ম্যালেরিয়ার কথা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই৷ মশা-মাছি নিয়ে ঘর করাটা অনেকের কাছে স্বাভাবিক৷ ‘মশা মারতে কামান দাগা’-র মতো প্রবচনেই তো লুকিয়ে রয়েছে বাঙালি জীবনে ম্যালেরিয়ার কাহিনি৷ কিন্তু সেই ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে টিকা?
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজ্ঞাপন
ম্যালেরিয়ার টিকা
03:00
This browser does not support the video element.
মশার কামড় শেষমেষ মৃত্যু ডেকে আনতে পারে, কেননা স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে ম্যালিগন্যান্ট প্যারাসাইট থাকে, যা থেকে ম্যালেরিয়া রোগ হয়৷ একশো'টির কম প্যারাসাইট থেকেই এই মারাত্মক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেতে পারে৷ রক্তের মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার প্যাথোজেন যকৃতে পৌঁছয়৷ সেখানে তারা বাসা বাঁধে, বংশবৃদ্ধি করে, বিভক্ত কোষগুলির মাধ্যমে রক্তে গিয়ে পৌঁছয়৷
এইভাবে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু হাজারে হাজারে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে৷ রোগীর শরীরে আবার মশা কামড়ালে, প্যারাসাইটগুলি সেই মশার শরীরেও বংশবৃদ্ধি করতে পারে৷ এইভাবেই রোগ ছড়াতে থাকে৷ জ্বর, কাঁপুনি, পেট মোচড়ানো – এই সব লক্ষণ দিয়েই ম্যালেরিয়ার সূচনা৷ ম্যালেরিয়া হল দরিদ্রদের রোগ৷ বছরে প্রায় দশ লাখ মানুষ এই রোগে মারা যান, তাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু৷ কিন্তু ম্যালেরিয়ার কোনো কার্যকরী প্রতিষেধক নেই, নেই কোনো কার্যকরী ওষুধ৷
এক কামড়ে হতে পারে মৃত্যু
ভারত-বাংলাদেশে মশা, মশার কামড় অথবা ম্যালেরিয়া নতুন কিছু নয়৷ আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আফ্রিকায় প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে মারা যায় এক জন শিশু৷ অথচ এ রোগ প্রতিরোধে আজও কোনো টিকা বের হয়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Cabezas
মশার আক্রমণ
আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণীর নাম এনোফিলিস মশা৷ লম্বায় ছয় মিলিমিটার এই মশা ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী৷ প্রতি বছর সারা বিশ্বের প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এ রোগে মারা যায়৷
ছবি: imago/blickwinkel
বৃত্তাকারে ঘোরা
হলুদগুলো জীবাণু৷ আর নীলগুলো জীবাণুর চলার পথ৷ গবেষকরা কতগুলো জীবাণুকে তরলপূর্ণ একটি গ্লাসে ছেড়ে দিয়েছেন৷ জীবাণুগুলো বাঁকানো বলে তারা একটি বৃত্তের মধ্যে ঘুরছে৷ মাত্র ৩০ সেকেন্ডে তারা বৃত্ত পূরণ করতে পারে৷
ছবি: Colourbox
কামড় খাওয়ার ১২ দিন পর মৃত্যু
মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ঢোকার পর সেটা কিছুদিন যকৃতে বাসা বাঁধে৷ কিন্তু যার শরীরে ঢোকে সে টের পায় না৷ যকৃতে গিয়ে জীবাণুগুলো রক্তকোষকে আক্রমণ করে শরীরকে অসুস্থ করে ফেলে৷
ছবি: AP
রক্তধারায় জীবাণু
শরীরে ঢোকার এক থেকে তিনদিনের মধ্যে জীবাণুগুলো রক্তকোষ ভেঙে ফেলে৷ ফলে জ্বর হয়৷ অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Ordonez
জীবন রক্ষাকারী
ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় মশার কামড় না খাওয়া৷ ক্রিম ও স্প্রে ব্যবহার এবং মশারি খাটিয়ে ঘুমানো এক্ষেত্রে ভালো ফল দিতে পারে৷
ছবি: DW/A.Bacha
দ্বিগুণ সুরক্ষা
গবেষকরা বিশেষ ধরণের মশারি তৈরি করেছেন যার সুতায় কীটনাশক লাগানো আছে৷ ফলে মশা মশারির উপর বসলেই মারা যাবে৷
ছবি: Kerry Skyring
কঠোর পদক্ষেপ
মশা দমনে মুম্বইয়ে কীটনাশক ছড়ানো হচ্ছে৷ কিন্তু মশা মারতে এটা কার্যকর হলেও স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ যেখানে কীটনাশক ছিটানো হয় সেখানকার খাদ্য চক্রের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে৷
ছবি: Reuters
দ্রুত রোগ নির্ণয়
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ম্যালেরিয়া শনাক্ত করা যায়৷ আফ্রিকার দেশ মালিতে একটি ছেলের শরীরে ম্যালেরিয়া জীবাণু ঢুকেছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সময়ের সঙ্গে পাল্লা
ওষুধের মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংস করা যায়৷ কিন্তু সময় যত বাড়ছে জীবাণুগুলো ততই ওষুধের বিরুদ্ধে জয়ী হচ্ছে৷ অর্থাৎ ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে৷ যেমন ‘ক্লোরোকুইন’ নামের একটি ওষুধ বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের দেহে আর কার্যকর হচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন?
ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এখনো কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি৷ তবে গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন৷ তারা খুব শীঘ্রই এতে সফলতা আশা করছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Cabezas
10 ছবি1 | 10
মোকাবিলার উপায়
ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র হল মশা মারার জন্য কীটনাশক, যদিও সেগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে৷ আফ্রিকাতে ডিডিটি-র ব্যবহার পর্যন্ত বৈধ, যদিও ডিডিটি থেকে ক্যানসার হতে পারে, ডিএনএ-র হানি ঘটতে পারে৷ ওদিকে মশারা ক্রমেই ডিডিটি-র বিরুদ্ধে ‘ইমিউন', অর্থাৎ অনাক্রম্য হয়ে উঠছে৷
এককালে যে সব ওষুধে কাজ হতো, ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইটগুলি আজ সেগুলির বিরুদ্ধেও ইমিউন৷ তারা নিজেদের ‘অ্যাডাপ্ট' করে নিয়েছে, অর্থাৎ মানিয়ে নিয়েছে৷ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হল আরেকটি প্রচেষ্টা৷ গবেষকরা মশা ও প্যারাসাইটের জেনেটিক পরিবর্তন করে ম্যালেরিয়ার প্রসার রোধ করার চেষ্টা করছেন৷ ল্যাবোরেটরি পরীক্ষায় ইঁদুরকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে সে মশার কামড় টের না পায়৷ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে পরিবর্তিত প্যাথোজেন তার আর কিছু করতে পারে না৷
টিকার স্বপ্ন
সবচেয়ে সহজ পন্থা হল ম্যালেরিয়ার টিকা তৈরি করা৷ সুদীর্ঘ ত্রিশ বছর গবেষণার পর আজ সত্যিই একটি টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে, যা মানুষের শরীরে রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে৷ ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে-র আশা, তাদের এই টিকা ২০১৫ সালের মধ্যে সর্বত্র ব্যবহৃত হবে৷
কিন্তু ফিল্ড টেস্ট করে ততোটা ভালো ফল পাওয়া যায়নি৷ পাঁচ থেকে সতেরো মাসের শিশুদের মাত্র অর্ধেককে ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এই টিকা৷ আরো ছোটদের মাত্র এক-চতুর্থাংশ এভাবে ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়৷ কাজেই এই নিঃশব্দ মারণব্যাধির বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখানেই শেষ হয়ে যায়নি৷
বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে