ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়া যাবৎ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের মধ্যে প্রথম সাক্ষাৎ৷ পরিবেশ শুরুতে ছিল শীতল৷ শেষে চূড়ান্ত ঘোষণাও সংক্ষিপ্তই থেকেছে৷
বিজ্ঞাপন
ম্যার্কেল রুশ প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, পুটিন যেন ইউক্রেনের পরিস্থিতিতে স্থিতি আনার জন্য সর্বসাধ্য প্রয়োগ করেন৷ ম্যার্কেল এই প্রত্যয় প্রকাশ করেন যে, ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হবার পর এবার ‘‘বিশেষ করে পূর্ব ইউক্রেনে স্থিতি আনার জন্য'' সচেষ্ট হবার সময় এসেছে৷ সেক্ষেত্রে রাশিয়াকে তার ‘‘বিপুল দায়িত্ব'' পালন করতে হবে৷
জার্মান প্রতিনিধিদলের বিবৃতি অনুযায়ী, ম্যর্কেল ও পুটিন সব মিলিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন৷ বিগত কয়েক সপ্তাহে ম্যার্কেল একাধিকবার পুটিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন, কিন্তু তাঁদের সর্বশেষ সাক্ষাৎ গতবছরের ৬ই সেপ্টেম্বর সেন্ট পিটার্সবার্গে, জি-টোয়েন্টি শীর্ষবৈঠক উপলক্ষ্যে৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
পুটিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন: ‘‘পুটিন এবং ম্যার্কেল পুরোপুরি ইউক্রেনের ব্যাপারে কথাবার্তা বলেছেন, সমস্যা সমাধানের পন্থা খুঁজেছেন৷'' দু'জনের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে পেস্কভ বলেন: ‘‘ঠিক তাই নিয়েই কথা হয়েছে৷'' পেস্কভ স্বয়ং উভয় নেতার সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন৷
সাক্ষাতের সূচনায় পুটিন ও ম্যার্কেল করমর্দন করেছেন বটে, কিন্তু কিছুটা শীতলভাবে৷ দু'জনে নিজের নিজের দেশের পতাকার সামনে একটি ছোট টেবিলে বসে থেকেছেন, তবে পরস্পরের থেকে পর্যাপ্ত দূরত্ব রেখে৷ সাক্ষাতে ম্যার্কেলের মুখ ছিল গম্ভীর৷ দু'জনের মধ্যে যে সাইড টেবিলটি ছিল, তার অপরপাশে বসে পুটিনও ম্যার্কেলের দিকে নজর ফেরাননি৷
৭০ বছর আগে ফ্রান্সের নর্মান্ডিতে মিত্রশক্তিদের স্থলাভিযান শুরু হয়৷ সেই উপলক্ষ্যে বিশ্বের নেতৃবৃন্দ ফ্রান্সে সম্মিলিত হয়েছেন৷ শুক্রবার দুপুরে ছিল ১৯ জন নেতার মধ্যাহ্নভোজন৷ তার স্বল্প আগে অন্যান্য নেতারা যখন ইতিমধ্যেই ভোজনশালায় প্রবেশ করেছেন, তখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ও জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে বাইরে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিটের জন্য আলাপ করতে দেখা যায়৷ কি নিয়ে কথা হচ্ছিল, রিপোর্টাররা তা শুনতে পাননি৷
তবে ম্যার্কেল যে তাঁর কূটনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটা তাঁরা বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়৷