কপ২৩ সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ ম্যার্কেল বলেছেন, কার্বন নিঃসরণ রোধের উদ্যোগে প্যারিস চুক্তি সূচনা মাত্র, এ উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বন শহরে চলমান কপ২৩-এ বুধবার থেকে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে৷ এর আগে গত ন’দিনে বিশ্বের সব দেশের জলবায়ু আলোচকরা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের রুলবুক তৈরি নিয়ে কথা বলেছেন৷ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ সব আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ শুক্রবার এই সম্মেলন শেষ হচ্ছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জুনে প্যারিস চুক্তি থেকে তাঁর দেশকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন৷ তবে কপ২৩-এ দেশটির একটি ছোট প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছে৷ সোমবার হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হয়েছে৷ অথচ প্যারিস চুক্তিতে কার্বন নির্গমন কমাতে দেশগুলোকে এই জ্বালানির ব্যবহার কমাতে বলা হয়েছে৷
জীবাশ্ম জ্বালানির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ঐ কর্মসূচি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জলবায়ু সম্মেলনে আসা অনেক আলোচক৷ এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘ইউনিয়ন অফ কনসার্নড সায়েন্টিস্ট'-এর আলডেন মায়ার এএফপিকে বলেন, ‘‘জলবায়ু আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র যে ধরনের আচরণ করছে তাতে খুশি নন অনেকে৷ দেশটির এ ধরনের ব্যবহার আলোচনা প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তুলছে৷''
পরিবেশবান্ধব জলবায়ু সম্মেলন
জার্মানির বন শহরে চলছে দুই সপ্তাহব্যাপী জলবায়ু সম্মেলন৷ কার্বন নির্গমন কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করার এই সম্মেলনকে যতটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
বিমান পরিবহণ
সম্মেলনে আসা ২০ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীর অধিকাংশই বিমানে করে জার্মানির বনে এসেছেন৷ অথচ বিমান হচ্ছে কার্বন নির্গমনের একটি বড় উৎস৷ অর্থাৎ অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যেকেই পরিবেশের ক্ষতি করে পরিবেশ বাঁচানোর আলোচনা করতে এসেছেন৷ কিন্তু বিমান ছাড়া তো আর বিকল্পও নেই৷ জার্মানি অবশ্য এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
অফসেট
এটি জলবায়ু সংক্রান্ত একটি ‘টার্ম’৷ কার্বন নির্গমনের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার একটি উপায় এটি৷ বিমান পরিবহণসহ অংশগ্রহণকারীদের রাতে হোটেলে থাকা, লাইট, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার, এসব নানা কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে দিতে জার্মানি ‘সার্টিফায়েড এমিশন রিডাকশন’ বা সিইআর ক্রেডিট কিনবে৷ আরও জানতে ক্লিক করুন উপরে (+) চিহ্নে৷
ছবি: DW/H. Kaschel
সিইআর ক্রেডিট
জার্মানির কেনা এই ক্রেডিট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে জাতিসংঘের ‘ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম’ বা সিডিএম-এর অধীনে যেসব প্রকল্প নিবন্ধিত আছে সেখানে ব্যবহৃত হবে৷ সিডিএম সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন উপরে (+) চিহ্নে৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
কাগজের ব্যবহার
আগের যে কোনো সম্মেলনের চেয়ে এবার কাগজের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ সম্মেলনের তথ্য সংক্রান্ত বেশিরভাগ কাগজপত্র প্রিন্ট না করে ইলেক্ট্রনিক উপায়ে ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে৷ তবে এরপরও কেউ প্রিন্ট চাইলে তাঁকে প্রিন্ট করে দেয়া হচ্ছে৷ তবে সেটা একই পাতার এপাশ-ওপাশ করে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
রিসাইকেল
একেক রকমের ময়লা ফেলার জন্য একেক রকমের ‘ডাস্টবিন’ রাখা হয়েছে৷ সেখানে পাওয়া ময়লা এবং সম্মেলনের জন্য তৈরি করা ব্যানারগুলো রিসাইকেল করে ভবিষ্যতের জলবায়ু সম্মেলনের জন্য পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল কিংবা ব্যাগ তৈরির কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
প্লাস্টিক বোতল
এটি ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ফেলার জায়গা৷ এ সব বোতল জমা দিয়ে পাওয়া অর্থ ‘নিউ ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম’-কে দান করা হবে৷ এটি ‘কোকা কোলা ফাউন্ডেশন’ ও ‘গ্লোবাল ওয়াটার চ্যালেঞ্জ’-এর একটি যৌথ উদ্যোগ৷ পানি পানের জন্য প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে বিনামূল্যে বার বার ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল দেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
হাইড্রোজেন বাস
হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে চলে এই বাস৷ এটা এখনও ব্যয়বহুল ও জটিল এক প্রক্রিয়া৷ তবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে জার্মান গবেষকরা এই প্রযুক্তিতে কার্যকর করার চেষ্টা করছে৷ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের এক জোন থেকে আরেক জোনে নিয়ে যেতে এই বাস ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
ইলেকট্রিক গাড়ি
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে তৈরি বিদ্যুৎ দিয়ে চলছে এই বাস৷ কপ২৩-এ ব্যবহৃত ইলেকট্রিক গাড়িগুলো বেশিভাগই কোরিয়ায় তৈরি৷ ই-কারের জগতে জার্মান গাড়ি নির্মাতারা এখনও কোরিয়া, জাপান ও চীনাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
সাইকেল
পরিবেশবান্ধব এই বাহনেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ নেক্সটবাইক কোম্পানির প্রায় ছয়শটি সাইকেল কপ-এ ব্যবহৃত হচ্ছে৷ অংশগ্রহণকারীরা একটি অ্যাপ ডাউনলোড করলে সেখান থেকে একটি পিন পাচ্ছেন৷ সেই পিন দিয়ে যে কোনো সাইকেল খুলে নিয়ে যাতায়াত শুরু করতে পারছেন৷ সেবাটি অবশ্যই বিনামূল্যে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
হাইব্রিড বাস
এটি আসলে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব নয়৷ নামই বলে দিচ্ছে যে, এতে ডিজেল ও বিদ্যুৎ দুই-ই ব্যবহৃত হয়৷ অংশগ্রহণকারীদের আনা নেয়ায় এই বাসেরও ব্যবস্থা করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: DW/A. Setiawan
10 ছবি1 | 10
বুধবার জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁসহ প্রায় ৩০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান৷ ছিলেন জাতিসংঘের মহসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও ৷ এর আগে দরিদ্র দেশগুলোর স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্রিশ্চিয়ান এইড-এর মোহামেদ আডৌ বলেন, ‘‘বুধবার বিভিন্ন দেশের যে মন্ত্রীরা বক্তব্য দেবেন তাঁদের বড় কাজ করতে হবে৷ কারণ এতদিন ধরে এই সম্মেলনের আলোচনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি৷ মনে হচ্ছে আলোচকরা এই সম্মেলনকে প্যাসিফিকে ছুটি কাটানোর মতো মনে করছেন৷''
অক্সফাম-এর আর্মেলে লে কমটে বলেন, ম্যার্কেল ও মাক্রোঁকে দেখাতে হবে যে তাঁরা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিতে চান৷
অবশ্য জার্মান চ্যান্সেলর নিজেই সংকটে আছেন৷ কারণ জার্মানির মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে৷ আর ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৪০ শতাংশ কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা জার্মানি নির্ধারণ করেছিল তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না দেশটি৷
ওদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ চীনের শীর্ষ জলবায়ু আলোচক জি সেনহুয়া বলেছেন, কার্বন নির্গমন কমানোর প্রকল্পের জন্য অর্থ পেতে তাঁর দেশ এখনই কার্বন কর ও কার্বন ফিউচার (কম কার্বন নির্গমনকারী শিল্প ব্যবস্থা) চালুর চিন্তা করছে না৷ ‘‘আমরা এখনই কার্বন ফিউচার শুরু করছি না, কারণ অভিজ্ঞতা ছাড়া হঠাৎ করে এটি চালু করলে সমস্যা হতে পারে'', বলেন তিনি৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)
ইউরোপের সবচেয়ে বড় কয়লা খনি বিরোধী প্রতিবাদ
কপ২৩-এর ঠিক আগে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কয়লা খনি বিরোধী কর্মীরা জার্মানির হাম্বাখ কয়লা খনিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন৷ তাঁদের কথায়, কয়লার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনা যাবে না৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
কয়লা ত্যাগ করুন – এখনই !
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা ব্যবহারের বিরোধীতা জানিয়ে কপ২৩-এর ঠিক একদিন আগে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হন৷ বিক্ষোভকারীদের সবাই সেসময় সাদা পোশাক পরে প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে হাম্বাখ কয়লা খনি পর্যন্ত যান৷
ছবি: DW
ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করুন
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী কয়লা খনি হলো হাম্বাখ৷ এর সম্প্রসারণের কারণে ইতিমধ্যে ১ হাজার বছরের পুরনো বন কেটে ফেলা হচ্ছে৷ পরিবেশবাদীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যখন বন শহরে সম্মেলন চলছে তখন সেখান থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই খনি থাকাটা খুবই হাস্যকর একটা ব্যাপার৷
ছবি: DW
শান্তিপূর্ণ লড়াই
বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও, রবিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল একেবারে শান্তিপূর্ণ৷ রঙিন ব্যানার, চেহারায় নানা অংকন, কেউ কেউ আবার গিটার এনে গানও করেছেন দিনের প্রথম ভাগে৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
জীবনের ঝুঁকিতে দৃষ্টি আকর্ষণ
বিক্ষোভকারীরা খনির কাছাকাছি পৌঁছালে পুলিশ কর্মকর্তারা চারপাশ থেকে তাঁদের ঘিরে রাখে৷ স্পিকারে তারা ঘোষণা করে যে, বিক্ষোভকারীরা অন্যের ব্যক্তিগত জায়গায় ঢুকে পড়েছেন৷ আর তাতে নাকি নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে৷
ছবি: DW
পালাও
খনিরা কাছে যেতেই বিক্ষোভকারীদের দীর্ঘ লাইনে হঠাৎ করেই কেউ কেউ ফুঁসে ওঠেন৷ অনেকেই চিৎকার ও দৌড়াতে শুরু করে দেন৷
ছবি: DW
একটি একদিনের সাফল্য
বিক্ষোভকারীদের মতে, তাঁদের দাবি তুলে ধরার সবচেয়ে ভালো উপায়ই ছিল এই কয়লা খনির চারপাশ অবরোধ করা৷ এতে করে কিছু সময়ের জন্য হলেও তো খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ ছিল! তাই কিছুক্ষণের এই বিরতিকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: DW
কয়লা: আর না...
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, বিদ্যুতের জন্য কয়লার ওপর এতটা নির্ভরশীলতা ইউরোপের আর কোথাও নেই৷ ‘কয়লা ত্যাগ করুন, জলবায়ু রক্ষা করুন’ লেখা ব্যানারও সেদিন তাই চোখে পড়ে৷
ছবি: DW
শেষ পর্যন্ত
রবিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচির শেষ দিকে বিক্ষোভকারীদের দু’টি দল মূল দল থেকে তাঁদের নেতাদের নিয়ে ভাগ হয়ে যায়৷ ছবিতে নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন পুলিশ তাঁদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে প্রস্তুত ছিল৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
এখনই সময়
একদিনের জন্য হাম্বাখ খনি বন্ধ করে দিতে সফল হন বিক্ষোভকারীরা৷ তবে এটা দেখতে হবে যে শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদরা ‘কপ২৩’ সম্মেলনে কয়লা খনি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কোনো পদক্ষেপ নেন কিনা৷