করোনা সংকটের ফলে ইউরোপের বিপর্যস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করতে জার্মান ও ফ্রান্স বিশেষ তহবিলের প্রস্তাব দিলেন৷ বাকি ইইউ দেশগুলি এমন সমাধানসূত্র মেনে নেবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের চালিকা শক্তি বলে পরিচিত দুই দেশ – ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে বেশ কিছুকাল ধরে সমন্বয়ের অভাব দেখা যাচ্ছিল৷ ফ্রান্সের ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ও জার্মানির ‘সতর্ক’ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ইউরোপ সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নে ভিন্ন অবস্থান নিয়ে চলেছিলেন৷ ব্রেক্সিটের পরেও সেই যৌথ নেতৃত্ব যথেষ্ট দুর্বল থেকে গেছে৷ এবার করোনা সংকট দুই নেতাকে আবার পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে৷ করোনা সংকটের ফলে ইউরোপে ভয়ঙ্কর মন্দার পূর্বাভাষের মুখে তাঁরা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে চাইছেন৷
সোমবার ম্যার্কেল ও মাক্রোঁ এক ভিডিও কনফারেন্সের পর ইউরোপের অর্থনীতি আবার চাঙ্গা করতে তুলতে ইইউ-র উদ্দেশ্যে পাঁচ লাখ কোটি ইউরো অঙ্কের এক তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, এতদিন তাঁদের মধ্যে এ বিষয়ে প্রবল মতপার্থক্য ছিল৷ মাক্রোঁ ইউরোপীয় স্তরে সব সদস্য দেশের জন্য এমন সহায়তার প্রস্তাব দিলেও ম্যার্কেল ঋণের দায় ভাগ করার আশঙ্কায় সেই ডাকে সাড়া দেন নি৷ নামে ‘করোনা বন্ড’ না হলেও এবার আর্থিক বাজার থেকে ইইউ-র নামে সেই অর্থ সংগ্রহ করে বিশ বছরের দীর্ঘমেয়াদী বাজেটের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও অঞ্চলে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কাজে লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছেন দুই নেতা৷ মাক্রোঁ বলেন, কোনো সদস্য দেশ নয়, বরং ইউরোপীয় কমিশনই এই ঋণের বোঝা বহন করবে৷ তাছাড়া এই এককালীন উদ্যোগ শুধু বর্তমান সংকটের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবে৷
ঋণের বোঝা ভাগ করে নেবার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য রয়েছে৷ ফলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ইইউ কমিশনের পক্ষে কোনো সুস্পষ্ট প্রস্তাব আনা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছিল৷ এপ্রিল মাসের শুরুতে কিছু সার্বিক তা সত্ত্বেও আগামী ২৭শে মে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু প্রস্তাব পেশ করা কথা৷ তার আগে জার্মানি ও ফ্রান্সের যৌথ অবস্থানকে ‘গঠনমূলক' হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে ইইউ কমিশন৷ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, তাঁরাও একই দিশায় এগিয়ে এমন সমাধানসূত্রের খোঁজ করছিলেন৷
ফ্রান্স ও জার্মানির ঐকমত্য সত্ত্বেও ঋণের প্রশ্নে ইউরোপের মধ্যে বিভাজন দূর হবার সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ জার্মানি সুর নরম করলেও অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন এখনো যে কোনো কাঠামোর আওতায় ঋণের বোঝা ভাগ করার বিরোধিতা করে চলেছে৷ অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুয়র্ৎস সোমবার এমন দাবি করেন৷ মতবিরোধ দূর না হলে ইইউ-র দীর্ঘমেয়াদী বাজেটের কাঠামোর মধ্যে ঋণের এই প্রস্তাব অনুমোদন করা কঠিন হবে৷ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে বাজেটের প্রশ্নে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয় নি৷ তারপর করোনা সংকট নিয়ে সব দেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)
২৫ এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷