সৌদি আরবে সরাসরি উট থেকেই মানুষের শরীরে ম্যার্স ভাইরাস প্রবেশ করেছিল বলে এবার হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ ফলে পশু থেকে মানুষের শরীরে এমন সংক্রমণ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়েই চলেছে ক্রমশ৷
বিজ্ঞাপন
সৌদি আরব সহ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ম্যার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তা বেড়ে চলেছিল৷ এই রোগ সম্পর্কে এত কম তথ্য জানা গেছে, যে তার প্রসার রোধ করাও কঠিন কাজ৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই প্রথম সরাসরি প্রমাণ পেয়েছেন যে, উট থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এই ভাইরাস৷
সৌদি আরবে সরকারি সূত্র অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মোট ৬৮৮ জন এই রোগের কবলে পড়েছে৷ এর মধ্যে ২৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ আরও দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, ম্যার্স এই অঞ্চল ছেড়ে ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর অ্যামেরিকায়ও ছড়িয়ে পড়ছে৷
ক্যানসারকে দূরে রাখার ৯ উপায়
ক্যানসারের মতো অসুখকে শুধু ভাগ্যের লিখন বলা যায়না৷ কারণ টিউমার হওয়ার কারণগুলো গবেষকরা খুব ভালো করেই জানেন৷ ক্যানসারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে প্রত্যেকেই কিছু করতে পারেন৷
ছবি: Getty Images
ভাগ্য নিজের হাতেই
‘আপনার ক্যানসার ধরা পড়েছে’ এমন দুঃসংবাদ শোনার জন্য কেউ কখনো অপেক্ষা করেনা৷ তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে হয়তো ক্যানসার রোগীর সংখ্যা অর্ধেক হতে পারে৷ ক্যানসার রোগীর প্রতি পাঁচজনের একজনই হচ্ছে ধূমপায়ী৷ বিষাক্ত তামাকের ধোঁয়া যে শুধু ফুসফুসের ক্যানসারের জন্যই দায়ী তা নয়, ধূমপান অন্যান্য ক্যানসারের হওয়ারও একটি কারণ৷ তবে ধূমপান ক্যানসার হওয়ার একমাত্র কারণ নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অতিরিক্ত ওজন মৃত্যুর কারণও হতে পারে
ক্যানসার হওয়ার নানা কারণের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন এবং ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকা৷ ইনসুলিনের মাত্রা বেশি হলে তা কিডনি, গলব্লাডার, খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত মোটা মহিলাদের শরীরের মেদের কারণে খুব সহজে জরায়ু এবং স্তন ক্যানসার হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলসেমি নয়, সোফা থেকে উঠে পড়ুন!
যারা সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকেন অর্থাৎ হাঁটা-চলা কম করেন, তাদের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে ব্যায়াম বা খেলাধুলা টিউমার হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে৷ শারীরিক কার্যকলাপ ইনসুলিনের মাত্রা কমায় এবং পাশাপাশি মোটা হওয়াও রোধ করে৷ শরীরচর্চা বলতে যে সব সময় ফিটনেস সেন্টারে যাওয়া বোঝায় তা কিন্তু নয়৷ যে কোনো ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি বা সাইকেল চালানোও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
অ্যালকোহলকে না করুন
অ্যালকোহল বা মাদককে ক্যানসার উত্তেজক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে৷ বিশেষ করে অ্যালকোহল পানে মুখের ভেতর, গলা এবং পাকস্থলীর নালীতে টিউমার ছড়ানোকে প্রভাবিত করে৷ তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে ধূমপান এবং মদ্যপান যদি একসাথে করা হয়৷ এই দুটো একসাথে হয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ১০০ ভাগ৷ তবে বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একগ্লাস ওয়াইন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পশুর মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো
রেড-মিট বা গরু বা ভেড়ার মতো প্রাণীর মাংস ক্যানসার হতে সহায়তা করে৷ তবে এর আসল কারণ ঠিক কী তা এখনও খুঁজে বের করা যায়নি৷ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় এটুকু জানা গেছে যে রেড-মিটের সাথে ক্যানসারের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ শুকরের মাংসের তুলনায় গরুর মাংস খাওয়া বেশি বিপজ্জনক৷ অন্যদিকে মাছ খেলে হয় ঠিক তার উল্টোটা, অর্থাৎ মাছ খেলে ক্যানসার হওয়া থেকে দূরে থাকা যায়৷
ছবি: Fotolia
ফাস্টফুডকে না বলুন!
ফাস্টফুড বা রেডিমেড খাবার সব সময়ই যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সে কথা কম বেশি সবাই জানি৷ অন্যদিকে বেশি বেশি সবজি এবং ফলমূল ক্যানসার রোধে সাহায্য করে৷ দীর্ঘ গবেষণায় অবশ্য গবেষকরা দেখেছেন যে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে মাত্র দশ শতাংশ ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেশি রোদ, বেশি ক্ষতি
সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি মানুষের ত্বকের অনেক পরিবর্তন করে৷ তবে সানক্রিম সূর্যের বিকিরণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে ঠিকই, তবে তারও সময়সীমা রয়েছে৷ ত্বক যখন পুড়ে যায়, ধরে নিতে হবে যে ত্বকে অনেক বেশি সূর্যের কিরণ লেগে গেছে৷
ছবি: dapd
আধুনিক ওষুধ থেকে ক্যানসার
এক্সরে রশ্মি জেনোটাইপের ক্ষতির কারণ, তবে সাধারণ এক্সরেতে তেমন ক্ষতি হয়না৷ সে রকম প্রয়োজন না হলে কম্পিউটার-টোমোগ্রাফি না করাই ভালো৷ আবার অন্যদিকে এমআরআই কিন্তু মোটেই শরীরে জন্য ক্ষতিকারক নয়৷ ভালো খবর যে, প্লেন ভ্রমণ থেকে ক্যানসার হবার কোনো আশঙ্কা থাকেনা৷
ছবি: picture alliance/Klaus Rose
ইনফেকশনের মাধ্যমে ক্যানসার
হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস লিভার কোষের ক্ষতি করতে পারে৷ ছবিতে যে ব্যাকটেরিয়া দেখা যাচ্ছে সেটা পাকস্থলী নষ্ট করে দিয়ে সেখানে ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে৷ তবে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে টিকা বা অ্যান্টিবায়োটিকও নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
‘নিউ ইংল্যান্ড জার্মান অফ মেডিসিন' এবার ম্যার্স সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে৷ তবে এই গবেষণার ভিত্তি ৪৪ বছর বয়স্ক এক সৌদি পুরুষ, যিনি ন'টি উট পালন করতেন এবং ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ম্যার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান৷ তাঁর বন্ধুরা জানিয়েছেন, সেই ব্যক্তি একটি অসুস্থ উটের নাকে প্রাচ্যদেশীয় কোনো ওষুধ লাগিয়েছিলেন৷ মোট চারটি উটের নাক থেকে কোনো তরল বেরোচ্ছিল৷ এই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর উটের মালিক ম্যার্স রোগে আক্রান্ত হন৷
গবেষকরা সেই মৃত উট ও তার মালিকের শরীরে ভাইরাস তুলনা করে দেখেছেন৷ জানা গেছে, যে দুটি ভাইরাসের জেনোম হুবহু এক ছিল৷ সব তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা যায়, যে সংক্রমিত উটের কাছে এসে তার মালিকের শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করেছিল৷ এর আগের গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ২০ বছর ধরে উটের শরীরে এই করোনা ভাইরাস দেখা গেছে৷ কিন্তু উট থেকে মানুষে সংক্রমণের কোনো ঘটনার কথা জানা যায়নি৷ এবার সৌদি আরবের আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তারিক মাদানির নেতৃত্বে এক বিশেষজ্ঞ দল এর সাক্ষাৎ প্রমাণ পেল৷
নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ডাব্লিউ আয়ান লিকপিক মনে করেন, মানুষের রোগের প্রসারের ক্ষেত্রে উট সহ অন্যান্য পশু ঠিক কী ভূমিকা পালন করে সেটা জানাই হলো আসল চ্যালেঞ্জ৷ উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৩ সালে এশিয়ায় কমপক্ষে ৮,২৭৩ জন মানুষ সার্স ভাইরাস-এ আক্রান্ত হয়েছিল৷ তাদের মধ্যে প্রায় ৯ শতাংশের মৃত্যু হয়েছিল৷ ম্যার্স-এর ক্ষেত্রে আক্রান্তদের সংখ্যাটা এত বেশি না হলেও মৃত্যুর হার অনেক বেশি৷