জাতীয় জরুরি অবস্থায় সাধারণত ব্লক করা থাকলেও ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এর্দোয়ানের ‘ফেসটাইম’ বক্তব্য থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখানো ‘পেরিসকোপ’ ভিডিও অবধি সবকিছুই অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, সরকার নিজেদের জন্য লাভজনক মনে করায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷